// ১ //
২০০০ সালের প্রথম দিক থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করতে থাকে। জ্বালানী তেলের দাম বাড়তে থাকে। সাথে সাথে বাড়তে থাকে জীবনযাত্রার ব্যয়। মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ করে কাজ করতে শেখে কিন্তু খুব কম মানুষই কৃষিকাজ করে শস্য উৎপাদনে উৎসাহী হয়। তাই ধীরে ধীরে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত শস্য কমতে থাকে এবং কৃত্তিম খাবার-দাবারের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকে মানবজাতি। আর এভাবেই মানুষের জীন-গত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এক শ্রেণীর মানুষ এ পরিবর্তনকে স্বাগত জানায় আর এক ক্ষুদ্র শ্রেণীর মানুষ এতে আতঙ্কিত হয়ে উঠতে থাকে। সেই ক্ষুদ্র শ্রেণীটি কিছুকাল সবাইকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ২৫৯৩ সালের দিকে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য জীবন-রক্ষাকারী ক্যাপ্সুলের হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায় আশ্রয় নেবার। যখন মূল-তথ্যকেন্দ্র মানবজাতির কোন বিপর্যয় দেখবে তখন কেবল তাদের জাগিয়ে তোলা হবে। আমাদের গল্পের নায়ক জয় সেই হীমঘরে তার প্রিয় ডায়েরী নিয়ে ঢুকে পড়েছে। অনেকে তাদের প্রিয় পোষা প্রাণী নিয়েও ঢুকতে চেয়েছিল, কিন্তু মানবজাতির বৃহত্তর নিরাপত্তার স্বার্থেই তা করতে দেওয়া হয় নি। এই ক্ষুদ্রে শ্রেণীটি নিজেদের ভবিষ্যৎ মোটামুটি নিশ্চিত করে নিল, অন্যদিকে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাইরে থাকল তারা দিনে দিনে আরো যুদ্ধবাজ, শঠ এবং পাশবিক হতে লাগল। বলা হয়ে থাকে অভাবে স্বভাব নষ্ট, কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা গেল অভাবে মানুষের জীনের পরিবর্তনও ত্বরাণ্বিত হল। এরপর বেশক’টি যুদ্ধে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয় এবং কয়েকটি জাতি পারমানবিক ও জীবানু অস্ত্র ব্যবহারে মাধ্যমে এ পৃথিবীতে মানুষের বসবাস দূরহ করে তোলে। ধীরে ধীরে মানুষ বিলুপ্ত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত হীমঘরে ঘুমন্ত মানুষগুলো ছাড়া আর কেউ থাকে না বাকি। মূল-তথ্যকেন্দ্র পৃথিবী জুড়ে দূষণের মাত্রা বিচার করে অপেক্ষা করতে থাকে সঠিক সময়ের। সাহায্যকারী রবোটগুলো তাদের অতি উন্নত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিষ্ঠার সাথে পৃথিবী সাজাতে থাকে অনাগত দিনের উদ্দেশ্যে।
// ২ //
৩০৭৮ সাল...
নুতন ভাবে গড়ে উঠছে পৃথিবী।
মূল-তথ্যকেন্দ্র আস্তে আস্তে মানুষদের জাগিয়ে তুলছে। প্রথমে জাগানো হল বিজ্ঞানী, গবেষক, চিকিৎসক এবং কিছু কর্মঠ যুবকদের। দ্বিতীয় ধাপে জাগানো হল সব নারীদের। তৃতীয় এবং শেষ ধাপে যারা জাগলো তারা হল মুলত “কনজিউমার জেনারেশন”। এরা সধারনত কারিগরী দক্ষতায় অপটু, কম ভাবতে ভালোবাসে এবং কোনভাবে খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারলেই খুশি। প্রথম দু’ধাপে জেগে ওঠা মানুষগুলো অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তুলতে লাগলেন পৃথিবীকে। আর তৃতীয়ধাপের মানুষগুলো ব্যস্ত হয়ে গেল আক্ষরিক ভাবে জীবন-যাপনে। তারা শুধুমাত্র খেয়ে-পড়ে-ঘুমিয়ে দিন কাটাতে লাগল। আর মাঝে মাঝে অসহিষ্ণু আচরণ করে পুরো পৃথিবীকে নাড়া দিতে লাগল।
// ৩ //
জয় জেগেছে তৃতীয় ধাপে।
জেগে সে বিশেষ কিছু করার মত পাচ্ছে না। আগের পৃথিবীতে মানুষ জন্ম থেকে পড়তে থাকত, সে পড়ার শেষ কখন তা কেউ জানত না। জন্ম থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে শুধু পড়তে পড়তেই জীবন শেষ হয়ে যেত। কিন্তু কতটুকু জ্ঞানার্জন হয়েছে তা নিয়ে সবাই সন্দিহান থাকত। কর্মক্ষেত্রে গিয়ে দেখত অদৃশ্য কোন সুতোর টানে অযোগ্যতর ব্যক্তিগুলো ধাপে ধাপে ওপরে উঠে যায় আর যোগ্যতর ব্যক্তিরা তলানী হয়ে থাকে। বেশী ন্যায়বান ব্যক্তিদের মাঝে মাঝে দূর্নীতি মামলায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যেত। ন্তুন পৃথিবী সে রকম নয়। এখানে জ্ঞানের মুক্ত ভান্ডার রয়েছে মূল-তথ্যকেন্দ্রে। যে যখন খুশি তখন যে কোন বিষয় নিয়ে জানতে পারবে। আর কাজের সুযোগ আছে সবখানেই। কেউ ইচ্ছে করলে মাঠে কাজ করে শস্য উৎপাদনে যোগ দিতে পারে, কেউ কারখানায় কাজ করতে পারে আবার কেউ রক্ষীবাহিনীতে যোগ দিতে পারে। রক্ষীবাহিনী নিয়ে পূর্বের পৃথিবীতে তিক্ত ধারনা থাকলেও এখানকার রক্ষীবাহিনীর সবার স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রতি একনিষ্ঠতা তাদের জন্য বাড়তি সম্মান এনে দিয়েছে।
// ৪ //
বেশ কিছুদিন বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াল জয়। কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। বেশী চিন্তা করার অভ্যাস ছিল না তার কখনই। একমাত্র সম্বল তার ব্যক্তিগত ডায়েরী। তার অতীত নিয়ে ভাবলো। তারা বাসা, বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব...সবার কথা হাল্কা মনে আছে কিন্তু কারো চেহারা মনে নেই। অনেক চেষ্টা করেও কারো চেহারা মনে করতে পারে না।
ডায়েরীর পাতা উল্টিয়ে যেতে যেতে এক সময় তানিতার কথা মনে পড়ে। তানিতার প্রতি তার আবেগের স্রোত হঠাৎ তাকে নিয়ে যায় সেই দিনগুলিতে। তানিতাকে নিয়ে সে ডায়েরীতে লিখত শুধুমাত্র রাতে ঘুমোতে যাবার আগে। প্রতি রাতে মা তার রুমে কাজের মেয়েকে দিয়ে এক গ্লাস দুধ পাঠিয়ে দিতেন। সেটা তাড়াহুড়ো করে খেয়েই দরজা আটকে তানিতাকে নিয়ে ডায়েরী লিখতে বসত। অনেক সময় ডায়েরী লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়ত। তানিতা এই ডায়েরী মাঝে মাঝে পড়তে নিত। তানিতাকে অনেক জোর করেও হীমঘরে ঢুকতে রাজি করাতে পারে নি জয়। তাকে সেই দুঃখবোধ কমাতে অনেক কষ্ট হয়েছিল হীমঘরের নিয়ন্ত্রণকারী রোবট চিকিৎসকদের। জয়ের মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে বায়োলজিকাল ক্লকের গতি বৃদ্ধি করে সময়কে আপেক্ষিকভাবে এগিয়ে নিয়ে তানিতার কথা ভোলানো হয়। তারপর তাকে হীমঘরে পাঠানো হয়।
ডায়েরীর পাতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বুকে ধ্বক করে একটা ধাক্কা লাগে জয়ের। কারণ তানিতাকে নিয়ে লেখা পৃষ্ঠাগুলোর ফাঁকে হঠাৎ করে সে আবিষ্কার করে একটি লম্বা চুল। মাথায় চিন্তা খেলে যায়, এই চুল নিশ্চয়ই তানিতার। পরদিনই সে গবেষক রিষাণের সাথে দেখা করে। অনেক অনুনয় বিনয়, বেশ কিছু ইউনিট আর কর্মঘন্টার বিনিময়ে রিষাণকে রাজি করাতে পারে। রিষাণ জয়ের ডায়েরীর পাতার মাঝে খুঁজে পাওয়া চুল থেকে মানুষটির ক্লোন করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।
// ৬ //
পরবর্তী ক’টি দিন জয়ের কাটে হাল্কা উত্তেজনায়। হয়ত তানিতাকে ফিরে পাবে। হোক না ক্লোন। তানিতার ক্লোনই তো। হয়ত নুতন করে ভালোবাসা জন্মাতে হবে তার বুকে।
প্রতিক্ষার প্রহর শেষ হয়। ডেলিভারী রোবটগুলো বাসায় নিয়ে আসে একটা মেয়েকে। আবছা স্মৃতি হাতড়ে জয় মেলাতে থাকে চেহারাটা। মেলে না। ডেলীভারী রোবটগুলো তার হাতে একটা অডিও ফাইল দিয়ে মূল-তথ্য কেন্দ্রের সাথে এই ফাইল আর মেয়েটাকে সংযুক্ত করলেই মেয়েটা সেই চুল পড়ার সময় কি কথা বলছিল তা বলে জেগে উঠবে। জয় কোনভাবে রোবটগুলোকে বিদেয় দিয়েই সংযোগ শুরু করে। সংযোগ স্থাপিত হয় রাত এগারোটায়। মেয়েটি উঠে বসে জয়ের সামনে। প্রশস্ত দৃষ্টি মেলে মুখে ঈষৎ হাসি টেনে জয়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, “ভাইজান, খালাম্মা দুধ পাঠাইসে, ঠান্ডা হওনের আগেই খাইয়া নেন...”
© Mukit Osman Chawdhury.
gotokal dupure khichuri ranna korsilo amader kajer meye..ami sadharonoto boi pore pore bhaat khai..kal porchhilam Zafar Iqbal sir er "Shopner Desh" boi ta..to bhaat khete khete ek somoy bhaat a ekta chul pai..tokhon vabi lekha ta likhbo..ei r ki..
আলোচিত ব্লগ
আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'
আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আকুতি
দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ক- এর নুডুলস
অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???
কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???
আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু
২-১ : আলিফ-লাম-মীম
আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন