somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নানা দেশের ফুটবল কৌশল : আর্জেন্টিনা

২৮ শে মে, ২০১০ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এবারের পর্বে আছে আর্জেন্টিনা।

ব্রাজিলের মতো আর্জেন্টিনার ফুটবলের হাতেখড়ি ইংলিশদের কাছ থেকে।

ভৌগলিক অবস্থান, শারীরিক কাঠামো, আবহাওয়া সব কিছু এক হওয়ায় ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ফুটবল দর্শন মোটামুটি একই ছিল অনেক কাল।
তারপর আর্জেন্টিনার সংস্কৃতি যখন খেলায় প্রবেশ করে তখন পায় স্বকীয়তা।

আর্জেন্টিনার খেলা ব্রাজিলের মতোই ছন্দময়। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় সেটা বিশৃঙ্খলা হিসেবে গণ্য করা হতো!!
কেন?

সেটা এবার বলি।

[ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা চাইতো নিজেদের মতো করে খেলতে। ফলে ইংলিশ ধ্যান- ধারনা থেকে দূরে সরে আসতে চাইতো।]

ইংলিশরা যেন নিপাট ভদ্রলোক (এখনো তারা সেটা দাবি করে।)। যে খেলোয়াড় মিডফিল্ডার, তার যেন জায়গা ছেড়ে নড়াচড়া করা মানা! যে স্ট্রাইকার, তার যেন নীচে নামা মানা!!

লাতিনরা কি আর এসব মানে! যার যেখানে মন চায় দৌড়াদৌড়ি! :P
এক সময় ভাবলো, দৌড়াদৌড়ি যখন করবো দু-চারটা পাস দিয়ে তারপর যাই!
আবার দৌড়াদৌড়ি আর কতক্ষণ করা যায়! এমন দৌড়াদৌড়ি
করতে থাকলে অল্প সময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়া লাগে। /:)
আবার দৌড়াদৌড়ি করতেও ইচ্ছা হয়! কি বিপদ!! :|
আবার লাতিনদের ড্রিবলিং তো থাকতেই হয়!!

এসব চিন্তা আর দর্শন এক সময় সমাধান খুঁজে পায়।

সব উপাদান অল্প অল্প করে নিয়ে গড়ে উঠে আর্জেন্টিনার ফুটবল।
একটা ভয়ানক তথ্য দেই।
ইংলিশরা যখন ফুটবল নিয়ে আসে তখন তাদের ফর্মেশনে ফরোয়ার্ড থাকতো কয়জন জানেন?
৬-৭ জন!!! :-/

(ডিফেন্ডারদের সংখ্যা বাড়ানোর কাজটা ইতালি অনেক সহজ করে দেয় :P । কারণ তারা ৫ ডিফেন্ডার নিয়ে খেলা শুরু করে ১৯৩০ এর পর থেকে, ভালো মত প্রয়োগ শুরু করে ১৯৫৮ এর পর)

যাই হোক, আর্জেন্টাইনরা মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণ রেখে খেলা শুরু করে। পুরো দলের সবার অংশগ্রহণে ছোট ছোট পাসে সামনে এগিয়ে আক্রমণে যায়।

যেমন: একজন প্লেয়ার ছোট একটা পাস দিয়েই সামনে একটু দৌড়ে আবার ফিরতি পাসের জন্য অপেক্ষা করে, পাস পেলে আবার একই কাজ করে, যদি দেখে আর সামনে যাওয়া তার জন্য নিরাপদ নয়, তাহলে ফিরে যায় নিজের আপাত পজিশনে।

গোল দেওয়া?? সেটা একজনে দিলেই হলো!!(বাতিস্তুতা, ক্রেসপো, মারিয়ো ক্যাম্পেস এর কথা পরে বলছি।)

ঠিক এই জায়গায় ব্রাজিলের সাথে তাদের একটা পার্থক্য গড়ে উঠে!

ব্রাজিল কিন্তু সারা মাঠ নাচানাচি করে শেষ পর্যন্ত ঐ ৪-৫ জন স্ট্রাইকার এর একজনের পায়ে তুলে দেয়ার কাজ করতো।

আরেকটা জায়গায় তফাৎ হয়ে গেল ব্রাজিল- আর্জেন্টিনার।

সেটা হলো শট। (আগের পর্বে বলেছি।)


এই পর্যায়ে কি কোন একটা ইউরোপিয়ান ক্লাবের খেলার ধরনের সাথে আর্জেন্টিনার মিল পাচ্ছেন?? দলটি কি বার্সেলোনা?? জ্বী! ঠিক ধরেছেন। আর্জেন্টিনার সাথে বার্সার পাস নির্ভর খেলার বেশ কিছু মিল আছে।

এতক্ষণ যা কিছু বললাম, তা কিন্তু প্রায় ৮০-৯০ বছর আগের কথা!!

তাই বলে কিন্তু আর্জেন্টিনার ফুটবল আমূল বদলে যায়নি! অনেক আধুনিক কৌশল গ্রহণ করতে হয়েছে, কিন্তু পূর্বপুরুষদের দর্শন তারা ঠিকই ধরে রেখেছে।

ফুটবল যে শুধু মাত্র পা দিয়ে বল লাথি মারা নয় সেটা সবাই কে ঘটা করে জানান দেয় কারা জানেন?

আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল।

আর্জেন্টিনার যখন ছন্দ ভুলে পাওয়ার ফুটবল খেলতে চাইলো (২০০২) তখন কি পরিণতি হয়েছে মনে আছে?


পেশি শক্তির চেয়ে আর্জেন্টিনায় বেশি মূল্যায়ন করা হয় শৈল্পিক গুন, যেটা ইংলিশদের চেয়ে তাদেরকে সবচেয়ে বেশি আলাদা করে দেয়। (ড্রিবলিং এর প্রচলনের ক্ষেত্রে ব্রাজিলের ইতিহাস আর্জেন্টিনার জন্যও প্রযোজ্য

আর্জেন্টিনায় ফুটবল খেলা হয় পজেশন কে গুরুত্ব দিয়ে। বল যেন তাদের নিজের সম্পত্তি। একটা বিল্ড-আপে দেখা গেলো একজন খেলোয়াড়ই ৩-৪ বার পাস দিলো।

একজন গোল দিলেই হলো- এ মানসিকতা থেকে আর্জেন্টিনা সরে আসতে বাধ্য হয় ম্যারাডোনার বিদায়ের পর। কারণ মাঝমাঠে হঠাৎ যেন বিশাল শূন্যতা।
(জিদানের অভাব কত ভয়াবহ সেটা ফ্রান্স ইতিমধ্যে টের পেয়েছে )।

বাতিস্তুতার মত দানব (৬ ফুট ২ ইঞ্চি ) যে দলে থাকে সে দল আর যাই হোক, "একজন গোল দিলেই হলো" - এই মনোভাব রাখার বিলাসিতা দেখাতে পারেনা।

ভয়ানক জোরালো শট, ফ্রি কিক, বিশাল হেড, ভলি, বাইসাইকেল কিক, বিকট হাসি, ঝাঁকড়া চুল, অসাধারণ ফিনিশিং! একজন পরিপূর্ণ স্ট্রাইকার!


এরপর ক্রেসপো ছাড়া আর তেমন কোন ভালো ফিনিশার আর্জেন্টিনা পায়নি। পেলেও তাকে ধরে বেঁধে ম্যারাডোনা বানিয়ে শেষ করে ফেলা হয়েছে।


এবার আর্জেন্টিনা কিন্তু "একজন গোল দিলেই হলো" মানসিকতা দেখাতেই পারে! কারণ তাদের সব ফরোয়ার্ড দুর্দান্ত ফর্মে।

আর্জেন্টিনার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে ভেরনের উপর। শৃঙ্খলায় মোড়ানো 'বিশৃঙ্খল ভাবে দৌড়াদৌড়ি' করতে হলে কিন্তু "মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ" পূর্ব শর্ত। এক্ষেত্রে ম্যারাডোনার প্রথম পছন্দ কিন্তু ভেরন।


অন্যান্য দেশের ফুটবলাররা শুধুমাত্র ফুটবলার। আর্জেন্টিনার কিছু ফুটবলাররা একইসাথে ফুটবলার এবং এক জন অতি আবেগী জাদুকর।


লাতিন ফুটবলের পতাকা কিন্তু এবার আর্জেন্টিনার হাতে।
কেন?

ব্রাজিলের খেলায় আশঙ্কাজনক ভাবে ইউরোপিয়ান স্টাইল চাপিয়ে দিয়েছে দুঙ্গা। এবং সেটা সফলভাবে। সুতরাং এই ব্রাজিলের কাছ থেকে আপনি জয় আশা করতে পারেন, সৌন্দর্য্য নয়। /:)


আগামী পর্বে: ইতালি।

নানা দেশের ফুটবল কৌশল : ব্রাজিল
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ১:১৩
১৬টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×