প্রথমেই কুপিকাটাকুম ঝর্ণার ছবি:
এরপর মিঠাছড়ি ঝর্ণার ছবিঃ
বর্ষার সময় গেলে এই ঝর্ণাটি অসাধারণ দেখায়। আমার এক পরিচিত বড়ভাই এই বর্ষায় ঝর্ণাগুলো দেখে এসেছেন। তার ক্যামেরায় মিঠাছড়ি ঝর্ণার দৃশ্যঃ
সবশেষে বান্দরকুম (বান্দরিছড়া) ঝর্ণার দৃশ্যঃ
যাত্রাপথের বর্ণনাঃ
চট্টগ্রামের মিরসরাই এর নাপিত্তাছড়া ঝর্নার কথা আগেই শুনেছিলাম। সময় সুযোগ হওয়াতে এবার বন্ধুরা মিলে ঘুরে আসলাম সেখান থেকে। নাপিত্তাছড়া যেতে হলে মিরসরাই এর নদুয়ার বাজার/হাট (নদুইয়ার/নয়দুয়ারীর বাজার/হাট) যেতে হয়। নদুয়ার বাজার নেমে শুনলাম ঝর্না নাকি আসলে ৩ টা। শুনে ভালোই লাগল। তবে ঝর্নার নাম গুলো স্পষ্ট করে বুঝতে পারলাম না। আগে শুনেছিলাম ঝর্ণার নাম নাপিত্তাছড়া। এখন শুনলাম ঝর্ণা তিনটার নাম হলো কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি এবং বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। আর ঝর্ণাগুলোতে যাওয়ার ঝিরিপথটাকে সম্ভবত নাপিত্তাছড়া বলে। যাইহোক, নদুয়ার বাজার থেকে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর গ্রাম থেকে একজন গাইড নিলাম। এরপর পাহাড়ী অরণ্যে ঝিরিপথ বরাবর আমরা চলতে শুরু করলাম। ঝর্ণা ৩টি বেশি দূরে নয়। ৩০/৪০ মিনিট যাওয়ার পর প্রথম ঝর্ণা কুপিকাটাকুম পেয়ে গেলাম। অনেক সুন্দর একটা ঝর্ণা। ঝর্ণাতে পানির পরিমাণও ভালোই। ঝর্ণাটির সামনের পানির অংশটি কিছুটা গভীর। তাই একেবারে ঝর্ণার সামনে যেতে হলে আপনাকে সাঁতার কেটে যেতে হবে। ঝর্ণার পানি বেশ ঠান্ডা। এখানে কিছুক্ষণ থাকার পর ২য় ঝর্ণার উদ্দেশ্যে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। ২য় ঝর্ণাতে যাওয়ার সময় ছোট একটি পাহাড়ের প্রায় খাড়া একটি ঢাল বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এসময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হয়। যাই হোক, ঝর্ণাটি বেশ কাছেই। ২০ মিনিটের মধ্যেই আমরা পরের ঝর্ণা মিঠাছড়িতে পৌঁছে গেলাম। ঝর্ণাটির উচ্চতা বেশ। উপর থেকে পানি পতনের সময় অর্ধেকটা অংশ পার হবার পর দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে পানি পড়েছে। বর্ষা না থাকায় ঝর্ণাটিতে পানির পরিমাণ বেশ কম ছিল। বর্ষার সময় এই ঝর্ণাটি খুব সুন্দর দেখায়।
এখানে কিছুক্ষণ থাকার পর আমরা ৩য় ঝর্ণাটির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট ঝিরি পথ বরাবর হাটার পর আমরা ঝর্ণাটি পেয়ে গেলাম। এই ঝর্ণাটিও বেশ সুন্দর। ৩টি ঝর্ণার মধ্যে এই ঝর্ণাটির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। এখানে আসার কিছুক্ষণ পর হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমরা আবার ফিরতি পথে রওনা হলাম সুন্দর কিছু মুহূর্তকে সাথে নিয়ে।
ঝর্ণাগুলোতে যাওয়ার ঝিরি পথের কিছু দৃশ্যঃ
কিভাবে যাবেনঃ
আপনাকে চট্টগ্রামের মিরসরাই এর নদুয়ার বাজার যেতে হবে। বাসে চট্টগ্রাম গেলে আপনি যাত্রার সময়ই সহজে মিরসরাই এর নদুয়ার বাজার নেমে যেতে পারবেন। যদি বাসের ড্রাইভার নদুয়ারহাট না চেনে তবে মীরসরাই বাজারে নেমে সিএনজি করে নদুয়ার হাট যেতে পারবেন। জনপ্রতি ১০টাকা নেবে লোকাল সিএনজি। কিন্তু আপনি যদি ট্রেনে করে চিটাগাং শহরে নামেন, তাহলে আবার বাসে করে প্রায় দেড় ঘন্টার উল্টা জার্নি করে আপনাকে মিরসরাই আসতে হবে। চিটাগাং শহর এর অলংকার মোড় থেকে চয়েস বাস মিরসরাই যায়। ভাড়া পার পার্সন ৮০ টাকা। এই বিরক্তিকর উল্টা জার্নি না করতে চাইলে ট্রেনে করে চিটাগাং না আসাই ভাল। যাই হোক, মিরসরাই এর নদুয়ার বাজার থেকে ঝর্ণার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে হবে। কিছুদূর যাওয়ার পর গ্রাম থেকে একজন গাইড নিয়ে নিবেন। গাইডকে ৪০০/৫০০ টাকা দিতে হবে। আর একটা কথা, ঝর্ণাতে যাওয়ার ঝিরি পথটা অনেক সুন্দর। তেমন কোন রিস্ক কোথাও নেই। এজন্য বর্ষার সময় আসাটাই সবচেয়ে ভাল সময়, তাহলে ঝর্ণার সর্ব্বোচ্চ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এই ভ্রমণ একদিনের তাই থাকার দরকার পড়বেনা তবু নিতান্তই রাতে থাকতে চাইলে মীরসরাই বা সীতাকুন্ডে নিন্মমানের হোটেল পাবেন। ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম চলে আসতে হবে। নদুয়ারহাটে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা নাই। এক্ষেত্রে মীরসরাই বাজারে এসে খেতে পারবেন
আর একটা কথা হল, চট্টগ্রামও কিন্তু ম্যালেরিয়াপ্রবণ একটি এলাকা। সাধারণত ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাতে যাওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে যাত্রা শুরুর আগের ১ সপ্তাহ থেকে যাত্রা শেষ হবার পর ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডক্সিসাইক্লিন ট্যাবলেট(১০০মি.গ্রা.) খেতে হয়। তারপরও পাহাড়ী এলাকাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে যাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল: পাহাড়ী অরণ্যঘেরা কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি এবং বান্দরকুম ঝর্ণার খোঁজে (ভ্রমণ কাহিনী)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?
যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।
নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন