somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“কথা”

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“কথা”
--তৌফির হাসান উর রাকিব



রমিজ মিয়া আর আবুলের দোকান দুটো বাজারে একদম পাশাপাশি। দু-দোকানের মাঝখানের দেয়ালও একটাই। তাই সময়ে অসময়ে দু-বন্ধুতে মিলে দেয়ালের ফোঁকর দিয়ে গল্প জুড়ে দিতে কোন অসুবিধাই হয় না। চা, পান, বিড়ি এসব জিনিস ওরা কেউ কাউকে ছাড়া একা খেয়েছে, বাজারের মানুষ অন্তত এমনটা কখনও দেখেনি! কারো ঘরে ভাল রান্না হলে তার ভাগ অন্যজন পাবেই। যথা সময়ে তরকারীর বাটি পৌঁছে যাবে ঘরে। বাজারের মানুষ প্রকাশ্যে-গোপনে ওদেরকে মানিকজোড় বলেই ডাকে। শুনে দু-বন্ধুর বুকের ছাতি ফুলে ওঠে একহাত করে!
দুজনের বাড়িও একই পাড়ায়। রমিজ মিয়ার বাড়ির পিছনে হিন্দু বাড়ির পুকুরটা পার হলেই আবুল মিয়ার বাড়ি। বাজারে যাবার পথে সকাল বেলা তাই আবুলই হাজির হয় রমিজ মিয়ার বাড়িতে। পানটা মুখে দিয়ে দুজনে ছাতা মাথায় একসাথে বাজারে যায়। দোকান বন্ধ করে বাজার থেকে ফিরেও আসে একসাথে!

বয়সে রমিজ মিয়ার কিছুটা ছোট আবুল। কিন্তু বয়সের এ ব্যাবধান তাদের বন্ধুত্বের পথে বাঁধা হতে পারেনি। পথ চলতে চলতে কখন যে দুজনে দুজনার আপন হয়ে গেছে, তা কেউই খেয়াল করেনি। আড়ালে আবডালে কেউ কেউ আবুলকে মন্দ লোক বললেও, রমিজ মিয়া কখনও আবুলের মধ্যে খারাপ কিছু দেখেনি। তাই ভালোবাসার শিকলটুকুও রয়ে গেছে অটুট। মা মরা মেয়েটাকে নিয়ে যখন এ গ্রামে নতুন আসে রমিজ মিয়া, তখন আবুলই প্রথম আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে এসেছিল। বাড়িয়ে দিয়েছিল সহযোগিতার হাত। পুরনো ঝাপসা স্মৃতিগুলোর মধ্যে এটা আজও স্পষ্ট মনে করতে পারে রমিজ মিয়া।

সত্যিই তো, একমাত্র মেয়ে রহিমা রহিমা ছাড়া এ দুনিয়ায় আর কে ই বা আছে রমিজ মিয়ার? বউটাও রহিমার ছোটবেলায় কলেরায় মারা গেল। সবার শত অনুরোধ সত্ত্বেও কেবলমাত্র মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেনি রমিজ মিয়া। পাছে সৎ মা এসে মেয়েটাকে কষ্ট দেয়! মেয়েকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে, কখনও মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি। রহিমা যেন তার পুরনো দুখের স্মৃতি মনে করতে না পারে, তাই ছেড়ে এসেছে পুরনো গ্রাম, চেনা মানুষজন! লোকে বলে, রমিজ মিয়া তার মেয়েরে মাথায় রাখেনা চিলের ভয়ে, নিচে রাখেনা সাপের ভয়ে, এক্কেবারে বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে!

আজ সে মেয়ে বড় হয়েছে। মেয়েটাকে ভাল একটা বিয়ে দিতে পারলে আর কোন পিছুটান থাকবেনা রমিজ মিয়ার। ছেলের কিছুই থাকা লাগবে না, এ জীবনে যা সঞ্চয় করেছে তার সবই দিয়ে দেবে তাকে রমিজ মিয়া। শুধু যেন তার মেয়েটাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। মেয়েটাকে যেন কোনদিন চোখের জল ফেলতে না হয়। এই মেয়ের একফোঁটা অশ্রু মাটি স্পর্শ করলে, তখনই বুক ফেটে মারা যাবে রমিজ মিয়া!

কিন্তু চাইলেই তো আর ভাল ছেলে পাওয়া যায় না! তাই অনেকদিন ধরেই সন্ধানে আছে সে। আবুলকেও বলে রেখেছে, সে ও চেষ্টার ত্রুটি করছে না। আজ একে, কাল ওকে ধরে আনছে। কিন্তু একজনকেও পছন্দ হয়নি রমিজ মিয়ার! মোটামুটি সবাইকেই পত্রপাঠ বিদায় দিতে হয়েছে। সে তো আর মেয়ের জন্য এম.এ বি.এ পাশ ছেলে চায় না! সে চায় ভাল মনের একটা ছেলে। কিন্তু এ পর্যন্ত যতগুলো ছেলেকে পেয়েছে, তার সবগুলোর চোখের ভাষাই কেমন যেন কুটিল! কথার মধ্যে অতিরিক্ত একটা তেলতেলে ভাব আর চোখ ভরা লোভী দৃষ্টি। বুঝে নিতে একটুও কষ্ট হয় না যে, ওদের সবার নজর রমিজ মিয়ার সম্পত্তির দিকে! সম্পত্তি দিতে তো তার কোন আপত্তিও নেই। কিন্তু এমন লোভী ছেলেগুলো সব সম্পদ পাবার পর, তার মেয়েকে ভালবাসবে তো? মনে হয় না। একটু দেরি হলে হবে, তাও মন মত ছেলে পাওয়া চাই তার কলিজার টুকরার জন্য!

আবুল মিয়ার সংসারে বউ মালা ছাড়া আর কেউ নেই। থাকার মধ্যে বেঁচে ছিল কেবল বৃদ্ধ মা, তিনিও গত শীতে দুনিয়া ছেড়েছেন! বিধাতা কোন সন্তানও দেননি তাদের ঘরে! বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও কোন ফল হয়নি! ডাক্তাররা তাদের কারোরই কোন সমস্যা খুজে পায়না! গ্রাম্য কবিরাজ থেকে শুরু করে ঝাড়ফুঁকের ওঝা, সবার চিকিৎসাই নেয়া হয়েছে, বাদ যায়নি কেউই! কাজের কাজ কিছু হয়নি, দেখা মেলেনি পরম আরাধ্য ছোট্ট একটি মানব শিশুর! এ নিয়ে দুঃখের অন্ত নেই মালার, সকাল-বিকাল চোখের পানি ফেলে সে। আবুল না কাঁদলেও নিজের কপালকে অভিসম্পাত দিতে কার্পণ্য করে না। প্রায়ই বলে, এ সংসার ছেড়ে সাহারা মরুভূমিতে চলে যাবে! যাওয়া আর হয়না, গৎবাঁধা জীবন এগিয়ে চলে।

দিনের বেশিরভাগ সময়ই মালা রমিজ মিয়ার বাড়িতে কাতায়। রহিমার সাথে গল্প-গুজব করে, উকুন বেঁছে দেয় মাথার। তাকে রান্না সহ সংসারের নানা টুকিটাকি শেখায়। বেঁচে থাকলে হয়তো রহিমার মা ই এগুলো শেখাত। সময় অসময়ে মাথায় তেল দিয়ে চুলে বেণী করে দেয়। আর নিজের বাপের বাড়ির গল্পগুলো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রহিমাকে শোনায়। তারা কত ধনী ছিল, কটা পুকুর ছিল, গোয়াল ঘরে কটা গাভী ছিল, কি কি ফলের গাছ ছিল এসবই শুধু বলে মালা! কোন একদিন রহিমা হয়তো আহ্লাদ করে মালার বাবার বাড়ি বেড়াতে যেতে চায়! মালাও হাসিমুখে আশ্বাস দেয়, অচিরেই নিয়ে যাবে। দুঃখ করে বলে, পোড়া কপাল না হলে আবুলের মত ফকিরের সংসারে আসতে হতোনা তাকে! কোন বড়লোকের ঘরে রাজরানী হয়েই থাকতো হয়তো! বলেই বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মালা!
শোনে আর মনে মনে হাসে রহিমা। তার এই চাচীটাকে তার খুবই ভাল লাগে। একটু হয়তো বোকা, কিন্তু মনটা একদম ফকফকা পরিষ্কার। মায়ের আদর আর মিষ্টি বকুনি, এগুলোর সন্ধান সে মালার কাছেই তো পেয়েছে! কতদিন যে সে বকুনি খাবার লোভে ইচ্ছে করে কাজে ভুল করেছে তা হয়তো মালা জানেও না! কোন দুপুরে মালার সাথে ঘুমলে, মাঝে মাঝে মালাকে সজোরে জড়িয়ে ধরে সে। মালাও হয়তো কিছু বুঝতে পারে, তাই আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তখন!

সেদিন বিকেলে মালার কাছ থেকে নতুন্ শেখা ভাপা পিঠা বানানোর চেষ্টা করছিল রহিমা। বাবার ফেরার সময় হয়ে গেছে। তার ওজুর জন্য পানি রেখে এসেছে বারান্দায়। ভেবেছিল বাবা ফিরলেই পিঠা খেতে দেবে, কিন্তু একটা পিঠাও ভাল হচ্ছেনা। বারবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছে, কিছুতেই আস্ত থাকছে না।! অথচ মালা কি সুন্দর করে বানালো দুপুরে, একটুও ভাঙল না! শুধু ওর বেলাতেই কেন এমন হচ্ছে? বাবাকে কি তাহলে এই ভাঙ্গা পিঠা খেতে দেবে? বাবা কি মুখ টিপে হাসবে না?

হঠাৎ বাড়ির সামনের দিকে কয়েকজন পুরুষ মানুষের গলার স্বর শুনতে পেরে এক দৌড়ে ঘরের ভিতর চলে গেল রহিমা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবুলসহ কয়েকজন মানুষ ধরাধরি করে রমিজ মিয়াকে নিয়ে ঘরে ঢুকল। একহাতে বুক চেপে ধরে মুখ বিকৃত করে রেখেছে রমিজ মিয়া। পর্দার আড়াল থেকে তা দেখে হতভম্বের মত বেরিয়ে এল রহিমা, ছুটে গেল বাবার কাছে।
: কি হইছে বাবা? কি হইছে তোমার?
: মা রে, আমি মনে হয় আর বাঁচতাম না রে মা... আমায় ক্ষমা করিস।
: কি কও বাবা তুমি এগুলা? আবুল চাচা, বাবা এইসব কি কয়?

বলতে বলতে বাবাকে জড়িয়ে ধরে ভেউ ভেউ করে কেঁদে ওঠল রহিমা।
ইশারায় আবুলকে কাছে ডাকল রমিজ মিয়া। আবুল কাছে এসে মাথার কাছে বসল। বন্ধুর হাত তুলে নিল হাতে।
: বন্ধু, আমার সময় শেষ।
: না বন্ধু, না। একটু ধৈইর্য ধর। একটু পরেই সব ঠিক হইয়া যাইব।
: না না বন্ধু, কিচ্ছু ঠিক হইব না। আমি নিশ্চিত বুঝতে পারতাছি আমি আর বাঁচতাম না।

বলেই বুক খামচে ধরল রমিজ মিয়া। চোখগুলো যেন কোটর ছেড়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসবে! সারা শরীর ঘামে জবজব করছে।
হাঁপাতে হাঁপাতে কোনমতে বলল,
: বড় সাধ আছিল মাইয়াডার বিয়া দিয়া যামু। পারলাম না। আমার মাইয়াডারে তুমি দেইখ বন্ধু। ওর যেন কোনদিন আদর যত্নের কোন কমতি না হয়। দেখবা তো বন্ধু? দেখবা?
: দেখমু বন্ধু। দেখমু। এ নিয়ে তুমি কোন চিন্তা কইরো না। তোমার মাইয়া সুখেই থাকবে।
: কথা দেও বন্ধু।
: কথা দিলাম।
: আহ! এবার আমি শান্তিতে ঘুমাইতে পারুম।
বলেই রমিজ মিয়ার শরীরটা একটা বড় ঝাঁকুনি দিয়ে স্থির হয়ে গেল। পশ্চিম পাড়ার সোবহান মোল্লা চোখের পাতাগুলো বন্ধ করে দিলেন।
চিৎকার করে কেঁদে ওঠল রহিমা। তার বুনো মাতমে কেঁপে ওঠল গোটা গ্রাম। সেই আহাজারি ছড়িয়ে পড়ল গোধূলির আধারে ঢাকা প্রতিটি গাছের পাতায় পাতায়।

রমিজ মিয়ার মৃত্যুর পর মালা এসে রাতে থাকতে লাগল রহিমার সাথে। বলতে গেলে সারাদিনও মালা এ বাড়িতেই থাকে। মাঝখানে অল্প সময়ের জন্য গিয়ে নিজের বাড়িতে রান্নাটা সেরে আসে। সকালে বাজারে গিয়েই রহিমার রান্না-বান্নার জন্য সদাই পাঠিয়ে দেয় আবুল। রমিজ মিয়ার দোকানটাও এখন আবুলই চালায়। শুধু একজন কর্মচারী রেখেছে সাহায্যের জন্য।
মাঝে মাঝে মালা রান্না করে খাবার নিয়ে আসে রহিমার জন্য। সেদিন আর রহিমাকে রান্না করতে হয়না। আবার কখনও কখনও রমিজ মিয়ার বাড়িতেই দুজনে মিলে রান্না করে। আবুলের জন্য কিছু খাবার পাঠিয়ে নিজেরা একসাথে খায়। এভাবেই চলছিল দিনগুলো। এর মধ্যে রহিমার এক দুঃসম্পর্কের ফুফুকে খবর পাঠানো হয়েছে। উনি জানিয়েছেন, নিজের সংসারটা একটু গুছিয়ে দিয়েই এখানে চলে আসবেন। এরপর থেকে উনিই রহিমার সাথে থাকবেন। তখন আর মালাকে রাতে থাকতে হবেনা।

প্রতিদিনই আশায় থাকে রহিমা, আজ হয়তো কোন খবর পাঠাবেন ফুফু, আজ হয়তো আসবেন। কিন্তু না আসেন ফুফু, না পাঠান কোন খবর!
একসময় যখন রহিমা ফুফুর আশা একরকম ছেড়েই দিচ্ছিল, তখন এক সকালে ফুফু খবর পাঠালেন। আজ বিকেলে আসবেন তিনি। আবুলের দোকানের পিচ্চি কর্মচারীটা খবরটা দিয়ে গেল।
খবর শুনে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল মালা আর রহিমা! মালা তখনই তার জিনিসপত্র নিয়ে নিজের বাড়ি চলে গেল। অনেক কিছু গোছগাছ করতে হবে তার। রমিজ মিয়া মারা যাবার পর, নিজের সংসার তো প্রায় ভুলতেই বসেছে সে! বহু কাজ জমে গেছে এতদিনে। ঘরের ভিতর ধুল-বালির যে আস্তরন পড়েছে, তা পরিষ্কার করতে নির্ঘাত এক সপ্তাহ লাগবে। নতুন করে সবকিছু ধোঁয়া মোছা করার কথা তো বলাই বাহুল্য!

রহিমাও নিজের ঘরদোর পরিস্কারে লেগে গেল। রান্না আর খাওয়া ছাড়া এতদিন বিশেষ কিছু করা হয়নি। বাবার জন্য এত্ত মন খারাপ লাগতো, কিছু করতে গেলেই কান্না পেত। সবকিছুতেই বাবার ছোঁয়া ছড়ানো। সকাল বিকাল কেঁদে বুক ভাসিয়েই কূল পেতনা, গোছগাছ করবে কখন? মালাও ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কখনও কিছু গোছাতে বলেনি। মালা ভাবত, বাচ্চা মেয়ে, আগে শোকটা সামলে উঠুক। তারপর এমনিতেই নিজের কাজ নিজে করবে।
মালার ধারনা ভুল না। ঘর গুছাতে রহিমা জান দেবার বাকি রাখল! ফুফু এসে যদি মুখ বাঁকিয়ে বলেন, ধাড়ি মেয়ে হয়েছিস, অথচ এখনও গোছগাছটাও শিখিস নি, তাহলে বাবার অপমান হবে না?
কাজকর্ম শেষ করতে করতে বেলা পড়ে গেল। গোসলটা সেরে কোনরকমে অল্প কিছু মুখে দিয়েই বিছানায় এলিয়ে পড়ল রহিমা। বহুদিন পর একদিনে এত কাজ করা হল। শরীরটা আর কিছুতেই চলছে না তার। নিমিষেই ঘুম নেমে এল চোখে। আসবেই তো, ধকলটা তো আর কম হয় নি!

দরজায় টোকার শব্দে ঘুম ভাঙল রহিমার। কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, টেরই পায় নি সে! নিশ্চয়ই ফুফু এসেছেন, ভেবে দৌড়ে দরজা খুলল রহিমা। না, ফুফু নয়, আবুল চাচা দাড়িয়ে আছে। কিন্তু চাচা এসময় কেন এসেছে? উনি তো সন্ধ্যায় কখনও আসেন না! তবে কি ফুফুর কাছ থেকে নতুন কোন খবর পেয়েছেন? চোখ দুটোও ভয়ংকর লাল ওনার। কোন খারাপ খবর? আসবেন না ফুফু?

: কি ব্যাপার চাচা?
: তোরে দেখতে আইলাম......
বলতে বলতেই ঘরে ঢুকল আবুল।

: তোর ফুফু আসত না আজকে। ভুল খবর পাইসিলাম।
: তাইলে? আইজ রাইতে কে থাকবো আমার লগে? বাড়িত যাইয়া চাচীরে কি পাঠাইয়া দিবেন?
আবুল এ কথার জবাব দেয়না। অদ্ভুত দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকে।

: তোর বাপরে কথা দিসিলাম, তোর আদর যত্নের কোন ত্রুটি হইব না। ত্রুটি কি হইতাসে?
: না চাচা। আপনেরাইতো এখন আমার সব।
মাথা নিচু করে বলে রহিমা।
হঠাৎ বলে ওঠে আবুল,
: যাক। তাইলে তো হইয়াই গেল। এতদিন তো অনেক যত্ন করলাম, আইজ একটু আদর করতাম চাই তোরে। তুই কি কস?
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় রহিমা। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হতে চায় না। তারপরও কোনমতে বলে,
: মা... মা...... মানে?

জবাবে কিছু বলল না আবুল। শুধু একটু হাসল। সেই হাসি এতটা অশ্লীল আর কদর্য, ঘৃণায় শরীর রি রি করে ওঠল রহিমার।
আবুলের কথার মানে সে বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছেনা যেন। বজ্রাহতের মত নির্বাক দাড়িয়ে রইল। কে এই মাতাল লোকটা? তার চেনা আবুল চাচা ই তো? বাবার বন্ধু আবুল চাচা? নাকি অন্য কেউ?

আবুল যখন ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল, তখনও কিছু বলল না রহিমা! ঘরের দেয়ালে পানের পিক ফেলে আস্তে আস্তে রহিমার দিকে এগিয়ে এল সে। চোখে তার উন্মাদের দৃষ্টি। একটুও নড়ল না রহিমা! আবুল যখন তার শাড়ির আচলে হাত দিল, তখনও কিছুই বলল না ও! ঠায় দাড়িয়ে রইল। শুধু চোখের কোন দিয়ে দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল!

কোন এক অপার্থিব জগত থেকে রমিজ মিয়া এ দৃশ্য দেখে থাকলে, আজ তাকে আবার মরতে হবে!!!

--------------------------০---------------------------------
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×