somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদম্য মেধাবী প্রতিবন্ধী জ্যোতি আবহাওয়াবিদ হতে চায়

০৫ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ বছর এসএসসিতে বিজ্ঞানবিভাগ থেকে ৯৯২ নম্বর পেয়ে (জিপিএ-৫) উত্তীর্ণ হয়েছে প্রতিবন্ধী জ্যোতি হোসেন।
তার গলা থেকে পা পর্যন্ত অবশ থাকে। হুইল চেয়ারে সার্বক্ষণিক চলাচল মায়ের সহযোগিতায়। মেধাবী এই মেয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করে আবহাওয়াবিদ হতে চায়।
তবে, জ্যোতি হোসেন জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী নয়। ছোটবেলায় মায়ের সাথে নানিবাড়ি থেকে ফেরার পথে ভ্যান থেকে পড়ে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়। এরপর সে চলৎশক্তি হারায়। স্পাইনাল ইনজুরির কারণে তার এই অবস্থা।
যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পারবাজার কমিশনারপাড়ার বাসিন্দা প্রবাসী কাদের হোসেন ও রেকসোনা হেসেনের মেয়ে জ্যোতি। সে চলতি বছর ঝিকরগাছা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা মালয়েশিয়া থাকেন।
তার মা রেকসোনা বলেন, দুই মেয়ের মধ্যে জ্যোতি বড়। পরেরজন জেবা নবম শ্রেণিতে পড়্ ২ে০০৭ সালের অক্টোবর মাসে নার্সারিতে পড়ার সময় (বয়স সাড়ে চার বছর) দুর্ঘটনায় পুরো শরীর অকেজো হয়ে পড়ে। হুইলচেয়ারে শুরু হয় পথচলা। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বাম হাত দিয়ে লেখালেখি করতে থাকে। চিকিৎসার একপর্যায়ে ডান হাতে লিখতো। বাড়ির পাশে পারবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশুনা করার সময় শিক্ষকদের অসহযোগিতায় স্কুল ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।
হার না মানা জ্যোতি, বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে ঝিকরগাছা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। মা তাকে প্রতিদিন হুইলচেয়ারে করে স্কুলে আনা নেওয়া করতে থাকেন। মায়ের কঠোর পরিশ্রমে জ্যোতি লেখাপড়া চালিয়ে যায়। কিন্তু ডান হাতে দ্রুত লেখা তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। প্রতিদিন ৮/১০ ঘণ্টা পড়াশুনা করলেও দুঃচিন্তা, দ্রুত লিখতে না পারলে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল সম্ভব নয়। পরীক্ষার আগে প্রতিবেশী আরেক শারীরিক প্রতিবন্ধী মিষ্টি পরামর্শ দেন তার জন্যে একজন শ্রুতিলেখক নিতে। এরপর স্কুলের সহকারী প্রধানশিক্ষক শিক্ষক নুরুল আমিন মুকুল যশোর বোর্ডে যোগাযোগ করে জ্যোতির ছোটবোন জেবাকে শ্রুতি লেখক হিসেবে মনোনীত করাতে সক্ষম হন।
ঝিকরগাছা এমএল পাইলট সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি কক্ষে ঝিকরগাছা উপজেলার একমাত্র শ্রুতি লেখক নিয়ে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
রেকসোনা জানান, মেয়েটি খুবই মেধাবী; তার খাওয়া-দাওয়া, চলাচল সবকিছুই আমাকে করতে হয়। ঢাকায় সিআরপিতে নিয়ে গেছি। তারা বছরে দুইবার তাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। ডাক্তাররা আশ্বস্ত করেছেন, ঠিকমত চিকিৎসা- থেরাপি চললে একসময় সে নিজেই হাঁটাচলা করতে পারবে।
ঢাকায় গেলে প্রতিবার কমপক্ষে ত্রিশ হাজার টাকা খরচ। তার বাবা আর দুই বছর পর দেশে ফিরবেন। আমাদের সহায় সম্পত্তি তেমন নেই। চিকিৎসা আর উচ্চশিক্ষার জন্যে এখন বেশ টাকা পয়সার প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে এখন যদি কোনও সহযোগিতা পাওয়া যায়, তবে মেয়েটি ভাল রেজাল্ট করবে বলে বিশ্বাস করি - বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকার প্রাইমারি আর হাইস্কুলে প্রতিবন্ধীদের চলাচলে উপযোগী সিঁড়ির ব্যবস্থা করেছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনকী চাকরির জন্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেও একই ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
ঝিকরগাছা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধানশিক্ষক নূরুল আমিন মুকুল বলেন, জ্যোতি খুবই মেধাবী মেয়ে। স্কুলজীবনে তার কাছ থেকে কোনোপ্রকার অর্থ নেওয়া হয়নি। নিয়মিত তার বাসায় গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি। তার জন্যে দোতলা বাদ দিয়ে নিচতলায় ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে বেঞ্চে বসতে পারতো না। তার জন্যে আলাদা টেবিলও তৈরি করে দেওয়া হয়। সুযোগ পেলে সে অনেকদূর যেতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জ্যোতি বলে, এ সাফল্য আমার মা, বোন, শিক্ষকমণ্ডলীর। তাদের কাছে আমি চিরঋণী। ভাল করে লেখাপড়া শিখতে চাই; যেন কারোর উপর বোঝা না হতে হয়। আমার খুব ইচ্ছে- আবহাওয়াবিদ হওয়ার। না হলে আইনজীবী। শারীরিকভাবে অক্ষম তাই ভাষা আর বুদ্ধি দিয়ে যা করা যাবে, ভবিষ্যতে সেটিই পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাই।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×