somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকাশের সীমানা : নমুনা পান্ডুলিপি

১৮ ই জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাককথন


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, এডভোকেসি ডিভিশন-এর অন্যতম প্রধান কর্মসূচী 'থিয়েটার'।

থিয়েটার দলগুলোর দতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে প্রদর্শনীর উদ্দেশে নিবিড় কর্মশালার মাধ্যমে 'অংশগ্রহণমূলক' পদ্ধতিতে নাটক নির্মাণ করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় 3রা মে থেকে 7ই মে পর্যন্ত 'গণনাট্য দল', মুক্তাগাছা'র সদস্যদের নিয়ে ময়মনসিংহ প্রাথমিক শিা একাডেমিতে প্রযোজনাভিত্তিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালায় মুক্তাগাছা 'গণনাট্য দল' সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণে 'ইমপ্রোভাইজেশন' পদ্ধতিতে ব্যমান পান্ডুলিপি নির্মাণ করা হয়।

আঙ্গিক-এর েেত্র 'কথানাট্য' ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে।

অভিনেতাগণ সবসময়ই দর্শকের দৃষ্টিসীমায় থাকেন। কালোপর্দার সামনে অর্ধবৃত্তাকারভাবে বসে। এখান থেকেই তারা নাট্যিক প্রয়োজনে নানা মুহূর্তে দর্শকের সামনে উপস্থিত হন।

বাস্তব প্রেতি বিবেচনায় যাতে একজন অভিনেতা একাধিক চরিত্র রূপায়ন করতে পারেন, সে সুযোগ এখানে নিশ্চিত করা হয়েছে।

লভ্যতার নিরিখে নাটকটিতে প্রকাশ্য কোন নারী চরিত্র নেই।

নাট্যনির্মাণে অংশগ্রহণকারীদের স্বাধীনতা বিবেচনায় পান্ডুলিপিতে 'ডিরেক্টোরিয়াল নোটস' যথাসম্ভব সীমিত করা হয়েছে।




















চরিত্র

আকাশ
জব্বার আলী (আকাশের বাবা)
কম্পাউন্ডার
পথচারী-1
পথচারী-2
সাগর (আকাশের বন্ধু)
চেয়ারম্যান
জুলমত (চেয়ারম্যানের ছেলে)
দারোগা
সেন্ট্রি-1
সেন্ট্রি-2
গ্রামবাসী-1
গ্রামবাসী-2
গ্রামবাসী-3
পিয়ন




















ফাঁকা মঞ্চ। পেছনে কালো পর্দা। তিন দিক ঘিরে দর্শকগণ বসে আছেন। সহসা, প্রথমে ঢোলের একটা আওয়াজ শোনা যায়, তারপর মন্দিরা, পরে কৃষ্ণকাঠি এবং সবশেষে ঝাঁজ বেজে ওঠে। শুরুর দিকে ধীর লয়ে ও ক্রমশ দ্রুত লয়ে বাজনার ঐকতান। মাঝে মাঝে সম্মিলিত কন্ঠে 'হৈ' রব ওঠে। মিনিটখানের পর বাজনা থামে এবং সম্মিলিত কন্ঠে গান শোনা যায়।

গান গাইতে গাইতে অভিনেতাদের প্রবেশ। সকলের পরনে সাদা ট্রাউজার আর সাদা টি-শার্ট। প্রত্যেকের হাতে বাঁশের লাঠি আর লাঠির আগায় নানা বর্ণের ওড়না। সবাই সারিবদ্ধভাবে ওড়না নাড়াতে নাড়াতে মঞ্চে আসে ও গাইতে থাকে।

টাকডুম টাকডুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল
সব ভুলে যাই তাও ভুলিনা বাংলা মায়ের বোল
টাকডুম টাকডুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল।।
বাংলা জনম দিলা আমারে
তোমার জীবন আমার জীবন এক নাড়ীতে বাধারে
বাংলা জনম দিলা আমারে
মা পুতের এই বাধন ছেড়ার সাধ্য কারো নাই
সব ভুলে যাই তাও ভুলিনা বাংলা মায়ের কোল
টাকডুম টাকডুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল
সব ভুলে যাই তাও ভুলিনা বাংলা মায়ের বোল।।

গান গাইতে গাইতে সবাই কালো পর্দার সামনে বসে। অভিনেতাদের মধ্য থেকে একজন উঠে দর্শকের সামনে আসে এবং সূত্রধারের ভূমিকা নেয়।

অভিনেতা-1 : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর প থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। আমার নাম সুমন। আমি টিআইবি মুক্তাগাছা অঞ্চল গণনাট্য দলের একজন সদস্য। আপনারা জানেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে, তারই একটা অংশ হচ্ছে নাটক। আমরা নাটকের মাধ্যমে মানুষের মাঝে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করি। আমাদের আজকের নাটকের নাম 'আকাশের সীমানা'। এই নাটকে আমাদের একজন বন্ধু আকাশের জীবনের গল্প বলার চেষ্টা করবো। অপরাপর সকল মানুষের মতো আকাশও অসীম সম্ভাবনা নিয়ে জন্মেছিলো কিন্তু দুর্নীতির কারণে তার জীবনটা, না, এখন আর বলবো না। নাটকেই দেখুন কী হয়েছিলো আকাশের জীবনে। আমি এই নাটকের একজন সূত্রধার। মাঝে মাঝে আমি আপনাদের সাথে কথা বলব।

অভিনেতাদের সারি থেকে আরেকজন উঠে আসে।

অভিনেতা-2 : এই সুমন থাম, থাম, থাম। আরে তুই যে কইলি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাটক দেখাবি, তুই তো আইসাই দুর্নীতি শুরু করলি।

অভিনেতা-1 : ক্যা দোস্ত। আমি আবার এহানে কোন দুর্নীতি করলাম?

অভিনেতা-2 : আরে দুর্নীতি করলি মানে! আমি হইলাম গিয়া এই নাটকের সূত্রধার আর আমার আসতে একটু দেরী হইছে বইলা তুই নিজের পরিচয় দিলি সূত্রধার!

অভিনেতা-1 : ও আচ্ছা, এই কথা দোস্ত। আসলে ব্যাপারডা হইছে কি জানো, তুমি আইতে দেরী করতাছো আর সামনে এত দর্শক দেইখা আমি দোস্ত আর লোভ সামলাইবার পারলাম না। এরলাই নাটক শুরু কইরা দিবার চাইছিলাম। তুমি দোস্ত কিছু মনে কইর না।

অভিনেতা-2 : না, না, আমি কিছু মনে করি নাই। দর্শক বন্ধুরা, আমি ওসমান গণি, আমি হইলাম এই নাটকের সূত্রধার। দোস্ত, আমাগো পরিচয় তো দিলাম, অন্যান্য বন্ধুদের পরিচয় দিবা না?

অভিনেতা-1 : হ, অবশ্যই, তাতো দেয়নই দরকার। (দর্শকের উদ্দেশ্যে) আপনারা কি ওগো সবার পরিচয় জানবার চান?

দর্শকের সারি থেকে সম্মতিসূচক আওয়াজ ওঠে।

অভিনেতা-1 : এই বন্ধুরা, তোমরা তোমগো পরিচয় বল।

অভিনেতা-1 ও অভিনেতা-2 সারিতে ফিরে যায়।

অভিনেতাদের সবাই একে একে উঠে দাড়ায় এবং বিশেষ ও নিজস্ব একধরনের হাসি দেবার পর নিজের নাম বলে।

সারি থেকে অভিনেতা-2 উঠে দর্শকের সামনে এসে গান ধরে।

শোনেন মা বোন ও ভাই সবাইকে বলে যাই
দুর্নীতির কারণে আমার সোনার দেশটা নাইরে
দুর্নীতির কারণে আমার সোনার দেশটা নাই।।

ও ভাই দুর্নীতি কাহাকে বলে দেখবেন নাটকে এলে
জলদি করে তাড়াতাড়ি চলে আসেন ভাই
দুর্নীতির কারণে আমার সোনার দেশটা নাইরে
দুর্নীতির কারণে আমার সোনার দেশটা নাই।।

থানার অফিসার পুলিশ দিতে গেলে কোন নালিশ
টাকা ছাড়া নিতে চায়না কি বলিব ভাই
দুর্নীতির কারণে আমার সোনার দেশটা নাইরে
দুর্নীতির কারণে আমার সোনার দেশটা নাই।।

সরকারি হাসপাতালে ঔষধ আনতে গেলে
আগে টাকা পরে ঔষধ নইলে বিদায়
দুর্নীতির কারণে আমার সোনার দেশটা নাইরে
দুর্নীতির কারণে আমার সোনার দেশটা নাই।।

আরো আছে অনেক ঘটনা আগে সব বলব না
মনোযোগে নাটক দেখে বুইঝা লন সবাই
দুর্নীতির কারণে আমার সোনার দেশটা নাইরে
দুর্নীতির কারণে আমার সোনার দেশটা নাই।।
অভিনেতাদের সারি থেকে জব্বার আলীর হাহাকার শোনা যায়, হন্তদন্ত হয়ে সে দর্শকের সামনে আসে।

জব্বার আলী: ডাক্তার সাব, ইস ডাক্তার সাব যে কই গেল। ও ডাক্তার সাব, ইস আমার শিউলির অবস্থা খুবই খারাপ। শালার ডাক্তার, তোরে রাখছে আমাগো সেবার লাইগা আর তুই বউ নিয়া ঘুমাস।

অভিনেতাদের সারি থেকে কম্পাউন্ডার উঠে আসে

কম্পাউন্ডার: ঐ মিয়া ঐ, চুপ কর, এই তুই ক্যাডা?! উল্টাপাল্টা কথা কইয়া পুরা হাসপাতালডা দখল কইরা রাখছস।

জব্বার আলী: ভাই, ও ভাই ডাক্তার সাব কই ভাই?

কম্পাউন্ডার: ডাক্তার ক্যা, ডাক্তাররে তোমার কি দরকার ?

জব্বার আলী: ভাই আমার শিউলির অবস্থা খুবই খারাপ।

কম্পাউন্ডার: শিউলি! শিউলিডা ক্যাডা, এ্যা?

জব্বার আলী: আমার পরিবার।

কম্পাউন্ডার: ধু্যৎতরি, তয় কি হইছে?

জব্বার আলী: ভাই, ডেলিভারী কেইস।

কম্পাউন্ডার: হু, ডেলিভারী কেইস। (স্বগত) যাক ডাক্তার সাব বাড়ীত গিয়া ঘুমাইতেছে, আমি এই ফাঁকে টু পাইস কামাই করার ব্যবস্থা কইরালাই। .......... এই হুনো, ডাক্তার সাব নাই তো কি হইছে, আমি আছি না। বুঝলা, বারো বছর ধইরা এই সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতাছি। আওে, কত রোগী ধইরা, ভালা কইরা, দিলাম ছাইরা, আর এইডা তো হাতের ময়লা। তা তোমার রুগী কই?

জব্বার আলী: ঐ তিন নম্বর রুমে রাইখা আইছি।

কম্পাউন্ডার: ঠিক আছে। তুমি এহানে বহ, আমি রুগীডা দেইখা আইতাছি।

জব্বার আলী: আইচ্ছা ভাই ভালো কইরা দেহইন দেহি।

কম্পাউন্ডারের প্রস্থান।

জব্বার আলী: হে আল্লাহ আমার শিউলিরে তুমি ভালা রাইখো আল্লাহ।

কম্পাউন্ডারের প্রবেশ।

কম্পাউন্ডার: এই হুনো, এই যে ইনজেকশনগুলা আর এই বড়িগুলা নিয়া আসো, জরুরী লাগবো। বুঝলা? যাও যাও তাড়াতড়ি যাও।

জব্বার আলী: দ্যান ভাই দ্যান।

জব্বার আলী যেতে উদ্যত হয়।

কম্পাউন্ডার: এই মিয়া খাড়াও, তুমি এত রাইতে যাবা, কোন দোহানদাররে ডাক দিলে দোহান খুলত না, বুঝলা? দ্যাও, টাহাডা দ্যাও । আমি নিয়া আসি।

জব্বার আলী: কয় টেহা?

কম্পাউন্ডার: এই দশ বিশ পঞ্চাশ, না চলতো না, বেশি লাগবো, তিনশ টেহা দ্যাও।

জব্বার আলী: ভাই, আমার কাছে তো এত টেহা নাই। এই যে ভাই এই টেহাডি আছে। বিশটা টেহা কম আছে ভাই।

কম্পাউন্ডার: আরে কয় কি? তোমার রুগী যায় যায় অবস্থা আর তুমি বিশটা টেহা কম দ্যাও। হুনো বিশ টেহা পরে দেওন লাগব।

জব্বার আলী: আচ্ছা ভাই দিমু।

কম্পাউন্ডার: সত্য কইরা কও, টেহা নাই?

জব্বার আলী: না ভাই

কম্পাউন্ডার: পরে কিন্তু দেওন লাগবো, দাবী ছাড়তাম না।

জব্বার আলী: আইচ্ছা ভাই।

কম্পাউন্ডার: ঠিক আছে আমি যাই। তুমি এইখানে থাহ। (স্বগত) আরে ঔষধ তো আমার কাছেই আছে, ফাওতালে কিছু টেহা কামাইয়া লইলাম। যাই হাসপাতালের স্টোরেততে ঔষুধ নিয়া আসি।

কম্পাউন্ডারের প্রস্থান।

জব্বার আলী: আল্লাহ তুমি আমার শিউলিরে রা কর আল্লাহ। বিসমিল্লাহে মাজরেহা ওয়া মুরছাহা ইন্না রাবি্ব লা-গাফুরুর রহিম।

কম্পাউন্ডারের প্রবেশ।

কম্পাউন্ডার: এই যে, তুমি এহানে বইয়া থাহ, আমি তোমার রুগীরে ইনজেকশনডা দিয়া আসি, বুঝলা? বইয়া থাহ, বইয়া থাহ।

জব্বার আলী: হে আল্লাহ ! আমার শিউলিরে সুস্থ্য রাইখ।

নেপথ্যে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়।

কম্পাউন্ডার: এই হুনো হুনো, আল্লাহ দিলে তোমার একটা চান্দের মত ফুটফুইটা পোলা হইছে।

জব্বার আলী: আল্হামদুলিল্লাহ। হে আল্লাহ, তুমি রহমতের মালিক। ভাই, আমার শিউলির অবস্থা কি?

কম্পাউন্ডার: শিউলি? ভাইরে , আল্লাহর মাল আল্লাহ লইয়া গ্যাছে।

জব্বার আলী: আল্লাহরেএএএএএএএএ।

সূত্রধারের আগমন।

দুর্নীতিতে দেশটা আমার ডুবে যে যাচ্ছে
কত মানুষ প্রতিদিনই এভাবে মরছে।

যেখানে যাই সেখানেই পাই দুর্নীতির কথা
সব জায়গাতেই দুর্নীতিটা মত মালার গাঁথা।

আসবে আসবে বলে ডাক্তার আসতে কতণ
ডাক্তারেরই অবহেলায় মরছে কতজন।।

সূত্রধারের প্রস্থান।

জব্বার আলীর প্রবেশ।

জব্বার আলী: আকাশ, আকাশ, বাবা আকাশ। এই আকাশটা যে কই থাহে! ওরে লইয়া আর পারতাছিনা।

আকাশ: বাজান, আমারে ডাকতাছ, বাজান?

জব্বার আলী: হ বাজান, কই গেছিলা?

আকাশ: খেলবার গেছিলাম বাজান।

জব্বার আলী: দেহ যে শরীরডা ঘামায়া কি করছে, সারাদিন খেলা আর খেলা, বাজান তোমার ইসকুুলে না বই দেওনের কতা বাজান। তোমারে বই দ্যায় নাই?

আকাশ: বাজান, গেছিলাম ইসকুুলে। 6 টা বই দেওনের কথা, তার মধ্যে 4টা দিছে। বাজান, ঐ 4টার মধ্যে আবার 2টা ছিড়া।

জব্বার আলী: আইচ্ছা বাজান থাউক, তুমি কাইন্দ না। বাজান হুন ঐ তোমগো ইসকুুলে না আবার কি ঐ উপবৃত্তির টেহা দেওনের কতা। বাজান ঐ উপবৃত্তির কি খবর?

আকাশ: স্যারেরা কইল তোর আব্বারে ইসকুুলে আবার কবি। আর ঐ ইসকুুল কমিটির সুপারিশ আনবার কবি।

জব্বার আলী: দেহ বাজান আমি ঐ স্কুল কমিটির ওহানে যাবার পারতাম না। ঐ ভেজাল আমার ভালা লাগেনা। বাজান হুন আমার মাথার ঘাম পায়ে ফেলায়া তোমারে মানুষ করমু। যেমনি পারি আমি টাহা যোগাড় করমু। তুমি বাজান ভালোভাবে লেহাপড়া কইরো। পরস্পর শুনলাম উপবৃত্তির টেহা নাকি ঐ মাস্টাররা আর ইসকুুল কমিটিরা মিল্লা খাইয়া ফালায়। বাজান ঐ টেহা পয়সা বাদ দে। তুমি না ভালভাবে লেহা পড়া কইরো। যাও তুমি গিয়া পড়গা।

আকাশ: বাজান তিনডা টেহা দিবা বাজান।

জব্বার আলী: টেহা ক্যা বাজান।

আকাশ: লাটিম কিনমু বাজান।

জব্বার আলী: ও বাজান হুনো, লাটিম আমি হাটে যাইতাছি তো, হাটেত তন যহন আমু তোমার লইগা লাটিম লিয়াম। যাও বাজান যাও হাত মুখ ধুয়া অহন পড়গা।

আকাশ: আইচ্ছা বাজান।

সূত্রধারের আগমন।

আরে দিনে দিনে আঠারো বছর গেল গত হইয়া
আঠার বছর পরের কথা তুলিলাম ধরিয়া

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন
কেমন কইরা টাকা কামায় রিলিফের মাল বেচিয়া
সেই ঘটনাই এখন সবাই দেখেন মন দিয়া গো

রাস্তার কাজ যখন ধরে পচিঁশ পার্সেন্ট কাজ করে
পচাঁত্তর ভাগ খায় যে তারা চেয়ারম্যান মেম্বার মিলিয়া
সেই ঘটনাই এখন সবাই দেখেন মন দিয়া গো

সূত্রধারের প্রস্থান।

অভিনেতাদের সারি থেকে দুইজন উঠে আসে।

গ্রামবাসী-1: সকালে দেখলাম তোমগো ঐহানে মেম্বার সাব আইছিলো। তা মেম্বার সাব কি কইয়া গেল?

গ্রামবাসী-2: তা মেম্বারসাব কইলো আজকে নাকি চাইল দিব। আচ্ছা ঐডা ক্যাডা, আকাশ বাবাজি না?

গ্রামবাসী-1: আকাশ ও বাবা আকাশ। একটু এদিকে আস দেহি।

আকাশ: আসসালামুআলাইকুম চাচা।

গ্রামবাসী-1 ও গ্রামবাসী-2: (সমস্বরে) ওয়ালাইকুমআসছালাম।

আকাশ: আপনারা কেমন আছুইন?

গ্রামবাসী-2: ভাল আছি বাবা।

গ্রামবাসী-1: তা বাবা কই যাইতেছ?

আকাশ: একটু কলেজে যামু।

গ্রামবাসী-1: আচ্ছা বাবা দেহছে, এক হাজার টেহা দিয়া ভিজিএফ কার্ড লইলাম। তা বাবাজী আমগরে কইলো তিরিশ কেজি চাইল পামু। বাবা, আমরা তো তিরিশ কেজি চাইল পাইতাছি না। আমরা বাবাজি 25 কেজি চাইল পাইতাছি।

গ্রামবাসী-2: আবার আজকে সকালে মেম্বার সাব আমগো বাড়ীতে গেছিল। যাইয়া কইল আজকে আমগো সেনাবাহিনী চাইল দিবো। সেনাবাহিনীগো সামনে যাইয়া আমগোরে যে 25 কেজি চাইলের মধ্যে 20 কেজি 15 কেজি চাইল দেয়, এই সত্য কতাডি যদি বইলা দেই তাইলে বলে আমগো কার্ড নিবগা। আমাগোর আর চাইল দিব না।

আকাশ: এইডা কেমন কতা। এই কার্ডতো মাগনা দ্যাওনের কতা। বুঝছেন চাচা, এই এরা চেয়ারম্যান মেম্বাররা যেমন শুরু করছে, এরম করলে তো এলাকাতে থাহন যাইতো না। আচ্ছা ঠিক আছে যাই হোক আমি রাত্রিরে আমনেগো বাড়িতে আইতাছি। এ বিষয় লইয়া আলোচনা করমু। ঠিক আছে।

গ্রামবাসী-1: আইচ্ছা বাবাজি তুমি যাও।

আকাশ: আইচ্ছা গেলাম।

গ্রামবাসী-2: বালা থাইকো বাবা।

গ্রামবাসী-1: আকাশের মত ছেলেই হয় না।

বলতে বলতে গ্রামবাসীদের প্রস্থান। আকাশ বেরিয়ে যাবার সময় বন্ধু সাগর-এর সাথে দেখা।

সাগর: এ আকাশ, কই যাস?

আকাশ: কলেজে যাইতাছি।

সাগর: কলেজে? ঠিক আছে তুই একটু এদিকে আয়। ঐ চেয়ারম্যানের পোলা জুলমত আমগোর এলাকায় মদ জুয়ার আসর বয়াইছে জানস।

আকাশ: তোরা কিছু কছ না?

সাগর: আরে কইছিলাম। আমগো কতা হুনলেছেন।

আকাশ: আচ্ছা ঠিক আছে, তাইলে একটা কাজ করি, কাস শেষ হইলে চেয়ারম্যানের ঐখানে যামু?

সাগর: আইচ্ছা, তাইলে যাইগা।

আকাশ: হ, যা।

সারিবদ্ধ অভিনেতাদের মধ্যে একজন উঠে আসে।

চেয়ারম্যান: ছোট গিনি্ন ও ছোট গিনি্ন আমার লাইগা একটা পান লইয়া আসতো।

আকাশ ও সাগরের প্রবেশ।

আকাশ: আসসালামুআলাইকুম চেয়ারম্যান চাচা।

চেয়ারম্যান: ওয়ালাইকুমসালাম। তা বাবারা নির্বাচনের সময় তো খুব নির্বাচন কইরা দিছ! কি মনে কইরা আমার বাড়ীতে।

আকাশ: চাচা ব্যাপারডা হইতাছে কি, আমনের পোলা জুলমতে আমগো এই গ্রামের মধ্যে মদ জুয়ার আসর বসাইছে। ও এইডা পরিচালনা করে। এতে মনে করেন আপনে চেয়ারম্যানের দুর্নাম। এলাকার দুর্নাম। আমাগো সকলের দুর্নাম। আমনে কি কইন।

সাগর: হুনলাম আমনেও বলে বন্ধুবান্ধবের নিয়া এলাকায় নেতাগোনরে লইয়া নেশার আসর জলসা বহান।

চেয়ারম্যান: দুই লাইন বেশি বোঝ! বাপের আগে সেইভ করা শিখছ! বাপ চাচাদের ওপর দিয়া মাতব্বরী কর?

আকাশ: এইডা কিরাম ব্যবহার করতাছুইন। কইলাম ভালা কতা। আমনে এরম করতাছেন ক্যান।

চেয়ারম্যান: পিপীলিকার পাখা গজাইছে। দুই লাইন বেশি বোঝ। যা করতে পারছ কর। বংশে বাতি দিবার মানুষ থুইতাম না। বাইরো বাইরো আমার বাড়ীত থনে বাইরো।

আকাশ: চাচা এইডা কিরম ব্যবহার করলেন?!

চেয়ারম্যান: তোর থনে ব্যবহার শিখন লাগব। বাইরো আমার বাড়ীথনে বাইরো।

চেয়ারম্যনের ছেলে জুলমতের আগমন।

জুলমত: কিরে আকাশ তোর হঠাৎ আমগোর বাড়ীতে কি মনে কইরা।

আকাশ: এই তোর বাপের এহানে আইছিলাম

জুলমত: আমার বাপ মানে? এই ছ্যাড়া এই, আমার বাপ তোর কি লাগেরে। ও, দুই লাইন লেহাপড়া কইরা এক্কালে বেডা হইয়া গেছগা, না? মুরুব্বী মানো না? হুন, অত কতায় দরকার নাই, পরস্পর শুনলাম তুই বলে আমার বোনেরে ডিস্টাব করছ? একটা কতা তোরে আমি সাফ সাফ কইয়া দিতাছি। এরপরে যদি হুনি তুই আমার বোনেরে ডিস্টাব করছস, তোর ঠ্যাং দুইডা ভাইঙ্গা হাতের মধ্যে ঝুলাইয়া দিমু কইলাম।
সাগর: এই যা যা গম চোরের পোলা। তোর বইন আকাশের পিছে আইলে আমরা কি করমু। এ আকাশ আয়।

জুলমত: কি? কি কইলি তুই? এই আকাশ এই বেশি বাড়িস না। চান্দের আলো দেখবার পাইতি না কইলাম।..........বাজান, এই বাজান, হুনছ তুমি? ঐ জব্বরের পোলা আকাশ কি কইয়া গেল? আমি কিন্তু ঐ জব্বরের পোলারে কব্বর দিয়া ফালামু কইলাম। এই পোলার লাইগা আমরার মানসম্মান লইয়া টানাটানি বাজব।

চেয়ারম্যান: না। এদিকে আসো। জব্বারের পোলারে কব্বর দেওন যাইত না। যাও, থানায় গিয়া ওর নামে নারী নির্যাতনের একটা মামলা দিয়া দাও। আমি ওসি সাইবের সঙ্গে কথা বলতেছি।

জুলমত: আমি বুইঝা গেছি কি করন লাগব আর কিছু তোমার বইলা দিওন লাগত না। আকাশ! তুইতো এই জুলমতরে চিনলি না। তোরে আমি বাতাসে বাতাসে ঘুরামু কইলাম।

চেয়ারম্যান: ঐ চার আঙ্গুইলা পোলা আমার সঙ্গে বেটাগিরি কইরা গেল! হুম।

চেয়ারম্যান ও জুলমত-এর প্রস্থান।

সূত্রধারের আগমন।

ইউনিয়ন ছাড়িয়া এবার চলেন গো সবাই
থানায় কি দুর্নীতি আছে জেনে নেব তাই।

সন্ত্রাসীরা চান্দা তুলে খায় সকল পুলিশে মিলে গো
ও ভাই কেহ নালিশ করতে গেলে টাকা ছাড়া লিখে না
পুলিশের দুর্নীতি এখন করি বর্ণনা গো।

সূত্রধারের প্রস্থান।

অভিনেতাদের মধ্যে তিনজন উঠে আসে।

দারোগা: সেন্ট্রি

সেন্ট্রি-1 ও সেন্ট্রি-2: (সমস্বরে) ইয়েস স্যার

দারোগা: পান, সেন্ট্রি।

সেন্ট্রি-1: ইয়েস স্যার।

দারোগা: জব্বারের বাড়ী কোনডা?

সেন্ট্রি-2: এইতো স্যার এই বাড়ীডাই স্যার।

দারোগা: যাও ডাক দিয়া আন।
সেন্ট্রি-1: জব্বার মিয়া বাড়ীতে আছ? আরে ও জব্বার মিয়া।

জব্বার আলী: এই কেডা?

সেন্ট্রি-1: বাইরে আস।

জব্বার আলী: আরে দারোগা সাব! সালামালাইকুম। আমনেরা হঠাৎ আমার বাড়ীতে কি মনে কইরা?!

দারোগা: ওয়ালাইকুৃম। তোমার পোলার নাম আকাশ?

জব্বার আলী: হ।

দারোগা: যাও তোমার পোলারে বাইর কইরা লইয়া আস।

জব্বার আলী: আকাশ তো বাড়ীত নাই । ক্যান আকাশ ক্যারে?

দারোগা: তোমার পোলার নামে আমার থানাত একটা নারী নির্যাতনের কেস আছে।

জব্বার আলী: নারী নির্যাতনের কেইস! এইডা মিথ্যা কেইস। সত্য না।

দারোগা: কয় কি! এই, চেয়ারম্যান সাবে কি আমার কাছে মিথ্যা মামলা দিব। খাইয়া আর কাম পাইছ না। যাও বাইর কইরা দাও।

জব্বার আলী: আমার জীবন থাকতে আমি আমার আকাশরে বাইর কইরা দিতাম না। আমার আকাশ কই আছে আমি কইতাম না।

দারোগা: কয় কি! তাইলে এই শালারে লইয়া যাই ।

সেন্ট্রি-1 ও সেন্ট্রি-2: জি্ব স্যার।

দারোগা: চল।

গ্রামবাসীদের আগমন।

গ্রামবাসীগণ: (সমস্বরে) এই কি অইছে, কি অইছে!?

জব্বার আলী: আরে দেহ, আকাশের নামে নাহি চেয়ারম্যান নারী নির্যাতনের মামলা দিছে। তোমরাই কওছে দেহি।

গ্রামবাসী-1: কি কন দারোগা সাব। আমরার আকাশের মত এত ভাল পোলা এই গেরামে আর একটাও নাই। তার নামে নারী নির্যাতনের মামলা! এডা তো সম্ভব না।

গ্রামবাসী-2: হ হ তুই ঠিকই কইছস।

দারোগা: তোমরার পোলা আকাশ মনে হয় ধোয়া তুলসি পাতা, তাই না?

গ্রামবাসী-1: আচ্ছা যাই হোক দারোগা সাব, কোন অপরাধ করলে ঐ আকাশ বাবাজি করছে। আর আপনি ধইরা নিতাছেন তার বাবারে। এইডা কিরম বিচার। এইডা ঠিক না দারোগা সাব। এইডা ঠিক না।

দারোগা: এই তুমি আমারে আইনের নিয়ম কানুন হিখাবা? যত্তসব, সেন্ট্রি।

সেন্ট্রি-1 ও সেন্ট্রি-2: ইয়েস স্যার।

দারোগা: লইয়া চল।

গ্রামবাসী-3: স্যার ও স্যার, এইডার কি কোন উপায় নাই স্যার?

দারোগা: উপায়!

সেন্ট্রি দারোগার কানে কানে শিখিয়ে দিবে।

সেন্ট্রি-1: স্যার এইতো সুযোগ স্যার। তেল খরচটা স্যার........

দারোগা: উপায় আছে, হুনো। সেইটা হইলো, আমরা আইলাম আর যামু, তেল খরচ হইছে না? যদি তেল খরচ এক হাজার টাকা দিয়া দাও তাইলে উপায় একটা দিবার পারি।

গ্রামবাসী-3: টেহার ব্যবস্থা স্যার আমরাই করমু স্যার। আপনি স্যার ছাড়ানের ব্যবস্থা কইরা দ্যান স্যার?

জব্বার আলী: এক হাজার টেহা! আমার কাছে এত টেহা নাই। আমি এত টেহা পামু কই।

গ্রামবাসী-2: তুমি টেহার চিন্তা কইর না। আমরা সবাই মিল্লা তোমারে টেহা কর্জ দিমু।

জব্বার আলী: তোমরা দিবা!?

দারোগা: সেন্ট্রি।

সেন্ট্রি-1 ও সেন্ট্রি-2: ইয়েস স্যার।

দারোগা: (সেন্ট্রি-1 কে) তুমি সাদা কাগজে সই রাখবা আর এক হাজার টাকা লইয়াবা। (সেন্ট্রি-2 কে) আপনে আমার সাথে আসেন, উত্তরপাড়ার ডিউটি আছে।

সকলের প্রস্থান।






সূত্রধারের আগমন।

আরে আদালতে উকিল পেশকার দুইজনে মিলিয়া
কেমনে দুর্নীতি করে দেখেন মন দিয়া।

হাজিরা তারিখ আনিতে যায় বাবা ছেলে
টাকা ছাড়া পেশকার সাহেব দেয়না তারিখ বলে।

চলেন চলেন সবাই মিলে আদালতে যাই
সেথায় কি দুর্নীতি আছে জেনে নেব ভাই।

সূত্রধারের প্রস্থান।

জব্বার আলী ও আকাশ-এর প্রবেশ।

জব্বার আলী: আসসালামুআলাইকুম।

পেশকার: কি ব্যাপার, আপনারা?

জব্বার আলী: আমগোর আজকে হাজিরা তারিখ আছিল তো, ম্যাজিষ্টেট সাহেব অহনও আইতেছে না। একটা বাইজা যাইতেছে। স্যার কি আজকে আইত না?

পেশকার: না স্যার তো আইজকা অন্য কাজে ব্যস্ত আছে, সে বাইরে গেছে। কি ব্যাপার আপনি আমার কাছে বলেন।

আকাশ: আমগোর যে 7 তারিখে হাজিরার তারিখ আছিল তা অহনও তো ম্যাজিষ্ট্রেট আইতাছে না। অহন কি করুম?

পেশকার: (স্বগত) যাক এই সুযোগে আমি কিছু কামাই কইরা লই।............আইচ্ছা ভাই হুনেন, এই মনে করেন যে কাগজপাতি দেহা লাগব, উকিলের কাছে যাওন লাগব, তাতে মনে করেন খরচ হইব, বুঝছেন? তা 200 টাকা লাগব।

আকাশ: ক্যা এইডা তো আমি যতদূর জানি ফ্রি দেহানের কতা। টেহা লাগে না। আমি জানি।

পেশকার: টেহা ছাড়া ভাই অইবো না। তাইলে যান অন্যখানে দেহেন। যান যান।

জব্বার আলী: আকাশ চুপ কর চুপ কর বাবা। বুঝছ না আমগোর দরকার, আমাগোর অহন করনই লাগব। ভাই, হুনেন ভাই, এই যে ন্যান ভাই। ভাই কিছু কম আছে।

পেশকার: দূর মিয়া ভাই ডাহে, স্যার ডাকেন মিয়া স্যার।

জব্বার আলী: স্যার ন্যান স্যার ন্যান।

পেশকার: আমনেরা খাড়ান, আমি লইয়াতেছি উকিল স্যাররে।
পেশকারের সাথে উকিলের প্রবেশ।

জব্বার আলী: সালামালাইকুম।

উকিল: ওয়ালাইকুমসালাম। বলেন আপনেদের বিষয়ডা কি?

জব্বার আলী: আমরা স্যার ঐ মামলার ব্যাপারে আইছিলাম, আমগোর তো স্যার 7 তারিখে ডেট আছিলো। স্যার একটু দেখতেন যদি।

উকিল: মামলার ডেট আপনাদের জানার প্রয়োজন নাই। শুনেন, আপনারা যদি 30 হাজার টাকা বাও কইরা নিয়ে আসেন আমি আপনাদের মামলার বিষয়টা দেখতাছি। পুরাপুরি মিটায়া দিমু।

জব্বার আলী: এত টেহা! এত টেহা পামু কই ?

পেশকার: আরে মিয়া স্যারে তো কমই চাইছে। উপায় খুজেন, জমি আছে না? বেইচা দ্যান মিয়া। না হইলে 14 বছর জ্যাল অইবো।

জব্বার আলী: 14 বছর! না আকাশ বাবাজিরে আমি 14 বছর জ্যালে থাকতে দিমু না। আমার ঐ ভিটাডা শেষ সম্বল, আমি এইডা বিক্রি কইরা আমার আকাশেরে বাচামু।

আকাশ: না বাবা না, তুমি ঐ ভিটাডা বেইচ না। দরকার অইলে আমি জেলই খাটুম।

জব্বার আলী: না বাবাজি না। তুমি বুঝতাছ না ব্যাপারটা। বাবাজি তোমারে লইয়া আমার স্বপ্ন। তোমারে লইয়া আমার শেষ আশা। বাবাজি বাড়ীঘর বেইচা আমি সব ব্যবস্থা করব। তুমি আর কতা কইও না।

পেশকার: হ যান যান টেহাপয়সা লইয়ান। বেইচা টেইচা।

উকিল: যত তাড়াতাড়ি পারেন টাকা পয়সা নিয়ে আসেন। তাহলেই আপনাদের সব কিছু ঠিক হয়া যাবো। যান।

সকলের প্রস্থান।

সূত্রধারের আগমন

ভূমির অফিসে ভাইরে ঘটে যে সব ঘটনা
সেই কথাই করব এখন বর্ণনা।

তহশীলদার ঘুষ না পেলে নকশা দলিল দেয় না তুলে
আরো আছে অনেক কিছু দেখেন তাই নাটক খানা
সেই কথাই করব এখন বর্ণনা।

জব্বার আলী ও আকাশ: আসসালামুআলাইকুম

তহশীলদার: ওয়ালাইকুমআসসালাম।
জব্বার আলী: ভাই আমরা ঐ আটানি বাজারের জমিটা বিক্রি করমু তো। ঐ জমির ব্যাপারে আইছিলাম।

আকাশ: জমির দাগ নম্বর, নকশা, পরচা দরকার, একটু বাইর কইরা দ্যান। এইডা ছাড়া ভাই জমি কেউ কেনে না।

তহশীলদার: শুনেন প্রথমে তল্লাসী দিতে হইব, তারপর পুরানা ফাইলটাইল বের করতে হইব। অনেক ভেজাল। সব মিলাইয়া 200 টাকা লাগতে পারে।

আকাশ: কি কন? এইডা মাগনা দ্যাওনের কথা। আমি যতদূর জানি টেহা লাগে না।

তহশীলদার: ধূর মিয়া টেহা ছাড়া এই যুগে কিছু হয় নাকি! ধুর মিয়া যান এহানতে।

জব্বার আলী: বাবা তুমি চুপ কর। আচ্ছা ভাই , টেহা দিমু।

আকাশ: ধূর তুমি খালি সব জায়গায় টেহা দাও।

তহশীলদার: তোমরা দাড়াও আমি দেহি। 102 নম্বর দাগ না? জব্বার আলী না?

জব্বার আলী: হ হ।

তহশীলদার: এই যে এই ন্যাও।

আকাশ: হ এইডাই তো 102 নম্বর দাগ । হ হ এইডাই তো আমাগোর, দাগও আছে।

তহশীলদার: এই শুনেন আবার আসবেন কিন্তু।

জব্বার আলী: এ্যা আবার আমু মানে! দরকার না পড়লে আপনাদের ঐ বান্দর মার্কা চেহারা দেখবার লাইগা আবার আমু? এই চল চল।

জব্বার আলী ও আকাশ বেরিয়ে আসে।

জব্বার আলী: বাবাজি দেখ এই আমাগোর শেষ সম্বল বাহের ভিডাডা আছিল, ঝামেলায় জড়ায়া ভিডাডাও হারাইলাম। বাবা দেখ তুমি তো মেধাবী ছাত্র। তুমি বাবাজি চেষ্টা কর। তুমি চাকরি পাবা।

আকাশ: বাবা তুমি ঠিকই কইছ। আমাদের মত মেধাবী ছাত্রদের জন্য চাকরি আছে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা টাকা ছাড়া চাকরি হয় না। বাংলাদেশে চাকরি অহন আর সোনার হরিণ নাই, হিরার হরিণ হইয়া গেছে । তারপরও যহন তুমি কইতাছ আমি যামু। চাকরির লাইগা চেষ্টা করমু।

জব্বার আলী: হ বাবা মন দিয়া চেষ্টা কর।

আকাশ: আইচ্ছা বাবা ঠিক আছে।

উভয়ের প্রস্থান।

সূত্রধারের আগমন।

আরে ইন্টারভিউতে পাশ করিয়া
চাকরি না পায় আকাশ মিয়া
ব্যর্থ হইয়া ফিরা যায়
জ্বইল্যা যায় বুকটা জ্বইল্যা যায়।।

ইন্টারভিউ আকাশ মিয়া দিয়াছিল কত
ঘুষ না দেওয়ায় চাকরিটা সে পায় না ঠিকমত
অন্য লোকে ঘুষ দিয়া, চাকরিটা নিল কাড়িয়া
ব্যর্থ হইয়া ফিরা যায়
জ্বইল্যা যায় বুকটা জ্বইল্যা যায়।।

সূত্রধারের প্রস্থান।

আকাশ একা বসে আছে। জব্বার আলীর প্রবেশ।

জব্বার আলী: বাবা আকাশ, কি চিন্তা করতাছ? বাবা কি অইছে তুমার? তুমি না ইন্টারভিউ দিলা, চাকরি অইনাই?

আকাশ: হ বাবা ইন্টারভিউতো দিছিলাম। আমি ইন্টারভিউটা খুব ভালা দিছিলাম। কিন্তু আমার চাকরিডা হয় নাই।

জব্বার আলী: চাকরিডা হয় নাই! তয় কার চাকরি হইছে।

আকাশ: ঐ যে আমগো পাড়ার যদুর পোলা সাগর আছে না, ওর চাকরিডা অইছে ?

জব্বার আলী: কি কও বাবা! সাগরের চাকরি অইলো? সাগর না সারা বছর তুমার পিছে পিছে থাকতো। ছাত্রও তো তুমার চাইতে খারাপ হুনছি মাস্টারগো থেইকা। আর সাগরের চাকরি অইয়া গেল! তোমার চাকরিডা অইল না!

আকাশ: হ আমার চাকরিডা অইছে না। জানো আমি গেছিলাম ঐ অফিসে খবর লবার লাইগা। তুমি হুনবা এই কাহিনী?

ফ্যাশব্যাক।
আকাশ অফিসে পিয়নের সাথে।

আকাশ: পিয়ন ভাই।

পিয়ন: এ্যা?

আকাশ: এই যে গত মাসের 7 তারিখে একটা ইন্টারভিউ হইল । ক্যাডা ফাস্ট অইল।

পিয়ন: কি জানি ক্যাডা ফাস্ট হইছে। এডা আমি কবার পারমুনা।
আকাশ: ভাই একটু কন না ক্যাডা ফাস্ট অইছে। আমনেরা তো ভাই জানুইন।

পিয়ন: আইচ্ছা, চা পান খাওয়ার লইগা বিশটা টেহা দ্যান।

আকাশ: বিশ টেহা দিয়ন লাগব! আমনে তো এমনেই কবার পারেন।

পিয়ন: তাইলে আমার পিডটা একটু চুলকায়া দ্যান।

আকাশ: পিড চুলকায়া দিমু! কি কন? এই লন বিশ টেহা। তাও মিয়া কন।

পিয়ন: দাড়ান। হুনেন যে পোলাডা ফাস্ট হইছে ওর নাম হইল আকাশ। আর যে পোলার চাকরি হইছে ওর নাম সাগর।

আকাশ: আকাশ ফাস্ট হইছে, তাইলে সাগরের চাকরি হইল কেমনে?

পিয়ন: দুই ল টাকা ঘুষ দিয়া লইছে। বুঝছেন?

আকাশ: ও আইচ্ছা।

ফ্যাশব্যাক শেষ।

আকাশ: বাজান বুঝছ এই হইল কাহিনী।

জব্বার আলী: ও এই তো কই। আসলে এহন আর আগের দুনিয়া নাই।

আকাশ: বাবা আমার কি ইচ্ছা হইছিল জানো, আমি ঐ কলম ফালাইয়া দিয়া অস্ত্র হাতে তুইলা লই।

জব্বার আলী: না বাবা না। এইডা কি কস তুই! তোর মত মেধাবী ছাত্র, এইডা কি কস? তোর যত মেধা আছে সব ছড়াইয়া দিয়া এলাকার প্রত্যেক ঘরে ঘরে তোর মত মেধাবী তৈরী করবি। তখন আর এই বাংলাদেশে দুর্নীতি হইত না। তোর মত মেধাবী ছাত্র বাবা আর দুর্নীতির শিকার হইত না। কতা দে বাবা তুই আর ঐ অস্ত্র না কি জানি কইলি অইসব চিন্তা করবি না। হাতে নিবি না।

আকাশ: তাই হবো বাবা। আমি আমার সমস্ত শিা দিয়া এলাকার মানুষের মাইধ্যে আলো ছড়ামু। আমার মত যাতে দুর্নীতির শিকার আর কেউ না হয়, এর জন্য সংগ্রাম করমু দরকার হইলে।

জব্বার আলী: হ বাবা হ।

আকাশ: দেশ থাইকা যেমনেই হোক দুর্নীতি আমগোর রোধ করতেই হবো।

জব্বার আলী: জানস বাবা, এই দেশটাকে কত কষ্ট কইরা স্বাধীন করছি, যুদ্ধ করছি। আকাশ শোন, আর এই দেশটারে কত কত লোক আছে কষ্ট দিতাছে। আমারে কতা দে বাবা, তুই একবার চেষ্টা করবি?



নেপথ্যে।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলবনা।

আকাশ: হ বাবা, আমি তুমারে কতা দিলাম, আমার সমস্ত শক্তি দিয়া, মেধা দিয়া চেষ্টা করুম। দেহি এই দেশটারে স্বপ্নের মত সাজাইতে পারি কিনা।

আকাশ ও জব্বার আলীর প্রস্থান।

সকল অভিনেতা সারি থেকে উঠে এসে বিশেষ বিন্যাস তৈরী করে ও সম্মিলিত কন্ঠে গান ধরে।

আকাশের প্রটোকল মানবে না মেঘ
সাগরের সীমানা মানবে না ঢেউ
তবু পদে পদে বাধা এলে দুর্নীতি ছেয়ে গেলে
আমাদের দেশের সম্মান আমরাই রাখবো
এ শপথ আমাদের।

আমার বাংলাদেশ প্রাণের বাংলাদেশ
প্রিয় বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ
বাংলাদেশ।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:৩১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×