র্য পূর্ব দিকে উদিত হয় এবং পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। ঠিক এ রকমই ধ্রুব সত্য নারী নির্যাতন। নারী কী মাঝ বয়সী, কিশোরী, বালিকা, শিশু—যাই হোক না কেন, কোনোভাবে কোথাও না কোথাও নির্যাতিত হচ্ছেই। নারী নির্যাতন, অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যার মতো নির্মম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলছে। এসব ঘটনার কিছু আমরা জানি বা জানতে পারি। আর বাকি ঘটনাগুলো অন্তরালে-অগোচরেই থেকে যায়।
প্রতিদিন খবর পাওয়া যায় যৌতুকের দাবিতে অবর্ণনীয় নির্যাতন, স্ত্রী হত্যা ও পুড়িয়ে মারা। মেয়ে হওয়ার অপরাধে ৪-৫ বছরের শিশুটিও রক্ষা পায় না ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট ঘটনা থেকে।
ইভটিজিং নিয়ে আজকাল বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন, সেমিনার হতে দেখা গেলেও কমেনি এ ব্যাধি, বরং বেড়েছে। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গেলেও ঘটে নানা বিপত্তি। ধর্ষণের হুমকি, জীবননাশের হুমকি। কখনওবা ইভটিজিংকারী বাড়িতে এসে পিটিয়ে অজ্ঞান করে রেখে গেছে—এমন খবরও জানা গেছে। অপহরণের মাত্রাও বেড়ে গেছে। কিন্তু ১৫ দিন এমনকি এক মাসেও উদ্ধার করা যায়নি অপহৃতাকে—এমন ঘটনাও ঘটছে অহরহ। অপহৃতা জীবিত না মৃত, এ খবরও জানতে পারেনি অপহৃতার পরিবার—এরকম ঘটনাও রয়েছে। এ দায়বদ্ধতা কার? এ ব্যর্থতা কার? দেশের শাসন ব্যবস্থার, নাকি শাসক গোষ্ঠীর? উত্তর যাই হোক—এসব ঘটনা প্রতিরোধে আরও কঠোর আইনি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং তা প্রয়োগ করতে হবে যথাযথ।
গত ১৫ দিনের ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা উপলব্ধি করতে পারব, এই আধুনিককালেও নারীরা কত অসহায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাঠানো নারী নির্যাতনের কিছু বীভত্স চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো—
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বর্বর নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে গৃহবধূ সালমা আক্তার (২২)। সিগারেটের আগুনে ঝলসে দেয়া হয়েছে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ। বিদ্যুতের শকে পুড়ে যাওয়া আঙুলে পচন ধরায় হাতের দুটি আঙুল চিকিত্সকরা কেটে ফেলেছে। তারপরও প্রতিনিয়ত শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হুমকির মধ্যে অনিশ্চয়তা ও অসহায় দিন কাটছে সালমার। ৫ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে এক সন্তানের মা সালমাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বানিয়ারা গ্রামে।
সালমার আত্মীয়-স্বজন জানায়, ২০০৬ সালে কালিহাতীর আগচাড়ান গ্রামের মৃত সুলতান মাহমুদের মেয়ে সালমা আক্তারের বিয়ে হয় একই উপজেলার বানিয়ারা গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে কিসমত আলীর সঙ্গে। সালমার জন্মের কিছুদিন পরেই তার বাবা সুলতান মাহমুদ মারা যান । অভাবের সংসারে টিকতে না পেরে তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যান। শিশুকাল থেকে শুরু করে বিয়ের আগ পর্যন্ত চাচা-চাচীর সংসারেই বেড়ে উঠে সালমা। অসহায় মেয়েকে নগদ এক লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে দেন তার চাচা। পরে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে স্বামী কিসমত আলী আরও দুই লাখ টাকা নেয় সালমার চাচার কাছ থেকে। বিদেশে এক বছর থাকার পর দেশে চলে আসে। কিছুদিন পর আবার বিদেশ যাওয়ার কথা বলে সালমা ও তার চাচার কাছে টাকা দাবি করে। টাকা না পেয়ে শুরু করে সালমার ওপর অমানবিক নির্যাতন।
প্রতিদিন চলত সালমার ওপর নির্মম শারীরিক নির্যাতন। সিগারেটের জ্বলন্ত আগুন দিয়ে ঝলসে দিত শরীরের বিভিন্ন স্থান। স্বামীর এরকম পাশবিক নির্যাতনে অনেক সময় সহযোগিতা করত শ্বশুর-শাশুড়িও। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ২২ সেপ্টেম্বর সালমাকে কিসমত আলী ও তার পরিবারের লোকজন ধরে হাতের আঙুলে বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে শক দেয়। এতে সালমার হাতের দুটি আঙুলসহ বিভিন্ন স্থানে পুড়ে যায়। এসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সালমা। পরদিন অবস্থা গুরুতর হলে পাষ স্বামী ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তাকে এলেঙ্গায় নিয়ে আসে। সেখানে একটি দোকানের সামনে শিশু বাচ্চাসহ সালমাকে রেখে কিসমত আলী পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সালমার বাবার বাড়ির লোকজন তাকে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার ডাক্তার তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে দু’দিন থাকার পর উন্নত চিকিত্সার জন্য সালমাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তাররা সালমার হাতে পচন ধরায় বাম হাতের দুটি আঙুল কেটে ফেলেন। অবস্থার একটু উন্নতি হলে আবার সালমাকে মঙ্গলবার রাতে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
সালমার নানী জানান, এর আগে সালমাকে বার বার টাকার জন্য নির্যাতন করত। মঙ্গলবার সালমার স্বামী হাসপাতালে এসে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ায় সালমা ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আতঙ্ক আর ভয়ের মধ্যে কাটছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত। এসব অন্যায় ও নিষ্ঠুর আচরণের বিচার কবে হবে—এ প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের মনে।
বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি
বিয়ানীবাজারে ৫ বছরের শিশু কন্যা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। শিশু কন্যার জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ ধর্ষককে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। ২৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আদালতে ধর্ষিতার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। জানা যায়, সোমবার বিয়ানীবাজার পৌর শহরের নয়াগ্রামের নয়ন কর্মকারের ৫ বছরের শিশুকে পাশের ঘরের আত্মীয় সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যবাজার গ্রামের হরিপদ বণিকের ছেলে অরুণ বণিক (৪০) ধর্ষণ করে। ধর্ষিত শিশুটি সেখান থেকে বেরিয়ে এলে ঘটনাটি প্রকাশ পায়। এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করলে পুলিশ ধর্ষক অরুণ বণিককে গ্রেফতার করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাব্বির আহমদ জানান, আসামি গ্রেফতারের পর সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।
গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি : গঙ্গাচড়ায় যৌতুকের জন্য প্রাণ দিতে হলো গৃহবধূ আফরোজা বেগমকে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের পূর্ব কচুয়া গ্রামে। হত্যার ৭ দিন পর তিস্তানদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে আদিতমারী পুলিশ।
গঙ্গাচড়া থানা সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার কৈমারী রথের বাজার এলাকার জামাল উদ্দিনের মেয়ে আফরোজা বেগমের (২২) বিয়ে হয় পাঁচ বছর আগে গঙ্গাচড়ার পূর্ব কচুয়া গ্রামের ফজলুল হক ভেন্টুর ছেলে সোহেল রানার (২৮) সঙ্গে। বিয়ের পর থেকে সোহেল ও তার পরিবারের লোকজন ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিল। এ কারণে আফরোজার ওপর চলত স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন। আফরোজার কোলে তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
ঘটনার দিন ২১ সেপ্টেম্বর রাতে আফরোজার স্বামী সোহেল রানা আফরোজার বড়ভাই আমজাদ হোসেনকে মোবাইল ফোনে জানায়, তার বোনকে খুুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরদিন সকালে আফরোজার পরিবারের লোকজন সেখানে এসে জানতে পারে, আফরোজাকে হত্যার পর নদীতে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : স্কুলে যাওয়ার পথে ইভটিজিং করার কথা অভিভাবককে জানানোর কারণে স্কুল ছাত্রী বিলকিস বেগমকে (১১) বাড়িতে এসে মারপিট করেছে বখাটে যুবক হযরত আলী। বেদম মারপিটে অজ্ঞান অবস্থায় মেয়েটিকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা যায়, লাওতুথি গ্রামের হামিদুর রহমানের মেয়ে বিলকিস বেগম ( ১১) লাওতুথি গার্লস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। বিলকিস বেগমকে স্কুল যাওয়ার পথে ওই গ্রামের আব্দুল আজিজের বখাটে ছেলে হযরত আলী (২০) প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। বিলকিস তার বাবাকে হযরত আলীর উত্ত্যক্ত করার কথা জানায়। এ কারণে বখাটে হযরত আলী সোমবার বিকেলে হামিদুরের বাড়িতে গিয়ে বিলকিস বেগমকে মারপিট ও ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। এ সময় বিলকিস চিত্কার করলে হযরত পালিয়ে যায়। চিত্কার করতে করতে বিলকিস অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ সময় হামিদুরের বাসায় কেউ ছিল না। খবর পেয়ে হামিদুর বাড়িতে এসে মেয়ে বিলকিসকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে সদর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের স্কুলপড়ুয়া ছাত্রী মনিরা খাতুনকে নিখোঁজের ২ দিন পর পাওয়া গেলেও শুক্রবার দুপুরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা যায়।
বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার পৌর শহরের ভরাডুল গ্রামের ভরাডুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে (১২) মসজিদের ইমাম ইসরাইল মিয়া অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার ১২ দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। অপহৃতা স্কুলছাত্রী মৃত না জীবিত এখনও কেউ নিশ্চিত নয়। জানা যায়, ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ভরাডুল মসজিদের ইমাম ইসরাইল মিয়াসহ একদল দুর্বৃত্ত সিএনজিতে করে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় কুলিয়ারচর থানায় স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে মামলা রুজু করলেও অপহরণকারী ও অপহৃতাকে পুলিশ খোঁজে পায়নি। একই সঙ্গে ছাত্রীকে উদ্ধারে পুলিশের কোনো তত্পরতা নেই বলে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে। গ্রামের নিরীহ মানুষের প্রশ্ন, পুলিশ কি সত্যের পথে, নাকি মিথ্যা বা সন্ত্রাসীদের পক্ষে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






