'বিশ্বাস হয় না?'
'উহু, একজন আমাকে প্রথম সমুদ্র দেখাবে বলে কথা দিয়েছে...'
'বেকুব এটাই সমুদ্র। এর রূপ এখানে যেমন পৃথিবীর অন্য পাড়েও তেমন, কোনো তফাৎ নাই'
'হতেই পারে না'... শুনে সে মুচকি হাসে। মুচকি হাসে রাখাল নিজেও... কি সখ্যতা এই হাসির?
তারা দুজন হেঁটে চলে কাঁদা-বালি ভেঙ্গে।
শৈশব... মধুময় শৈশব হাতের মুঠোয় এখন। অদূরে দাঁড়িয়ে বকের মত মাথা উঁচু করে আছে 'মাঝি', 'মিলন' পেছন ফিরে পৃথিবীর সৌন্দযর্্যকে তুচ্ছ জ্ঞান করে কাঁদা-মাটির খেলা দেখছে। ভুট্টো সামনেই, মৃদু পায়ে হেঁটে চলেছে... মুখে তার আগামী দিনের স্বপ্ন। 'কিছু জমেছে বুঝলি, বাবাকে হারানোর পর অতটা হারিনি। ছোট বোনটায় ভালোই পড়ছে... এখন কেবল অল্প অল্প করে জমি কিনে রাখা। একদিন সুন্দর একটা বাড়ি বানাবো দেখে নিস...' চোখে তার ঝিকিমিকি স্বপ্ন, মুখে সংকল্পের দৃঢ়তা। ও পারবে। যদিও বাইরের রূপের সাথে ভেতরের রূপের কোনো মিল নেই তার। শক্ত খোলসের ভেতর শামুকের মত নরম মন তার। তবু ও পারবে, রাখাল বিশ্বাসের বাজি ধরে। 'পারবি, পারবি' দিগন্তের ওপারে তাকিয়ে মৃদু শব্দে বিড়বিড় করে সে। পরিবেশ হঠাৎ ভারি হয়ে ওঠে।
'অ্যাই এটাই কি সমুদ্র?' রাখাল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে...
'আবার...? বিশ্বাস হচ্ছে না কেন তোর?'
'কিভাবে হবে? একজন আমাকে প্রথম সমুদ্র দেখাবে বলে কথা দিয়েছিল...'
'হা হা হা হা', সবাই হাসতে হাসতে কাঁদা-বালিতে নিজেদের অস্তিত্ব আঁকে... পাশাপাশি।
ধুর পৃথিবীর সবচে' খারাপ খারাপ মেয়েগুলোকে ঈশ্বর এখানে জোর করে নামিয়ে দিয়েছে। চোখটাই বমি করছে... নিজের কথা বাদ-ই দিলাম, মুখ ভ্যাংচায় 'মিলন'। 'বলিস কি? তুই মেয়েও দেখিস?' উচ্চ স্বরে বিলাপ করে ওঠে 'মাঝি'। 'কি বলেরে ছেলেটা, ২৫ বছর বয়স আমার!'। আমরা কাশতে কাশতে প্রায় অর্ধেক..., কাশি থামিয়ে 'ভুট্টো' বলে তা দাদা তোর বার্থডে কোন সালে?'। 'জানিনা, আম্মুকে জিজ্ঞেস করতে হবে' মিলনকে চিন্তিত মনে হলো। 'যাহ অতদূর যাবার দরকার কি, রাখাল বলে- শুন, তোদের পাশের গ্রামের কুদ্দুসের জন্মের তিন দিন আগে মফিজের মায়ের ঘরে আগুন লাগছিল, তার ১৫ দিন পর মদন মারা গেছে সেই বাড়ির পোড়া আলু খেয়ে, ওর মারা যাবার ২২ দিন আগেই তোর জন্ম হইছিল। এখন কুদ্দুসের জন্ম তারিখটা জানলেই সব বেরিয়ে যাবে...'
'কি বলিস?'
মিলন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে শুনছে, বাকীদের নিয়ে এর মধ্যেই রাখাল কাঁদামাটি মেশানো বালিতে ফিট। বুঝতে পেরে ক্ষেপে লাত্থি মেরে বালি ওড়ায়...
রাখালরা ফিরে চলে। এখানে সেখানে ছড়ানো ছিটানো ছোট বড় নৌযান, ষ্টিমার, কাঠের নৌকা, জেটি। নেমে যাওয়া পানিতে এদের অবয়ব ভাসে। অকল্পনীয় ঘোলাটে সব। ঘোলাটে পানি মুক্তোর দানা বুকেতে নিয়ে অদূরের নোনতা সমুদ্রে মিশে গেছে... রাখাল দূরের সেই সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে... তারপর আক্ষেপ বুকেতে নিয়ে বলে...
'সত্যিই এটা সমুদ্র?'
'তা দেখছিস কি?' তিনজনেই চোখ-মুখ টিপে হাসে, এবং রাখালের মুখ খোলার আগেই সমস্বরে সুর তোলে...
'নাহ এটা হতেই পারেনা, একজন রাখালকে প্রথম সুমদ্র দেখাবে বলে কথা দিয়েছেন, হা হা হা হা'
রাখাল না হেসে পারে না, আনমনে মাথা নাড়ায়। পড়ন্ত বিকেলের শেষে ওরা মুখেতে ডুবে যাওয়া সুয্যি নিয়ে এগিয়ে যায় গরম নিঃশ্বাসের নগরীতে।
---[ চট্টলা, ০৪-০১-০৭ইং ]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



