somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন চাঁদগাজী

১৭ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ দশ-বারো দিন যাবত লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। শেষ রাত হতে অঝর বৃষ্টি শুরু হয় ভোর ছয়টা সাতটা পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরে তারপর থেমে থেমে সারা দিন বৃষ্টি। বৃষ্টির ধরন দেখে মনে হতে পারে আল্লাহমাবুদ চাটগাঁ’য়ের আকাশে মাটির কলসি উপুর করে ধরে আছেন আর তাই এই বৃষ্টির কারণ। খোলা ছোট জানালায় রাতের মেঘলা আকাশে কখনো কখনো ঘোলা চাঁদ দেখা যায়। ঘরে সাদা চাল ডাল লবন ছাড়া আর কিছুই নেই। ক্ষুধার্ত চাঁদগাজী শেষ বিকেলে কেরোসিনের স্টোভে সারাদিনে একবেলা চাল ডাল দিয়ে সামান্য খিচুড়ির মতো রান্না করেন, গরম গরম খিচুড়ি এতোটাই তৃপ্তি করে খান যে, দেখে মনে হতে পারে তিনি সরাসরি বেহেস্তী খাবার খাচ্ছেন। সময় জুন, ১৯৭০।

চাঁদগাজী যে বাড়িটিতে থাকেন এটি লালখান বাজারে বিদ্যুৎ বিহীন কাঠের তৈরি দোতলা একটি বাড়ি। নিচ তলাতে আড়তদারি ঘর আর দোতলায় ছোট ছোট খুপড়ি মতো রুম করে থাকার ব্যবস্থা, উপরে টিনের চালা। শীত বৃষ্টির দিনে মোটামোটি ভালো যায় যদিও টিনের চালার পেরেকের ছিদ্র দিয়ে অনবরত পানি পরে আর রাস্তায় থাকে হাটু সমান পানি। তবে গরমকালে তালপাতা আর নারকেলপাতার হাতপাখা ছাড়া উপায়ান্তর থাকে না।

চাঁদগাজী সকালে গুড় চিড়া খেয়ে আড়তে খতিয়ান লেখার কাজ করেন। তাতে সামান্য কিছু টাকা পান, এতে করে তাঁর পড়ালেখা থাকা-খাওয়া টানাটানি করে চলে যায়। আড়তে কয়াল হিসেবে ছানু আর আনু নামে দুইভাই কাজ করেন। চাঁদগাজী ছানু আনুকে কুড়ি টাকা ধার দিয়েছেন - দুইভাই এই টাকা কোনোভাবেই ফেরত দিতে পারছে না। তাতে করে চাঁদগাজীর চলতে বেশ কষ্টই হচ্ছে। বলা যায়, ছানু আনুরও দোষ নেই। আড়তে তেমন কাজ নেই তাই চাঁদগাজী সহ ছানু আনুর বেতনও হচ্ছে না। আড়তদার রাধানাথ বাবু গালে হাত দিয়ে আজাদ পত্রিকা পড়েন। এছাড়া তাঁরও কোনো কাজ নেই।

আজ বৃহস্পতিবার। যথারিতি শেষ রাত হতে বৃস্টি হচ্ছে, আজ আর বৃষ্টি থামার নাম নেই। চাঁদগাজী বালিশের ভেতর থেকে খুচরা পয়সা বার করেন। ডাল ভাত খিচুড়ি আর পেটে যায় না। এক খাবার প্রতিদিন আর কতো ভালো লাগে! তিনি ভোরে বৃৃষ্টিতে ভিঁজেই বাজারে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য লইট্টা মাছ কিনবেন। লইট্টা মাছের ঝাল ঝাল ঝোল আর গরম গরম আতপ চালের সাদা ভাত! - ভাবতেই চোখমুখ ঝিমমিক করছে। চাঁদগাজী বাজারের দিকে দ্রুত হাটেন। মনে হতে পারে, তারাতারি বাজারে যেতে না পারলে বাজারের সব মাছ হয়তো শেষ হয়ে যাবে।

বাজারে ঢুকতেই এক লোককে দেখা গেলো জনে জনে জিগ্যাসা করছেন - কুলি লাগবে? কুলি? দেখতে ভদ্রঘরের কেউ মনে হয়। তাঁর কথা কেউ শোনেও শোনেন না - সবাই ব্যস্ত। খুব সম্ভব এটিই বাজারের নিয়ম “সবাই ব্যস্ত” চাঁদগাজী থমকে দাড়ান! তাঁর কুলি নিয়ে বাজার করার মতো বাজার নেই। এতো পয়সাও নেই। তারপরও তিনি লোকটির কাছে গিয়ে বলেন - আমার কুলি লাগবে। আমার সাথে আসুন। মাছ বাজারে ঢুকে এক সের লইট্টা মাছ আর তিন সের আতপ চাল কিনে ছালার ব্যাগে ভরে লোকটির হাতে দিয়ে বলেন “ঘরে যান, আপনার জন্য আপনার ছেলেমেয়ে অপেক্ষা করছে”। চাঁদগাজী বাজার বিহীন বাজার ছেড়ে বাইরে এসে আবার দ্রুত পায়ে হাটা ধরেন আড়তের দিকে। পুরুষ মানুষকে কখনো কাঁদতে নেই। চাঁদগাজী পেছনে একবার তাকালে হয়তো দেখতে পেতেন অশ্রুসজল চোখে পাথর হয়ে একজন তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন।

ছবি: Tafe Massey Ferguson Tractors
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: সামহোয়্যারইন ব্লগ। নির্বাচিত পোষ্টে “উক্ত লেখাটি” স্থান দেওয়াতে সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।







সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৩
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×