মাকড়সা
আত্মীয় পরিজনের সময়ে-অসময়ে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আমি আমার জীবনে প্রায়ই হাসপাতালে সময় কাটিয়েছি। বলা চলে হাসপাতালের সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক হয়তোবা আমি রোগীদের একজন ভালো বন্ধু। যে কারণে আমার জীবনে বার বার হাসপাতালে যেতে হয়েছে।
সেপ্টেম্বর, ২০০৯ এর কথা। আমি আমার অসুস্থ এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করার জন্য প্রায়ই হাসপাতালে যাই। আমি সাধারণত হাসপাতালে রাত আটটা - নয়টার দিকে যাই আর এগারো - বারোটার দিকে বাসায় ফিরে আসি। সারাদিনের কাজকর্ম শেষে লম্বা জার্নি করে হাসপাতালে পৌছে মাঝে মাঝে বেশ ক্লান্ত থাকি, কখনো হাসপাতালের রুমে কোনো বেড খালি পেলে সেখানে কিছুক্ষন শুয়ে বিশ্রাম নেই, কখনো কখনো হয়তোবা ৪০ - ৪৫ মিনিট ঘুমাই। হাসপাতাল ভবনের দোতলায় যে রুমে আমার আত্মীয় থাকেন সে রুমে ত্রিশটি ষ্টিলের বেড। বিশাল রুম, জেনারেল ওয়ার্ড। এটি ঢাকায় পুরাতন একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ।
রমজান মাস। সেদিন ঠিক কতো তারিখ বা কি বার ছিলো সঠিক মনে নেই। বেশ ক্লান্ত ছিলাম, হাসপাতালে পৌছে আত্মীয়ের সাথে ভালোমন্দ সামান্য কথা বলে দুই বেড পরের বেড খালি পেয়ে হাতের কনুই দিয়ে আলো আড়াল করে শুয়ে পরেছি। রাত আনুমানিক নয়টা, ওয়ার্ডে ক্লান্ত সিলিং ফ্যান আর ক্লান্ত টিউব লাইট। খুব সম্ভব ত্রিশ পয়ত্রিশ মিনিট পর আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পাশের বেডে এক ভদ্রলোক প্যারালাইজড ও বাকরুদ্ধ হয়ে শুয়ে আছেন তিনি মুখ বাঁকা করে গোঁ গোঁ শব্দে আমাকে হাত ইশারা করছেন ছাদের দিকে তাকাতে! আমি তাকাতেই দেখি ছাদে শীর্ণকায় বৃদ্ধ এক হিন্দু ভদ্রলোক! খালি গায়ে মালকোচ মারা সাদা ধুতি কাপড় পরে চার হাত পায়ে মাকড়সার মতো বিশ ফিট উঁচু ছাদ আঁকড়ে ধরে আছেন! তিনি আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছেন। এই বৃদ্ধ বয়ষে কেনো, কোনো মানুষের পক্ষেই এভাবে চলা বা ঝুলে থাকা সম্ভব নয়। তাৎক্ষনিক ঘুম ভেঙ্গে এমন কিছু দেখার জন্য আমার মস্তিস্ক তৈরি ছিলো না, আমার মনে হয়েছে শরীরে বিদ্যুতের শক খেয়ে খানিক সময়ের জন্য আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। সময় মাত্র তিন থেকে পাঁচ সেকেন্ড প্যারালাইজড রোগীর স্ত্রী মাল্টা কাঁটছিলেন তিনি এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে হাসপাতালের বিছানা হতে অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পরে গেলেন। ফ্লোরে রাতে ঘুমানোর জন্য তোষক ভাজ করা ছিলো তাই সে যাত্রা তিনি বেঁচে যান, তবে বাকরুদ্ধ প্যারালাইজড রোগী সে রাতেই মারা যান।
উপসংহার: আমরা সাধরণত খোলা চোখে যা দেখি, তা সব সময় সত্যি নাও হতে পারে।
উৎসর্গ: প্রিয় ব্লগার আহমেদ জী এস ভাই। যিনি মানুষ ও জীবনকে সাত রঙে দেখেছেন।
কৃতজ্ঞতা: সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৭