ঢাকায় থাকি। ইট পাথরের এই শহরের এক কোনায় ছোট্ট আমার বাসা। বাসার সামনে একটি কামরাঙা গাছ। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গাসটার দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে দেখি দুটো টিয়া পাখি মনের আনন্দে কামরাঙা খেয়ে যাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি পাখিদুটো যতটুকু না খাচ্ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি কামড়ে কামড়ে ফেলে পুরো উঠান নষ্ট করছিল। সে যাই হোক, এত সুন্দর একটি দৃশ্য দেখে আমি সত্যিই অনেক আনন্দিত ছিলাম। এই দৃশ্যটি দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল বেশ কয়েকদিন। গাছের কামরাঙা ফুরিয়ে গেল, পাখিরাও আমার বাসার কথা দিব্যি ভুলে গেল।
অধীর আগ্রহে আমি অপেক্ষা করছি আবার কবে গাছে কামরাঙা হবে! সত্যি সত্যি একদিন গাছটায় গোলাপী রঙের ছোট ছোট ফুল দেখা দিল, কিছুদিনের মধ্যেই কচি কচি গাড় সবুজ কামরাঙা। রোজ সকালে তাকিয়ে থাকি গাছটার দিকে, যেকোন দিন হয়তো দেখতে পাবো আমার সেই প্রিয় দৃশ্যটি। কি আশ্চর্য, সত্যি সত্যি পাখিদুটো আবার আসতে শুরু করল। এই ইট-পাথরের শহরের কোথা থেকে আসে এরা, বিশাল বিশাল দালান-কোঠার নিচে প্রায় ঢাকা পরা এই গাছটার সন্ধান এরা পায় কিভাবে, আমি অবাক হয়ে ভাবি! আমি আবার উপভোগ করার সুযোগ পেলাম আমার প্রিয় দৃশ্যটি।
যথারীতি এইবার আবার আমাদের কামরাঙা গাছটায় ফুল ফুটলো, কামরাঙাও হল, কিছুদিনের মধ্যে পাখিরো দেখা পেলাম। পার্থক্য শুধু এতটুকু, দুটো পাখির যায়গায় এখন একটি। আজ প্রায় অনেকদিন হল আমি একটি পাখি দেখছি। রোজ ভাবি আজ হয়ত দুটোকেই দেখব, কিন্তু আমাকে রোজই হতাশ হতে হয়। দুঃখে আজ মাকে বলেই ফেললাম- “দেখেছ মা, এখন একটা পাখি আসে, কতদিন হল আরেকটা পাখি আসে না”। অন্যমনষ্কভাবে আমার মার উত্তর- “টিয়া পাখিতো, হয়তো কেউ ধরে বিক্রি-টিক্রি করে দিয়েছে, দেখিসনা মেলায় কত টিয়া পাখি পাওয়া যায়”। শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
আগে যে দৃশ্যটি দেখে আমি আনন্দ পেতাম এখন সেই দৃশ্যটি দেখে আমি কষ্ট পাই, পাখিটির একাকিত্ত্ব আমাকে আমার জাতির নিষ্ঠুরতা মনে করিয়ে দেয়। আমি সত্যিই কষ্ট পাই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






