somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলকাতা ভ্রমণ,দুর্গাপূজায় কলকাতায়।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

*দুর্গাপূজায় কলকাতায়*
৫০০ টাকায় কিভাবে কলকাতায় দুর্গাপূজায় ঘুরে আসবেন আমি এমন কিছু লিখবো না।আমি যা করেছি দেখেছি খেয়েছি তা নিয়েই লিখবো।প্রথমত,স্বাভাবিক ভবেই বেনোপাল পার হয়ে একটা ক্যাব ভাড়া নিলাম যা নিয়ে যাবে হোটেল পর্যন্ত (মারকুইস স্ট্রিটে)।ঢাকায় থাকা এক ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে ইন্ডিয়ান সিম আগেই নিয়ে নিয়েছিলাম।বনগাঁও এর পাঁশটায় আসতেই দেখা যাচ্ছে সব মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে বাজারে যাচ্ছে ,এদিকে সেদিকে যাচ্ছে,এমনকি শাড়ি পরেও।(কিন্তু একজন লেখক বলেছিলেন শাড়ি পরে শুধু শুয়ে থাকা যায়)।রাস্তার এখানে ওখানে পূজা মণ্ডপ এর প্রস্তুতি।পুজার দু তিনদিন আগের কথা হবে।চলতে চলতে এক ফাকে আমি সিমে ১৫০ রুপী দিয়ে ৩ জিবি ঢুকিয়ে নিলাম।দোকানদার দাদা বলল “টক টাইম টাও ভরে নাও না”।নেইনি।কার সাথে কথা বলব?
২ ঘণ্টা জার্নির পর একটা রেস্টুরেন্ট এ যাত্রা বিরতি নিলাম সেখানে কারিশমা কাপুর এর ছবি দিয়ে ঐ ছবিতে লেখা লেডিস টয়লেট আর অভিষেক বচ্চন এর ছবি দিয়ে লেখা জেন্টস টয়লেট।সেখানে সামান্য চা নাস্তা করে আবার যাত্রা শুরু করতে গিয়ে দেখি ড্রাইভার তার আরেক ড্রাইভার ফ্রেন্ড কে পাঠাবে আমাদের শহরে দিয়ে আসতে,সে যেতে পারবেনা।আচমকা কারণে তার মন খারাপ।যার আচমকা কারণে মন খারাপ হয় তাকে জিগ্যেস করা ঠিক না যে তার কি হয়েছে।পরের ড্রাইভার স্বাস্থ্যবান মানুষ(মোটা না)।কাইউম খান।তিনি উত্তর প্রদেশ এর লোক।মজার মানুষ।পান মাসালা খাচ্ছেন,পিক ফেলছেন আর “উল্টা সিদা” জোকস বলে মজা দিচ্ছেন।এরও প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা শহরে ঢুকে যাচ্ছি।
ঐ হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব,পানি পুরির দোকান দেখা যাচ্ছে।দেখতে দেখতে হোটেলে চলে এলাম।হোটেল আগে থেকে বুক করা ছিল।কিন্তু আমার হাতে সময় কম ছিল।আমার দেশে ফিরে আসার? না।সেদিন ইডেন গার্ডেনে খেলা ছিল ইন্ডিয়া অস্ট্রেলিয়ার।প্রথম ইনিংস শেষ।ইনিংস সব শেষ হয়ে যাক,আমার একটু খেলা দেখতে পারলেই হয়।সত্যি কথা বলতে একবার ঢুকতে পারলে আর একটা ছবি তুলতে পারলেই হয়।গুগোল ম্যাপ ওপেন করে হোটেল থেকে হাটা দিলাম ইডেন এর উদ্দেশ্যে।হাটতে হাটতে মেইন রোডে এসে এক বাস কে জিজ্ঞেস করতেই বলল “উটুন দাদা,নামিয়ে দোবো”
তাকে ৬ রুপী দিয়ে এক হাত বাসের হ্যান্ডেলে আর অন্য হাত দিয়ে গুগোল ম্যাপ এর নির্দেশনা ফলো করে যাচ্ছি।বাসের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।হাফ প্যান্ট পরা ঘর্মান্ত এক যুবক।গরম খুব বেশি ছিল।তাদের বেশিক্ষণ দেখতে দেইনি আমাকে,স্টেডিয়াম এর লাইট দেখতেই নেমে গেলাম।কিন্তু নামলে কি হবে? এত আবেগ উত্তেজনা থাকলে কি হবে? টিকেট তো লাগবে।তাই না? তো পকেট থেকে ৫০০ রুপী বের করে হাতে রাখলাম আর মনে মনে দুই নাম্বার লোক খুজে যাচ্ছিলাম।কিছু কিছু সময় ভালো মানুষ এর কোন দরকার পরেনা,দরকার পরে দুই নাম্বার মানুষের।অবশেষে পেলাম একজন।সে আমাকে সাইডে নিলো।আমিও রুপী টা শক্ত করে ধরলাম।সে হিন্দি বলে, “টিকেট মিলেগা লেকিন রুপী লাগেগা”।
একটু ইতস্থত হয়ে গেলাম।ভাবলাম এই না ২০০০ রুপী চেয়ে বসে।সে একটু আকাশপানে তাকিয়ে অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে “দাদা ২০০ রুপী লাগেগা”।
মনে মনে হাসলাম,দ্রুত রুপী দিয়ে দৌড় দিলাম স্টেডিয়ামে।স্টেডিয়ামে খেলা দেখার আগে কিছু ছবি তুলে নিলাম।বাইরে গিয়ে ২০ রূপীর নুডলস নিলাম আর ৫০ টাকার পেপসি।নুডলস এ ডিম সবজি কিছু নেই শুধু নুডলস।এটা আর কতক্ষণ চাবান যায়?
এই গরমে খেলায় মন বসছিল না।মন বসছিল গোসলে।হোটেলের দিকে রওনা হচ্ছি।গুগোল ম্যাপ আর কোলকাতার সাদা পুলিশ কে ভরশা করে।সাদা পুলিশ খুব সাহায্য করে।সাদা বলা ঠিক হয়নি,ওরা পুলিশ শুধু সাদা ড্রেস পরা এই যা।হেটে হেটে আশপাশ দেখতে দেখতে চলে এলাম হোটেল।আসার পথে সদর স্ট্রিটটা নেড়েচেড়ে দেখে ভোজ রেস্টুরেন্টে খেয়ে রুমে ফিরলাম।

প্রথম দিনের সমাপ্তি ঘটে এভাবেই।প্রথম দিনের সমাপ্তি ঘটতে ঘটতে সামনে আসে দ্বিতীয় দিন।কিন্তু সেই রাতে সব জেনে নিলাম।কেন আমাকে উবারে চড়তে হবে কেন ওলা(উবার এর মতই) তে চড়তে হবে।উবের বলতে হয় সেখানে আর উবার এর একটা অপশান উবার পুল।না কোন সুইমিং পুল এর অংশ না,উবার পুল মানে শেয়ার করে উবার নেয়া।৩ জন এর মত এক গাড়িতে,যেটা খুব সাশ্রয়ী।পরদিন বিকেলে উবার এ গেলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।৬০ রূপীর মত ভাড়া আসে।ভিক্টোরিয়া একটু দেখেই খিদে লেগে গেলো।তাড়াহুড়া করে বের হয়ে পাপড়ি চাট,ফল খেয়ে নিলাম আর সামনে থাকে ময়দানে একটু হাঁটাহাঁটি করে পার্ক সার্কাস এর দিকে অবস্থিত আরসালান নামের বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট এ চলে গেলাম।কি আছে না আছে পরে,আগে বিরিয়নি অর্ডার করলাম।কোক এর অন্য এক ভার্শন থাম্বস আপ তো আছেই (৩৫০ml) এর।এক কোথায় দারুণ।ওদের খাসির মাংসটা একদম তুলতলে নরম হয় নরম বালিশ এর মত।শুধু খেলেই হবেনা আরেকটু দেখতে হবে,রাত এখনো যৌবনে আছে।Metro নামের একটা এপস আছে,যেখানে চাপ দিলেই জানা যায় কাছাকাছি কোথায় মেট্রো আছে।আমি জেনে নিলাম কাছের রবীন্দ্র সদনে মেট্রো আছে।আছে ঠিক আছে কিন্তু আমি এখন কোন দিকে যাব? তাও ঘেটে দেখলাম পার্ক স্ট্রিটে যাব।সেখান থেকে হেটে হেটে হোটেল।৫ রুপী দিয়ে মেট্রোর টিকেট কাটলাম।স্টেশন এ নেমেই দেখছি ১০ মিনিট পর পর ট্রেন আসছে।আমি আমার টায় উঠে গেলাম।চুপচাপ হেড ফোন কানে নিয়ে দাড়িয়ে আছি।৫ মিনিটেই নেমে গেলাম পার্ক স্ট্রিট।পার্ক স্ট্রিট অনেকটা প্রাণবন্ত।যাকে জিগ্যেস করছি দাদা মারকুইস স্ট্রিট কোন দিকে? সে বলছে “হাম তো দাদা টাল হে আভি,কেসে পাতা?”।পার্ক স্ট্রিট এর মত আনন্দময় জায়গা থেকে হেটে হেটে চলে এলাম মির্জাগালিবে।যেখানে দেখি মাটির কাপে দুধ বিক্রি হচ্ছে।মাটির কাপে যা খেয়েছি কিন্তু দুধ? হা ১৬ রূপীর দুধ খেয়ে দ্বিতীয় দিনও শেষ।
তৃতীয় দিনের প্ল্যানিং করতে গিয়ে প্রথমেই রাখলাম টেরেটি বাজার।যেখানে চাইনিজরা ফুটপাথে সকালে নাস্তা বিক্রি করে সকাল সকাল।আমি সকাল ৮ টায় গিয়ে ভাবলাম তাদের চমকে দিবো কিন্তু তারা উল্টো আমাদের চমকে দিয়ে বলে নাস্তা তো সেই সকাল ৬ টাতেই শেষ,এখন কিছু আছে,দিব? যা কিছু ছিল তাই নিলাম।চাইনিজ/তিব্বতিয়ান মানুষরা রান্না করে বিক্রি করে।নাস্তাটায় টান পরে গেলো।দিনের সকালে অন্তত খাবারের অভাব সহ্য করা যায়না।তবু যা হয়েছে হয়েছে ভেবেই চলে গেলাম যাদবপুর।যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।যে শহরে আসব সে শহরের একটা বিশ্ববিদ্যালয় দেখবো না তা তো হয়না।বিশ্ববিদ্যালয় এর সামনে ৬০ টাকার এক প্লেট মাটন বিরিয়ানি খেয়েই সকালের আফসুস মিটে গেলো।আবারো দেখা হয়ে গেলো নরম বালিশ এর মত খাসীর মাংসের সাথে আর বাসমতি চালের সাথে।যাদবপুর এর গেটে ঢুকেই বুঝে যাচ্ছি আমি আরেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে যাচ্ছি।খেলার মাঠ,স্টুডেন্ট দের আনাগোনা,রাজনৈতিক নেতাদের দল বেধে হেটে যাওয়ায় আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই মনে করিয়ে দেয়।লাঞ্চ করার প্ল্যান ছিল তপসিয়া চায়না টাউনে।উবার কে সেই মতেই কল দিলাম।কিন্তু উবার ড্রাইভার আমাকে সাউথ সিটি মলে নামিয়ে দেয়।বলে এটাই।আমি ক্ষুব্ধ যে আমার সাথে প্রতারনা করা হয়েছে।কিন্তু কিছু সময় পরেই ভুল ভাঙ্গে,চায়না টাউন তপসিয়া তে,যেখানে অনেক অনেক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট আর সাউথ সিটি মলের ভিতরেও আরেক চায়না টাউন আছে।মাঝে মাঝে আসলেই গুগোল ম্যাপ কে সিরিয়াসলি নিতে নেই।রাগে মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে ফেলব ভেবেছিলাম কিন্তু ভাবলাম “থাক”।ওর সাথে রাগ করে আর কি হবে।সাউথ সিটি মল টা হেটে হেটে দেখলাম।কথা আছেনা যে,ভুল ট্রেন ও অনেক সময় ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেয়,আমার বেলাতেও তাই।সুন্দর শপিং মল এবং যথেষ্ট বড়।শপিং মল থেকে বের হয়ে আমার প্ল্যান হয় যে, কলেজ স্ট্রিটে যাবার,কলকাতা এসে বই কিনবো না তা তো হয়না।বই না পড়লেও বই কিনে নিয়ে যাব।যাই হোক অতঃপর আর উবার নেইনি।আশেপাশে মেট্রো রেল এর স্টেশন ছিল টলিগঞ্জ এর দিকে।সিনেমা দেখার প্রতি আগ্রহ আছে কিন্তু সিনেমা পাড়ার প্রতি এত আগ্রহ নেই।তবু যেহেতু কাছে এসেই গেলাম তবে কেন যাবনা?৫/১০ মিনিটেই লাইট ক্যামেরা একশান দেখলাম।আমাদের এফডিসির মত? হা অনেকটা।কিন্তু এফডিসির দারোয়ান যেমন ১০০/১৫০ টাকা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয় ভিতরে,ওখানে অমন না।গেইট একদম ওপেন।যদি আপনি অবাক হয়ে আশপাশ দেখেন তবে ভিতরের মানুষও আপনাকে অবাক হয়েই দেখবে।আমার টার্গেট যেহেতু ছিল কলেজ স্ট্রিট তাই আমি আমার দিকেই ফেরত যাই।আমি চলচিত্র থেকে সাহিত্যের দিকে যাবার আগে জিগ্যেস করে নিলাম কিভাবে যাওয়া যায় কিন্তু তার আগে আমি জেনে ছিলাম এখানে মেট্রো স্টেশন আছে।তো মেট্রোতে উঠে চলে গেলাম মহত্মা গান্ধী স্টেশন।যেখান থেকে ৫ মিনিটে হেটেই চলে যেতে পারব কলেজ স্ট্রিট।হাটতে হাটতে আজান হয়।খিদে পেট নিয়ে চোখে পরে ঘোষ কেবিন।ঢুকে যাই ঘোষ কেবিনে।সিঙ্গারা আর মাটির কাপে চা।আহ কলকাতা।
১০ টাকার মত বিল দিয়েই বই এর দোকানে দোকানে হাটা।কি আর হাটা।পারলে দাদাবাবুরা কোলে করেই তাদের দোকানে নিয়ে যায়। “দাদা কি বই দাদা,বলুন না কি চাচ্চিলেন”।কিন্তু নীলক্ষেতে এ বই এর দাম যথেষ্ট কম।ওখানের মানুষ এখনো বই জমায়।এমনও আছে যে বই সারাজীবন রেখে দেয়,অথচ আমার গত বছরের পড়া সব বই এখনো নীলক্ষেতের ফুটপাথে দেখা যাবে কেউ ৫০/৬০ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছি।অতঃপর একটা বই কিনে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি ট্রাম,ট্রেন,মেট্রো উবার,ওলা,হলুদ ট্যাক্সি, লোকাল বাস, এসি বাস সব কাছাকাছি।কলকাতার এই জিনিষটা খুব সুন্দর।যেদিনে হাত বাড়াবেন শুধু যানবাহন।না,হাত বাড়াতে হবেনা,এমনি চলে আসবে যানবাহন।কিন্তু সেই সময়টায় পূজা প্রায় শুরু হয়ে যাচ্ছিল।আমি এক উবার কল করি কিন্তু দাদা একটু দূরে।আর তিনিও হিন্দি ছাড়া বলছেন না আর আমিও হিন্দি পারিনা।তিনি ফোনে বলছে “কাহা কাহা” আমি বলছি আহা আহা।সব মিলিয়ে তাকে পেতে বেশ কষ্ট পেতে হয়।আমি এমন জায়গায় দাঁড়ানো ছিলাম যেখানে গাড়ি থামেনা।তো তিনি একটু থামাতেই পুলিশ তাকে দৌড়ানো দিল,শুধু তাই না,পুলিশ ও তার পিছু দৌড়াচ্ছে।আমাকে ফোন দিয়ে বলল “দাদা আপকো থোরা সা দৌড় দেনা পারেগা”
কি আর করা,থোরাসা দৌড়েই তাকে ধরলাম।ফ্রেশ হয়ে মাঝ রাতে নিউমার্কেট এরিয়ার দিকে খেয়ে নিলাম আর হেটে হেটে দেখলাম সব গুলা স্ট্রিট,এসপ্ল্যানেড,ধর্মতলা,সদর স্ট্রিট,পার্ক স্ট্রিট।কথা বললাম টানা রিকশাওয়ালাদের সাথে।পান মাসালা কিনে পুরাটা মুখে দিয়ে দিলাম।২ মিনিটেই মাথা ঘুরানো শুরু।তাদের সিগারেট এর দোকানে যত সব মসলা দেখবেন সব গুলাতেই তামাক আছে।তাই এগুলা না খাওয়াই ঠিক।মাথা ঘুরানো নিয়ে তো আর শহর দেখা যায়না।কেউ যদি বলে আপনি বা দিকে যাবেন তো আমি যাচ্ছি ডান দিকে।অগত্যা টানা রিকশা নিয়ে চলে এলাম হোটেলে।
(চতুর্থ দিনটা সারাদিন কাটে শান্তিনিকেতনে।এটা নিয়ে পরে লিখবো)
পঞ্চম দিনে আমি অনেকটা লোম ছাড়া ভেড়ার মত হয়ে যাই।শরীরে কোন মতেই চার্জ নিচ্ছেনা।কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ নামের জায়গার দিকে হলদিরামে দারুণ একটা লাঞ্চ করি আগে।যা ছিল সবজির আইটেম।সবজির বাইরে পনির ছিল।পনির কে আমি মাছ ভেবেছিলাম।খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর বুঝতে পারি এ তো পনির ছিল।তারপর গন্তব্য সাইন্স সিটি আর প্রিন্সেপ ঘাট।সাইন্স সিটি ছোটদের জন্য ভালো,আমার মত মানুষদের জন্য না।জানা অজানা কারণে আমার মন শুধু পার্ক স্ট্রিটে চলে যেতে চায়।সাইন্স সিটির পর প্রিন্সেপ ঘাট দেখলাম।বিদ্যাসাগর সেতুর নিচে যে ঘাট সেটাই প্রিন্সেপ ঘাট।বিদ্যাসাগর অনেক সুন্দর একটা সেতু কিন্তু আমাকে হাওড় ব্রিজ টাই টানে।এই ব্রিজ টার দিকে তাকালেই মনে হয় কলকাতাকে দেখছি।হোটেলে ফেরার পথে অনেক মাল্টিপ্লেক্স আর টকিজ চোখে পরে।একটা না একটা মুভি তো দেখতে হয়।রাত ৯ টার শো দেখতে চলে যাই প্যারাডাইজ মুভিতে।সঞ্জয় দত্তের ভুমি মুভি চলছে।১১০ রূপীর টিকেট কেটে যখন বসি তখন দেখি ৪/৫ জন ছাড়া কেউ নেই(সঞ্জয় দত্ত সহ গুনলাম)।সালমান খান যেমন ৫ হাজার গাড়ি ও ৬ হাজার নারী নিয়ে ফিল্মে এন্ট্রি নেয় সেখানে সঞ্জয় দত্ত এন্ট্রি নেয় মাত্র এক গ্লাস মদ নিয়ে।মুভির ভিতরের গল্পে যাব না।ভাল লাগেনি দেখে বেরিয়ে গেলাম।বেরিয়েই চলে গেলাম পার্ক স্ট্রিটে।আগেই বলেছি পার্ক স্ট্রিট আমাকে টানে বেশি।কিন্তু হলুদ ট্যাক্সি তে যাব বলেই শপথ করেছিলাম।কারণ একদিন উবার খুজতে গিয়ে দেখি সামনে এক হলুদ ট্যাক্সি আসে।বলল “দাদা চলুন”।ভাড়া জিগ্যেস করতে সে উবারের মতই দাম চাইলো।আর বলল, চলুন এই দামে কেউ যাবেনা।আমি বললাম উবার যাবে,উবারে তো এসি আছে।সে মন খারাপ করে চলে গেলো।এভাবে বলা ঠিক হয়নি আমার।তারা ভালো ফোন,গুগোল ম্যাপ চালাতে পারেনা।শেষ বয়সে আছে।তো সেই রাতে হলুদ ক্যাবেই চলে গেলাম পার্ক স্ট্রিট।ঘড়ির কাটা তাকাতে তাকাতে আমার পঞ্চম দিনটাও শেষ।
ষষ্ট দিনটায় পুজার ষষ্টি।উৎসব উৎসব ভাব।পাঞ্জাবী পরে বেরিয়ে পরলাম দূরের দক্ষিণেশ্বর মন্দির।একটু দূরে।সুন্দর জিনিষ তো দূরেই থাকে।সে দূরেই চলে গেলাম।অনেক অনেক মানুষ।এত মানুষের ভিড়ে যদি হারিয়ে যাই অবাক হবো না।জুতা আর মোবাইল জমা দিতে হয়।গরম ফ্লোরে জুতা ছাড়া হেটে দেখি আমার জন্ডিস টায়ফয়েড এখনই হয়ে যাবে ভাবতেই বের হলাম।উবার খুজতে গিয়ে দেখি নেই।এক এসি বাস আসছে দেখে উঠে পরলাম।ভাবলাম এইবারও যাতে ভুল বাস ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেয়।বাস এর রোড দেখতে গিয়ে দেখি নামিয়ে দিবে ইকো পার্ক,মাদার ওয়াক্স মিউজিয়ামের সামনে।নেমে দেখে নিলাম পার্ক।একটা আইফেল টাউয়ার বসানো আছে।প্যারিস প্যারিস একটা আবহাওয়া।কিন্তু এই কলকাতার প্যারিসে যে গরম তাতে বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না।চলে গেলাম চায়না টাউন তপসিয়ার দিকে।যেটা অন্য দিন খুজতে গিয়ে পাইনি।সেটা আজ না খুজতেই পেয়ে গেলাম।স্পেশালিটি কি? সারি সারি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট।সেদিন নিউমার্কেট টাতেও যেতে হবে দ্রুত চলে গেলাম।কিছু কেনা কাটা করে রেস্ট নিয়ে আমার পরবর্তী গন্তব্য মাদার হাউজ।যেখানে সমাহিত মাদার তেরেসা।ওখানে অনেক দেশের কিছু ভলান্টিয়ার পাওয়া যায় যারা সারাদিন থেকে মানুষকে হেল্প করে দেখাতে।আমাকে বলল যদি হতেই চাই ভলান্টিয়ার তবে যাতে সকাল সকাল চলে আসি।(নাস্তা ফ্রি)।
সপ্তম দিন আমার শেষ দিন।দুপুরের দিকে রওনা হবো।কিন্তু সকাল তো আছে।ভোর সকালে হাটতে বের হলাম।শুধু হাটা।এই সেই ট্যাক্সির জানালা দিয়ে আর কতটুকু দেখা যায় এই শহর? প্রথমে চলে গেলাম মল্লিক ঘাট।হাওড়া ব্রিজের নিচে এক ফুলের মার্কেট।আমাদের শাহবাগের মত,শুধু আমাদের ঘাট নেই।ফেরার পথে রাইটার্স বিল্ডিং, চার্চ থেকে শুরু করে নানা বিল্ডিং।সবাই আমার ঘামে ভেজা গেঞ্জি দেখে বলেছে
"ওমা এ কি অবস্থা" হোটেলে ফিরছি আর ৭ দিনের সফর শেষ হচ্ছে।আস্তে আস্তে হাঁটছি তাই।দ্রুত হাঁটলেই তো আরও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।ব্যাগ গুছাতে গিয়ে খারাপ লেগেছে।এই শহরের প্রতি আমার অন্য রকম একটা মায়া জন্মে গিয়েছে।এই শহরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত আমি একা একাই ঘুরেছি।আমার সঙ্গীহীন শহরের একমাত্র আপন ছিল এই শহর।এই শহরের প্রেমিকাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসতে দেখেছি তার প্রেমিকের মুখের দিকে তাকিয়ে।হলুদ ট্যাক্সির ড্রাইভারকে দেখেছি পানের পিক ফেলতে এখানে সেখানে।আবার দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় এই আচমকা হুট করে ট্রাম এসে আমার সামনে দাড়িয়ে থাকতেও দেখেছি।পার্ক স্ট্রিটে এক মাতাল কে দেখেছি নাচতে নাচতে শুয়ে পরতে।কলেজ স্ট্রিটে বই দামাদামি করছিল এক দিদি,বলছিল " বড্ড বেশি চাইছো গো", আমি তাও দেখেছি।
এই মানুষগুলার ভাষা বুঝি,আবেগ বুঝি।
কিন্তু বাঙালী হয়েও এই এক বাঙালীর শহরে আমি অন্য দেশের বাসিন্দা।আমার তাই ফিরে যেতে হয়।
আবার আসবো প্রত্যয় নিয়ে ফিরে।
ছবি গুলি দেখতে আমার এই এ্যালবাম টা দেখে নিন।

https://www.facebook.com/tanvir.mh/posts/10214442680004660

তানভীর মাহমুদুল হাসান
২৮-০৯-২০১৭
[email protected]

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×