বিশেষ প্রতিবেদন
তারিখ: ২৪শে জুন, ২০২১ ইং। বৃহস্পতিবার।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবস (১) শহীদ দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারী (২) স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ (৩) বিজয় দিবস ১৬ই ডিসেম্বর। এছাড়া সরকারিভাবে ঘোষিত ও অঘোষিত অন্যান্য আরোও জাতীয় দিবস আছে যাতে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সহ স্কুল কলেজগুলো দিবসগুলো পালনে বন্ধ থাকে। তবে আপাতত বাংলাদেশের এই তিনটি দিবস নিয়ে আজকের আলোচনা।
এই তিন দিবসে সমগ্র বাংলাদেশে সরকারি খরচে, ব্যক্তি খরচে ও প্রাতিষ্ঠানিক খরচে বিজ্ঞাপন প্রচার হয়ে থাকে যথাক্রমে রাষ্ট্রীয় মালিকানা টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন থেকে শুরু করে পত্রিকা ম্যাগাজিন সহ ছাপাখানায় লক্ষ লক্ষ বিজ্ঞাপন ছাপা হচ্ছে। আবাসিক ভবন থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি ও বানিজ্যক ভবন সহ সকল প্রকার ভবন এমনকি ফ্লাইওভারের খাম্বা বিদ্যুতের খাম্বায়ও রিতিমতো ব্যানার পোস্টারের বন্যা বয়ে যায়!
দেশের একমাত্র ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ব্যতিত অন্যত্র সবগুলো ফ্লাইওভার হতে না হতেই ফ্লাইওভারের পিলারগুলো ছেয়ে গেছে পোস্টার বিলবোর্ড আর দেয়াল লেখনীতে। বিশেষ করে কোচিং সেন্টার, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিজ্ঞাপনে নাগরিক জীবন অতিষ্ট। অতিষ্ট স্কুল মাদ্রাসার পোস্টারে। অতিষ্ট সুপারশপগুলোর বিশেষ অফারের পোস্টারে। আমরা অতিষ্ট শাড়ি লুঙ্গি গামছা লুছনি সহ নারীদের বাহারি ড্রেসের বিজ্ঞাপনে। আমরা অতিষ্ট রড সিমেন্টের বিজ্ঞাপনে। আস্ত আস্ত পাঁচতলা দশতলা ভবনের দেয়াল রড সিমেন্টের বিজ্ঞাপনে সয়লাব। তাবিজ তন্ত্র মন্ত্র যাদুটোনার পোস্টার লিফলেটে সয়লাব দেশের সকল বৈদ্যতিক পিলার সহ বাসাবাড়ি অফিস কারখানার সীমানা প্রাচীর! এতো এতো তাবিজ তন্ত্র মন্ত্র যাদুটোনার দেশ বাংলাদেশ! কামরূপ কামাখ্যার সকল যাদুকর কি আমাদের দেশে পাচার হয়ে গেছে?
এমনিতে আমাদের দেশ বিজ্ঞাপনের দেশ! সংসদ নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সহ উপজেলা ও ইউনিয়ন নির্বাচনে সমগ্র দেশের অলিগলি সড়ক থেকে মহাসড়ক, বাস ট্রেন লঞ্চ স্টিমার সহ বাড়ি ঘরের দেয়ালের চুনকাম বরবাদ হয়ে যায় নির্বাচনের তপ্ত বিজ্ঞাপনে! কোথায় নেই বিজ্ঞাপন? নানান নির্বাচনে ছাপার অক্ষরে “দোয়া চাই - প্রচারে এলাকাবাসী” পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড সহ আতিকায় বিশালাকার বিলবোর্ডও দেখতে পাই। এছাড়া চিকিৎসক থেকে শুরু করে প্রতিটি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের ই্উনিয়ন আছে - তাদের জ্বালাময়ী ই্উনিয়ন নির্বাচনও আছে! এই ইউনিয়ন দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো খেয়ে ছিবড়া করে ফেলে দিয়েছে। এসব বিজ্ঞাপনে সত্যিকার অর্থে দেশের ও দেশের জনগণের কতোটুকু উপকার হয় আমাদের জানা নেই।
মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। নির্বাচন, ব্রাজিল আার্জেন্টিনা ফুটবল, লেংড়া আম হাড়ি ভাঙ্গা আম, কাইল্যা জিরার তৈল, আসল ঘি, গাওয়া ঘি, খাঁটি সরিষার তৈল, শাড়ি লুঙ্গি গামছা লুছনির বিজ্ঞাপন হয়তো রোধ করা কঠিন। কিন্তু সরকারি খরচে প্রাতিষ্ঠানিক খরচে দেশের জাতীয় দিবসের পোস্টার ব্যানার প্লেকার্ড ফেস্টুন, বিলবোর্ডে নতুন স্লোগান নতুন বিজ্ঞাপন আনা সম্ভব।
উদাহরণ স্বরূপ:
ক। ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসে ৫২এর সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা। অনুগ্রহ করে যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে, ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। ময়লা ধেকে বিষাক্ত মশার সৃষ্টি। নিজে বাঁচুন-নিজের পরিবারকে বাঁচান এবং দেশের জনগণকে বাঁচতে দিন।
খ। ২৬শে মার্চে স্বাধীনতা দিবসে ৭১এর সকল শহীদের প্রতি সালাম। অপ্রয়োজনে বৈদ্যতিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার বন্ধ রাখুন। আসুন আমরা শপথ করি বিদ্যুৎ ব্যবহারে অপচয় রোধ করবো। বিদ্যুৎ ব্যবহারে বিলাসিতা আমাদের ও আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের বিপদের কারণ হতে পারে। গ্যাস আমাদের জাতীয় সম্পদ অপ্রয়োজনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখবেন না, রান্না শেষে চুলা বন্ধ রাখুন।
গ। ১৬ই ডিসেম্বর ৭১এর সকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান। পানির অপর নাম জীবন। আসুন পানি ও পানীয় পানি অপচয় বন্ধ করি। দেশে যে হারে স্যালাইন ওয়াটার বাড়ছে আমাদের সচেতনতাই পারে একমাত্র পানি অপচয়কে রোধ করতে। আসুন পানি ব্যবহারে সচেতন হই মিতব্যয়ী হই।
এছাড়া ছাত্র ছাত্রীর শিক্ষা জীবন ও কৈশোর থেকেই সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্য পুস্তকে “গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানি” অপচয় রোধে গল্প প্রবন্ধ সংযোজন করা ব্যক্তিগতভাবে আমি অত্যন্ত জরুরী মনে করছি। তা না হলে আমাদের শুরুই হবে একটি অসচেতন জাতি দিয়ে। আর এই অসচেতন জাতি দিয়ে দেশের ভালো আশা করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
আত্মকথা: আমরা সব সময় সচেতনতার কথা বলি। সত্য ও সততার কথা বলি। একবার নিজে ভেবে দেখেছি কি আমি আপনি নিজে কতোটুকু সচেতন? আজকের মতো সকলরে কাছে দোয়া চেয়ে বিদায় নিচ্ছি। আগামীতে আবার নতুন কোনো বিষয়/গল্প নিয়ে আসবো। লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমার লেখা পোস্ট ইন্টারনেটের যে কোনো মাধ্যমে যে কেউ নিজ নামে শেয়ার বা কপি পেস্ট করতে পারেন। এ ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার লেখাটি যদি দেশের মানুষের সামান্যতম উপকারেও আসে আমি কৃতজ্ঞ ও উপকৃত হবো। তাই আমার লেখায় আমি কপিরাইট সংরক্ষণ করি না। (এ ব্যাপারে আলাদা একটি পোস্ট লিখবো কোনো এক সময়)
উৎসর্গ:
লেখক ডঃ এম এ আলী সাহেব
লেখক খায়রুল আহসান সাহেব
লেখক আহমেদ জী এস সাহেব ও
লেখক চাঁদগাজী সাহেব।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: সামহোয়্যারইন ব্লগ। নির্বাচিত পোষ্টে “উক্ত লেখাটি” স্থান দেওয়াতে সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ছবি: নাগরিক সচেতনতার লক্ষ্যে গ্যাস দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - কর্ণফূলি গ্যাস।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২১ রাত ৮:০৯