নিষিদ্ধ ঘোষিত জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ-জেএমজেবির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক লুৎফর রহমান গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছেন। তিনি বাগমারা থানা পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছেন, 'তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে? তার তো কোনো অপরাধ নেই। 2004 সালের এপ্রিল থেকে শুর" হওয়া সর্বহারাবিরোধী অভিযানকালে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, এমপি তখন শাইখ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাইকে প্রকাশ্যে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই পুলিশ তাদের প্রকাশ্য আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। সর্বাত্দক নিরাপত্তাও দিয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও জনগণের সমর্থন থাকার কারণেই আমি শাইখ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাইয়ের সঙ্গে সর্বহারাবিরোধী অভিযানে সহযোগিতা দিয়েছি। তাদের পরিবর্তে এখন আমাকে গ্রেপ্তার, হয়রানি করা হচ্ছে কেন? আমার ফাঁসি হয় হোক, আর আমাকে ক্রসফায়ারেই মেরে ফেলা হোক আমি সত্য কথা বলবোই। প্রয়োজনে আমি সব সত্য কথা ফাঁস করে দেবো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে অধ্যাপক লুৎফর রহমানের এসব পাল্টা প্রশ্নে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা বিব্রত বোধ করেন। এসব তথ্য বাগমারা থানা পুলিশের সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রের। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার কড়া পুলিশ পাহারায় অধ্যাপক লুৎফর রহমানকে রাজশাহীর 'গ' অঞ্চলের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে গোলাম রাব্বানী মুকুল হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য 10 দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। একই সঙ্গে তার পক্ষে জামিনের আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত 5 দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ দিনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্যে পুনরায় বাগমারা থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, অধ্যাপক লুৎফর রহমান শাইখ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাইয়ের সঙ্গে সর্বহারা বিরোধী অভিযানে নিষিদ্ধ জেএমবির ক্যাডারদের নেতৃত্ব দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে পুলিশকে জানান, সর্বহারারা তার এবং এলাকার জনসাধারণের প্রতি অবিচার করেছিল। এ কারণে বাগমারা থানার সাবেক ওসি শামসুল আলম সর্বহারাবিরোধী যে কমিটি করেছিলেন ওই কমিটিতে তাকে অনত্দভুক্ত করা হয়েছিল। সর্বশেষ শাইখ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইর সঙ্গে সর্বহারাবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তিনি আরো জানান, জেএমবির 4/5টি বড়ো সভায় বক্তব্য রেখেছেন। হাদিস-কুরআনের আলোকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সর্বহারাবিরোধী অভিযান ব্যতীত অন্য কোনো কাজ তিনি করেননি। তিনি জোর দিয়ে পুলিশকে বলেছেন, ওই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে তো দোষের কিছু করেননি। তিনি জেএমবির এখনকার কর্মকাণ্ড-বোমাবাজি সমর্থন করেন না। প্রচণ্ডভাবে ঘৃণা করেন। বাংলাভাই পরবতর্ীকালে যেসব নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেটাও তিনি সমর্থন করেননি বলে দাবি করেছেন। সূত্রমতে, অধ্যাপক লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে বাংলা ভাইর ক্যাডাররা গত বছরের 23 মে রাজশাহী মহানগরি এলাকায় প্রবেশ করে। তারা পুলিশ প্রটেকশনে 53টি মাইক্রোবাস, মিনিবাস, ট্রাক ও 100 মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, গৌরহাঙ্গা রেলগেটে সশস্ত্র শোডাউন শেষে গাড়িবহর নিয়ে রাজশাহী আদালত চত্বরে যায়। সেখানে তারা বাংলা ভাই জেএমবির কর্মকাণ্ডের বির"দ্ধে অপপ্রচারের' অভিযোগে সাংবাদিকদের বির"দ্ধে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয়। শোডাউন শেষে পুনরায় পুলিশ প্রটেকশনে রাজশাহী মহানগরি এলাকা ত্যাগ করেন। সূত্র জানায়, দেশব্যাপী 17 আগস্টের ভয়াবহ সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের পর নিষিদ্ধ জেএমবির ক্যাডারদের সঙ্গে অধ্যাপক লুৎফর রহমানও গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। তখন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাগমারায় বাংলাভাইয়ের নিষিদ্ধ জেএমজেবির 300 জনের একটি তালিকা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করে। ওই তালিকায় অধ্যাপক লুৎফর, সাত্তার মাস্টার, মাহাতাব খামার" ও আবুল মেম্বারসহ জামাত-বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মীর নাম ওঠে। এসব নাম তালিকায় অনত্দভর্ুক্ত করার কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তালিকাটি রাজশাহীতে ফেরত পাঠিয়ে উলি্লখিতদের নাম বাদ দিয়ে পুনরায় তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানা যায়। তখন অধ্যাপক লুৎফর রহমান বগুড়ার আদমদীঘিতে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ ও বাংলা ভাইর জেএমজেবির সঙ্গে জড়িত নয় মর্মে দাবি করেন। এক মাস পর তাকে র্যাব-5 রাজশাহীর সদর দপ্তরে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক লুৎফর রহমান বাংলা ভাইয়ের আগমনের আগে আত্রাই এলাকায় একটি সভায় বক্তব্যে বলেছিলেন 2004 সালের মধ্যেই সর্বহারাদের বির"দ্ধে জনতার অভিযান শুর" হবে। সভায় তিনি আরো বলেন, অচিরেই এমন একটি দল আসবে যারা সন্ত্রাসকবলিত বাগমারা, রানীনগর ও আত্রাই এলাকা থেকে সর্বহারাদের মূলাৎপাটন করবে। এর কয়েকদিন পরেই বাগমারাতে বাংলাভাই তার বাহিনী নিয়ে সর্বহারাবিরোধী অভিযান শুরু করেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০