আমাদের বাতেন ভাই নব্বইয়ের দশকে ইউক্রেন থেকে পিগ আয়রন(জিনিসটা আসলে কি,আমার কোন আইডিয়া নাই,হতে পারে লোহার টুকরো গুলো শুয়োরের মতো গোল গোল) আমদানি করে বেশ ধনী হয়ে পড়ে।উনি খোলা হাতে দান-খয়রাৎ শুরু করেন।এসবের পাশাপাশি উনার নতুন এক রোগ দেখা দিলো,উনি একটি কবিতার বই ছেপে ফেলেন।নীল রঙের বইটির নাম আমার মনে নেই।তবে যেটি মনে আছে,বইটির প্রচ্ছদের নিচে উনি নিজের নাম লিখেছিলেন- লিখক আবদুল বাতেন।সেটাই কাল হয়েছে।কিভাবে কে যে প্রুফ দেখেছিলেন জানিনা।সবাই বেশ হাসাহাসি করতেন।অথচ উনি চাইতেন কেউ বইটির যেকোন একটি কবিতা নিয়ে উনাকে একটু বলুক।উনি সেটা শুনতে বেশ আগ্রহ নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।আমার খারাপ লাগতো।
আমি উনাকে উনার সেই বইয়ের একটি কবিতা নিয়ে উৎসাহ দিয়েছিলাম।উনি খুব খুশি হয়েছিলেন।আমাদের হয়েছিলো নগদে লাভ।আমরা আমাদের খেলাধুলার জন্য উনার থেকে অনেক ইন্সট্রুমেন্ট নিয়েছিলাম।উনার সেই কবিতাটা উনার মৃত্যুর পর কি হবে তাই নিয়ে-
যখন পড়বে আমার লাশ(এটাই ছিলো স্টার্টিং)
এরপর উনি প্রতি লাইনে মিল দিয়ে পাশ,টাশ,মাস,কাশ এমন করেই কবিতাটার ডেলিভারি দিয়েছিলেন।আমি উনাকে বলতাম,বাতেন ভাই,সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন ছন্দের জাদুগর।এরপর আপনার কবিতা পড়ে আমি যা আনন্দ পেলাম।মাঝখানে আমি কবিতা পড়াই প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম।উনি বেশ খুশী হতেন।আমাদের সাইফুল অত্যান্ত ঠোঁটকাটা ছিলো,সে উনাকে বলতেন,কিরে ভাই,লিখক মানে কি,আপনি কি দলীল লিখক,বাতেন ভাই,এগুলা আপনি কি লিখছেন?তারপর উনার মুখের দিকে চেয়ে হাসতেই থাকতো হাসতেই থাকতো।বাতেন ভাই বলতো,আমি কিছু মনে করি না,ও কিন্তু ছোট থাকতেই বেয়াদপ ছিলো।কোন চেঞ্জ নাই।
৯৮ এর বন্যায় উনি বন্যার্তদের জন্য রিলিফ তোলা শুরু করলেন।আমাদের নিয়ে উনি একটি হ্যান্ড-মাইক নিয়ে সুন্দর করে বলতেন- নকসী কাঁথার মাঠ,সোজন বাঁদিয়ার ঘাট আমাদের এই শ্যামল বাংলা আর নাই।সব প্রমত্ত বন্যায় ডুবে গেছে।আপনারা সবাই সাহায্য করুন।দেখা গেলো ,কেউ আমাদের নগদ টাকা নিয়ে সাহায্য করলো না।সবাই তাদের ঘরের ময়লা কাপড়-চোপড় সেই ফাকে বন্যার্তদের সাহায্যের নামে আমাদের দিয়ে বেঁচে গেলো।আমরা মানুষের এই বিপুল ভালোবাসার বোঝা নিয়ে মারাত্বক বিপদে পড়লাম।আমার বোন আমায় টিপ্পনি দিতো- জানোস সবাই তোদের জন্য এইসব নিয়ে অনেক বছর অপেক্ষা করছিলো।