সেদিন সে বাসার এক রত্তি ছেলেটা বলে বসলো সে সারা জীবন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেবে। এই তার ইচ্ছে। বলে কম্বলমুড়ী দিয়ে দিলো ঘুম। প্রথম প্রথম কেউ ব্যাপারটা নিয়ে মাথাই ঘামালো না। জীবনে কত বড় বড় ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে কোথায় কি না কি। এসব নিয়ে ভাবতে নেই বলে সবাই চোখ বড় চশমা পড়লো, কেউ লিখলো বিশাল বিশাল বিষয়ে গম্ভীর প্রবন্ধ। অন্যরা সেই প্রবন্ধের মূল বক্তব্য মুখস্থ করে পরীক্ষায় লেখতে লাগলো। শুধু চিন্তায় পড়লো সেই ছেলের মা। সে কত করে বললো বাবা উঠে পড়। তোর প্রিয় পিঠে করেছি, উঠ উঠ। কিছুতেই কিছু হলো না। একদিন বিরক্ত হলো, বললো উঠ বলছি দুষ্টু । নয়তো দেবো ঠান্ডা পানি ঢেলে। তাও হলো না। এভাবে কত দিন যেনো চলে গেলো। ডাক্তার বদ্যি কত কি দেখালো। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ডাক্তার হুম হুম করে ভারী কথাবার্তা বলে চলে গেলো। এক ছেলে ছাড়া কে আছে তার এই ভেবে মা দীর্ঘশ্বাস ফেললো বার বার। মাঝে মাঝে উনার বান্ধবীরা আসে, বিকেলের চা নাস্তা খেতে খেতে তারা দূঃখ করে। কি সুন্দর ছেলে তোমার এ কি হলো। এখন ঘুমোয় নাক ডেকে।
এভাবে চলে গেলো আরো কত দিন। এখন কেউ তার খবর নেয় না। সবাই ভুলে গেছে সব। তবে সেদিন আড়মোড়া ভেঙ্গে ছেলে ঘুম থেকে উঠলো। উঠে বলে উঠলো দাও দেখি তোমার পিঠে পুলি। বড্ড খিদে পেয়েছে। মা ছুটে গিয়ে সব নিয়ে আসে।
বলে বাবা ঘুমোলি কেনো? ছেলে মুখ ভর্তি পিঠে নিয়ে বলে, ভালো লাগছিলো না তখন। ভাবলাম সব ঘুম ঘুমিয়ে নেই। এখন শুধু জেগে থাকবো। মজা হবে বৈকি।
তখনই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। দরজা খুলে দেখা গেলো এলাহী কান্ড। ডাক্তার সাংবাদিকে দরজার ওপাশ ভর্তি। চারদিকে শুধু ক্যামেরার ঝলকানী। চারদিকে শুধু একটা বাক্য ভেসে বেড়াচ্ছে, এ যে অলৌলিক ছেলে। এমন কিছু আগে শুনিনি তো! কত তাজ্জব ব্যাপার। ওদের সাক্ষাতকার নেওয়া হলো। ছাপা হলো পত্রিকার প্রথম পাতায়। মা শুধু অবাক হয়, এ কি এরা এতদিন কোথায় ছিলো? সেই ডাক্তার আবার বড় চশমা নাকের ডগায় দিয়ে সাক্ষাতকার দিলো সর্বদা তত্ত্বাবধানে সে রেখেছিলো এই ছেলেকে। কোনো ক্ষতি হবার সম্ভাবনাই ছিলো না। কি এক খটমটে নাম ও দিয়ে দিলো সেটার। লেখে ফেললো আবার এক কঠিন প্রবন্ধ। সবাই মাথা আগে পিছনে নাড়িয়ে করলো সেটা মুখস্থ।
ছেলে হাসলো মুচকি করে, বললে “দেখলে ব্যাপারখানা। আমি তাজ্জব না ওরা তাজ্জব বলো দেখি মা?”
মা খুব বোকা। সে ছেলের পিঠে তৈরী করতে করতে বললো, “জানি না বাবা। তুই শুধু আর ঘুমোস নে এভাবে। এতেই আমার হবে।”
ছেলে বলে, “মা তুমি না কি বোকা!! এমনই থেকো।”
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:০৯