সদ্য বিকেলে নাকি দুপুরে, আ্মি শুয়ে আছি বিছানাতে, মাথার উপরে এক আটপেয়ে গুটিগুটি পায়ে দেয়াল বেয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আটপেয়ে কে দেখতে দেখতে আমি ভুলে গেলাম যে কতক্ষন,কতকাল,কতদিন বা কত বছর আমি এভাবেই পড়ে আছি। এখন কি দিন নাকি রাত তাও তো জানি নে। আটপেয়ে তার আটটি পা কিলবিল করেই চলেছে।
চারপাশ তাঁকিয়ে মনে হলো চারপাশে কিছুই নেই। কেমন জানি, কিন্তু এখন তো অন্ধকার ও নয়। আবার আলোকিত তাও তো বলা যাচ্ছে না। গুমোট পরিবেশ থেকে বাঁচতে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম। কি ব্যাপার তাও হচ্ছে না, আমি গড়িয়ে পড়ে গেলাম নীচে। কিন্তু নীচে সে তো আঁধার, রাতের চেয়েও আঁধার। রাত ও বুঝি লজ্জ্বা পাবে। সেই নীচের আঁধারে আমি পড়ে যেতে থাকলাম অনন্ত কাল। তবু ও মনে হতে লাগলো আটপেয়ে নীরবে কিলবিলিয়ে দেয়াল বেয়ে চলেছে।
অনন্তকাল পর হঠাত চোখ মেলে দেখলাম রাতের আঁধার শেষে এখন শুভ্র-সাদা পরিবেশ। আমি শুয়ে আছি অপারেশনের টেবিলে। খুব অসহায় লাগলো নিজেকে, একটু পর ই নিজেকে আবিষ্কার করলাম সাদা এপ্রোন পড়া ডাক্তার বেশে, ডাক্তার-রোগীর এই চক্র যেনো চলতেই লাগলো সাথে চলতে লাগলো আটপেয়ের দেয়াল বেয়ে কিলবিলিয়ে চলা।
আটপেয়ে কখন জানি জাল বুনতে শুরু করলো, আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম পার্কের বেঞ্ছেতে কখনো সমুদ্র তীরে। পার্কের বেঞ্চেতে বসে যেনো আমি ছড়িয়ে দিলেম নিজেকে পার্কের সবুজ ঘাসে। ছুটে আসলো অসংখ্য কবুতর। কাছে এসে দেখা গেলো এতো কবুতর নয়, আটপেয়ের ক্ষুদ্র সন্তানেরা। মনে পড়ে গেলো আটপেয়ের বুকে যে ডিম ছিলো। আমি ছুটতে ছুটতে নিজেকে আবিষ্কার করলাম সমুদ্র তীরে, বোকার মত ছুটতে লাগলাম সমুদ্রের দিকে, ভেসে গেলাম সে বহুদূর, ডুবে রইলাম সেই বহুকাল। নীরবে নিভৃতে আটপেয়ে তবু জাল বুনে যায়।
আটপেয়ের জালের সুতোয় সুতোয় আমি যেনো বদলে যাই। চলে যাই একবার রাতের অন্ধকারের গহবরে নয়তো অপারেশনের শুভ্র ঘরে বা পড়ে থাকি পার্কের ঘাসে। আটপেয়ে গুটিগুটি করে পায়ের ডগায় বহন করে নিয়ে যায় কত কাল, কত দিন। জালের সুতো বুনতে বুনতে সে আমাকেও বুনতে শুরু করে জানি কবে থেকে নাকি আমি জালে আঁটকা পড়ে যাই সে কে জানে!! আমার যে আর ভালো লাগে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:১৬