somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেডিও ও আমি

২৭ শে অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের ছোটবেলায় রেডিও ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম । বেশিরভাগ বাঙালি বাড়িতেই রোজ সন্ধেবেলা রেডিওতে খবর ও নাটক শোনা ছিল জরুরী বিষয় । কিন্তু তখন রেডিও ছিল আমার নাগালের বাইরে ।
যখন আমি রেডিও নিয়ে নাড়াচাড়া করি তখন আমাদের বাড়িতে টিভি ভালই জাঁকিয়ে বসেছে । কিন্তু তবুও আমি রেডিও শুনতাম । আমার বাবা-মার বিয়ের পুরনো রেডিওতে আমি বিবিধ ভারতী, যুববাণী আর বিভিন্ন শর্টওয়েভ চ্যানেল শুনতাম ।
শর্টওয়েভে বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা প্রভৃতি স্টেশন শুনে বেশ একটা আর্ন্তজাতিক অনুভূতি হত । এছাড়াও নানা অচেনা জায়গার এবং অচেনা ভাষার স্টেশন শুনে বুঝতে চেষ্টা করতাম যে সেটা কোথাকার স্টেশন । পৃথিবীর বহুদেশই বাংলায় অনুষ্ঠান প্রচার করত নিয়মিত ভাবে । সম্ভবত এখনও করে ।
আমি মাধ্যমিক পাস করার পর নিজের মিউজিক সিস্টেম কিনি । তাতে ক্যাসেট চালিয়ে গান শোনা যেত এবং রেডিও শোনা যেত । এই সিস্টেমটা কেনার পর প্রথম আমি কলকাতার এফএম স্টেশন শুনতে পাই । কারণ এর আগের বাড়ির পুরনো রেডিওগুলোতে এফএম ছিল না ।
মিডিয়াম ওয়েভ এবং শর্টওয়েভের থেকে এফএম এর সাউন্ড কোয়ালিটি অনেক ভাল । তখন অবশ্য কলকাতায় একটিই এফএম স্টেশন ছিল । তা ছিল আকাশবাণীর । এই এফএম স্টেশনের জনপ্রিয়তা খুবই বেশী ছিল । বহু বাড়ী, দোকানে সবসময় এফএম চলত । অনেকে রেডিও না কিনে শুধুমাত্র একটা বক্স কিনে নিত আর তার সাথে একটা এফএম রিসিভার লাগিয়ে নিত । এগুলোতে এফএম ছাড়া অন্য কিছু শোনা যেত না ।

আকাশবাণীর এফএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে গানের থেকে বকবকানি বেশি হয় । বাস্তবিকই অনেক সময়ে দেখা যেত সঞ্চালক সঞ্চালিকাদের বকর বকর এবং জ্ঞান বিতরন গানের থেকে অনেক বেশী সময় ধরে হচ্ছে । এছাড়া এই স্টেশনে বেশিরভাগ সময়েই শুধু পুরনো গান শোনান হত । নতুন গান খুব কম শোনানো হত । ফলে অল্পবয়সীদের মধ্যে এই এফএমএর জনপ্রিয়তা খুব একটা বেশী হয় নি । আকাশবাণীর এই স্টেশনে ফোন করে অনেকে নানা বিষয়ে নিজের মতামত জানাতেন । প্রায়ই দেখা যেত যে একই লোক রোজই ফোনের লাইন পাচ্ছেন আর বহু লোক অভিযোগ করতেন যে তাঁরা বহুবার চেষ্টা করেও একবারও লাইন পাচ্ছেন না । এটা একটা রহস্যজনক ব্যাপার ছিল যে একই লোক কিভাবে বার বার ফোনের লাইন পায় । এই ব্যাপার কুখ্যাত ছিল মধ্যমগ্রাম এলাকা । দেখা যেত যে মধ্যমগ্রামের লোকেরা খুব সহজেই এফএমের ফোনের লাইন পায় । এর মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন ভুলু সাহা এবং নান্টু সাহা । এফএমে ফোন করে করে ভুলু সাহা প্রায় বিখ্যাত লোক হয়ে পড়েছিলেন । যেকোন লোক একডাকে ভুলু সাহাকে চিনত ।

এরমধ্যে অবশ্য শর্টওয়েভ রেডিও মাঝে মাঝে শুনতাম । কারগিল যুদ্ধের সময় শর্টওয়েভ রেডিওতে পাকিস্তানের প্রোগ্রাম শুনে হাসি পেত । যেকোন উপায়ে ভারতের নিন্দে করাই যেন পাকিস্তান রেডিওর একমাত্র উদ্দেশ্য । যেমন গানের প্রোগ্রামে একটি করে গান শোনানো হত এবং সঞ্চালিকা খানিকক্ষন ভারতের পিণ্ডি চটকাতেন । তারপর আবার একটা গান । নানা ভাবে নানা উপায়ে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার জন্যই যেন স্টেশনটি খোলা হয়েছে । খুব রাগ হত যখন সঞ্চালিকা উগ্রপন্থীদের শহীদ আর ভারতের বীর জওয়ানদের দুশমন বলতেন ।

২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরে যখন আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমন করে তখন যুদ্ধ লাগার প্রথম খবর আমি শর্টওয়েভ রেডিও থেকেই পেয়েছিলাম ।

এরমধ্যেই একবার খবরের কাগজে পড়লাম যে সরকার প্রাইভেট এফএম স্টেশনের লাইসেন্স মঞ্জুর করেছে । তখন থেকে আরম্ভ হল আমার প্রতীক্ষা । লাইসেন্স দেবার বহু দিন পরে প্রায় বছর দুয়েক হবে কলকাতায় একই সঙ্গে একই দিনে চারটি নতুন চব্বিশ ঘন্টার প্রাইভেট এফএম স্টেশন চালু হল । বলা যায় কলকাতায় রেডিওর পুর্নজন্ম হল ।
এই চারটি স্টেশন হল আমার এফএম, রেডিও মির্চি, রেড এফএম এবং পাওয়ার এফএম । চারটি চ্যানেলে একদম নতুন গান চব্বিশ ঘন্টা ধরে শোনান হতে লাগল । কলকাতার রাস্তায় পঞ্চাশ টাকা করে ঝুড়ি করে এফএম রেডিও বিক্রি হতে লাগল ।

এই নতুন স্টেশনগুলিও সমালোচনা থেকে মুক্ত ছিল না । বিশেষ করে আমার এফএম এবং পাওয়ার এফএম এ একই গান বহুবার শোনানো হত । গানের বৈচিত্র বড়ই কম ।
আমি প্রথম কাজ পাই কলকাতার একটা অফিসে দুই মাসের কন্ট্রাক্টে ডেটা কনভারসন করার । সেখানে কাজের একঘেয়েমি দূর করার জন্য একটা এফ এম রেডিও লাগানো ছিল । কোনো এক রহস্যজনক কারণে রেডিওটিতে পাওয়ার এফএম ছাড়া আর কোন স্টেশন ধরত না । আর আমাদের বার বার একই গান শুনে মাথা খারাপ হবার যোগাড় ।

মাত্র কয়েকদিন আগে কলকাতায় শুরু হয়েছে পঞ্চম প্রাইভেট এফএম চ্যানেল বিগ এফএম । শোনা যাচ্ছে আরও কয়েকটি এফএম চ্যানেল কলকাতায় চালু হতে চলেছে । যাতে শুধুমাত্র গান ছাড়া অন্যান্য খবর ভিত্তিক অনুষ্ঠানও শোনা যাবে ।

কলকাতায় স্যাটেলাইট রেডিওর বিক্রিও বেশ কিছুদিন ধরে শুরু হয়েছে । কিন্তু স্যাটেলাইট রেডিও সফল হওয়া খুবই মুশকিল । কারণ এই রেডিওর মাসিক চার্জ আছে । আর এফএম চ্যানেলগুলোতেই যখন ফ্রীতে এত গান শোনা যাচ্ছে আর সস্তার এমপিথ্রীতে যখন বাজার ভরে গেছে তখন আবার মাসিক চাঁদা দিয়ে গান শোনার কোন মানে হয় না ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

NVR (No Visa Required) এর জন্য জেনে রাখা দরকার

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
×