somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

:: প্রিতম - মিলন মেহ্দী

২৫ শে আগস্ট, ২০০৭ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


:: প্রিতম - মিলন মেহ্দী


রকিব সাহেব নবম শ্রেণীর বাংলা কাশ নিচ্ছিলেন। তিনি হাজারো বেদনার এক কলংকের মাঝেও সদা সর্বদা হাসি-খুশী, আনন্দে থাকতে চান। তাই হাসি না পেলেও ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে কৃত্রিম হাসি হাসেন। যে হাসিতে সাচ্ছন্দের লেশ মাত্র নেই। সে হাসি টুকু কেড়ে নেয় এক ছাত্রের বিয়ের কার্ডে। স্যার আমার ছোট চাচুর বিয়ে আপনার দাওয়াত রইল। বেশ হাস্যোজ্জল প্রাণ সঞ্চার খুশীতেই গ্রহণ করে রকিব সাহেব। কিন্তু পরে নিভৃতে চাপা দেয়া বেদনাশ্র“ ঝরে পড়ে চিবুক বেয়ে। শামীম কান্নার প্রশ্ন তুলতেই তিনি বলেন, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কাশ নিতে পারছিনে বলে দুঃখিত।

রকিব সাহেব কাশ থেকে বের হয়ে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে। কিন্তু সে বৃষ্টিতে হৃদয়ের আগুন দ্বিগুন হয়ে যায়। এভাবে বিদগ্ধ হৃদয়ে জ্বলে জ্বলে বিশ-পঁচিশ মিনিটের পথ দশ মিনিটেই হেটে ঘরে ফেরেন।

রকিব সাহেব অসহ্য যন্ত্রণায় জানালা ধরে বাহিরে নির্মল আকাশের নিষ্কলংক জ্যোৎøার দিকে তাকােিয় বিড় বিড় করে কি যেন বলছে। কী মায়াবী সন্ধ্যা, হিমেল সতেজ হাওয়া হৃদয়ে পরশ লেগেও শান্ত হচ্ছেনা। দোলনায় কাঁদছে নয় মাসের শিশু প্রিতম। হৃদয় বরফ বানিয়ে বেশীণ থাকতে পারে না। শিশুটি কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে। মনে প্রশ্ন জাগে অনেক। সংশয়, সন্দেহ প্রিতম কি আমার সৌর্য বীর্ষ, না অন্য কারো। আর ভাবতে পারে না রকিব সাহেব। চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে। বৃদ্ধ মা শরীফা বেগম ছুটে আসে রান্না ঘর থেকে। প্রিতম কে কোলে নিয়ে ছেলের মাথায় বুকে চোখে-মুখে পানি ছিটাতে থাকে জ্ঞান ফেরার অপোয়। রকিব যখন পাঁচ বৎসরের শিশু মিষ্টি শিষ্টি মাতৃভাষা আব্বু আম্মু বলতে পারে তখন স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে বাবা শহীদ হন। মা, শরীফা বেগম অনেক কষ্টে স্বামীর স্মৃতি নিয়ে থেকে যায় পৃথিবীতে।

রকিবের নানা-নানী ষোঢ়শী শরীফা বেগমের বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে রাজী হয়নি। শরীফা বেগম স্বামীকে অসীম ভালোবেসে, ছেলেকে নিয়ে যৌবনের জ্বালা নিভৃতে চেপে রেখে সুখেই ছিল। কিন্তু সে সৌভাগ্য বিধাতা দেন নি। শেষ বয়সে ছেলের বেদনায় ব্যথাতুর হৃদয় নিয়ে বেঁচে আছেন ধুকে ধুকে।

শরীফা বেগম অনেক কষ্ঠে ছেলেকে মেট্রিক পাশ করিয়ে শহরে পাঠান লেখা পড়ার জন্য। হোস্টেলের খরচের ব্যর্থতায় রকিব লজিং নিয়ে লেখা পড়া চালিয়ে যেতে থাকে। এভাবে বেশ দু’বছর অতীত হয়ে গেল। একদিন লজিং ম্যানের বউ রকিবকে ডেকে বললেন, বাবা, তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ডেকেছি। তুমি আমার ছেলের মতই... ঃ বলুন, আমি আপনাদের কথার অবাধ্য কখনো হইনি, সে সাহসও আমার নেই। রকিব মুখ নীচু করে বলে।

ঃ বলতে চাচ্ছিলাম তোমার আর প্রিয়ার ব্যাপারে। রকিব এরূপ কথা জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তবুও কৌতুহল ভরে কিছু সংশয় কিছু বিষ্ময়ে বলেঃ কেন, কী ব্যাপারে। আমি কি প্রিয়াকে পড়াতে অম।

ঃ না তা নয়, লোকমুখে অনেক কথাই হচ্ছে, যার জন্য প্রিয়ার ভবিষ্যত অন্ধকার। রকিব হতভম্ব হয়ে যান, মনের ভুলেও প্রিয়ার দিকে কখনো ছাত্র ছাড়া অন্য দৃষ্টিতে তাকায় নি।
অথচ...? লজ্জায় পড়ে বলেন, দেখুন আমি যা করেছি তা শুধু শিকেরই দায়িত্ব পালনে। এতে তো রটনার কিছু নেই।

ঃ সে সত্য বাবা, আমি স্বীকার করছি, কিন্তু মানুষের মুখ, তুমি কি চাইবে প্রিয়ার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক।

বলে, রকিব জানেন তো, আমার একমাত্র মা ছাড়া আর কেউ নেই। ওনার সঙ্গে কথা বলুন ওনিই যদি...

রকিব এতটুকু আধো রাজী আধো সংশয়ে বলে। প্রিয়ার মা হুরমতি বেগম শরীফা বেগম কে খবর পাঠান। রকিব গত দু’বছর এই লজিং-এ থাকায় শরীফা বেগমের আসা-যাওয়ায় প্রায় সাত আটবার সাাৎ হয়েছে প্রিয়ার মার সাথে। তাই স্বাভাবিক ভাবে এসে তিনি অস্বাভাবিক প্রস্তাব পান। একটা মেয়ের জীবন আর ছেলের কলঙ্কের কথা চিন্তা করে শরীফা বেগমকে রাজী হতে হয়। প্রিয়ার বাবা জহির চৌধুরী এ ব্যাপারে বরাবরই নীরবতা পারল করে গেছেন।

তিনি তার স্ত্রীকে ভালোভাবে চেনেন। তাই কলঙ্কের ভয়ে মধ্য পন্থা অবলম্বেন করে গেছেন। বিয়ে হয়ে গেল রকিবের এম.এ. পাশ করা আর সম্ভব হয়ে উঠেনা। রবিক শ্বশুর বাড়ীতে থাকতে আত্মায় বাঁধা পড়ে আত্মসম্মানের। তাই চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ওঠে। দিনের পর দিন দিতে থাকে ইন্টারভিউ। তাছাড় প্রিয়াই এক দিন রকিবের পৌরুষত্বের খবর দেয়। তাদের মাঝে আরেকজন আসছে। রকিব প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে। পেটে কান রেখে বলে বাবা না, মা আসছে আমাদের। প্রিয়া রবিক কে টেনে পালঙ্কে বসিয়ে বলে, আমি এ দুটি আঙ্গুল নাড়াচ্ছি।

- যদি এটা ধর ছেলে- আর এটা ধর মেয়ে। রবিক বলে তাক সম্ভব, সত্যিই হয়? সবই আল্লাহর মর্জি, তিনিই যা দেন। রকিব উত্তর দেয়। প্রিয়া বলে: মেয়ে হলে তোমার নামের প্রথম অর দিয়ে আর ছেলে হলে আমার নামের প্রথম অর দিয়ে নাম রাখবো। রকিব প্রিয়ার কথায় আর উত্তর না করে বলে, আচ্ছা তাই হবে। এবার নাম নির্বাচনের পালা। দু’জনে সম্মতি ক্রমে সিদ্ধান্ত নিল রোকেয়া এবং প্রিতম। কয়েক মাস পরে হৃদয় রাঙিয়ে আনন্দ খুশীর বার্তা নিয়ে এল প্রিতম। বেশ আনন্দের মাঝে আরেক আনন্দ বার্তা নিয়ে এলো পিয়ন।

রকিবের নিয়োগপত্র। চাকরী হয়েছে নিজ গ্রামের হাই স্কুলে। প্রিয়াকে আনন্দ বার্তা দিতে রবিক দৌড়ে যায় ঘরে। প্রিয়া, প্রিয়া, দেখ প্রিতম আমাদের সৌভাগ্য নিয়ে এসেছে। দেখ আমার চাকরির জয়েন্ট লেটার। এক সময় স্বপরিবারে চাকরীর উদ্দেশ্যে রবিক গ্রামে আসেন মায়ের কোলে। কিন্তু এত আনন্দ এত খুশী বিলীন হতে লাগলো দিন দিন। অর্থই যার মূলে আর প্রিয়ার শহুরে জীবনের ফ্রি স্টাইলের চলা-চরিত্র। প্রিয়ার মন যোগাতে শহরের মত পরিবেশে নেই, নেই শহরের মত যান্ত্রিক রং বেরং এর মঞ্চ। আছে প্রকৃতির রূপে শান্তির শান্ত পরিবেশ সবুজ বননীর। এভাবে প্রায় ...।

- মাস দুয়ের মত অতিবাহিত হলো। প্রিয়ার মা, হুরমতি বেগম প্রিয়াকে দেখার জন্য আসে। এসে দেখে তিনি হয়তো অর্থ বৃত্তে অসন্তুষ্ট হয়ে চলে যায়। তার দু’ এক দিন পর প্রিয়াও চলে যায়। কাউকে কিছুনা বলে। রকিব প্রিয়ার খোঁজে প্রিয়াদের বাড়ীতে আসে। প্রিয়াকে চাইতেই হুরমতি বেগম ডিভোর্সের সংবাদ দেয়। অনেক প্রশ্ন করে রকিব উত্তর পায় না। শ্বশুরকে অনেক কথা বলে কিন্তু তিনি ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন রকিবের দিকে। ডিভোর্সে বাঁধা দেয়াতে এ সব না মানায় ওনাকে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির পিলে জ্ঞান হীন বোবা করে সাজিয়ে রেখেছে শোকেচে কর্তা।

রবিক এক বুক বেদনা নিয়ে বাড়ী ফেরে। বৃদ্ধ মা, শরীফা বেগম বৌ-মার খবর জানতে চাইলে রকিব প্রিতমকে কোলে নিয়ে অশ্র“ ঝরিয়ে বলে, মা, আমি মায়ের ছেলে-প্রিমতও। আমাদের পরিচয় ভিন্ন পরিসরে, ভিন্ন রূপে, একই নারী জাতিতে। শরীফা বেগম নির্বাক ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে, রকিবের জীবন যন্ত্রনার দুঃখ, ােভ, ঘৃণা আর আর্তনাদের সংলাপ ধীরে ধীরে বাতাসে বিলীন হয়ে যায়।




০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×