অঞ্জন মিয়া,উপমহাদেশের বিখ্যাত কৃপণ।
দোজাহানের কৃপণ সংঘের বাংলাদেশ শাখার অসাধারণ সম্পাদক।
কিন্তু তিনি বারবারই বলে থাকেন এই পদে তার থেকে তার বিবি যোগ্য বেশি।
সেন্টু গেব্জি পড়তে পড়তে তিনি চিন্তা করলেন বউয়ের আদরে কোন ঈদেই পাঞ্জাবী পড়তে পারিনি।এই ঈদে সে দামি পাঞ্জাবী পড়বেই কারন তার কৈশোর যৌবন গেল সেন্টু গেঞ্জিময়।
তিনি কেজি দরে পেপার কিনেন।হোক ৬ মাস আগের খবর তাতে কি? সেই পেপার গুলি থেকে খুজে বের করে পাঞ্জাবির খোজ খবর নিলেন।
২টা জায়গা পছন্দ হল।প্রথম অঞ্জন’স কারন তার নামে নাম দ্বিতীয় আড়ং, হালের পোলাপাইন নাকি এইখান থেকে কিনে।
তার পিতামহ তার একাউন্টে অনির্দিষ্ট পরিমান টাকা রেখে গেছেন আর তিনি মাসে মাসে শুয়ে শুয়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পান।
আজ তিনি ব্যাংক থেকে ১৯৯৯ টাকা তুলবেন কারন তিনি খোজ নিয়ে জেনেছেন পাঞ্জাবির দাম এই রকমই হয়।
এক টাকা বেশ দিমু কেন? অঞ্জন মিয়ার সাফ কথা।
বউকে না বলে বেরিয়ে পড়লো পাঞ্জাবীর দোকানে।কারন বউ শুনলে বলবে ১৯৯৯ টাকার মানে বুঝো? ২ বছর ডেরশ কিনতে পারবো এই টাকা দিয়ে।
অঞ্জন্স’স এ ডুকে পাঞ্জাবি দেখতে গিয়ে দাম দেখা শুরু করল।বহুদিনের অভ্যাস।কিন্তু না আজ না।আজ যেইটা ভালো লাগবে সেইটাই কিনবো, প্রয়োজনে তেল ছাড়া তরকারি খাবো তাও নো কিপ্টামি আজ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েক মেয়েছেলে তার আশেপাশে ভীর জমাতে শুরু করলো স্যার এটা দেখেন আপনাকে মানাবে।নিউ ডিজাইন।
অঞ্জন মিয়া মনে মনে বলে “আমারে সেন্টু গেঞ্জি পড়লেও মানায় আজ আসছি দামি জিনিশ কিনতে”।
কিন্তু মেয়েছেলের অত্যাচার তীব্র আকার ধারন করেছে।বউয়ের অত্যাচার থেকে বাচতেই তাকে আনেনি আর এখানেও ঝামেলা।
হায় আল্লাহ তোমার দুনিয়ার সব মেয়েছেলেই কি একরকম?
বের হয়ে গেল অঞ্জন’স থেকে।
প্রথমটা বাদ।এখন গন্তব্য আড়ং।
একদিন নকশায় আড়ং এর একটা পাঞ্জাবীবি তার ছেলে দেখেছিলো।বলেছিল একদিনের জন্য আব্বু পাঞ্জাবিটা ভাড়া এনে দাও না।
আজ যদি সে পাঞ্জাবীটা পায় সে কিনেই ফেলবে।
আড়ং এ ডুকলো অনেক বড় জায়গা।
পাঞ্জাবী থেকে আগে মানুষ দেখা শুরু করল।কারন দামি পাঞ্জাবি যারা কিনে তারা বড় মনের মানুষ।আমিও কম কি?
অঞ্জন মিয়া পাঞ্জাবী কিনতে আসছে এখনও কিনেনি তাই তাকে বড় মনের মানুষ বলা যাবে কিনা বুঝা যাচ্ছেনা।আমিও কম কি কথাটা সে বর্জন করলো।
একটা পাঞ্জাবী তার পছন্দ হয়েই গেল।দাম একদম লেভেল ১৯৯৯।
সে মহা খুশি।
সেলস ম্যান বললো স্যার ট্রায়াল দেন।
বেশ বড় হয়ে গেল পাঞ্জাবী টা।কিন্তু সে খুশি কারন তার চিন্তা দীর্ঘমেয়াদী,
একদিন সে আরো মোটা হবে সেইদিনও সে এইপাঞ্জাবীটা পড়তে পারবে।
টাকা দিতে গিয়ে লাগল বিপত্তি পাঞ্জাবীর দাম নাকি ২১০০।
দাম লেখা ১৯৯৯ আপনারা বেশি রাখবেন কেন?
স্যার এটা ভ্যাট।
এহ আমারে ভ্যাট শিখাও পাঞ্জাবীর উপরে ভ্যাট কি? জুতা কিনি মোজা কিনি ভ্যাট নাই আর পাঞ্জাবীতে একশো টাকা ভ্যাট।
স্যার এটাই নিয়ম।
নিয়মের খেতা পুরি।
অঞ্জনের মনটা খারাপ হয়ে গেল।
পাঞ্জাবী আর নিবেনা ঠিক করলো।
আড়ং এর আরেকপাশ ঘুরে দেখতে লাগলো।চোখে পড়লো ফ্রিজ,ভাবলো ফ্রিজে কি পাঞ্জাবী রাখে নাকি?
তার ফ্রিজ সম্পর্কে ধারনা নাই, রাখতেও পারে।
কিন্তু না দেখল আড়ং এর দুধ।
ভাবলো ভাতের মাড়কে দুধ ভেবে কতদিন ধরে খাবো আর,আজ এখান থেকে আধা লিটার দুধ নিয়ে যাই।
পাঞ্জাবী কিনতে এসে অঞ্জন মিয়া আধা লিটার দুধ কিনে বাসায় রওনা হল।
বাসায় পৌছতেই বউয়ের ধমক হায় হায় আধা লিটার দুধ!!!!!!
অঞ্জন ভাবে আর হাসে পাঞ্জাবী কিনে নিয়ে আসলে আমাকে সেই পাঞ্জাবী দিয়েই ফ্যানে জুলিয়ে রাখতো...
তানভীর মাহমুদুল হাসান
২/৮/২০১২
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:১৯