somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সারা দেশে একযোগে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট :: সরকারকে দুই সপ্তাহের আল্টিমেটাম :: অধিকার আদায়ে জেগে উঠেছে সবাই

৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢাকা মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।



স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।



শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ে এবার একযোগে জেগে উঠেছে সারাদেশের ইন্টার্ন চিকিৎসক সমাজ। বেতনভাতা ১০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ২০,০০০ টাকা করার দাবিতে সারাদেশে আজ একযোগে সবাই অবস্থান ধর্মঘট পালন করল। উল্লেখ্য,২০০৬ সালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা ছিল ৬ হাজার ৮০০ টাকা। অনেক দেনদরবারের পর ২০০৯ সালে ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়।

অনেকেই প্রশ্ন করবেন ইন্টার্ন ডাক্তাররা কি এমন করে যে তাদের বেতন ভাতা বাড়াতে হবে?

এই প্রশ্ন করতে হলে আপনাকে আগে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। আপনার একটু ঠান্ডা লাগলেই হয়তো আপনি অ্যাপোলো বা স্কয়ারে যেতে পারেন। কিন্তু দেশের ৮০ ভাগ মানুষ সেটা পারে না। তাদের ভরসা আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো। এই সরকারি হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজগুলোই আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার মেরুদন্ড। মেডিকেল কলেজগুলো প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। যেমন, পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে প্রতিদিন ৩,০০০ এর অধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। আপনার বিশ্বাস না হলে আপনি নিজে যে কোন একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে একদিন ঘুরে আসুন। নানা রকম সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতালগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

এখন যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় এই মেডিকেল কলেজগুলোর প্রধান চালিকা শক্তি কারা বলতে পারবেন?

এই মেডিকেল কলেজগুলোর প্রধান চালিকা শক্তি হল ইন্টার্ন এবং অনারারি ডাক্তাররা। অনারারি ডাক্তারদের সম্পর্কে আরেকদিন বলব। পোস্ট গ্রাডুয়েশন করার জন্য বিনা বেতনে তাদেরকে ৬-৭ বছর ধরে কাজ করে যেতে হয়। ইন্টার্নদের কথায় আসি। আপনি কি জানেন একজন ইন্টার্ন কে প্রতিদিন কত ঘন্টা কাজ করতে হয়? সে বছরে কতদিন ছুটি পায়?

৫ বছর সীমাহীন পড়াশুনার চাপ সহ্য করে অনেক কঠিন কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে MBBS পাস করার পর একজন ইন্টার্নশীপ শুরু করে। এসময় একজন ইন্টার্ন ডাক্তারকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়। মাঝে মাঝে টানা ৩৬ ঘন্টাও কাজ করতে হয়। এভাবে ৩৬৫ দিন কাজ করতে হয়। ঈদ ছুটি বলে কিছু থাকে না। কেউ কেউ আবেদন করে ২ দিন ছুটি ম্যানেজ করতে পারে। কিন্তু সবাই ছুটি পায় না। এভাবে প্রতিদিন ১৪-১৮ ঘন্টা কাজ করে সে মাস শেষে পায় মাত্র ১০,০০০ টাকা। বেসরকারি মেডিকেলের চিকিৎসকরা মাস শেষে পান মাত্র ৬,০০০ টাকা। আপনি যদি তাদের পরিশ্রমের মাত্রা কিছুটা হলেও বুঝতে পারেন তাহলে এই বেতন শুনে আপনার হাসি আসা উচিত। একজন রিকশাওয়ালা বা একজন দিনমজুরের কথা চিন্তা করুন। তার প্রতিদিনের ইনকাম যদি ৫০০ টাকাও ধরেন তাহলে তিনি মাস শেষে ১৫,০০০ টাকা আয় করেন। ২০০৯ সাল থেকে ইন্টার্ন ডাক্তারদেরকে এই ১০,০০০ টাকা দেয়া হচ্ছে। এখন আপনি একটু চিন্তা করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল। এই ৫/৬ বছরে সবকিছুর মূল্য কয়েকগুণ বেড়েছে। শুধু বাড়েনি ইন্টার্নদের বেতন।

মজার বিষয় হল এই বিষয়গুলো সরকার থেকে শুরু করে ডাক্তারদের সংগঠন BMA বা BMDC সবাই জানেন। কিন্তু কেউ কিছু করে না। ডাক্তারদের নীতিনির্ধারকরা হয়তো মনে করে, ''আমরা পাইনি, তোমরা পাবে কেনো?'' কিছুদিন আগে নতুন বেতনস্কেল হল। সেখানেও ইন্টার্নদের দিকে কোন নজর নেই। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চিকিৎসা ক্ষেত্রের অবদানের জন্যই আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান। কিন্তু চিকিৎসকদের দিকে সরকারের কোন নজর নেই। হয়তো সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করে এসব চিকিৎসকরা সরকারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখায় কোন প্রত্যক্ষ অবদান রাখেনা, তাহলে আর এদের এত সুযোগ সুবিধার কি দরকার!

এই অবস্থায় আসলেই আর বসে থাকার কোন অবকাশ নেই।দেশে সরকারি হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সংখ্যা ৪ হাজার। আর বেসরকারি হাসপাতালে আছেন ৩ হাজার। সবাই আজ এ আন্দোলনের সঙ্গে একসাথে আছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ, বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, পাবনা মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, গ্রীনলাইফ মেডিকেল কলেজ, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজসহ সারা দেশের অধিকাংশ সরকারি বেসরকারি মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাই আজ একযোগে অবস্থান ধর্মঘট পালন করল। একইসাথে সরকারকে দাবিদাওয়া পূরণে ২ সপ্তাহের সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে আর পিছুহঠার কোন অবকাশ নেই। যতদিন সরকার বা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যৌক্তিক কোন সমাধানে না আসবে ততদিন পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকবে। জয় হোক একতার।

বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অবস্থান ধর্মঘট পালনের আরও কিছু ছবি শেয়ার করা হল।



ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


বরিশাল মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


রংপুর মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


খুলনা মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


পাবনা মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


সিলেট উইমেন্স মেডিকেল মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।


নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের অবস্থান ধর্মঘট পালনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৫০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×