চলেন একটু মারামারি করা যাক!
ধর্ম নিয়ে কথা বলা বারন। তর্ক করা বারন। কারন? সাম্প্রদায়ীকতা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, গৃহ-যুদ্ধ শুরু হয়, প্রতিশোধ শুরু হয়। অন্যের ধর্মকে Publicly নোংরা করা অথবা নোংরা ভাবে উপস্থাপন করা অনেকের স্বভাব। অনেক সময় নিজেদেরটা নিয়েও অনেকে করে। এর কারন হচ্ছে একটা মানষিক শান্তি। ঠিক শান্তি না, সন্তুষ্টি। Human Nature নোংরা পচ্ছন্দ করে না, তাই নোংরা থেকে শুরু হয় ঘৃণা আর ঘৃণা থেকে রাগ। এই রাগ পরিনত হয় ক্ষোভে এবং ক্ষোভ থেকে শুরু হয় সংঘাত। স্বভাব বলাটা নেতিবাচক হয়ে যায়। স্বভাব বলতে আমরা বুঝি সেই ব্যাক্তি ইচ্ছা করে কাজটি করছে। কিন্তু আসলে এই কাজটি তাকে দিয়ে করানো হচ্ছে। কে করাচ্ছে! মানে এই খেলার সেই আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন কে? প্রশ্ন আসবে নোংরায় শুরু হয়ে সংঘাতে গিয়ে কেন শেষ হয়? আমি চেষ্টা করছি প্রশ্ন গুলোর উত্তর সহজ করার।
সাধারন ভাবে আমাদের মনের দুইটি স্তর রয়েছে। বহিঃমন অথবা Outer Mind এবং অন্তঃমন অথবা Inner Mind । আমাদের মস্তিষ্কে যত ধরনের তথ্য ঢুকে তা প্রথমে Outer Mind রিসিভ করে। এই Outer Mind এর কাজ হচ্ছে যত ধরনের তথ্য সে পাচ্ছে তা যুক্তিতে ফেলা এবং সেই অনুসারে তথ্যটির ব্যাপারে কাজ করা। কাজ করা বলতে শরীরকে এই তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন কাজ করানো এবং তথ্যটি মস্তিষ্কে সংরক্ষণ করে রাখা জাতীয় কাজ সমূহ। আবার Inner Mind বা অন্তঃমন কোন যুক্তি তর্কে যায় না। তার কাজ হচ্ছে যাবতীয় তথ্যসমূহ সংরক্ষণ করে রাখা। সংরক্ষণের সময় Outer Mind এর নির্দেষ অনুসারে Inner Mind তথ্যটি ইতিবাচক এবং নেতিবাচক হিসেবে Categorize করে এবং সেভাবেই সংরক্ষণ করে।
প্রশ্ন হচ্চে ধর্ম কি? যা নিয়ে এত মারামারি? আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর কি? অথবা রকেট সাইন্স সম্পর্কে ব্যাখ্যা করুন? ১ সপ্তাহ অথবা ১০ বছর পড়াশুনা করে আপনি তার উত্তর করতে পারবেন। শুধু এগুলোই নয়, যেকোন ধরনের প্রশ্নের উত্তরই দেয়া সম্ভব। কিন্তু ধর্ম এমন একটা বিষয় যা কিনা সারাটা জীবন সময়ও যদি আপনাকে দেয়া হয় আপনি এর ব্যাখ্যা বের করতে পারবেন না। মানুষ জন্মের পর থেকে সব থেকে বেশি সময় কাটায় তার পরিবারে। যেখানে ছোটবেলা থেকে তাকে শিক্ষা দেয়া হয় ধর্ম, কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ, কোনটার দরকার আছে আর কোনটার দরকার নেই। ছোট বেলায় আমাদের মস্তিষ্কে তথ্যভান্ডার কম থাকে তাই Outer Mind লজিক/যুক্তিতে তেমন ভালো থাকে না। এর ফলে আমরা যাদের বিশ্বাস করি তাদের বোঝানো ‘ভালোই’ আমাদের Outer Mind ভালো এবং ‘খারাপ’ গুলোই খারাপ হিসেবে মেনে নেয়।
ধর্ম বলতে আমাদের বেশিরভাগ মানুষদের বোঝানো হয় খ্রীষ্টান, মুসলমান, হিন্দু, বৈদ্য। ধরে নেই আমাকে বোঝানো হল আমি খ্রীষ্টান। যদি শুধু এর ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে হয়তো সমস্যা মিটে যেত। আমাদের বোঝানো হয় এই খ্রীষ্টান শব্দটি হচ্চে পৃথিবীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক(Positive) শব্দ এবং আমাদের চারপাশের সকল ভালো কিছু এই শব্দের ভিতরে যাবে। আমার Outer Mind এর ক্যাটাগরি সেট হয়ে গেল এবং সে তার যুক্তিতে যা কিছু ভালো পায় Outer Mind কে তা এই শব্দের ভিতরে categorized করে সংরক্ষণ করতে বলে। এখন ধরেন আমার এক বন্ধু মিঠু, তাকে ছোটবেলা থেকে বোঝানো হল সে হিন্দু এবং এর পরে আমাদের চারপাশের সকল ভালো কিছু এই শব্দের ভিতরে যাবে। একই ভাবে মিঠুর Outer Mind এর ক্যাটাগরি সেট হয়ে গেল এবং সে তার যুক্তিতে যা কিছু ভালো পায় Outer Mind কে তা এই শব্দের ভিতরে ক্যাটাগরাইজড করে সংরক্ষণ করতে বলে। এই পর্যন্ত হলেও কিছু খারাপ হত না। বরং একটু বেশিই ভালো হত। কিন্তু খেলাটি হচ্ছে প্রজন্মের পর প্রজন্মে মানুষ তাদের প্রবীণদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে শিক্ষা পায় যে আমার ধর্ম বাদে অন্য ধর্ম শব্দগুলো অথবা সেই শব্দের অনুসারীরা ভালো নয়। এই বোঝানোর ব্যাবস্থাটি সবসময় যে মুখের কথায়ই হবে তা নয়। উদাহরন যদি দেই তাহলে এমন হয়, ‘ধরা যাক আমার ছেলে মাঠে খেলতে গেল। খেলার মাঠে মোমিন নামের একটি ছেলের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা হল এবং আমি ছেলেটির পরিবার সম্পর্কে জানি। আমি আমার ছেলেকে মুখের অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বুঝালাম সেই ছেলেটি খারাপ এবং তার সাথে চললে সেও খারাপ হয়ে যাবে।‘ তার মানে দাঁড়ায় আমি খ্রীষ্টান কিন্তু হিন্দু অথবা মুসলমান শব্দটি আমার জন্য ভালো নয়। আমি সরাসরি তা না বললেও আমার প্রচন্ড চালাক মস্তিষ্ক তা ধরে ফেলে সেও আমার মত পরোক্ষ ভাবে আমার ছেলের মস্তিষ্ককে বিশ্বাস করাবে যে মুসলমান ধর্মটি খারাপ।
এখন আরো জটিল মজায় আসি। এই যুক্তি যদি পাকা ভাবে আমাদের মস্তিষ্ক মেনে নেয় তাহলে তো আমার পক্ষে মিঠু যে হিন্দু তা জানা মাত্রই তার সাথে আমার সংঘাত হত। তাহলে হচ্ছে না কেন? আমার মস্তিষ্ক কি ভুল করছে? না। মস্তিষ্ক যখন দেখে খ্রীষ্টান ক্যাটাগরিতে যত ভাল সমূহ রয়েছে তার বেশিরভাগ ভালোই আবার হিন্দু ক্যাটাগরিতে রয়েছে তখন সে তার ভালো সমূহ মিলে যাবার সংখ্যাগরিত্বের বিচারে মিঠুকে মেনে নেয় এবং বেশিরভাগ সময় তাকে বন্ধু হিসেবেই মেনে নেয়।
তাহলে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনকে খুজে পাওয়া গেল। মস্তিষ্ক। এখন কথা হচ্ছে ধর্মের বিষয়ে মস্তিষ্ককে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন হওয়া থেকে কিভাবে বাচানো যায়? খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং জটিল থেকে জটিলতর প্রশ্ন। এটি আসলে পুরোপুরি ভাবে করা সম্ভব কিনা তা জানিনা। তবে এই লুপ থেকে বের হবার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ হল পারিবারিক শিক্ষা। আপনি যেদিন বুঝতে পারবেন আপনার শিখানো খুব ছোট ছোট তথ্য ভবিষ্যতে যুদ্ধ, সংঘাত ইত্যাদির মত বড় বড় শব্দের কাঁচামাল হতে যাচ্ছে, সেদিন থেকেই আসলে সম্ভব নিজের মস্তিষ্কে সংরক্ষিত তথ্য গুলো সংশোধন করা এবং এর মাধ্যমে পুরো জাতির ভেতরে পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরী করা।
----------
স্যোসাল প্লাটফর্মে এর আগে আমি বড় করে কখনো লিখিনি। আমার ছোট মাথায় যতটা ধরে লিখলাম। ভুল হতেই পারে। আমি ঈশ্বর নই। কিন্তু ভুল নিজের ভিতরে নিয়ে বসে না থেকে আমাকে জানালে আমার ভান্ডার কিছুটা সমৃদ্ধ হবে। আর বানান, সাধু-চলতি এবং বাংলেশ মিশ্রনের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সর্বপরি ধৈর্য নিয়ে এতবড় লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এই লেখার সাপেক্ষে আমার আরো অনেক যুক্তি, এবং অনুভুতি রয়েছে। এই লেখার দর্শকের উপর ভিত্তি করে আমি সিদ্ধান্ত নিব যে আমার আর আগানো উচিৎ কিনা।
ধন্যবাদ,
শুভ্র

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



