নিজস্ব সংবাদদাতা: সম্প্রতি ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবাতে একটি পাঁচ তারকা মানের হোটেলে বণিক সমিতি আয়োজিত “নিম্ন মধ্যব্ত্তি ও নিম্নবিত্তের স্বল্প খরচে পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যম ডিম” নিয়ে সন্ধ্যারাতে একটি গোল টেবিল আলোচনা ও সভা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অংশগ্রহণ করেন কর্পোরেট ডিম ব্যাপারী গং, সংযুক্ত এনজিও কর্মকর্তাবৃন্দ, উচ্চমান প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত সরকারি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ, সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ও ডিন, বণিক সমিতির মান্যগণ্য সভাপতি, সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, অর্থ সচিব, খাদ্য সচিব ও অর্থ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে আগত ইথিওপিয়ার এতিমখানা ও লিল্লা বোর্ডিংয়ের লিল্লা সদকার অতি সামান্য অর্থে দানকৃত = ৩৯৫৬ সিসি মাত্র! পেট্রোল চালিত কালো টয়োটা প্রাডোধারী প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ ও তাঁদের লট বহর। হোটেল প্রাঙ্গণে চকচকে সেডান, এসইউভি, হার্ড টপের ভিড়। আর কে কার আগে পার্কিং করবেন তার গুতোগুতি দেখে মনে হতে পারে এটি সম্ভবত পুরান ঢাকার তস্য গলি মাতব্বর মিয়ার রিক্সার গ্যারাজ!
ভালো। দেশের এই দুঃসময়ে ডিমের আকাল, ডিমের মঙ্গা, ডিমের দুর্ভিক্ষে লড়াই করে উদ্ধারের পথে এসেছেন সবাই। সবাই দেশের দুঃসময়ে পাশে থাকতে চাইছেন। সবাই দেশের উন্নয়নে পাশে থাকতে চাইছেন। আজ কিছু হবে নিশ্চয়।
সন্ধ্যারাতের গোল টেবিল আলোচনায় ডিম নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে; এক একজন জ্ঞানের ভারে জ্ঞানের ওজনে হু হু - হু হু করে শব্দ করে অনেক অনেক বুঝতে পেরেছেন এই মর্মে মাথা ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে কথা বলেন। মাথা ঝাঁকির ধরণ দেখে মনে হতে পারে শরীর থেকে মাথা খুলে ফেলে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চরিত্র করে যাচ্ছেন এক একজন! এই বুঝি মাথা খুলে পড়ে যাবে গোল টেবিলে, ভয় হয়।
আলোচনার ভাষা ছিলো ইথিউপিয়া দেশের আঞ্চলিক ভাষা। - তবে মাঝে মাঝে ইংরেজী কথাও শোনা যাচ্ছিলো, তবে উহা “ইয়েস নট ভেরি গুড আর নো নেভার” দৌড় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলো। আলোচনা প্রায় শেষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডিমের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা হবে অথবা অব্যাহত থাকবে অথবা ডিমের মূল্যবৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকবে - এই মর্মে ভুলেও কেউ কিছু বলেন নি। প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদগণ তাঁদের মূল্যবান বক্তৃতা রাখলেন - সরকারের অনেক অনেক গুণগান করলেন। এবং সকল নষ্টের গোড়া, সকল প্রতারণা ও প্ররোচনাকারী, বিদেশী দালালচক্র বিরোধী দল। এই বিরোধী দলের ছলচাতুরি আর চলবেনা বলে জানালেন। (ইয়া আল্লাহ আপনি এই বিরোধী দলের বিচার করুন)।
খুব সম্ভব, আলোচনা ও সভার শেষ সময়ে বিশেষ আইনের মাধ্যমে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ডিমের উপর রিট ঘোষণা করা হতে পারে! অথবা সংসদে নজির বিহীন বিশেষ বিল পাশ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতে পারে। মনে হয়। ডিমের জেল জরিমানা সশ্রম কারাদন্ড কিছুতো হবে! ডিম, ডিমের ঘরের ডিম, আজ ডিমের মুক্তি নেই।
আশ্চর্য ডিমের বিষয়ে আর কোনো আলোচনা না হয়ে, ডিমের কোনো প্রকার বিচারকার্য না হয়ে, ডিমের সাথে বিনা সাক্ষাতে সবাই চলে গেলেন হোটেলের বুফে টেবিলে! এমনতো কথা ছিলো না! সবাই একযোগে হামলে পড়লেন বুফে টেবিলের সারি সারি করে সাজানো খানা খাজানার ডিসে। কাচ্চি বিরিয়ানী। মোরগ পোলাও (অবশেষে ডিমের দেখা পাওয়া গিয়েছে, তবে বিচারকার্যে নয়, খাওয়ার ডিসে! - মোরগ পোলাওয়ের ভিতর লুকানো আছে ষড়যন্ত্রকারী ডিম)। প্লেন পোলাও। ফ্রাইড রাইস। চিংড়ি দোপেঁয়াজা। রুপচাঁদা দোপেঁয়াজা। গরুর মাংস ভুনা। গরুর কলিজা ভুনা। খাসির মাংস রেজালা। খাসির আস্ত রান রোস্ট। শিক কাবাব। আস্ত মোরগের রোস্ট। গ্রিল্ড চিকেন। রকমারি সালাদ। মিষ্টি। দই। বোরহানি। কোমল পানীয়। মিনারেল ওয়াটার। আইসক্রিম। সবশেষে পান সুপারি চুন ও বাহারী জর্দা!
ছবি: ডিম সমাচার