আমি একটি গল্প লেখবো বলে খুক খুক করে কাশে গল্পকার। উত্তরের হাওয়া বইছে, শীত বলছে আসি আসি। গল্পকার বলে, আমি একটি গল্প লেখবো দেখে নিও। সে গল্প নিজেই হাসবে, নিজেই কাঁদবে, নিজেই বিষন্ন হবে। আমি একটি গল্প লেখবো।
শীত এসে বসন্ত আসে। উত্তরের বাতাস থেকে তা হয়ে যায় দখিনা বাতাস। বড় বড় শ্বাস নিয়ে গল্পকার বলে আমি একটি গল্প লেখবো। সে গল্পে থাকবে বসন্ত, থাকবে আনন্দ, থাকবে বেদনা। উড়ে বেড়াবে বিস্তর প্রজাপতি। ফুলে ফুলে ভেসে যাবে শহরের কিছু প্রান্ত। তোমার আমার হাতে থাকবে ফুল।
বসন্ত ও চোখের পলকে হারিয়ে যায়। এসে পড়ে গ্রীষ্ম। গনগনে রোদে পাখার বাতাস খেতে খেতে গল্পকার বলে, গল্প আমি লেখবোই লেখবো। সে গল্প হবে সূর্যের মতই গরম আবার হবে চাঁদের মত শীতল। রাতের মত নীরব হবে সে আবার হবে নগরের টুং টাং শব্দে ভরপুর। আমি একটি গল্প লেখবোই লেখবো।
এসে পড়ে বর্ষা, শরত হেমন্ত। গল্পকার একই কথা যেনো বার বার বলে বেড়ায়। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে, কাশফুলের বনে। বড় উদগ্রীব হয়ে পড়ে তার পাঠকেরা। গল্প কোথায়? গল্প যে নেই। গল্পকার হাসতে হাসতে বলে গল্প আমি লেখবোই লেখবো। বলে কাশতে কাশতে লুটিয়ে পড়ে। গল্পকারের অসুখ। পাঠক রা বড় দুঃখ পায়। গল্প যে আর হবে না। গল্পকার বৃথাই হাস্যরসের খোরাক তৈরী করলো কারো মনে। যোচ্চোর ঠগবাজ বলে বেড়ালো কেউ। কেউ তাও আশাবাদী হয়। গল্পকার সেরে উঠবে হয়তো একদিন। তাদের গল্প আসবেই। কিন্তু গল্পকারের অবস্থা যেনো পানিতে ভেসে থাকা শুকনো পাতার মতোই টালমাটাল। কিন্তু সে এতদিন টলমল জলে শাপলা যেভাবে ভেসে থাকে সেভাবেই মাথা উঁচু করেই ভেসে ছিলো। কারণ তার শেকড় ছিলো মজবুত। কিন্তু কবে তা দূর্বল হয়ে পড়েছে কেউ তা বুঝেনি। গল্পকার তাও বলে বেড়ায়। গল্প আমি লেখবোই।
কিন্তু গল্প আর লেখা হলো না, বের হলো না বই। দুম করে গেলো মরে সে। একদল হেসে বেড়ালো, কেউ চোখের জল ফেললো। কিন্তু গল্পকার বলে গেলো, লেখতে চেয়েছি আমি সবার গল্প। এ গল্প তো বহু আগেই রচিত তোমাদের মনে মনে। কত গল্প কেউ জানবে না, মহাকালেই হারিয়ে যাবে। সেই গল্প তোমরা বহন করে বেড়াচ্ছো এখানে ওখানে, চোখের সামনে। তা আমি দেখতে পেয়েছি দৈনিক। এ কথা শুনে সবাই আয়নাতে তাঁকালো। দেখলো নিজের ভেতর গল্প লেখা হচ্ছে প্রতিদিন। কোনোদিন দুঃখের কোনোদিন আনন্দের। এ গল্প লেখা অবিরাম চলতেই থাকবে। সবাই বুঝে নিলো গল্পকার একটি নয় বহু বহু অবিরাম গল্প সবার মাঝে রচনা করে গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩