কিছু বই প্রকাশ এবং লেখকের অনুভূতি শেয়ার করব এখন থেকে।
ঢাকার বইরের একজন লেখিকা, গল্পের বই প্রকাশের জন্য যোগাযোগ করেন। তারপর পাণ্ডুলিপি জমা দেন, একটা গল্প আগেই জমা দিয়েছিলেন। আমাদের ভালো লেগেছিলো। ঢাকা বইমেলা উপলক্ষ্যে ডিসেম্বরেই প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি সবার সাথে আলাপ করে জানালেন, ফেব্রুয়ারির বইমেলাতেই বই চাই তাঁর।
এর মধ্যে ডিসেম্বরেই আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেলো। ইত্যকার নানা ঝামেলায় সবগুলি বইয়ের কাজ পেছাতে থাকলো। বইয়ের বানান সংশোধনের কাজ এক দফা করার পর লেখিকা জানালেন, ঠিক মত হয়নি, আর তিনি অক্টোবরে যে স্ক্রিপ্ট জমা দিয়েছিলেন, নিজে এখন কিছু ভুল বের করেছেন, আর তার আস্থার জায়গায় আর একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি সাত সমুদ্রের ওপারে আছেন, ভালো বানান সংশোধন অথবা এক কথায় সম্পাদনা ভালো বোঝেন। সেই জুলিয়ান সিদ্দিকীকে স্ক্রিপ্ট মেইল করা হলো। অবশেষে, তিন/চার দফা নিজে দেখে ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখের দিকে চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি মেইল করলেন। সব সময় উনি বলতেন, আমার বইয়ে তাড়াহুড়া দরকার নেই, ভালো করে করেন। আমার প্রথম বই, কোনো ভুল যেন না থাকে। নিজে দুইটি নমুনা বই পাঠিয়ে ছিলেন, ঐগুলির কোনো একটার মত করে, বাইণ্ডিং করতে বলে ছিলেন। আমাদের চেষ্টার অন্ত ছিল না। তারপরও বইমেলার সময়ে প্রেসগুলিতে যে চাপ থাকে, আমাদের দেরি হচ্ছিলো, আমি চেষ্টা চালাচ্ছিলাম পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে। লেখিকা বললেন, ২২ তারিখ (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪) আমি মেলা্য় যাবো, মেলায় আমার বই পাবো তো? আমি বলেছিলাম, পাবেন।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ মেলাতে আমাদের দু'টি বই প্রকাশিত হলো, একটি মাজহার মোশাররফের স্বপ্ন-সূর্য-প্রাণ, আর একটি সাদিয়া সুলতানার 'চক্র'। চক্র বইটি, লেখিকার অনেক দিনের সাধনার ফসল। ইতিপূর্বে লেখা গল্পগুলি থেকে যেন সিন্ধু সেচে মুক্তা আনা হয়েছে।
লেখিকা মেলায় এলেন, স্টল থেকে বই কিনলেন। আমি কাছাকাছিই ছিলাম। আমাকে আগে কখনো দেখেননি, আমিও তাকে দেখিনি, আগে শুধু ছবিই দেখেছি। গত পাঁচ মাস ধরে আমাদের কথা হচ্ছে। তিনি আমাকে চিনতে পারলেন। আমার দিকে ধীর পদক্ষেপে হেটে এলেন। হাতে তার বই 'চক্র'। চোখে মুখে সৃষ্টির অনুভূতি। বইটি উল্টে-পাল্টে দেখছিলেন। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তার চোখ ভিজে আসছে, আমারো কী একটু চোখে জল আসছে? বই প্রকাশ নিয়ে যত, প্রতীক্ষা, প্রকাশকের প্রতি অভিযোগ, সবকিছুই কী আজ জলে ভেসে যাবে।