মো. তৌহিদুল ইসলাম সূচী
আমাদের অনেকের ধারনা, ঢাকার হাইকোর্ট সংলগ্ন ঈদগাহ্টি আমাদের জাতীয় ঈদগাহ্, কাজেই এটিই হয়তো দেশের সবচে' বড় ঈদগাহ্। তবে তা নয়। দেশের সবচে' বড় ঈদগাহ্টি ঢাকা বিভাগের আওতাধীন কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত। দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত এখানে অনুষ্ঠিত হয় এবং এর আয়তনও বিশাল। কিশোরগঞ্জে অবস্থিত দেশের এ বৃহত্তম ঈদগাহ্টির নাম সোয়ালাখিয়া ঈদগাহ্ ময়দান। ঈদগাহের নামটি শুনেই অনেকে হয়তো আন্দাজ করবেন সোয়ালাখিয়া মানে 1,25,000-এর হিসাব। কাজেই বড় ঈদগাহ্ তো হবেই।স্বাধীনতার 35 বছর পরও দেশের সবের্াবৃহৎ ঈদগাহ্ ময়দান শোলাকিয়া নতুন রুপ ধারন করতে পারে নি। বার বার সরকার আদল বদলের পরেও শোলাকিয়ার অবস্থা হযবরল। কেমন আছে শোলাকিয়া ঈদগাহ্ ময়দান? শত বছরের পুরাতন ঈদগাহ্ মাঠকে ঘিরে কখনো কি উদ্যোগ নিতে দেখা যায় নি কোন সরকারকে। কিছুটা সংস্করন ও প্রচারনায় এটি ফেরে পেতে পারে তার হারানো রুপ। এসব নিয়ে দেখুন কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা মো. তৌহিদুল ইসলাম সূচীর প্রতিবেদন -
ঈদগাহের নামকরণ :
শুধু ঈদগাহ্ই নয়, কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বপ্রান্তের প্রায় অর্ধেক অংশের নাম শোয়ালাকিয়া। শহরের বাইরেও রয়েছে এর বিরাট এলাকা। স্থ্থাননামের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যাদিতে দেখা যায়, ঈদগাহ্কে কেন্দ্র করেই এলাকার নাম হয়েছে সোয়ালাখিয়া বা শোলাকিয়া। বহুদিন পূর্বে এ ঈদগাহের মাঠে মুসুলি্ল্নদের উপস্থি্থতি নিরুপণের জন্য এক সরলপ্রন্থা অবলম্ব্বন করা হয়। মাঠের নামাজের কাতারে কত লোক দাঁড়ায় এবং মোট কাতারসংখ্যা কত, এভাবে গণনা করে নিরুপণ করা হয় মুসুলি্ল র উপস্টি্থতি 1,25,000 বা সোয়া লাখ। এ সোয়া লাখ লোকের উপস্থিতি থেকেই নাকি মাঠটির নাম হয় সোয়ালাখিয়া, যা কালের বিবর্তনে শোলাকিয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে মাঠটির নাম থেকে গোটা এলাকাটিরই নামকরণ হয়ে যায় শোলাকিয়া। অবশ্য গবেষণায় নামটির ভিন্নরুপ উচ্চারণ এবং বানানও ল্য করা যায়। 1828 সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ষ্ট্যাম্পে হাতে লেখা একটি দলিলে এলাকার নামটি 'সুলক্যা' পাওয়া গেছে।
প্রাচীন ইতিহাস :
সোয়ালাখিয়া মাঠ সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে লেখা কোনো ইতিহাস না পাওয়া গেলেও কিশোরগঞ্জের ভূমি ব্যবস্থাপনার রেকর্ড পর্যালচনায় মোগল আমলেই এখানে ঈদগাহ্ মাঠটি ল্য করা যায়। দেখা যায়, বর্তমান সদর থানা এলাকায় মোগল আমলের শেষ দিকে ঈদগাহ্ পরগনাহ নামে একটি পরগনা রয়েছে। সদর থানার মোট 107টি মৌজার মধ্যে ঈদগাহ্ পরগনার মৌজার সংখ্যা দুটি। এ কথা সা্য দেয় যে, এ মাঠটি মোগল আমলেই স্থাপিত হয়েছে। মুর্শিদ কুলী খাঁর সময় (1700-1727) খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে সারা বাংলাকে 13টি চাকলায় বিভক্ত করা হয়। এ সময় ঈদগাহ্ পরগনাটি জাহাঙ্গীরনগরের অধীন ছিল। বর্তমান গোটা শোলাকিয়া এলাকাটি এ ঈদগাহ্ পরগনার দুটি মৌজাভুক্ত অঞ্চল।
খাজা উসমানকে এগারসিন্দুর থেকে বিতাড়নের পর মোগল বাহিনী এগারসিন্দুর থেকে রওয়ানা হয়ে প্রথমে হোসেনপুরে অবস্থান নেয়। এরপর এখান থেকে স্থ্থলপথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ না থাকায় ব্রহ্মপুত্রের তীর কেটে পানি প্ল্নাবিত নদীপথে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। এ সময় ঢাকা থেকে এবং জাহাঙ্গীরনগর থেকে অন্য বাহিনীও এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ইতোমধ্যেই খাজা উসমান বোকাইনগর দুর্গে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তাকে ল্য করেই মোগল বাহিনীর এ অগ্রাভিযান। গিয়াস খাঁ নামক একজন সেনাপতি ব্রহ্মপুত্র তীরের হোসেনপুরে শিবির স্থাপন করেন। অন্যদিকে শেখ কামাল এবং আবদুল ওয়াহিদ দুর্গের পর দুর্গ তৈরি করে এগিয়ে চলেন। ইসলাম খান চিশতি এ সময় ঢাকা অবস্থান করছিলেন। শাহী বাহিনী দুর্গের পর দুর্গ তৈরি করে অগ্রসর হওয়ার সময় উসমান খানের বাহিনী মাঝে-মধ্যেই প্রতিরোধ সৃদ্বি করে। অদ্বাদশ দুর্গ অতিকদ্ধমের পর শাহী ফৌজ উসমানের সরাসরি আক্রমণের সম্মুখীন হন। ঊনবিংশতিতম দুর্গ তৈরির পর রমজান মাস আগত হওয়ায় শাহী ফৌজ সেখানে অবস্থান নেয়। খাজা উসমান এগারসিন্দুুরের পর ঈসা খানের অন্য রাজধানী জঙ্গলবাড়িতেই হয়তো এ সময় অবস্থান করে থাকবেন। আর শাহী ফৌজ তৎকালীন কাওনা নদীর (বর্তমান নরসুন্দা) তীরবর্তী কোনো স্থ্থানেই হয়তো শিবির স্থাপন করে। কিশোরগঞ্জ শহরের বর্তমান পুরনো থানা এলাকাতেই এ শিবির স্থাপনের স্থান হিসেবে চিনহিত করা যায়। কেননা পরবর্তী সময়ে মোগল থানাদারের অবস্থ্থান হিসেবে স্থ্থানটিই ব্যবহূত হয়। ইংরেজ আমলে কিশোরগঞ্জে যখন থানা স্থাপন করা হয়, তখনো থানা হেডকোয়ার্টার হিসেবে এ স্থানটিকেই বেছে নেয়া হয়। 1906 সালে এখান থেকে থানা সরিয়ে বর্তমান থানার স্থানে নিলেও স্থ্থানটি এখনো পুরান থানা নামে পরিচিত। সম্ভবত মোগলরা এ স্থ্থানে রোজার মাস কাটায়। 'রমজান শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ছোট-বড় প্রত্যেকেই বন্ধুু-বান্ধবদের তাঁবুতে তাদের সঙ্গে মিলিত হতে থাকে। প্রতিদিন পালা করে বন্ধুু-বান্ধবরা শিবিরে সময় কাটানো তাদের মধ্যে একটি নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়। তদানুযায়ী শেষ দিন রাতে উৎসবের পালা ছিল মোবারিজ খাঁর। সবাই তার শিবিরে সময় কাটায়। সেদিন দিনের শেষে সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ (ঈদের চাঁদ) দেখা যায়। শাহী তুর্জ বেজে ওঠে এবং একের পর এক গোলন্দাজ বাহিনী একটানা বন্দুকের গোলাগুলি ছুড়তে থাকে। রাত শেষের দিকে বন্দুক ছোঁড়া বন্ধ হয় এবং বড় কামান থেকে গোলা নিপ্তি হতে থাকে। তাতে ভূমিকমঙ্
অবস্থ্থার সৃষ্টি হয়। শাহী ফৌজ দু'জামাতে ঈদের নামাজ শেষ করে এগিয়ে চলে।' তারা সম্ভবত তাদের ছাউনি অর্থাৎ পুরনো থানা সংলগ্ন নরসুন্দা নদীর তীরসংলগ্ন মাঠে ঈদের জামাত আদায় করেছিলেন। এ কারণেই পরবর্তী সময়ে এটি ঈদগাহ্ পরগনা নামে পরিচিত হয়। বলে রাখা ভালো, অঞ্চলটি তখনো ফতেহপুর থানার অধীন ছিল। কিশোরগঞ্জের পাশর্্ববর্তী কেন্দুয়া থানারই প্রাচীন নাম ফতেপুর। সোয়ালাখিয়া সাহেব বাড়িতে প্রাপ্ত প্রাচীন একটি দলিলে (1828 সালের) 'গ্রাম সুলক্যা' থানা ফতেপুর উল্লেখ রয়েছে। ইসলাম খাঁ চিশতির 1608 সালের 7 ডিসেম্ব্বর থেকে 1609 সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের ডায়েরি লেখক বিখ্যাত পর্যটক আবদুল লতিফ আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। তিনি 1609 সালের মার্চ মাসে ইসলাম খাঁ ফতেপুরে বকরা ঈদ ও নওরোজ উৎসব উদ্যাপনের বর্ণনা দেন। এতে বোঝা যায়, মোগল বাহিনী এক এক সেনাক্যাম্পে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে নিজেদের সংহত করে পরবর্তী স্ম্ভাব্য ক্যাম্পে উদ্দেশ্যে তাঁর বাহিনীকে অগ্রসর করতেন। ঈদুল ফিতর এ স্থানে পালনের পর পরবর্তী দু'মাসে তারা হয়তো ফতেপুর গিয়ে আরেকটি সেনা ছাউনি স্থ্থাপন করে। ফলে সেখানে তারা ঈদুল আজহা উদযাপন করে।
ইসলামের দাওয়াত দিতে এসে এ এলাকাতেই শহীদ হন শাহ্ মুন্নুর। সুলতানী আমলেরও আগে অথবা সুলতানী আমলের পতন যুগে শহীদ হওয়া এ বুজুর্গের মাজার সোয়ালাখিয়া মাঠসংলগ্ন সাহেব বাড়িতে বিদ্যমান। মোগল আমলেই সে মাজার রণাবেণের জন্য লাখেরাজ জমিদানের তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে অঞ্চলটি যে যুদ্ধ করে জয় করা হয়, তার প্রমাণ হলো ফতেপুর নাম। কিশোরগঞ্জ এলাকায় তার স্মৃতিতে হোসেন শাহী, জোয়ার হোসেনপুর ইত্যাদি পরগনা সৃষ্টি, অন্যদিকে তার ছেলে নাসিরউদ্দিন নসরত শাহের নামে নাসিরুজিয়াল পরগনা, আলাউদ্দিন হোসেন শাহের ভাই জৈনুদ্দিন শাহের নামে জৈনশাহী বা জোয়ানশাহী পরগনার নামকরণ সে ইতিহাসেরই সাী দেয়। ফলে এখানে সুলতানী আমল থেকেই ঈদ উদ্যাপনের মাধ্যমে শাহ মুন্নুর শহীদ হওয়ার জায়গাটি মুসলমান বিজেতাদের বিজয় নিশান বহনকারী ঈদ উৎসবের স্থানে রুপ নেয়। সমকালে দেশে খুব বেশি ঈদগাহ্ না থাকায় বর্তমান বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ঈদ এ স্থানেই পালনের রেওয়াজ হয়ে যায়। শাহ মুন্নুরের দরগাহ্কে কেন্দ্র করেই এ এলাকার মানুষ গড়ে উঠেছে। বর্তমান সোয়ালাখিয়া সাহেব বাড়িও এ মাজারকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। ঈসা খানের সময় এবং পরবর্তী সময় তার বংশধরদের সময়ও এ মাঠে তারা নামাজ আদায় করেছেন এবং মাঠের জন্য জমি দান করেছেন। মাঠ প্রতিষ্ঠায় তাই শোলাকিয়া সাহেব বাড়ি এবং ঈসা খানের পরিবার_এ দুটি পরিবারের অবদানই ল্য করা যায়। ঐতিহ্যমন্ডিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শোলাকিয়া ঈদগাহে খ্যাতিসম্পন্ন আলেমগন সবসময় ইমামতি করেছেন।হয়বত নগর সাহেব বাড়ীর বংশধর মরহুম সৈয়দ রফিকুল্লাহর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ মাঠে 1928 সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বড় জামাতের ইমাম ছিলেন আলহাজ হযরত মাওলানা সৈয়দ আহাম্মদ।পরবর্তি সময় পর্যন্ত ইমামগন হচ্ছেন হযরত মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ আব্দুরত্দাহ , হযরত মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ হযরতুল্লাহ , হযরত মাওলানা পেশওয়ারী , আলহাজ হযরত মাওলানা মুছলেহ উদ্দীন , আলহাজ হযরত মাওলানা হামিদুল হক , হযরত মাওলানা মাজহারুল হক , হযরত মাওলানা আব্দুল গণি , আলহাজ হযরত মাওলানা আতাহার আলী , হযরত মাওলানা আব্দুল মান্নান , আলহাজ মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ নুরুল্লাহ। 2003 সাল থেকে শোলাকিয়া মাঠের ইমামতির দায়িত্ব পালন করেছেন আলহাজ মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ নুরুল্লাহর সুযোগ্য পুত্র কিশোরগঞ্জ বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
মাঠের বর্তমান অবসা্থ :
বর্তমানে এটি প্রাচীরঘেরা একটি মাঠ, যার মূল আয়তন পশ্চিমপ্রান্তে উত্তর-দেিণর 335 ফুট, পূর্বপ্রাল্পেস্ন 341 ফুট এবং উত্তর সীমারেখায় পূর্ব-পশ্চিমে 788 ফুট এবং দণি সীমারেখায় 914 ফুট দৈর্ঘ্য। মাঠের ভিতরে মূল জমির পরিমাণ 6.61 একর। সম্ভবত সোয়ালাখিয়া সাহেব বাড়ির সৈয়দ আহমদ সাহেবের ইমামতির সময় থেকেই এ জামাত গণনা শুরু করা হয়ে থাকবে। তবে ওই সময় থেকেও কে, কোনো সময় ইমামতি করেছেন এর সঠিক কোনো রেকর্ড সংরণ করা হয়নি। মাঠটিতে সামপ্রতিক বছরগুলোতে উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। অজুখানা ও মিম্বার নির্মাণ, মাঠে মাটি কাটা ইত্যাদি কাজ করা হয়েছে। মাঠ এবং মাঠের বাইরের রাস্তা, নদীরপাড়, পাশর্্ববর্তী ইছাগঞ্জ বাজার, পুকুরপাড় ইত্যাদি মিলিয়ে বর্তমানে কম করে হলেও 3 লাখ লোক এ মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নিয়ে থাকে। ঈসা খানের বংশধর হয়বতনগর বাড়ির লোকজন গত শতাব্দীতে ওয়াক্ফ করে জমিদানের মাধ্যমে এর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছেন। তারাই বংশানুক্রমে এ মাঠের মুতাওয়ালি্ল ্নর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী জানা যায় , পাকিস্তান আমলে এ মাঠের চারদিকে নিচু দেওয়াল ও দোতলা মিম্বার নির্মান করেছিল তৎকালিন মাঠ পরিচালনা কমিঠির সাধারন সম্পাদক ও মুসলিম লীগ নেতা ডঃ মোঃ শরফ উদ্দীন (বাদশা মিয়া)।স্বাধীনতার পর ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার খানে আলম খান সীমানা প্রাচীর ও গেট নির্মান করেছিল। গত আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্থ্রী জিল্লুর রহমানের প্রায় 50 লাখ টাকা আর্থিক অনুদানে মাঠের মাইকিং সিস্টেমের উন্নয়ন , মিনার সংস্কার , মাঠের প্রবেশের প্রধান তোরান নির্মাণ, 45টি ওজু খানা , 15টি প্রস্রাব খানা ও5টি টয়লেট নির্মাণ করেছিল যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। বর্তমান জোট সরকার মতায় আসার পর কিশোরগঞ্জ বাসী আশা করেছিল এ সরকার শোলাকিয়া ঈদগাহের উন্নয়ন ও সংস্কারের উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। কিশোরগঞ্জের কৃতি সন্ত ান শিা মন্ত্রী ডঃ এম ওসমান ফারুক এম পি গত চা র বছর যাবৎ শোলাকিয়া মাঠে প্রতিঠি ঈদুল ফিতরের জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। তারকাছে এলাকাবাসীর অনেক প্রত্যাশা থাকলেও মাঠের উন্নয়নে তিনি এখনো কোন পদপে গ্রহন করেননি। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত শোলাকিয়া মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার ফলে আজ এটি ঐতিহাসিক স্থানে পরিনত হয়েছে।
এর গুরুত্ত ও বেড়ে গেছে বহুগুণে। তাই প্রত্যেকের দৃষ্ঠি এখন এ মাঠের দিকে। অতএব সময়ের দাবী অনুসারে একে আরো আকর্ষনীয় ও উপযোগী করে গড়ে তোলা অপরিহার্য। বর্তমানে এ মাঠের নাম ডাক অনুসারে এ মিম্বারটি বেমানান। এর আধুনিকায়ন হওয়া জরুরী। এ মিম্বারের দুই পাশের প্রাচীরকেও আকর্ষনীয় ও সৌন্দয্যমন্ডিত করে তোলা জরুরী। এ ছাড়া কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
ঈদগাহের পাশেই রয়েছে গরুর হাট। এটিও কোরবানির সময় গরু বেচাকেনার মাধ্যমে প্রথম শুরু হয়। এটি জেলার সবচে' বড় গরুর হাট। ঈদের সময় কিশোরগঞ্জ শহর থেকে মাঠ পর্যন্ত দু'ধারে ভিুকের এবং মসজিদ-মাদ্রাসার অর্থ সংগ্রহের যে সারি বসে এরও সংখ্যা হবে কয়েক হাজার। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ভারত, পাকিস্তানের লোকজনও এ মাঠে নামাজ পড়ার জন্য এসে থাকে। ফলে কিশোরগঞ্জ শহরের হোটেলগুলো ছাড়াও মসজিদগুলোতে ঈদের দু'তিনদিন পূর্ব থেকেই অতিরিক্ত লোকের চাপ পড়ে।
ঈদ উপল েলাঠি, টুপি, তসবিহ্, সুরমা, রেহেল, পিঁড়ি, জলচৌকিসহ নানা কাঠের জিনিস, খেলনা ইত্যাদির সমারোহে বসে ঈদমেলা। নামাজ শেষে দিনের শেষ ভাগ পর্যন্ত স্থ্থায়ী এ ঈদমেলা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে মুসুলি্ল্নরা ঘরে ফিরেন। বিগত ক'বছর যাবত চলে আসা এ ঈদমেলা দিন দিন জমেই উঠছে।
প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার জন্য আগের দিন থেকে অনেক মুসুলি্লরা মাঠে অবস্থান নেন। ঈদের দিন ভোর থেকে লোকজনের ব্যাপক আগমন ঘটতে থাকে। নামাজের জামাত শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্ত লাকজনকে আস্তে আস্তে মাঠ ত্যাগ করতে হয়। দেশের বৃহত্তম এ ঈদ জামাত নিজের চোখে না দেখলে এর বিশালতা অনুমান করা সম্ভব নয়। ইমাম সাহেবের নামাজের একেকটি আরকান পালনকালে লাখ লাখ মুসুলি্ল্নর একই পদ্ধতিতে নির্দেশ প্রতিপালনের শৃখলা এক অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা করে। রুকুতে যাওয়া এবং সেজদায় যাওয়ার সময় সারামাঠে যেন ঢেউ খেলে যায়। বিশেষ করে, লাখ লাখ লোকের এক সঙ্গে সেজদায় যাওয়ার দৃশ্য দর্শকমনে এক অপূর্ব আবেগ জাগায়। গত বেশ কয়েক বছর যাবত কিশোরগঞ্জের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম স্থ্থানীয় হয়বতনগর আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আলহাজ হজরত মাওলানা আবুল খায়ের মোহাম্মদ নুরূল্ল্নাহ এ মাঠের ঈদ জামাতের ইমামতি করে আসছিলেন। বর্তমানে গত ঈদ থেকে তার সুযোগ্য সন্তান মুফতি মাওলানা আবুল খায়ের মোঃ সাইফুল্ক্নাহ ইমামতির দায়িত্দ্ব পালন করছেন। হয়বতনগর বাড়ির ঈসা খানের বংশধর মাঠের মুতাওয়ালি্ল ইমাম নিয়োগ করে থাকেন। অবশ্য সরকার পরিবর্তনের রাজনৈতিক ধারায় মাঝে-মধ্যে ইমাম নিয়োগে স্থানীয় জেলা প্রশাসক সাহেবও হস্তপে করে থাকেন। মাঠটির তদারকির দায়িত্ব মুতাওয়ালি্লসহ একটি কমিটির ওপর ন্যস্ত থাকলেও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত হওয়ার কারণে স্থ্থানীয় জেলা প্রশাসন বরাবরই এর দেখাশোনা করে থাকে। কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মাঠে যাতায়াতের রাস্তার ওপর নানা স্থানে তোরণ নির্মাণ করে দেশ-বিদেশের মুসলি্ল্নদের স্বাগত জানিয়ে থাকে। সাময়িকভাবে শুধু ঈদের জন্য নদী পারাপারে অস্থায়ী সাঁকোও নির্মাণ করা হয়ে থাকে।
দেশের প্রধান ঈদ জামাত হওয়ার কারণে স্থ্থানীয় পত্রপত্রিকাসহ জাতীয় পত্রপত্রিকা এ মাঠের ঈদের জামাত নিয়ে নানা খবরাখবর ও ফিচার প্রচার-প্রকাশ করে থাকে। সরকারের উচ্চপদস্থ্থ আমলাসহ স্থানীয় মন্ত্রী এবং এমপিরা এ মাঠেই ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং নানা প্রিন্ট মিডিয়ার লোকজন দেশের বৃহত্তম এ ঈদ জামাতের দৃশ্য ধারণের জন্য এসে থাকেন এবং তা যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারও করা হয়ে থাকে। বিশেষত ঈদুল ফিতরের সময় এ মাঠে জামাতের আকৃতি বেশ বড় হয়। ঈদুল আজহায় এ জামাতের আয়তন অপোকৃত ছোট হয়ে থাকে। তোপধ্বনির মাধ্যমে নামাজ শুরুর সংকেতের মধ্য দিয়ে জামাতের শুরু হয় এবং দেশ-বিদেশের মুসলমানদের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ঈদ জামাতের পরিসমাপ্তি ঘটে। নামাজের দিন ভিড়ের ভিতর দিয়ে চলাচলে অসুবিধার কারণে এ মাঠে খুব কম লোকই গাড়ি নিয়ে আসেন। বাইরের জেলা থেকে রিজার্ভেশনে আনা গাড়ি এবং বাসগুলোও মাঠ থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দহৃরে শহরের বিভিন্ন স্থ্থানে অবস্থান করে থাকে। কিশোরগঞ্জের হোটেলগুলোর ভাড়া খুব বেশি নয়। তাছাড়া এখানকার লোকদের আতিথিপরায়নতাও সর্বজনবিদিত।
একটা সময় ছিল যখন সোয়া লাখ লোক এখানে নামাজ আদায় করতো। তখন এত বড় শোলাকিয়া মাঠকে বিস্তৃতি করাটা ছিল বিলাসিতার মতই। এখন যেখানে সাড়ে তিন লাখ মানুষ শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করতে আসেন, তখন এ মাঠকে বিস্তৃতি করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। প্রশাসন, পৌর প্রধান, সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের কোন প্রকার সহযোগীতা যে, শোলাকিয়া ঈদগাহে উন্নয়নের আসে নি তা এ মাঠকে দেখলে নিঃসন্দেহে বলা যায়। প্রতিশূ্রতিশীল সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের প্রতিশ্রূতির দিকে না তাকিয়ে প্রশাসন ও পরিচালনা কমিটির যৌথ উদ্যোগে যেন এ মাঠের উন্নয়ন তরান্বিত হয়, সেই আশাই ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের মুসুলি্লদের। #
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






