somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়ি ফেরার কদম গাছ-2

০২ রা নভেম্বর, ২০০৬ রাত ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তার ডালপালা আর সুগন্ধ টেনে আনে জ্বরের ঝাঁঝ। বেশ বড় বড় পাতা যেন আকাশে ছড়িয়ে থাকা শতশত চোখ। অত চোখ কি মানুষের থাকে ? না কি ফেরেস্তা অথবা পরী ? পরী যদিও অতটা খারাপ কিছু নয় কিন্তু ভাল ও কিছু নয় নিশ্চয়ই। নইলে দাদী সন্ধ্যেবেলা বাগানে যেতে বারণ করবে কেন? সন্ধ্যেবেলায় কিংবা রাতে অবশ্য আমিও বাগানে যেতে চাই না, বাগানে যদিও খুব একটা অন্ধকার থাকে না, এবাড়ি ওবাড়ি থেকে ছিটকে আসা আলোতে সে যথেষ্টই আলোকিত আর গেটের মাথায় একটা বাল্ব ও দেওয়া আছে যাতে পুরো আলো থাকে কিন্তু সে তো ঘর নয়! গাছগুলোর গোড়ায়, তাদের আশে-পাশে অন্ধকার যেন জমে থাকে। বাড়ির পেছনের গেটটা খুলে সোজা ঢুকে যাওয়া যায় বাগানে আর একটা ছোট্ট পায়ে চলা পথও আছে এই বাগানের ভেতর। বাশের ছোট্ট গেট খুলে দু পা এগোলেই বাড়ির সামনের রাস্তা। কাজের লোকেরা ঐ পেছনের গেট দিয়েই যাতায়াত করে আর মাঝে মাঝেই বাড়ির লোকেও পেছনের ঐ গেট দিয়ে বাড়ি ঢোকে কিংবা বেরোয়। আমি দিনের বেলায় বাগানের রাস্তাতেই বাড়ি ঢুকি, বাইরে যাই কিন্তু সন্ধ্যের পরে কক্ষণও নয়! পরীরা সব নাকি সাদা জামা পরে থাকে। পা থেকে গলা অব্দি। ছোট ছোট পা ফেলে তারা ঘুরে বেড়ায়। ফুল তাদেরও খুব প্রিয় আর সুগন্ধী ফুল হলে তো কথাই নেই। পরীরা কারও ক্ষতি করে না পারতপক্ষে কিন্তু আমি বাগানে গিয়ে কোন এক পরীর সামনে পড়ে গেলে সেটা খুব একটা ভালো কিছু হবে না। তাই রাতে বাগানে কিংবা ঐ রাস্তায় যাওয়ার কোন চান্স নেই। মেজকাকা কেন যে এই হাস্নুহেনার গাছটা লাগাল! বেশ বুঝতে পারি আমার জ্বর বাড়ছে !

বিকেলে আম্মা ডাক্তার আন্টির কাছে নিয়ে যাবে বলেছে। ডাক্তার আন্টি ঐ সামনের দশ নম্বর বাড়িটাতে থাকে। ডাক্তার আন্টির বরও ডাক্তার। আব্বা বলে অনেক বড় ডাক্তার নাকি খালেক সাহেব। রোজ বিকেলে তার বাড়ির সামনে অনেক লোক আসে। এত লোক যে তাদের সামনের বড় ঘরটাতে ওদের জায়গা হয় না। অনেকেই ঐ বাড়ির সামনের বাগানে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে কখন তার নম্বর আসবে। কম্পাউন্ডার কাশেম সবাইকে নম্বর দেওয়া টিকিট ধরিয়ে দেয়। যে আগে আসে তার নম্বর আগে। দুপুর দুটো থেকেই শুরু হয় লোক আসা। সন্ধ্যের দিকে আম্মা আর বারন্দায় বেরোয় না ডাক্তার আন্টির বাড়ির সামনে এত লোক থাকে বলে। আন্টির একটাই ছেলে। খালেদ ভাই। তার যেদিন স্কুল ছুটি থাকে সেদিন সে সারাদিন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। আমি খেলতে ডাকলেও আসে না। কি করে আসবে ? ডাক্তার আন্টি যে তাকে বিকেলের আগে খেলতে যেতে বারণ করে রেখেছে। খালেদ ভাই ও বড় হয়ে ডাক্তার হবে। তাই ওকে অনেক পড়তে হয়। বাড়ি থেকে যখন তখন তাই তার বেরুনো মানা। হাতে বল নিয়ে সারাদিন তাই সে জানালায়। খালেদ ভাইটা যদিও খুব দুষ্টু। ইকেশনের সিরি কেরে আমাকে দেখলেই জল ছেটায় আর সুঁই ফুটিয়ে দেবে বলে ভয় দেখায় কিন্তু আসলে কোনদিন সুঁই ফোটায় না। শুধু জল ছেটায়।

এখন বর্ষা, এই বাস স্টপটার কাছেই কেন জানি না জল জমে থাকে একটু বৃষ্টি হলেই। গাড়িগুলো সে জল ছিটিয়ে ছিটিয়ে চলে যাচ্ছে, বিশেষত যারা যা্নঈ ধরার জন্যে আমাদের কাছ ঘেঁসে যাচ্ছে। এই রকম অবস্থায় বাসের নম্বর দেখার চাইতে জলের দিকেই বেশি নজর রাখতে হয়, নতুবা যাচ্ছেতাই অবস্থা ! জল ছেটানোর কথায় মনে পড়ল, সে বছর ঈদের দিনে সকালে সবে নতুন জামা-জুতোয় সেজে-গুঁজে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি আর কোথা থেকে ঐ ছেলে, খালেদ ভাই হুঁশ হুঁশ করে জল ছিটিয়ে দিল। আর একবার নয় বারে বারে। সাথেই সে একটা জলের মগ রেখেছিল তাই থেকে সিরি কেরে জল নেয় আর আমার নতুন জামায় ঢেলে দেয় সেই জল! আমি এদিক ওদিকে ছুটে বাঁচার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয় না। অবশেষে সেখানেই দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললাম ভ্যা ঁকরে। সেই ছেলে ওখান থেকে একদম গায়েব। আমার কান্না দেখে ঘাবড়ে গিয়ে থাকবে। আর ঠিক তক্ষুনি সবাই ঈদগাহের ময়দান থেকে ঈদের নামাজ সেরে ফিরছেন। আব্বা, ডাক্তার খালুজি আরও এবাড়ি ওবাড়ির সব। আমি এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও নিজেকে চুপ করাতে পারছি না। ফোপাচ্ছি সেই থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। ডাক্তর খালুজিকে দেখামা্নই ছুট্টে তার কাছে গিয়ে সজোরে কেঁদে ফেললাম আর বললাম, ডাক্তর ডাক্তর, তোমার পোলায় দ্যাহো দিয়া আমার নতুন ফ্রক এক্কেরে ভিজাইয়া দিসে! ওখানে যারা ছিল সবাই হেসে ফেলল আমার কান্না আর কমপ্লেন শুনে। খালুজি তক্ষুণি ঐ দুষ্টু ছেলেকে ডেকে এনে বললেন, এক্ষুণি সরি বল আর কোনদিন এরকম কোর না। আব্বা তখন আমার হাত ধরে বললেন, ওরকম করে কেউ খালুজির সাথে কথা বলে? খালুজি বললেন, খুব ভাল মেয়ে! আমি যেন তাতেই খুশি। ঝলমল করতে করতে আমি তখন দ্বিতীয় নতুন জামাটি পরতে বাড়ির দিকে ।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০০৬ রাত ২:২৪
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×