somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তন ১০১ (কিউ অ্যান্ড এ)

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিবর্তন নিয়ে আমাদের সকলেরই অনেক কৌতূহল ও অজ্ঞতা আছে। অনেকেই একে হাইপথেসিস বলে উড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে অনেকে একে থিউরি অফ গ্রেভিটির মত ফ্যাক্ট মনে করে। থিউরি, ফ্যাক্ট ও হাইপথেসিস এর গোলকধাধা তো আমাদের মধ্যে আছেই। অনেকে ধর্মের কথ বলে এই বিষয় থিউরি হোক বা না হোক একে অবান্তর একটা বিষয় বলে টপিক থেকে সরে আসে। যেটাই হোক, বিবর্তন নিয়ে মানুষের কনফিউশন আর প্রশ্ন নিয়েও আমার এই ব্লগ। আশা করি বেসিকগুলো কভার হবে আর প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট এ পাব, যা পরে এডিট করে ব্লগে যোগ করা হবে।

(১) বিবর্তন কি ?

আক্ষরিকঅর্থে বিবর্তন বলতে আমরা কোন কিছুর সময়ানুক্রমে এক রূপ থেকে অন্য রুপে যাওয়ার সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে বুঝাই।

ব্যবহারহারিকভাবে, বিবর্তন বলতে আমরা অরগানিক বিবর্তন বা প্রানের এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় আসার সামগ্রিক প্রক্রিয়াই বুঝে থাকি।

ভিডিওটি একটু সাহায্য করতে পারে


(২) বিবর্তন কিভাবে হয় ?


বিবর্তন প্রধান দুইটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়।
ক। জেনেটিক মিউটেশন
খ । ন্যাচারাল সিলেকশন

ক। মিউটেশন



মিউটেশন হচ্ছে প্রাণীর প্রজনন ও রেপ্লিকেসশনের সময় ডিএনএ এ পরিবর্তন আসা। আর ডিএনএ আমাদের বৈশিষ্ট্যকে ধারন করে রাখে। যখন ডিএনএ তে পরিবর্তন আসে তখন প্রজননের সময় নতুন প্রানের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা দেয়।

যেমন কুমিরের ডিমে মিউটেশনের ফলে হয়ত একটার আগের রঙ বেশি হলদেটে হল বাকিদের থেকে।

মিউটেশন সম্পূর্ণ র‍্যান্ডম বা দৈবভাবে হয়। পরিবেশ এর উপর কোন প্রভাব রাখে না।

খ। ন্যাচারাল সিলেকশন




মিউটেশন যেমন দৈব। ন্যাচারাল সিলেকশন ঠিক আর উল্টো। যখন কোন প্রানি মিউটেশনের ফলে নতুন বৈশিষ্ট্য পায় তখন সে সেই পরিবেশে অন্যদের থেকে হয়তো বেশি সুবিধা বা ঝুকিতে থাকে। সেই প্রাণীই টিকে থাকলে পারে যে পরিবেশে সুবিধা পেয়ে এসেছে। এভাবে সুবিধাজনক জেনেটিক ইনফো ( যা ডিএনএ তে থাকে সেটা পরবর্তী প্রজন্ম বহন করতে থাকে)

যেমন ঃ আগের উদাহরনের কুমিরগুলো ধরুন আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের কোন এক জলাশয়ে আছে। হলদে মিউটেশন হওয়া কুমির অন্য কুমিরদের থেকে বেশি পরিবেশের সাথে মিশে থাকতে পারে। ফলে তার শিকার করা সহজ আর তার জেনেতিক ইনফো ধারন করা সহজ। অন্যদিকে সবুজ কুমিরের শিকার ধরা কঠিন। দীর্ঘ সময় ধরে ন্যাচারাল সিলেকসন হতে হতে একসময় হলুদ জিন সম্পন্ন কুমিরই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে। সবুজরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

(৩) বিবর্তন বিবর্তন হতে কতদিন সময় লাগে?

বিবর্তন প্রতিনিয়তই হচ্ছে। তবে সেটা খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। মানুষের জীবনকালে সেটা নিজ চোখে দেখা প্রায় অসম্ভব (মাইক্রোঅরগানিজমের বিবর্তন ছাড়া)।

বিবর্তনের গতি নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। প্রাণীর জনসংখ্যা যদি কম হয় তাহলে সেটা দ্রুত হয়। তাছাড়া নতুন মিউটেশন কতটা তুলনামুলক শক্তভাবে পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে সেটাও বিবেচ্য। অনেক সময় দুর্বল জিনও পরিবেশ বদলের কারনে টিকে যায়

(৪) পরিবেশের সাথে প্রাণীর খাপ খাওয়ানোর জন্য কি বিবর্তন হয়?

না। বরং বিষয়টা ঠিক উল্টা। সেই প্রাণীই পরিবেশে খাপ খেতে পারে যার জেনেটিক ইনফো বা মিউটেশন পরিবেশের সাথে মানানসই হয়েছে।

(৫) প্রাণীদের যে বিবর্তন হয়েছে বা হচ্ছে সেটার প্রমান কি ?



বায়োলজিস্টরা বিভিন্ন পন্থায় সেটা পরীক্ষা করে এসেছে। তার মধ্যে Comparative Anatomy, Embryology & Development, Fossil Record, DNA Comparisons, Species Distribution, Evolution Observed, Nested Hierarchies of Traits ইত্যাদি কিছু নিরপেক্ষ পরীক্ষা যার সবগুলোই বিবর্তনকে সাপোর্ট করে।

(৬) তাহলে কি সব প্রাণীই একই বড় পরিবারের অংশ?

হ্যাঁ, তবে তারা লক্ষ, কোটি এমন কি বিলিয়ন বছর আগে ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়ে ভিন্ন জাতি প্রজাতিতে চলে গিয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ঠিক যেমন বাবা নির্ধারণ সম্ভব ঠিক তেমনইভাবে হাজার লক্ষ বছর আগে বিচ্ছেদ হয়ে অন্যভাবে বিবর্তিত হওয়া প্রাণীর সাথেও সম্পর্ক প্রমান হয়েছে।

(৭) সবাই বলে বিবর্তন একটা থিউরি। এটাকে সঠিক বলা যায় না। একটা ফ্যাক্ট না। এটা কি ঠিক?

বিবর্তন অবশই একটি থিউরি। সাথে সাথে একটি বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট। ঠিক যেমন থিউরি অফ গ্রেভিটি ও বিগ ব্যাঙ থিউরি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ থিউরি, হাইপথেসিস ও ফ্যাক্ট নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, বিজ্ঞানে বলা থিউরি আর নিত্যদিনে বলা থিউরির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। সহজে বুঝার জন্য ভিডিওটিও দেখতে পারেন।


(৮) মানুষও কি বিবর্তনের ফলে এসেছে ?

পৃথিবীর সব প্রাণীর মত মানুষও বিবর্তনেরই ফসল।



(৯) মানুষ নাকি বানর থেকে এসেছে। ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে বানর এখনো কিভাবে আছে ?



মানুষ বানর থেকে আসেনি। মানুষ ও বানর একটু কমন পূর্বপুরুষ থেকে ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে। যা দেখতে না ছিল বর্তমান বানরের মত না বর্তমান মানুষের মত। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে এপরা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে সেখান থেকে একটা হচ্ছে বানর। অন্যদিকে হমিনিডদের থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে মানুষ বা Homo Sapiens.

(১০) মানুষও যে বিবর্তনের ফলে হয়েছে এর কি প্রমান আছে ?



লক্ষ লক্ষ বছরের অনেক ফসিল প্রমান ও তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে ও উপরোক্ত পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে প্রমান হয়েছে যে মানুষ ৮-১০ মিলিয়ন বছর আগে শিম্পাঞ্জির সাথে কমন কমন এক Hominoidea প্রাণী ছিল। এরপর মিউটেশন ও ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মিলিয়ন মিলিয়ন বছরে হমিনিড Australopithecus ( প্রায় ৩ মিলিয়ন বছর ) থেকে Homo habilis থেকে Homo erectus থেকে ধীরে ধীরে Homo Sapiens এ পরিনত হয়েছে।

আগের স্তরের প্রাণীর জেনেটিক ইনফো এখনো আমাদের মাঝে আছে। লক্ষ কোটি বছর আগের অনেক জেনেটিক ইনফো আজ অকেজো অবস্থায় আমাদের শরীরে রয়ে গেছে। তার মধ্যে রয়েছে ঃ
ক। এপেনডিক্স ( যেটা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে যখন এনচেস্টররা গাছে থাকতো আর সুধুমাত্র সবুজ খাদ্যের উপর নির্ভর ছিল তখন সেটা পরিপাকতন্ত্রের একটা অংশ হিসেবে কাজ করতো)
খ । টেইল বোন (জেনেটিক মিউটেশনের ফলে লেজ মিলিয়ন বছর আগেই বাহ্যিকভাবে লোপ পায় হমিনিডদের, কঙ্কালকাঠামোতেও আসতে আসতে লোপ পেয়েছি , তবে এখনো কিছু অবশিষ্ট অংশ রয়ে গিয়েছে।)
গ । গুসবাম্ব বা ভয়/চমকিত হওয়ার সময় লোম খারা হওয়া ( স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে যাদের থেকে আমরা বিবর্তিত হয়েছি বলা হচ্ছে তাদের মতও আমাদের মাসল ফাইবারে একই রকম মেকানিজম বিদ্যমান )
আরও কিছু জিনিস আছে যেমন দুধ দাত, ছেলেদের নিপল, চোখের ভিতরের পর্দা, ঢেঁকুর তোলা ইত্যাদি।

(১১) প্রান হীন পৃথিবিতে জড় পদার্থ থেকে কি করে একটা প্রানের উৎপত্তি হলো?

বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো এই বিষয়টা পরিস্কার না যে, প্রথম প্রান কিভাবে এসেছিল। তবে শক্ত এভিডেন্স আছে বিষয়টা প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে হয়েছিল আর পানিতে হয়েছিল। সবচেয়ে প্রাচীন যেঁ algae এর ফসিল পাওয়া গিয়েছে তা প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন বছর আগের। প্রথম প্রানের ব্যাপারে বিজ্ঞানিরা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে দেখেছে এটার পিছনে chemical evolutionই সবচেয়ে শক্ত প্রিমিসেস।


অ্যামোনিয়া, ফরফোরিক লবন, আলো, বজ্রপাত এই বিষয়গুলো প্রাথমিক ডিএনএ কমিনেশন করার জন্য প্রয়োজন ছিল, যা পৃথিবীর লাভাযুগের অস্তালগ্নে (গ্রহানু একত্রিত হওয়ার প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন বছর পর) যথেষ্ট ছিল। তবে একটি মাত্র জীব থেকেই যে সব হয়েছে সেটা বলা মুশকিল। পরিস্থিতি অনুকূল ছিল একাধিক এককোষী একাধিক জায়গায় গঠিত হওয়ার।

(১২) প্রানের আদিলগ্নে এককোষী প্রাণী ছিল। এখনো কিভাবে এককোষী প্রাণী থাকে। এদের ক্ষেত্রে কি বিবর্তন কাজ করে না ?



বর্তমান সময়ের এক কোষী প্রাণী ৩.৪ বিলিয়ন বছর আগের প্রানের বহুগুলো জটিল। আর বিবর্তনের ফলে সেই জটিলতা এসেছে।

(১৩) মানব সভ্যতা তো প্রায় কয়েক হাজার বছর ধরে চলছে। এর মধ্যেও কি কোন বিবর্তন হয়নি। নাকি আমাদের লক্ষ বছর অপেক্ষা করতে হবে?



অনেক প্রাণীরই হয়েছে। কিছুদিন আগে আমেরিকায় একটি মেমেলের হাড় পাওয়া গিয়েছে যেটায় মানুষের চিহ্নও পাওয়া যায়। মানে হাতির আগের পূর্বপুরুষ মেমেল মানব সভ্যতা নিজ চোখেই দেখে। তাছাড়া মানুষের হাতেই বিবর্তন পেয়েছে বেশ কিছু প্রজাতি। তার মধ্যে কুকুর, বিড়াল, বিভিন্ন ধরণের শস্য, বেশ কিছু গবাদি পশু উলেক্ষযোগ্য। এই ধরণের বিবর্তন প্রক্রিয়াকে বলা হয় Artificial Selection যা ন্যাচারাল সিলেকশনের মতই।

(১৪) Artificial Selection কি ?



প্রাণীদের মধ্যে সেই প্রাণী যখন টিকে থাকে যা মানুষের মাধ্যমে সুবিধা ও বেচে থাকার ক্ষমতা পায় ও তাদের জেনেটিক ইনফো তাদের উত্তরাধিকারের মধ্যে বহন করে যায় তাকে Artificial Selection বলে।

ধরুন ৫টা কুকুর আছে। তার মধ্যে একটা মিউটেশনের ফলে একটু বেশি লোমশ। যা হয়ত মানুষের কোন বাচ্চার খুব পছন্দ। সে খুব আদর যত্ন করে সেটা পালন করে। ফলে অন্য কুকুর কম সুবিধা পায়। লোমশ সেই কুকুর পরবর্তীতে যার জেনেতিক ইনফো পরের প্রজন্মে বহন করায়। সংকর জাতের প্রাণীগুলো এরই ফসল।

(১৫) প্রাণীদের মধ্যে কেউ মাংসাশী, কেউ তৃণভোজী, কেউ জড়ভোজী । এরা সবাই মিলে একটা সুশৃঙ্খল খাদ্য চক্র তৈরি করেছে। যেখানে এক স্তরের প্রাণী লোপ পেলে পুরো খাদ্য চক্রের সব প্রাণীর বিলুপ্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। বিবর্তনের এখানে ভুমিকা কি?

প্রথমে জীব শুধু পরিবেশ থেকে দরকারি কেমিক্যালগুলো সংগ্রহ করে নিজেদের রেপ্লিকেট করতো। তবে সবসময় আদর্শ কেমিক্যালে ভরা পরিবেশ পাওয়া যায়না। তখন সেই আদি জীবগুলো নিজেদের মৃত সহদরগুলো থেকে কেমিক্যাল নেয়ার চেষ্টা করত। যারা এমন করতে পেরেছে তারা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হতে পেরেছে। এভাবে আসতে আসতে প্রাণীদের খাদ্য আহারের মধ্যে পরিবর্তন আসে। প্রথমে খাদ্যচক্র খুবই অস্থিতিশীল ছিল। কোটি কোটি বছরের নানা খাদ্য বিপর্যয়ের পর আজ এখন আমরা অনেক জায়গায় সুশৃঙ্খল খাদ্যস্তর পেয়েছি। অনেক প্রাণী এই প্রতিকুলিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছে আর সেইভাবেই বিবর্তিত হয়েছে। বিবর্তিত প্রাণী যারা বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় মাইগ্রেশন করে সেটা তারও এক প্রমান। এমনকি আজও এমন অনেক স্থান আছে যেখানে খাদ্যস্তর খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

(১৬) কিছু প্রাণী ভিন্ন প্রজাতিতে বিবর্তিত হলেও তাদের শারীরিক অনেক মিল পাওয়া যায়। এমনটা কেন? (যেমন জিরাফ ও বাঘ)

জিরাফ, বাঘ তারা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হলেও তাদের গায়ে এক রকমের স্ট্রাইপ বা ডোরা কাটা দাগ আছে। এটা সমাপতনিক বটে । আফ্রিকায় বিসাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ে জিরাফের মৃত্যু ঝুকি থাকে। তাদের মধ্যে সেই প্রাণীগুলো ন্যাচারাল সিলেকশনে টিকে ছিল যারা নিজেদের পরিবেশের সাথে আড়াল করতে পারতো যাকে বলা হয় "camouflage"। চামড়ার মাধ্যমে পোকা থেকে নিজেদের আড়াল করায় তারা প্রজননে সেই জেনেটিক ইনফো পরের প্রজন্মে দিয়ে দেয়। বাঘের ক্ষেত্রেও তাই। সেই বাগই টিকে আছে যেটা তৃণভুজি প্রাণীর চোখের আড়ালে থাকলে পেরেছে। সেই ডোরাকাটার জেনেটিক ইনফো পরের প্রজন্ম গুলো বহর করে আসছে।

(১৭) এখন কি বিবর্তন পরিপূর্ণ? সব প্রাণী তো সমৃদ্ধই দেখা যায় ?

বিবর্তন প্রতিনিয়ত হয়। এই কোন সমৃদ্ধির শেষ নেই। ধরুন শিকারি প্রাণী সুন্দর করে বিবর্তিত হল। তখন সেই সব শিকার প্রাণী বেচে থাকার কৌশল শারীরিকভাবে বহন করে সে টিকে থাকে। বিবর্তন সমান্তরালভাবে হচ্ছেই।

(১৮) আমি একজন ধার্মিক। ইসলামে আছে আদম (আ) প্রথম মানব। তাকে ও মা হাওয়াকে আল্লাহ জান্নাত থেকে এখানে পাঠিয়েছেন। মানুষের বিবর্তন কি আদম (আ) এর ঘটনার সাথে সাঙ্ঘরসিক নয় কি?

এটা নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে বিভিন্নমত আছে। ডঃ জাকির নায়েক মনে করেন মানুষ ব্যাতিত অন্য প্রানের বিবর্তন আমাদের মানতে সমস্যা নেই। আবার অন্য লেকচারে সে এটাকে হাইপোথেসিস বলে আর কথা বাড়ান না। অন্যদিকে ডঃ রানা দাজানি যিনি একজন মুসলিম বায়োলজিস্ট, তিনি বিবর্তনকে ফ্যাক্ট মনে করেন । তার মতে আদম (আ) এর ব্যাপারে যা বলা আছে সেটা " metaphor for humanity 'in general' হতে পারে। Dr. Yasir Qadhi যিনি একজন বিজ্ঞ ইসলামিক স্কলার তিনি মনে করেন আদম (আ) এরটা হয়তো রুপক। তিনি স্বীকার করেন বিবর্তন একটি ফ্যাক্ট। তবে তিনি হোমো সেমিপেন্ট এর শুরু ৫০,০০০ এর আগে হলে সেটা মুসলিমদের জন্য বিশ্বাসযোগ্য বলে তিনি মনে করেন না। যেটা বিবর্তনের প্রমানের সাথে খাপ খায় না।

(ভিডিওগুলো দিচ্ছি)





(১৯) মানুষ ভবিষ্যতে কিভাবে বিবর্তিত হবে?



এটা আসলে বলা মুশকিল। তবে অনেকগুলো হাইপোথেসিস আছে এটা নিয়ে। যেমন মানুষের পায়ের কনিস্ট আঙ্গুল বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, আমাদের টিস্যু আরও কোমল হয়ে আসবে, চোখ বৃহৎ হবে, লম্বায় বৃদ্ধি পাবে ইত্যাদি। তবে সেটা আসলে বলা মুশকিল। কেননা পরিবর্তনশিল প্রযুক্তি মানুষের বিবর্তনকে অনুমান করা আরও জটিল করে দিচ্ছে।

(২০) শুনেছিলাম কোথায় জানি ৬০ ফুট লম্বা মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। সেটা কি সত্য ? আমরা কি সেখান থেকে বিবর্তিত হয়েছি ?



বেশ কয়েক বছর আগে এমন কিছু ইমেজ ইন্টারনেটে সাড়া ফেলেছিল। যেখানে বলা হয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এটা পেয়েছে। পরে যাচাই করে জানা যায় সেটা ছিল ফটোশপ দিয়ে তৈরি একটা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি জানাও অস্বীকৃতি জানায়। মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে ইন্টারনেটে সাড়া ফেলাই ছিল এই ইমেজের উদ্দেশ্য। আমরা কোন অতিকায় প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়ে এখানে আসিনি। আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন লম্বায় খর্ব।

এখননো দ্বিধায় আছেন ? আপনার জন্য অপেক্ষা করছে বিবর্তন ১০১ (কিউ অ্যান্ড এ) পর্ব ২

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮
১৪টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×