somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীঃ মহাজাগতিক মনোজগৎ

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক
আমি বেশ অস্বস্তিবোধ করছি। করার কারণও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটার ক্যাম্পাসে হাটছি আমি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা ড্যাব ড্যাব করে দেখছে আমাকে। এটাই অস্বস্তির কারণ।

একজন বাঙালি কোন আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে হাটাহাটি করতেই পারে‚ সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তার গায়ে যদি আমেরিকান আর্মির ইউনিফর্ম থাকে‚ তাহলে বোধহয় লোকের কিছুটা মনোযোগ তার দিকে সরে আসে। তবে আমার গায়ে আমেরিকান আর্মির পোষাক আছে বলেই যে সবাই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে‚ বিষয়টা এমনও নয়।

আমার কোটের বুকপকেটের উপর একটা লাল রঙের ব্যাজ লাগানো। এটাই সবার আগ্রহের কারণ। সারা পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত‚ অর্থাৎ ২১২০ সাল পর্যন্ত লাল ব্যাজধারি মানুষের সংখ্যা মাত্র একশো সতের জন। সামরিক কিংবা বেসামরিক; যার বুকেই এই লাল রঙের ব্যাজ লাগানো থাকবে‚ তার ক্ষমতা প্রায় ঈশ্বর তুল্য। এদেরকে বলা হয় সুপ্রিম পার্সন। তারা যা খুশী তাই করতে পারে‚ যেখানে খুশী যেতে পারে‚ যাকে খুশী নির্দেশ দিতে পারে। একমাত্র বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি ইভানোভিচ এবং নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রেসিডেন্ট থমাস হুগো ছাড়া আর কারো নির্দেশ মানতে তারা বধ্য নয়।

খুব‚ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজে যারা নিয়োজিত‚ যাদের একটা সিদ্ধান্তে দুনিয়া ওলট পালট হয়ে যেতে পারে‚ তাদেরকেই এই লাল ব্যাজ দেয়া হয়।

সুপ্রিম পার্সনদের দেখা পাওয়া একটা দুরূহ ব্যাপার‚ যেহেতু এদের সংখ্যা খুব কম এবং ক্ষমতা অপরিসীম! সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

বেশ কিছুক্ষণ হাটার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরাপত্তাকর্মী আমার দিকে ছুটে এলো। লাল ব্যাজটা দেখে খুব সম্ভ্রমের সঙ্গে জানতে চাইল-

"স্যার‚ আপনি কাউকে খুঁজছেন?"

"হ্যা। আমি জীনতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ডক্টর উইলিয়াম জোনকে খুঁজছি। কোথায় পাওয়া যাবে তাকে?"

নিরাপত্তাকর্মীটি বিনীত ভাবে বলল-

"আমার সঙ্গে আসুন স্যার। আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে।"

ডক্টর জোন নোবেল পাওয়া বিজ্ঞানী‚ দুনিয়াজুড়ে নামডাক তার। তার সঙ্গে দেখা করাটা সাধারণ মানুষের জন্য মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু লাল ব্যাজের ক্ষমতার কাছে এটা তুচ্ছ একটা বিষয়।

আমি নিরাপত্তাকর্মীর পেছন পেছন হাটতে থাকলাম। সবুজ ঘাস বিছানো মাঠ পেরিয়ে একটি বাদামি রঙের ভবনে ঢুকলাম আমরা। ভবনের তৃতীয় তলায় ডক্টর জোনের অফিস। অফিসের সামনে এসে নিরাপত্তাকর্মীটি ইতস্ততঃ ভাবে বলল-

"স্যার কিছু মনে না করলে এখানে একটু অপেক্ষা করবেন?"

সে এমনভাবে প্রশ্নটা করল‚ যেন একজন সুপ্রিম পার্সনকে অপেক্ষা করানোর অপরাধে এখনই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে (যদিও আমি চাইলে সেটা আসলেই সম্ভব! বলতে বাধা নেই‚ বিষয়টা চিন্তা করে এক সেকেন্ডের জন্য পৈশাচিক উল্লাস বোধ করলাম।)। তার অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি। একদিকে একজন দোর্দন্ডপ্রতাপ সুপ্রিম পার্সন‚ আরেকদিকে বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী; দুই প্রবল ব্যক্তিত্বের মাঝে ফেঁসে গেছে সে। আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম-

"কোন অসুবিধা নেই‚ আমি অপেক্ষা করছি। টেইক ইওর টাইম।"

ড. জোনের কামরার সামনের করিডোরটাতে হাসপাতালের মতো কিছু চেয়ার পাতা। এখানে ওখানে কয়েকটা ফুলের টব। জেসমিন ফুলের মন মাতানো গন্ধ আসছে টবগুলো থেকে। আমি একটা চেয়ারে বসে পড়লাম। এখান থেকে ড. জোনের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীর কথোপকথন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। গম্ভীর গলায় ড. জোন নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞেস করছেন-

"কি চাই?"

"একজন আর্মি অফিসার আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান স্যার। আপনার অফিসের সামনে বসে...."

"পরে‚ বিকেলের দিকে আসতে বলল।"

"বোধহয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্যার। দয়া করে যদি একটু দেখা করেন!"

"বললাম তো বিকেলে আসতে বলো। বিরক্ত করো না।"

"ইয়ে মানে স্যার‚ উনি একজন সুপ্রিম পার্সন‚ বুকে লাল ব্যাজ ঝুলছে! ওনাকে কি করে বলি..."

"সুপ্রিম পার্সন! আশ্চর্য! বলা নেই‚ কওয়া নেই‚ কোন এপয়েন্টমেন্ট নেই‚ একজন সুপ্রিম পার্সন চলে আসল আমার কাছে! আচ্ছা আসতে বলো তাকে।"

আমি নিরাপত্তাকর্মী বেরিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম‚সে বেরোতেই ঢুকে পড়লাম কামরায়। ঢুকতেই দেখি ড. জোনও আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন। আমি তার সঙ্গে করমর্দন করে ডেস্কের ওপাশে চেয়ার টেনে বসতেই তিনি জিজ্ঞেস করলন-

"আচ্ছা ক'দিন হলো আপনি লাল ব্যাজ পেয়েছেন?"

এমন প্রশ্নে কিছুটা অবাক হলাম। ছোট করে উত্তর দিলাম-

"দু'সপ্তাহ!"

"আচ্ছা!" বলেই সে এমন ভাবে মাথা নাড়ল যেন বলতে চাইছেন‚ পুরান পাগলে ভাত পায় না‚ নতুন পাগলের আমদানি!

আমি অস্বস্তির সঙ্গে খুক খুক করে কেশে গলা পরিস্কার করে বললাম-

"ডক্টর জোন‚ আমার নাম দীপ্ত আহমেদ‚ মেজর দীপ্ত আহমেদ। যদিও এই মুহুর্তে ইউএস আর্মির হয়ে কাজ করছি‚ কিন্তু আসলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য আমি। বিজ্ঞান কাউন্সিল‚ নিয়ন্ত্রণ কমিটি এবং ইউএস আর্মির যৌথ উদ্যোগে একটা মিশনে এসেছি আমি।"

"কেমন মিশন?"

"দুঃখিত ডক্টর‚ এটা টপ সিক্রেট।"

"আহ‚ টপ সিক্রেট! পৃথিবীতে টপ সিক্রেটের নামে যা হচ্ছে আজকাল‚ সেগুলো বেশিরভাগই টপ বুলশিট!"

"আপনি বেশ অফেনসিভ কথা বলছেন ডক্টর!"

"ওহ স্যরি! আপনার সো কলড টপ সিক্রেট মিশনে কেমন করে সাহায্য করতে পারি?" তার গলায় স্পষ্ট ব্যাঙ্গ ঝরে পড়ল।

"আমি এসেছি ব্যক্তিগত কারণে‚ আমার মিশনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই!" বলেই আবার ইতস্তত করে বললাম-"নাকি আছে? ঠিক বুঝতে পারছি না!"

"আপনাকে দ্বিধান্বিত মনে হচ্ছে ইয়ংম্যান। আমরা‚ বিজ্ঞানীরা সব সময় একটা কথায় বিশ্বাস করি-Doubt is often better than overconfidence. কাজেই ঝেড়ে কাশতে পারেন।"

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম- "যদি পারতাম!" বলেই চুপ মেরে গেলাম আমি। ডক্টর জোন আবার সেই ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে। কিছুক্ষণ পর লম্বা দম নিয়ে বললাম-

"ডক্টর জোন‚ আমি কিন্তু আপনার অনেক বড় ভক্ত। অনেক ব্যস্ত স্কিডিউলের মধ্যেও আমি আপনার সেমিনারগুলোতে এটেন্ড করার চেষ্টা করতাম সবসময়। জীনতত্ত্বে আমার খুবই আগ্রহ। আমার সবসময়ই মনে হয় যে আমি আর্মিতে না ঢুকলে কোন জীনতত্ত্ববীদ হতাম।"

"আই সি!"

"যাই হোক‚ কাজের কথায় আসি। আপনি আপনার শেষ পেপারে এক ধরনের জেনেটিক্যালি মডিফায়েড গাছের কথা বলেছিলেন‚ যে গাছ কেপলার থ্রি টুয়েন্টি সেভেন গ্রহটির পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারবে।"

"হ্যা‚ ভীনগ্রহে পৃথিবীর উদ্ভিদের বিকাশ ও বিবর্তনের যে স্বপ্ন বিজ্ঞানীদের ছিল এতদিন‚ সেটা আমি পূরণ করতে যাচ্ছি। কিছুদিনের মধ্যেই উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের সঙ্গে এই গাছটার কিছু চারা ও বীজ নিয়ে কেপলার থ্রি টুয়েন্টি সেভেন গ্রহটির উদ্দেশে যাত্রা করতে যাচ্ছি আমি!"

"শুনে খুশী হলাম ডক্টর। একটা প্রশ্ন ছিল।"

"প্রশ্ন? করুন!"

"আপনার এই গাছের একটা নমুনা আমি ন্যাশনাল বুটানিক্যাল গার্ডেনে দেখেছি। গাছের পাতাগুলোর রং ছিল হলুদাভ সবুজ।"

"হ্যা‚ তো?"

"প্রশ্ন হচ্ছে‚ এগুলোর পাতা কি গাঢ় সবুজ বা নীলাভ সবুজ হতে পারে?"

ডক্টর জোন একটু ভেবে বললেন-

"না‚ পারে না। কারণ নাইট্রোজেন আয়নের অনুপাত...."

"স্যার আমি ব্যাখ্যা শুনতে চাচ্ছি না‚ তেমন একটা বুঝবও না শুনে। আপনি কি নিশ্চিত যে গাছের পাতাগুলো গাঢ় সবুজ বা নীলাভ সবুজ হতে পারে না?"

"আলবাৎ নিশ্চিত!"

"ধন্যবাদ। উঠি।"

"আপনি শুধু এটুকু জানার জন্যই এসেছিলেন?"

"হ্যা। একটা অনুরোধ‚ আমার সঙ্গে এই সাক্ষাতের কথা আপনি গোপন রাখবেন।"

আমি চিন্তাগ্রস্ত হলাম বেশ। বেরিয়ে এলাম ডক্টর জোনের অফিস থেকে। বাতাসে গন্ধ পাচ্ছি বিপদের।



দুই
দু'সপ্তাহ আগের কথা। কক্সবাজারের সৈকতে ছাউনি পেতে শুয়ে আছি। আমার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে মায়া‚ আমার স্ত্রী। দীর্ঘক্ষণ সমুদ্রে দাপাদাপি করে ক্লান্ত‚ ভেজা‚ নরম শরীর নিয়ে সে জড়িয়ে ধরেছে আমায়। বিকেলের পড়ন্ত রোদ‚ সাগরের শো শো আওয়াজ‚ বাহুডোরে ললনা; আহ‚ একেই বলে জীবন!

মায়া অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ‚ ঘুমিয়ে পড়েছে বলে ভ্রম হয়। কিন্তু আমি জানি ও ঘুমোয়নি। পাশাপাশি থাকার‚ একসঙ্গে থাকার আনন্দটুকু উপভোগ করছে।

"এক্সকিউজ মি স্যার‚ আপনি কি মেজর দীপ্ত আহমেদ?"

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি কঠিন চেহারার একটা মেয়ে পুরোদস্তুর আর্মির পোষাক পরে দাড়িয়ে আছে।

"হ্যা। কেন?"

"স্যার‚ আপনার জন্য একটা মেসেজ আছে।" সে একটা চিরকূট বাড়িয়ে দিল আমার দিকে।

আমি ছুটিতে আছি দু'দিন হয়েছে। আরও তিন দিন বাকী ছুটি শেষ হতে। আমি কাউকে জানাইওনি যে আমি সস্ত্রীক কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছি‚ তারপরও আর্মি আমাকে ঠিক জায়গায় খুঁজতে এসেছে। তারমানে হলো আমার উপর নজর রাখা হয়েছে। অর্থাৎ‚ খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটতে যাচ্ছে আমাকে ঘিরে।

আমি উঠে বসলাম। মায়া বিরক্ত হয়েছে বেশ। হবারই কথা। মাত্র ক'দিন হলো আফ্রিকা থেকে ফিরেছি নিয়ন্ত্রণ কমিটির শান্তি মিশন শেষে। এর আগে ছিলাম পাকিস্তানে। এতদিন পর দেশে ফিরতে না ফিরতেই‚ ছুটি শেষ হতে না হতেই আবার যদি কাজে যেতে হয়‚ মায়া আমাকে ক্ষমা করবে না।

তবে কিছু করারও নেই অবশ্য। বর্তমানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী নিয়ন্ত্রণ কমিটি‚ বিজ্ঞান কাউন্সিলের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান তারা। বিভিন্ন দেশে টেরোরিজম নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণ কমিটি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে থাকে। তিন বছর হলো নিয়ন্ত্রণ কমিটির হয়ে বিভিন্ন মিশনে যাচ্ছি আমি। কল্পনাতীত স্যালারি‚ অসংখ্য সুযোগ সুবিধা দেয়া হলেও‚ সমস্যা হলো বছরের অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে থাকতে হয়।

আমি ইউনিফর্ম পরা মেয়েটার হাত থেকে চিরকূটটা নিলাম। টাইপ করে লেখা চিরকূট। পড়লাম।

"মেজর দীপ্ত‚ জানি ছুটিতে আছো তুমি‚ তোমাকে বিরক্ত করাটা একদমই উচিত হচ্ছে না। কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ছিল তোমার সাথে। কথা দিচ্ছি মাত্র দু'ঘন্টার বেশি সময় নেব না। একটা কপ্টার পাঠাচ্ছি। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে চলে এসো। তোমার স্ত্রীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

ইতি-মেজর জেনারেল আজাদুর রহমান।"

আমি পড়া শেষে স্থানুর মতো বসে রইলাম। স্বয়ং সেনাবাহিনী প্রধান আমাকে এমন আনঅফিসিয়াল চিঠি পাঠিয়েছেন যখন‚ তখন বোঝাই যায় এর মধ্যে অনেক গভীর কোন ব্যাপার আছে।

হঠাৎ রোটরের ক্ষীণ আওয়াজে সম্বিত ফিরলো। আধুনিক হেলিকপ্টারগুলো প্রায় নিঃশব্দে চলাচল করতে পারে। তিন পাখাওয়ালা একটি দ্রুতগামী হেলিকপ্টার আমাদের ছাউনি থেকে ৩০ ফুট দূরে ল্যান্ড করেছে এইমাত্র।

দাড়িয়ে থাকা ইউনিফর্মওয়ালি তখন বলল-"স্যার‚ আপনি চিন্তা করবেন না। ম্যাডামকে হোটেলে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার।"

"না না‚ আমিই ওকে হোটেলে পৌঁছে দেই। তাছাড়া এই পোষাকে..."

"কোন অসুবিধা নেই স্যার। আমার কমান্ডিং অফিসার বলেছেন আপনাকে অত্যন্ত দ্রুত ক্যান্টনমেন্ট পাঠিয়ে দিতে। জেনারেল আজাদুর রহমানের সময়ের টানাটানি‚ তাই...!"

আমি মায়ার কপালে চুমু খেয়ে কপ্টারে উঠে বসলাম। ওর বিষণ্ণ চোখ দু'টো আরো বিষণ্ণ হয়ে উঠল।

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট একশো কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দূরত্বে অবস্থিত‚ কিন্তু যেতে আধাঘন্টারও কম সময় লাগল।

বালি আর পানিতে মাখামাখি শর্টপ্যান্ট পরে‚ আধন্যাংটো হয়ে যখন জেনারেলের কামরায় ঢুকলাম‚ স্যালুট দিলাম‚ তখন রীতিমতো লজ্জায় লাল হবার মতো অবস্থা আমার।

জেনারেল আজাদুর রহমান একটা বড়সড় রিভলভিং চেয়ারে বসে আছেন। বিশাল বপু নিয়ে‚ গোঁফের কিনারায় আঙুল বুলাতে বুলাতে আমাকে বললেন-" বসো দীপ্ত!"

বসলাম আমি। জিজ্ঞেস করলাম-

"স্যার‚ খুব গুরুতর কিছু ঘটেছে?"

"ঠিক তা নয়। নিয়ন্ত্রণ কমিটি আর বিজ্ঞান কাউন্সিল তোমাকে নতুন একটা মিশনে পাঠাতে চাচ্ছে। ছুটি শেষ হলেই তুমি আমেরিকা যাচ্ছ।"

"মিশনটা কোথায় স্যার? আমেরিকাতেই?"

"জানি না। আমাকে বলা হয়েছে টপ সিক্রেট মিশন! তবে এটুকু জানি যে সারা পৃথিবী থেকে বার জন অফিসারকে ডেকেছে তারা‚ সবাই বাঘা বাঘা অফিসার। অনেক যাচাই বাছাই করে নেয়া হয়েছে এদের। কাজেই বুঝতে পারছ‚ খুব বড় মাপের প্রজেক্ট এটা। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণ কমিটি‚ বিজ্ঞান কাউন্সিল এবং ইউএস সরকার; সবাই একসঙ্গে এটার পেছনে খাটছে যখন!"

"এত গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে একজন ছাপোষা বাঙালি মেজরকে নিচ্ছে কেন ওরা স্যার?"

"উহু! নিজেকে এত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করো না। অহেতুক বিনয় বাজে একটা জিনিস। গত তিন বছরে সারা পৃথিবী জুড়ে যে ক'টা মিশনে তুমি গিয়েছ‚ সব ক'টা ১০০% সাকসেসফুল। তোমার পারফরমেন্স তাদের নজর কেড়েছে!"

আমি মাথা চুলকে বললাম-

"ইয়ে...মানে স্যার‚ একটা প্রশ্ন ছিল।"

"বলো!"

"শুধু এটা বলার জন্য আপনি ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন? ব্যক্তিগত ভাবে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন? আপনি একটা ফোন করলে আর্মির যে কেউ..."

আমাকে হাত তুলে থামিয়ে দিলেন তিনি। গম্ভীর কন্ঠে বললেন-

"না‚ শুধু এটুকু নয়। তোমার ভাগ্যে যে সম্মান জুটেছে‚ আজ পর্যন্ত কোন বাঙালির ভাগ্যে জোটেনি।"

"স্যার? কি সেটা?"

"এই গুরুত্বপূর্ণ মিশনে অংশগ্রহণ করার পুরস্কার হিসেবে‚ তোমাকে লাল ব্যাজ দেওয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কমিটি থেকে। আজ থেকে তুমি একজন সুপ্রিম পার্সন। কারো হাতে লাল ব্যাজ তুলে দেয়ার ক্ষমতা শুধু সেনাবাহিনী প্রধানের কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানের থাকে। সে জন্য আমাকেই আসতে হলো। কাউকে সুপ্রিম পার্সন ঘোষণা করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার হাতে ব্যাজ তুলে দেয়ার নিয়ম।"

আমি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম জেনারেলের হাতে ধরা ত্রিকোনাকার লাল ব্যাজটার দিকে। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-

"লিটারেলি‚ এখন তোমার ক্ষমতা আমার চেয়ে অনেক বেশি!"

আমি কাঁপা হাতে লাল ব্যাজটা নিলাম জেনারেলের হাত থেকে। আনন্দিত হবার পরিবর্তে বেশ উদ্বিগ্ন হলাম আমি। কথায় বলে- উইথ গ্রেট পাওয়ার কামস গ্রেট রেসপন্সিবিলিটি। এত বড় ক্ষমতা দিয়ে কত বড়‚ বিপদজনক দায়িত্ব ঘাড়ে চাপাতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ কমিটি‚ কে জানে!



তিন
কনফারেন্স কক্ষটি বেশ বড়। দিনদিকে দেয়াল‚ একদিকে কাঁচ দিয়ে ঘেরা। কাঁচের ওপাশে নীল সমুদ্র (পরে জেনেছি সমুদ্রটা কাঁচের গায়ে ভাসা জীবন্ত দেয়ালছবি ছাড়া কিছুই নয়)।

আমরা বার জন সেনা সদস্য‚ পৃথিবীর আনাচে কানাচে থেকে এসে জড়ো হয়েছি এখানে‚ যুক্তরাষ্ট্রের এই সেনাঘাটিতে। আমরা ছাড়াও ইউএস আর্মির একজন জেনারেল এবং বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি ইভানোভিচ উপস্থিত রয়েছেন কক্ষে। তারাই আমাদের ব্রিফ করতে যাচ্ছেন মিশনের ব্যাপারে।

বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি ইভানোভিচ সম্ভবত কিছু বলতে চাচ্ছেন আমাদের‚ তার মুখ দেখে তাই মনে হলো। মাথা ভর্তি ধূসর চুলগুলোতে আঙুল বুলাতে বুলাতে ডেস্কে রাখা কাগজগুলো দেখে নিচ্ছেন তিনি। দেখতে দেখতেই কথা বলতে শুরু করলেন-

"স্বাগত জানাচ্ছি আপনাদের সবাইকে। অনেক হিসেব-নিকেশ‚ যাচাই-বাছাই করে আপনাদেরকে নির্বাচিত করা হয়েছে এই মিশনের জন্য। কাজেই নিঃসন্দেহ থাকতে পারেন যে আপনারা সবাই নিজেদের সেক্টরে এক একজন আইকন।" বলেই তিনি থামলেন আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। কিন্তু আমাদের কারো চেহারায় কোন ভাব ফুঁটল না‚ কারণ গত কয়েকদিনে এই কথাগুলো অনেকবার শোনানো হয়েছে আমাদের। তবে আমার পাশের চেয়ারে বসা আফ্রিকান অফিসারটি মুখের সামনে হাত নিয়ে হাই তুলে প্রতিক্রিয়া দেখাল। বিষয়টা খেয়াল করে বিব্রত হলেন ইভানোভিচ।

"দুঃখিত। আমি বোধহয় অকাজের কথা বলে সবার সময় নষ্ট করছি। যাক‚ কাজের কথায় আসি। সাইলা নামের গ্রহটির কথা আপনারা শুনে থাকবেন। সাইলা গ্রহের একমাত্র প্রাণী দিমিক। দিমিকরা বহুবার আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক‚ গাণিতিক সমস্যার সমধান করে দিয়েছে তারা আমাদের। মজার বিষয় হলো‚ তাদের কোন প্রযুক্তিগত জ্ঞান নেই। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে ব্রেন ওয়েভের মাধ্যমে। সাইলা গ্রহের কাছাকাছি যে মহাকাশ স্টেশনটি আছে‚ তাদের কর্মীদের সাথে ব্রেন ওয়েভের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে দিমিকরা। সত্যি বলতে কি‚ সাইলার মতো পানিবিহীন‚ অক্সিজেনবিহীন একটি গ্রহে যে প্রাণ থাকতে পারে‚ দিমিকরা নিজ থেকে যোগাযোগ না করলে সেটা জানতেই পারতাম না আমরা‚ স্যাটেলাইট বা টেলিস্কোপিক ছবিতেও কখনো দিমিক ধরা পড়েনি ..."

"এক্সকিউজ মি! এক্সকিউজ মি!!" একজন চীনা অফিসার হাত তুলেছে। সবাই তার দিকে ফিরতে সে বলল-"মি. ইভানোভিচ‚ আমরা বিজ্ঞানী নই এখানে কেউ। একটু সহজ ভাষায় বললে ভালো হয়। ব্রেন ওয়েভ জিনিসটা কি আমার জানা নেই‚ দিমিকরা কেমন করে মানুষের সাথে ব্রেন ওয়েভের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে‚ কেনই বা শুধু মহাকাশ স্টেশনের কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে‚ এই বিষয়গুলো বুঝতে পারছি না আমি।"

ইভানোভিচ ক্ষমাপ্রার্থনার হাসি হাসল। "ব্রেন ওয়েভ বা মস্তিষ্ক তরঙ্গ হলো আমাদের মস্তিস্কের চিন্তাভাবনার ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন বিভিন্ন মাত্রার কম্পাঙ্ক। মাথার তালুতে তরঙ্গ নির্ণায়ক যন্ত্র লাগালে ব্রেন ওয়েভের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। কিন্তু দিমিকরা কেমন করে এই তরঙ্গের মাধ্যমে আমাদের সাথে তথ্যের আদান প্রদান করে থাকে‚ সেটা আমাদের জানা নেই। যদি থাকত‚ তাহলে এই মুহূর্তে আপনাদের সামনে আমাকে কথা বলতে হতো না। ব্রেন ওয়েভের মাধ্যমে আমার মনের কথা আপনাদের মস্তিস্কে পাঠিয়ে দিতে পারতাম। তবে শুধু মহাকাশ স্টেশনের কর্মীদের সাথে তারা যোগাযোগ কেন করে‚ সেটা অনুমেয়। নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে দিমিকরা ব্রেন ওয়েভ পাঠাতে পারে না। তা না হলে তারা এতদিনে সরাসরি পৃথিবীতে যোগাযোগ করত।"

চীনা ভদ্রলোক আবার প্রশ্ন করল-"এখন দিমিকদের নিয়ে সমস্যাটা কি?"

"সমস্যাটা হলো‚ দিমিকরা আমাদের গাণিতিক‚ বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করার পরিবর্তে এতদিন শুধু একটা শর্ত দিয়ে রেখেছিল; যে মানুষ কখনো সাইলাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আমরা সেটা মেনে নিয়েছিলাম‚ কিন্তু কিছুদিন আগে তারা যখন বলল-মানুষ ফেরেল নামক গ্রহটিতেও প্রবেশ করতে পারবে না‚ তখন সেটা মানতে পারিনি আমরা। কারণ গত পঞ্চাশ বছর ধরে পৃথিবীর সকল মৃত্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ফেরেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে‚ তাদেরকে সংশোধন করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেখানে; যাতে করে ফেরেল নামক মানুষের বসবাস উপযোগী গ্রহটিতে পৃথিবীর মতো সমাজ ব্যবস্থা তৈরি হয় এবং প্রয়োজনে পৃথিবীর জনসংখ্যা ফেরেলে স্থানান্তরিত করা যায়। কাজেই মানুষ যদি ফেরেলে যেতে না পারে‚ তাহলে ফেরেলে থাকা আসামীদের‚ অধিবাসীদের কোন ধরনের সাহায্য পাঠানো যাবে না। অচিরেই তাদের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। তাই দিমিকদের সরাসরি মানা করে দেই আমরা। কিছুদিন পর সাইলা গ্রহটির পাশ ঘেঁষে ফেরেলের উদ্দেশে যাবার সময় আমাদের একটা স্পেসশিপ ধবংস করে দেয় দিমিকরা। বলে রাখি‚ ফেরেলে যেতে হলে সাইলাকে পাশ কাটাতেই হয়। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কয়েক হাজার রোবট এবং কয়েকশো সেনাসদস্যকে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে পাঠাই দিমিকদের ধবংস করতে। কিন্তু তাদের স্পেসশিপ সাইলার ধারে কাছে ঘেঁষার অনেক আগেই ধবংস হয়ে যায়।"

একজন বেটেখাটো ইউরোপিয়ান অফিসার প্রশ্ন করল- "কি করে? দিমিকদের যদি কোন প্রযুক্তি না থাকে‚ তাহলে তারা কেমন করে স্পেসশিপগুলো ধবংস করে দিল?"

"এটাও একটা রহস্য। সত্যি বলতে কি‚ স্পেসশিপগুলো আসলে ক্রাশ করছে‚ আক্রমণের শিকার হচ্ছে না। দু'টো স্পেসশিপ ধবংস হবার পর আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে দিমিকরা শুধু ব্রেন ওয়েভের মাধ্যমে তথ্য পাঠাতেই পারে না‚ ব্রেন ওয়েভ নিয়ন্ত্রণও করতে পারে। আর ব্রেন ওয়েভকে নিয়ন্ত্রণ করা মানে মানুষের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা।"

"অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন‚ স্পেসশিপে যে সব মানুষ থাকে‚ তাদের চিন্তাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে দূর্ঘটনা ঘটাতে বাধ্য করা হয়?" প্রশ্নটা যে করল‚ তার চেহারা কিংবা একসেন্ট শুনে বোঝার উপায় নেই সে কোন দেশের নাগরিক। প্রেসিডেন্ট জবাব দিলেন-

"তার চেয়েও ভয়ংকর‚ তাদের চিন্তাশক্তি সম্পূর্ণ ওলটপালট করে দেয় দিমিকরা। দিমিকদের সাথে যুদ্ধে যাওয়া একজন অফিসার মহাকাশ দূর্ঘটনার পরও দৈবক্রমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল। তাকে যখন প্রশ্ন করার জন্য হাসপাতালে গেলাম আমি‚ তখন অদ্ভুত একটা কাজ করল সে। আমাকে দেখেই চেচিয়ে বলল-'আমি পারলাম না মানব জাতিকে বাঁচাতে।' বলেই হাতের স্যালাইনের টিউব খুলে‚ লাফ দিয়ে সাত তলা থেকে নিচে পড়ল এবং মৃত্যুবরণ করল।"

এবার আমি প্রশ্ন করলাম-"তার মানে দাড়াচ্ছে‚ দিমিকরা মানুষের মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাহলে‚ আপনি কেন একদল রোবট বোঝাই স্পেসশিপ পাঠাচ্ছেন না ওদের শেষ করতে? রোবটদের তো আর ব্রেন ওয়েভ নেই! তাছাড়া যেখানে কয়েকশো সেনা সদস্য দিমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ দিয়েছে ইতিমধ্যে‚ আমদের-মাত্র ১২ জনের উপর নির্ভর করছেন কেন আপনি? কেন কয়েকটা শক্তিশালী পারমানবিক মিসাইল ছুড়ে দিমিকদের ধংস করে দিচ্ছেন না?"

"সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা করলেন আপনি। আমরা রোবট পাঠাচ্ছি না দু'টো কারণে। প্রথমত-আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত একটা স্পেসশিপ শুধুমাত্র রোবটদের দায়িত্বে ছেড়ে দেব; এতটা বিশ্বাস রোবটদের আমরা কখনোই করতে পারি না। তাছাড়া এতদিন আমরা জানতাম না যে দিমিকরা ব্রেন ওয়েভ নিয়ন্ত্রণ করতে জানে। যেহেতু জেনেছি‚ তাই যে স্পেসশিপটাতে আপনারা যাচ্ছেন‚ সেটার চারিদিকে সবসময় এক ধরনের তড়িৎ চুম্বকীয় সুরক্ষা বলয় তৈরি রাখার ব্যবস্থা করব‚ যে বলয় ভেদ করে দিমিকরা ব্রেন ওয়েভ পাঠাতে পারবে না। আর পারমানবিক মিসাইল ছুড়লে সাইলার পার্শ্ববর্তী ফেরেল গ্রহেও এর প্রভাব পড়বে। ফেরেলে অনেক মানুষ রয়েছে‚ তাই সেটা করছি না আমরা। তাছাড়া নিউক্লিয়ার মিসাইল সহ একটা স্পেসশিপে যদি তড়িৎ চৌম্বকীয় বলয় থাকে‚ সেটা বিপজ্জনক হতে পারে। আর যদি না থাকে‚ তাহলে মিসাইল ছোড়ার জন্য দিমিকদের ব্রেন ওয়েভের আওতায় চলে আসতে হবে সেটাকে।" বলে একটু থামলেন তিনি। তারপর যোগ করলেন-"মোটামুটি এই ছিল দিমিকদের সম্পর্কে তথ্য। আপনাদের কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্স নিতে হবে যাবার আগে। তিনটি কোর্স। প্রথমত-মহাশূন্য এবং দিমিক সম্পর্কে কিছু তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন‚ দ্বিতীয়ত-মহাশূন্যের পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রশিক্ষণ এবং তৃতীয়ত-সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; সাইলা ফরেস্টে কয়েকদিন সময় কাটানো। সাইলা ফরেস্ট হলো কৃত্রিমভাবে তৈরি বন; যেখানে দিমিকদের প্রতিকৃতি এবং স্বভাব সম্পন্ন কিছু রোবটদের সাথে লড়াই করতে শিখতে হবে আপনাদের। আজ এ পর্যন্তই! কাল থেকে আপনাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে।"

টের পেলাম সবাই অস্বস্তির সঙ্গে নড়াচড়া করে উঠল। আমি নিজেও অস্বস্তিবোধ করছি‚ আসলে পুরো মিশনটাই সুবিধের ঠেকছে না।



চার
কর্নেল সিম্পসন চেচিয়ে বলল-"মেজর আহমেদ‚ আপনার পেছনে!"
প্রচন্ড ক্ষীপ্রতায় আমি বসে পড়লাম। হাতের অত্যাধুনিক মেশিন পিস্তলটার ট্রিগার চেপে ধরলাম ঐ অবস্থায়ই। অক্টোপাসের মতো দেখতে যন্ত্র-দিমিকটার (অর্থাৎ দিমিকের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন রোবট-টার) ছড়ানো ছিটানো সাত হাত পায়ে লাগল। যন্ত্র দিমিক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলেও আবার ছুটতে শুরু করল আমার দিকে। মেশিন পিস্তলে আর পাঁচটা বুলেট আছে। যন্ত্র দিমিক আমার কয়েক হাত কাছে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম‚ আসতেই চেপে ধরলাম ট্রিগারে। যন্ত্র দিমিকের মস্তিস্কের মতো দেখতে কিম্ভুত মাথাটা কয়েক টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল‚ থকথকে গাঢ় হলুদ মগজ ছিটকে পড়ল ওটার‚ মুখ থুবড়ে পড়ল যন্তুটা। রোবোটিক্সে মানুষ কি পরিমাণ উন্নতি করেছে দেখে বিস্মিত হলাম। কেউ না বলে দিলে বোঝার কোন উপায় নেই যে এটা সত্যিকারের এলিয়েন নয়‚ এলিয়েনের মতো দেখতে রোবট।

আমরা আমাদের ট্রেনিংয়ের শেষ মুহুর্তে চলে এসেছি। প্রথম দু'টো কোর্স শেষ‚ সাইলা ফরেস্টেও আজ আমাদের শেষ দিন। আর একশো ফুট যেতে পারলেই বন শেষ‚ আমাদের ট্রেনিংও শেষ।

আমি কর্নেল সিম্পসনের পেছনে পেছনে দৌড়াতে লাগলাম। কয়েক পা এগোতে না এগোতেই বড়সড় একটা রেইন ট্রি গাছ থেকে দু'-দু'টো যন্ত্র দিমিক লাফিয়ে পড়ল আমাদের সামনে। দু'জন দু' দিকে ছুটে সামনে এগোলাম। আমার মেশিন পিস্তলে গুলি নেই। কর্নেলের হাতের ভারি মেশিনগানটাতে আছে। সে মেশিনগানের অবশিষ্ট সবগুলো বুলেট তার পেছনে থাকা যন্ত্র দিমিকের মাথা লক্ষ্য করে ছুড়ল‚ দিমিকটা মরে যেতেই আবার ছুটতে শুরু করল সে।

এদিকে আমাকে ধাওয়ারত যন্ত্র দিমিক আমাকে প্রায় ধরেই ফেলেছে। দৌড়ে এদের সাথে পারা যায় না।

মাত্র দশ ফুট বাকী বন শেষ হবার‚ এমন সময় সাতটা শুঁড় দিয়ে আমাকে পেঁচিয়ে ধরল সে। আমি পুরো শক্তি খরচ করেও হাত পা ছাড়াতে পারলাম না। এবার আমি ভয় পেলাম। সাইলা ফরেস্টে ঢোকানোর আগে দিমিত্রি ইভানোভিচ স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন যে এখানে ঢোকার পর আমরা যদি যন্ত্র দিমিকের হাতে মারা যাই‚ তাতে ইউএস আর্মি কিংবা বিজ্ঞান কাউন্সিল দায়ী থাকবে না। তাই কেউ যদি ফেরত যেতে চায় অভিযান থেকে‚ যেতে পারে। এ কথা শুনে বার জনের মধ্যে পাঁচজনই অভিযান বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমরা সাতজন সাহসী (কিংবা বোকা) অফিসার স্বেচ্ছায় ঢুকেছি এই মৃত্যুপুরীতে।

যন্ত্র দিমিকটা আমাকে তার মুখের কাছে নিয়ে মস্ত হা করল। টকটকে লাল জিহবা দেখা যাচ্ছে ওটার
‚ আমার পুরো মাথাটা খেয়ে নিতে চাচ্ছে। বাজে বিচ্ছিরি একটা গন্ধ এসে ঝাপটা মারল আমার নাকে মুখে। চমৎকার বীভৎস রোবট বানিয়েছে বিজ্ঞান কাউন্সিল।

আমার যখন মনে হলো আমি এখনই মারা যাচ্ছি‚ ঠিক তখনই মাথা পরিস্কার হয়ে গেল আমার‚ আমি ধরে ফেললাম বিজ্ঞান কাউন্সিলের পুরো খেলাটা। বাঁচার জন্য কি করতে হবে তা বুঝে ফেললাম।

আমি যন্ত্র দিমিকটার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললাম-"ফাক ইউ!" অমনি মূহুর্তের মধ্যে আমাকে ছেড়ে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল সেটা। হাত পা অসার হয়ে পড়ে থাকল‚ যেন ওটার কানে কানে আমি মৃত্যুমন্ত্র জপেছি।

ধীরে সুস্থে হেটে হেটে বনের শেষ অংশটুকু পেরিয়ে বাইরে এলাম। সিম্পসন আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল। জিজ্ঞেস করল-

"আপনি এটা কি করলেন মেজর? যন্ত্র দিমিকটার এই অবস্থা হলো কেন?"

আমি তার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম-"আমরা একটা জঘন্য কৌতুকের শিকার কর্নেল সিম্পসন। এই ট্রেনিংটা আসলে দিমিকদের সাথে যুদ্ধ করার ট্রেনিং ছিল না‚ আমাদের মনোজগত কতটুকু ভয়‚ মানসিক চাপ‚ আতঙ্ক সহ্য করতে পারে‚ মানসিক অস্থিরতার মধ্যে আমরা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারি কি না‚ সেটার পরীক্ষা ছিল।"

"তাই? কেমন করে বুঝলেন?"

"দেখুন‚ আমাদের এমিউনিশন বক্স সাজিয়ে দিয়েছে ইউএস আর্মির সৈনিকরা‚ আমরা নিজেরা সাজাইনি। কাজেই আপনার-আমার দু'জনেরই বন্দুকের গুলি এমন সময় শেষ হলো‚ যখন আমরা প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছি সাইলা ফরেস্টের। আপনার কি মনে হচ্ছে না এটা হিসাব করা ছিল? শেষ মুহূর্তে‚ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমরা মনোবল হারাই কি না‚ সেটা দেখাই কি মি. ইভানোভিচের উদ্দেশ্য ছিল না?"

"এমনও তো হতে পারে যে দু'জনের একসাথে শেষ মুহুর্তে বুলেট শেষ হয়ে যাবার ব্যাপারটা কাকতালীয়?"

"না‚ পারে না। কারণ ইভানোভিচ বলেছিলেন যে‚ দিমিকরা নিজেদের অস্তিত্ব যেচে পরে না জানালে বিজ্ঞানীরা ওদের কথা জানতেও পারত না। তিনি আরও বলেছিলেন যে‚ দিমিকরা শর্ত দিয়েছিল মানুষ যাতে কখনো সাইলাতে প্রবেশ না করে এবং বিজ্ঞান কাউন্সিল সেই শর্ত মেনেও নিয়েছিল। দিমিকরা কখনো স্যাটেলাইট বা টেলিস্কোপিক ছবিতেও ধরা পড়েনি।"

"তো? তাতে কি প্রমাণ হয়?"

"তাতে প্রমাণ হয় যে এই সাইলা ফরেস্টের যন্ত্র দিমিকগুলো সব ভুয়া! মানুষ কখনো সত্যিকারের দিমিক দেখেনি।"

"হলি শিট! আপনি ঠিক বলেছেন মেজর‚ খুব ঠিক বলেছেন। এটা তো আমার মাথাতেই আসেইনি!"

"হ্যা‚ ভয়ংকর জঙ্গলে ঢুকিয়ে বীভৎস রোবটের মুখোমুখি করিয়েছে। আমাদের জীবনের দায়ভার তুলে নিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। পুরো খেলাটাই আমাদের মানসিক দৃঢ়তার পরীক্ষা! আমি যখন দিমিকিটার দিকে তাকিয়ে একটা গাল পারলাম‚ আমার মানসিক দৃঢ়তা টের পেয়ে নিজে থেকে ডি এক্টিভেট হয়ে গেল সে। এভাবেই যন্ত্র দিমিকগুলোকে প্রোগ্রাম করা হয়েছে।"

আমরা দু'জন ছুটতে ছুটতে আর্মি বেইজে ফিরলাম। ইভানোভিচ অপেক্ষা করছিলেন আমাদের জন্য। ধূসর কোটের সঙ্গে লাল টাইতে বেশ রোমান্টিক দেখাচ্ছিল তাকে। আমাদের দেখে উষ্ণ হাসি দিলেন তিনি।

"মেজর দীপ্ত আহমেদ এবং কর্নেল ড্যানিয়েল সিম্পসন‚ আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। শুধু আপনারা দু'জনই সাইলা ফরেস্ট অতিক্রম করতে পেরেছেন। বাকীরা কেউ আহত হয়ে‚ কেউ জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে বনের মধ্যে। তাদেরকে উদ্ধার করতে লোক পাঠানো হয়েছে অবশ্য‚ কিন্তু এই মিশনে শুধু আপনারা দু'জন যাচ্ছেন‚ সাথে কয়েক হাজার রোবট নিয়ে।"

আমি রেগে গিয়ে বললাম-"কিন্তু আপনি আমাদের মিথ্যে বলেছিলেন কেন মি. ইভানোভিচ? দিমিকগুলো যে ভুয়া দিমিক..."

"শান্ত হোন মি. আহমেদ। সাইলা ফরেস্টের সব কিছু এখান থেকে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এতক্ষণ ধরে। আপনার এবং কর্নেল সিম্পসনের কথোপকথনও শুনেছি। আপনি ঠিকই ভেবেছেন। দিমিকগুলো আসলেই কৃত্রিম। কিন্তু যদি সত্যটা বলে দিতাম আপনাদের আগেভাগেই‚ যদি বলতাম আপনাদের মানসিক শক্তি পরীক্ষার জন্য এই ট্রেনিং‚ তাহলে এত নিঁখুত ফলাফল পেতাম না। দিমিকরা যেহেতু ব্রেন ওয়েভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে‚ তাই মানসিক পরীক্ষাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল আপনাদের স্বার্থেই।"

"তবুও‚ এটা এক রকম প্রতারণাই! জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের হয়ে মিশনে যাচ্ছি‚ এমন প্রতারণা যে দ্বিতীয় বার করবেন না‚ তার নিশ্চয়তা কি?"

"আমি ব্যক্তিগত ভাবে আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি মেজর আহমেদ। এমন কিছু দ্বিতীয় বার হবে না।"

তার ব্যক্তিগত নিশ্চয়তায় আমি খুব একটা আশ্বস্ত হলাম না।


পাঁচ
দেশে আমার এক বন্ধু আছে‚ নাম পাভেল। বিশিষ্ট উদ্ভিদবিজ্ঞানী। সাইলাতে যাবার ঠিক দু'দিন আগে আমাকে ফোন করল সে।

"দীপ্ত‚ শুনলাম তুই নাকি আমেরিকাতে আছিস এখন?"

"হ্যা। তুই কার কাছ থেকে শুনলি?"

"ভাবী বলেছিল। শোন‚ একটা কাজ করতে পারবি তুই?"

"কি কাজ?"

"ওখানকার ন্যাশনাল বুটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ড. উইলিয়াম জোনের আবিষ্কৃত জেনেটিক্যালি মডিফায়েড গাছটার একটা ছবি পাঠাতে পারবি?"

"পারব। কিন্তু কি করবি এটা দিয়ে?"

"তেমন কিছু না। আমিও অনেকটা একই ধরনের একটা গবেষণা করছি। তাই দরকার।"

"আচ্ছা পাঠাব।"

বিজ্ঞান কাউন্সিল এ দু'টো দিন আমাকে এবং সিম্পসনকে ছুটি দিয়েছে। সিম্পসন অনেকটা বন্ধুমতো হয়ে গেছে আমার‚ যদিও সামরিক পদমর্যাদায় আমার চেয়ে বড় সে।

যেহেতু দু'টো দিন কিছু করার নেই‚ তাই ন্যাশনাল বুটানিক্যাল গার্ডেনেই যাব বলে ঠিক করলাম। শহর থেকে দু'কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেটা। কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী সামরিক পোষাক পরেই বাইরে বেরোলাম। লাল ব্যাজের বদৌলতে আমাকে জামাই আদর করল বুটানিক্যাল গার্ডেনের সব ক'জন কর্মকর্তা।

আমি সেই বিশেষ ধরনের গাছটার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। নেট দিয়ে ঘেরা রয়েছে গাছটা। মাঝারি সাইজের গাছ‚ পাতাগুলো ক্যাটক্যাটে রঙের; হলুদাভ সবুজ। একটু দৃষ্টিকটু। তবে এই গাছটাই নাকি প্রথমবারের মতো ভীনগ্রহের পরিবেশে স্থাপিত হতে যাচ্ছে।

আমি ছবি তুলে পাঠানোর ঠিক ছয় মিনিট পর পাভেল ফোন করল। বলল-

"দোস্ত‚ আরেকটা কাজ করতে পারবি?"

"আরও কাজ! কি বল‚ সময় পেলে করব।"

"তুই এই গাছটার একটা পাতা ছিড়ে আমার ঠিকানায় কুরিয়ার করে দিতে পারবি?"

"একটা পাতা ছিড়ে সেটাকে প্যাকেটে মুড়ে কুরিয়ার করে দেব?"

"হ্যা।"

"লোকে পাগল ভাববে না!!"

"প্লীজ দোস্ত‚ কাজটা করে দে! আমার ধারণা এই গাছটার সাথে তোর মিশনের কোন সম্পর্ক আছে।"

"হোয়াট? আমার মিশন! আমার মিশন কি সেটা তুই কি করে জানলি? এটা তো টপ সিক্রেট! আমার বউও জানে না এ ব্যাপারে কিছু!"

"আমিও জানি না‚ কিন্তু অনুমান করতে পারি। কেন সেটা পরে বলব‚ নিশ্চিত হয়েই বলব। তুই কাজটা করে দে না ভাই!"

"আচ্ছা দেব।"

"আর শোন‚ শেষ একটা কাজ করতে পারবি?"

"তোর আচরণ আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকছে। কি হয়েছে ঘটনা বল তো?"

"বলব‚ সময় হলেই বলব। শেষ কাজটা করে দিবি?"

"বল!"

"তুই ড. উইলিয়াম জোনের সাথে দেখা করবি। করে জানতে চাইবি যে এই গাছের পাতা হলুদাভ সবুজ না হয়ে গাঢ় সবুজ বা নীলাভ সবুজ হতে পারে কি না!"

"আচ্ছা। আর কিছু?"

"নাহ‚ এ দু'টো কাজ করলেই হবে।"

পাভেলের সাথে কথা বলা শেষ করে আমি বুটানিক্যাল গার্ডেনের তত্ত্বাবধায়ককে জিজ্ঞেস করলাম যে এই গাছের একটা পাতা আমি ছিড়তে পারি কি না। সে ভদ্রভাবে মানা করল। লাল ব্যাজটা দেখাতে আমতা আমতা করে বলল-

"ইয়ে মানে স্যার‚ বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি ইভানভিচ নিজেই নিষেধ করেছেন আমাদের এই গাছে কাউকে হাত লাগাতে অনুমতি দিতে।"

আমি মৃদু হেসে বললাম-
"চিন্তা করবেন না‚ আমি সরাসরি মি. ইভানোভিচের হয়ে কাজ করছি। তিনি এত তুচ্ছ কারণে কিছু মনে করবেন বলে মনে হয় না। দরকার হলে আপনি নিজে তার সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।"

আমার আত্মবিশ্বাস দেখে সে আর না করল না‚ আমাকে দিয়ে একটা ফর্ম ফিলাপ করিয়ে গাছটির একটি হলুদাভ সবুজ পাতা ছিড়ে ফরেনসিকদের মতো পলিথিনে পুরে সেটা আমার হাতে দিল।

আমি সঙ্গে সঙ্গেই সেটা পাভেলকে কুরিয়ার করার ব্যবস্থা করলাম। ড. জোনের সাথেও দেখা করলাম সেদিন বিকেলেই।


ছয়
তড়িৎ চৌম্বকীয় নিরাপত্তা বলয় বোধহয় সত্যিই কাজ করছে। কারণ আমরা সাইলা গ্রহের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি‚ কিছুক্ষণের মধ্যেই অবতরণও করতে যাচ্ছি সাইলাতে; কিন্তু এখনও দিমিকরা আমাদের ব্রেন ফ্রিকোয়েন্সিতে উঁকি ঝুঁকি দেয়নি।

এদিকে একটা ঝামেলা হয়েছে‚ সিম্পসনের গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে। আর ঘন্টাখানেকের মধ্যে দিমিকদের সাথে যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে‚ কিন্তু এখনও সিম্পসনের অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছে না।
আমি মহাকাশযানের কম্পিউটার মিডিকাসকে বললাম-"মিডিকাস‚ মি. ইভানোভিচের সাথে কথা বলতে চাই। যোগাযোগ করো।"

মিডিকাস তার যান্ত্রিক গলায় বলল-"জ্বী স্যার‚ করছি এখনই।"

কিছুক্ষণের মধ্যেই হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে জীবন্ত হয়ে উঠলেন দিমিত্রি ইভানোভিচ। ঘুমের পোষাক পরে আছেন তিনি‚ হয়তো ঘুমাচ্ছিলেন। পৃথিবীতে এখন ক'টা বাজে কে জানে।

"হ্যালো মেজর। কি অবস্থা বলুন।"

"কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা সাইলাতে অবতরণ করতে যাচ্ছি‚ কিন্তু কর্নেল সিম্পসন ভীষণ অসুস্থ।"

"অসুস্থ হলে আর কি করা! আপনি একা যুদ্ধ পরিচালনা করতে পারবেন? রোবটরাই যুদ্ধ করবে আসলে‚ আপনি শুধু কমান্ড দেবেন।"

"না পারার কোন কারণ নেই। আমি শুধু আপনাকে জানিয়ে রাখলাম।"

"ধন্যবাদ। অল দা বেস্ট। সব ক'টা দিমিককে শেষ করে যোগাযোগ করুন। আপনার অপেক্ষায় থাকব।"

আমি সিম্পসনের কামরায় গিয়ে দেখলাম সে ঘুমুচ্ছে। আমি ওকে ডেকে বললাম-

"সিম্পসন‚ আমি যাচ্ছি।"

সে চোখ পিট পিট করে আমার দিকে তাকাল। দুর্বল কন্ঠে বলল-

"আমি খুব দুঃখিত‚ এমন সময়ে অসুস্থ..."

"গিল্টি ফিল করার কিছু নেই কর্নেল‚ আপনি তো আর ইচ্ছে করে অসুখ বাধান নি।"

"আপনার সফলতা কামনা করছি মেজর দীপ্ত।"

আমি কয়েক হাজার রোবট নিয়ে স্পেসশিপের বাইরে বেরিয়ে এলাম।


সাত
চার ঘন্টা পর যখন স্পেসশিপে ফিরলাম‚ তখন মাথা ঝিম ঝিম করছে, নেশা নেশা লাগছে। সিম্পসনকে দেখলাম কফির কাপ হাতে নিয়ে বসে আছে এক কোনায়। আমি স্পেসস্যুটের মাস্ক খুলতে খুলতে তার পাশে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লাম। সে আমার দিকে কফির কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলল-

"কেমন হলো যুদ্ধ?"

আমি ক্লান্ত গলায় উত্তর দিলাম-"খুব সহজ ছিল। দিমিকরা নিরীহ প্রাণী। তেমন বাধা দিতে পারেনি। সবগুলো মরেছে। নিরস্ত্র-নিরীহদের সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধ ছিল এটা; অসম যুদ্ধ।"

"যাক‚ ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে। রোবটরা কোথায়?"

"আসছে ওরা।"

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কিছু অপ্রিয় কাজ করতে হবে এখন। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম সিম্পসনের দিকে। বললাম-

"কফির সাথে কি মিশিয়েছেন কর্নেল সিম্পসন? সায়ানাইড নয় তো?"

সিম্পসন অবাক হয়ে তাকাল, তারপর হেসে ফেলল। "আপনার সেন্স অফ হিউমার ভালো মেজর।"

আমি কফির কাপের দিকে তাকিয়ে বললাম- "কি জানেন‚ সেন্স অফ সায়েন্সও খুব একটা খারাপ নয়।"

"মানে?"

"মানে হলো‚ জীবাণু নিরোধক স্পেসশিপে কি করে আপনার জ্বর এলো সেটা ভাবছি আমি। ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া হলো জ্বরের মূল কারণ‚ রোদে হাটাহাটি করলেও জ্বর হতে পারে‚ উল্টোপাল্টা ঔষধ খেলেও হতে পারে; কিন্তু এসবের কোনটাই তো আপনার ক্ষেত্রে হয়নি সিম্পসন। তাহলে আপনার জ্বর এলো কি করে? স্পেসশিপের ভেতর জ্বর আসাটা খুব অস্বাভাবিক ঘটনা কর্নেল, তাই না?"

"কি বলতে চাইছেন‚ স্পষ্ট করে বলুন তো মেজর!"

"বলতে চাইছি‚ আপনি ইচ্ছে করে যুদ্ধে যান নি। কারণ আপনি আসলে সেনাবাহিনীর সদস্যও নন। বেসিক কিছু মিলিটারি ট্রেনিং আছে বটে আপনার‚ কিন্তু সত্যিকার যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নেই।"

"হোয়াট দা হেল! বলছেন কি আপনি? মাথা ঠিকাছে তো? দিমিকরা আপনার মাথা ওলট পালট করে দেয়নি তো?"

"প্রমাণ করে দিন যে আমার মাথা খারাপ‚ প্রলাপ বকছি। আমার কাপের কফি থেকে এক চুমুক খেয়ে দেখান! পারবেন?"

বলে কাপটা এগিয়ে দিলাম আমি সিম্পসনের দিকে। অমনি ভূত দেখার মতো চমকে উঠল সে। পিছয়ে গেল সামান্য। তার প্রতিক্রিয়া দেখে আমি হো হো করে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লাম।

"স্বীকার করে নিন যে সায়ানাইড মিশিয়েছেন কফিতে! স্বীকার করে নিন যে আমাকে খুন করতে চাইছেন আপনি!! স্বীকার করে নিন যে আপনি কোন কর্নেল নন‚ সেনা সদস্য নন!!!"

সিম্পসন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল-"আপনি সহজ বিষয়টা বুঝতে পারছেন না মেজর! আমি যদি সেনাবাহিনীর কেউ না হতাম‚ তাহলে আপনার সাথে সাইলা ফরেস্টে অতক্ষণ টিকে ছিলাম কি করে?"

"আপনি টিকে ছিলেন‚ কারণ আপনি জানতেন যে যন্ত্র দিমিকরা ভুয়া ছিল।"

"আমি কেমন করে সেটা জানতাম?"

"ভালো প্রশ্ন। ক'দিন ধরে আমি চিন্তা করছি‚ আমাদের মিশনের পরিচালনা করার দায়িত্ব যেখানে স্বয়ং ইভানোভিচ নিয়েছেন‚ সেখানে নিয়ন্ত্রণ কমিটির কেউ পুরো মিশনে আমাদের সাথে যোগাযোগও করেনি‚ অথচ তারাও এই মিশনের উদ্যোক্তা; এটা কি করে সম্ভব! " কঠিন চোখে আমি সিম্পসনের দিকে তাকালাম। বললাম-"আস্তে আস্তে আমার সন্দেহ হলো‚ নিয়ন্ত্রণ কমিটির কেউ নিশ্চয়ই মিথ্যে পরিচয়ে কিংবা ছদ্মবেশে আছে আমাদের সাথে। আচ্ছা‚আপনিই নিয়ন্ত্রণ কমিটির লোক নন মি. সিম্পসন? ওহ! ভুল বললাম‚ আপনি তো সিম্পসন-ই নন। আপনি খোদ নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রেসিডেন্ট থমাস হুগো! তাই না?"

ফ্যাকাসে হয়ে গেল তার মুখ। কোমরে হাত দিয়ে কি যেন বের করতে চাইল সে। ঘটনা বুঝতে পেরে আমি হাতের গরম কফি তার মুখ লক্ষ্য করে ছুড়ে দিলাম। সে মাথা সরানোর জন্য ডানে ঝুঁকে যেতেই লাথি কষলাম তার হাতে বেরিয়ে আসা ছোট্ট রিভলভারটাকে লক্ষ্য করে। ছিটকে দশ হাত দূরে পড়ল সেটা। নিজের প্রিয় মেশিন পিস্তলটা তার ঘাড়ে ঠেকালাম। বললাম-

"পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধারী ব্যক্তিটি আমার পিস্তলের তলায় বসে কাঁপছে‚ এর চেয়ে মধুর দৃশ্য কি হতে পারে মি. হুগো?"

সিম্পসন রূপী থমাস হুগো হিসহিসিয়ে বলল-

"ভেবো না এভাবে বাঁচতে পারবে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে রোবটরা চলে আসবে! তারপর..."

"আসবে না তারা।" আমি চোখ টিপলাম হুগোর দিকে তাকিয়ে।

"মানে? কেন আসবে না?"

"কারণ আমি সবগুলো রোবটকে ডি এক্টিভ করে দিয়েছি। আসলে এতক্ষণ কোন যুদ্ধই হয়নি দিমিকদের সাথে! বেহুদাই সময় নষ্ট করেছি।"

"ঠিক বুঝলাম না। রোবটদের ডি এক্টিভেট করেছেন কি করে? ওরা তো শুধু স্পেসশিপের কম্পিউটার মিডিকাসের নির্দেশে চলে।"

"হ্যা‚ কিন্তু ইউনোকোড ব্যবহার করে যে কোন রোবটকে ডি এক্টিভ করা যায় মি. হুগো!"

"ইউনোকোড? আপনি সেটা কি করে জানলেন? নিয়ন্ত্রণ কমিটির উচ্চ পর্যায়ের সদস্য ছাড়া কেউ জানে না ইউনোকোড।"

"ঠিক বলেছেন। গত তিন বছর ধরে আমি নিয়ন্ত্রণ কমিটির হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন মিশনে গিয়ে কিসের কাজ করছি জানেন?"

হুগোকে দ্বিধান্বিত দেখাল। তারপরও শক্ত গলায় বলার চেষ্টা করল-
"জানি। উগ্র সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।"

"না‚ আমি গোয়েন্দার ভূমিকা পালন করছি। নিয়ন্ত্রণ কমিটির নিজস্ব গুপ্তচর বিভাগের হয়ে কাজ করছি আমি।"

"আপনি নিয়ন্ত্রণ কমিটির গুপ্তচর‚ অথচ আমি নিজে নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রেসিডেন্ট হয়ে সেটা জানি না?"

"আপনার না জানার পেছনে কারণ আছে। আপনি যে বিজ্ঞান কাউন্সিলের সাথে মিলে নিষিদ্ধ কিছু চালিয়ে যাচ্ছেন‚ সেটা অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সন্দেহ হয়। তাই আপনার পেছনে গুপ্তচর বিভাগ লেগে আছে বহুদিন থেকে। বিজ্ঞান কাউন্সিল এবং আপনার সম্মিলিত ষড়যন্ত্র উদঘাটন করাই আমার আসল মিশন ছিল।"

"কেমন ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন আপনি মেজর?"

"আপনি সেটা ভালো করেই জানেন মি. হূগো। তবুও বলি‚ আমার এক বন্ধুকে আমি সেই বিশেষ গাছটির একটা পাতা পাঠিয়েছিলাম, সে-ই আমাকে জানিয়েছে যে‚ বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. উইলিয়াম জোন যে বিশেষ ধরনের গাছটি আবিস্কার করেছেন‚ যেটা কেপলার থ্রি টুয়েন্টি সেভেন গ্রহের পরিবেশে বেঁচে থাকবে‚ সেটার নিউট্রিয়েন্ট উপাদান হলো মানুষের হিমোগ্লোবিনে উপস্থিত বিলিভার্ডিন এবং সেইসাথে মানবদেহের আরও কিছু এন্টিজেন; যেগুলো আপনারা সংগ্রহ করছেন ফেরেলে পাঠানো মানুষদের রক্ত থেকে। সেজন্যই গাছটার পাতা এত বেশি হলুদ হয়। ওদিকে অতিরিক্ত রক্ত নিয়ে মানুষগুলোকে তিলে তিলে মেরে ফেলছেন আপনারা‚ রক্ত থেকে বিলিভার্ডিন আলাদা করছেন‚ সেগুলোকে কাজে লাগাচ্ছেন বৃক্ষ গবেষণায়। দিমিকরা আপনাদের পরিকল্পনা জেনে গিয়েছিল এবং ফেরেলে যেতে আপনাদের বাধা দিচ্ছিল বলে ওদেরও মেরে ফেলতে চেয়েছেন। শুধু আবিস্কারের নেশায় বিজ্ঞান কাউন্সিল অন্ধ হয়ে গেছে। আর আপনিও তাল দিয়ে যাচ্ছেন ওদের সাথে‚ কেন মি. হুগো?"

হুগো চুপ করে রইল। আমি বলে গেলাম-

"আমি জানি কারণটা। কারণ হলো-আপনি নিজে একজন সাইকো। উদ্ভট‚ অমানবিক সবকিছুতে আপনার সায় আছে।"

হুগো বাঁকা হাসি হেসে বলল-"আমি অন্যায় কিছু করিনি মেজর। কতগুলো মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীর শরীরকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে লাগানোর অনুমতি দিয়েছি শুধু।"

"এটা যে কতবড় অমানবিক‚ সেটা আপনি নিজেও ভালো করে জানেন মি. হুগো। পৃথিবীর মানুষ আপনাকে কখনো ক্ষমা করবে না।"

"হা হা হা! পৃথিবীর মানুষ জানলে তো! স্পেসশিপের কম্পিউটার মিডিকাস কিন্তু সরাসরি বিজ্ঞান কাউন্সিলের নির্দেশে চলছে। আপনার ইউনোকোড দিয়েও এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। যে কোন মুহূর্তে আপনাকে মেরে ফেলবে সে; অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ করে, কিংবা বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে, অথবা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে স্রেফ আপনাকে গুলি করে উড়িয়ে দেবে সে।"

আমি হুগোর কথায় মোটেও বিচলিত হলাম না। শান্ত সুরে বললাম-"জানতাম মিডিকাস আমার কথা শুনবে না এখন আর‚ কারণ আমি যে আপনাদের খেলা ধরে ফেলেছি সেটা সে এখন জানে। তাই আমি গতকালই নিয়ন্ত্রণ কমিটির গুপ্তচর বিভাগকে ই মেইল করে সব কথা জানিয়ে দিয়েছি। এতক্ষণে মি. ইভানোভিচকে গ্রেফতার করার আয়োজন শুরু হয়ে যাবার কথা।"

হুগোকে হিংস্র দেখাল। দাঁতে দাঁত পিষে সে বলল- "তবুও, আপনি নিজে কিন্তু প্রাণে বাঁচতে পারবেন না!"

"হয়তো‚ কিন্তু তার আগে আপনার মৃত্যু হওয়াটা জরুরি।"

আমি হুগোর মাথায় মেশিন পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগার চেপে ধরলাম।

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১৭
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×