somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেডিকেলে জিপিএ এর ভিত্তিতে ভর্তি : কেন আমি এর বিপক্ষে!

১২ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি সরকার মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, কোনরূপ ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া, শুধুমাত্র SSC এবং HSC পরীক্ষার GPA এর ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে! প্রশ্ন ফাঁস এবং কোচিং সেন্টারগুলোর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রন করাই নাকি এ সিদ্ধান্তের মূল কারন! অথচ এ সিদ্ধান্ত শোনামাত্র দেশের আপামর সচেতন জনগন এবং সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে! ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগসহ সমগ্র সামাজিক যোগাযোগ সাইটে এ নিয়ে রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে! আর হবেই না বা কেন, এটা তো কোন ছেলেখেলা নয়, রীতিমত হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের জীবন মরণের ব্যাপার!
এতদিন ধরে SSC, HSC তে ভাল GPA এর পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার মাধ্যমেই কেবল মিলত এই মহান শিক্ষায় আসার সুযোগ! GPA এর ভিত্তিতে ছিল ১০০ নাম্বার, আর ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নাম্বার, মোট ২০০ নাম্বারের ভিত্তিতে হতো ফাইনাল সিলেকশন। সুন্দর এই পদ্ধতি ছিল সর্বজনগৃহীত। তাই দেশ সেরা মেধাবীরাই এযাবতকাল চিকিৎসা শিক্ষায় এসেছে, তাই চিরকাল এই পেশার প্রতি মানুষের সম্মানের জায়গাটুকুও ছিল অক্ষুন্ন!
নানান কারনে যারা বোর্ড পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত খারাপ ফলাফল করতো, তাদেরও সুযোগ থাকতো অনেক বেশি পরিশ্রমের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় নিজের যোগ্যতা প্রমান করার! বর্তমান পদ্ধতিতে তার সুযোগ কোথায়? কেন বোর্ড পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা একজন শিক্ষার্থী তার জীবন গড়ার, তার স্বপ্নপুরনের, অন্তত চেষ্টা করার একটা সুযোগও পাবে না?
যারা গতবছর কোথাও ভর্তি না হয়ে শুধুমাত্র মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য সারা বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে তৈরি করেছে, তারা এখন কি করবে?
এত হাজার হাজার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভিড়ে, কিসের ভিত্তিতে ভর্তির যোগ্যতা মূল্যায়ন করা হবে? যদি একই গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগ্যতা বিচারের জন্য তাদের পাওয়া নাম্বার এর হিসেব করা হয়, তাহলে কি দরকার ছিল এই গ্রেডিং সিস্টেম নামক প্রহসনের? তাহলে ফিরিয়ে নেয়া হোক পুরনো ডিভিশন সিস্টেমে, যেখানে অন্তত সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়েও কোন জায়গায় ভর্তি হতে না পারার যে কষ্ট, তা থেকে মুক্তি পাবে শিক্ষার্থীরা!
প্রশ্ন ফাঁস, এটা তো শিক্ষার্থীদের দোষ নয়! আজকের বাংলাদেশে সব পরীক্ষার প্রশ্নই ফাঁস হয়, তাহলে সরকারের নজরদারির দুর্বলতার জন্য কেন শিক্ষার্থীরা বলির পাঠা হবে?
আর কোচিং সেন্টার কি শুধু মেডিকেল ভর্তির জন্যই আছে নাকি? যেখানেই পরীক্ষা, সেখানেই কোচিং সেন্টার। ভার্সিটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, জাতীয় ভার্সিটি, বিসিএস, পুলিশ নিয়োগ, প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ, সেকেন্ডারি শিক্ষক নিয়োগ, IELTS, IBA, সেনাবাহিনী নিয়োগ......... মোটকথা সবকিছুর কোচিং আছে আমাদের দেশে! এজন্য কি সব নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হবে?
GPA এর ভিত্তিতে এসবকিছুর নিয়োগ দেয়া সম্ভব?
যদি তা না ই হয়, দয়া করে মেডিকেলের উপর এমন বোঝা চাপিয়ে দেয়া কোনভাবেই ঠিক হবে না! প্রশ্ন ফাঁস এবং কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে, সরকারি নজরদারি জোরদার করা হোক। যেন ভর্তি পরীক্ষা হয় আরও কলুষ মুক্ত এবং আরও স্বচ্ছ। কেননা ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া কেবলমাত্র জিপিএ এর ভিত্তিতে কখনোই প্রকৃত যোগ্যদের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়! তাই আমরা আশা করি, সরকার তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে এবং উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে সম্মানিত জায়গাটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না! সেই সাথে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ডাক্তার হবার জন্য, অন্তত চেষ্টা করার সুযোগ দেবে! জিপিএ এবং পরীক্ষার সম্মিলিত ফলাফলের মাধ্যমেই সবাই জেনে নেবে কে এই শিক্ষার যোগ্য এবং কে নয়!

৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×