somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্পর্শের বাইরে (অনু-গল্প)

১৪ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা টু কক্সবাজার এর বিলাসবহুল কোচটি ছাড়তে আর মাত্র মিনিট পাঁচেক বাকি। প্রায় সবকটি সিট ভরে গেলেও, বাসের মাঝামাঝি বসে থাকা কৌশিকের পাশের সিটের যাত্রীটি এখনও আসেনি। আদৌ আসবে কিনা কে জানে!
বাসের ঠিক পাশেই একটি মেয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে। এই শীতের রাতে তার এই উদ্ভট কাজ যে সবার দৃষ্টি কাড়ছে, সেদিকে তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপও নেই! অবশ্য সবার দৃষ্টি কাড়ার পিছনে আরও কিছু কারন আছে। ল্যাম্প-পোস্টের সোডিয়াম আলোয়, মেয়েটিকে কোন এক স্বর্গফেরত অপ্সরার মতই সুন্দর লাগছিল, একবার তাকালে হুট করে চোখ ফেরানো মুশকিল! এই মেয়েটিকেই কিছুক্ষণ আগে ইয়া বড় বড় দুই সুটকেস হেল্পার কে দিয়ে বাসের বক্সে ঢুকাতে দেখেছে কৌশিক। তার পাশের সিটের যাত্রী, এই মেয়েটি হবার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না!
ড্রাইভার বাসে উঠে হর্ন দিতেই মেয়েটির যেন হুশ হল! আধখাওয়া আইসক্রিম ছুড়ে ফেলে দৌড়ে বাসে উঠল সে। সিটের নাম্বার দেখতে দেখতে কৌশিকের পাশে এসে থামতেই, বিনা বাক্য বেয়ে উঠে দাড়িয়ে জানালার পাশের সিটটা মেয়েটিকে ছেড়ে দিল কৌশিক।
বাস ছাড়ার পর আড়চোখে কয়েকবার মেয়েটির দিকে তাকাল সে। মেয়েটি ততক্ষনে সিটের উপর পা তুলে বেশ আরাম করেই বসেছে, গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে কাশ্মীরি শাল! যা শীত পড়েছে, চাদর না জড়িয়ে উপায় আছে? গায়ে ভারী জ্যাকেট জড়িয়েও রীতিমত কাঁপাকাঁপি অবস্থা কৌশিকের। মেয়েটি মোটেও কৌশিকের দিকে তাকাচ্ছে না, একমনে বাইরের ঘুমন্ত প্রকৃতি দেখে চলেছে। যা ও একবার চোখাচোখি হল, মেয়েটি এমন রাগত চাহনি দিল যে, বেচারা কৌশিক মুহূর্তেই চোখ সরাতে বাধ্য হল!
সময় গড়াতেই আস্তে আস্তে পুরো বাসের সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। কৌশিকের চলন্ত বাসে কখনোই ঘুম হয় না, তাই সে মোবাইলে ইবুক পড়ায় মন দিল। রাত আরও গভীর হতে থাকল, বাসের চাকাও সমান তালে গড়িয়ে চলল।
হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ লাগতেই সচেতন হল কৌশিক, পাশে ফিরে তাকাল! মেয়েটিকে বহুক্ষন আগেই চোখ মুদতে দেখেছে সে, এখন বাসের দুলুনিতে ঘুমের ঘোরে কৌশিকের কাঁধেই মাথা রেখে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে ! মেয়েটির ঘুমন্ত মুখটা এতটাই মায়া লাগছিল যে, একটানা তাকিয়ে রইল কৌশিক, কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছিল না। বাতাসে গায়ের চাদরটা একটু সরে গিয়েছিল, সেটা ঠিক করে দিল। লম্বা চুলগুলো বারবার মুখের উপর উড়ে এসে চেহারাটা আড়াল করার চেষ্টা করছিল, ওগুলোকে মেয়েটির কানের পিছনে গুজে দিল কৌশিক। তারপর প্রাণভরে দেখতে লাগলো মেয়েটিকে!

ভোরের একটু আগে ঘুম ভাঙল মেয়েটির। চোখ মেলে দেখল, কৌশিক অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে! খানিকটা লজ্জা মিশ্রিত গলায় বলল, “আর কতক্ষন লাগবে পৌছতে?”
কৌশিক হেসে বলল, “আরও ঘণ্টাখানিক পর কক্সবাজার পৌছবে বাস। বাস-স্টপে শুভ আর রাশিদা থাকবে। নাস্তা করে আগে বিয়েটা সেরে ফেলবো, এরপর সবাই মিলে সেন্ট-মারটিন রওয়ানা হবো, ঠিক আছে?”
--“ঠিক আছে। কিন্তু তুমি আমার সাথে আজ সারাদিন কোন কথা বলতে পারবা না। এটা তোমার শাস্তি। ঝগড়া করার পর আমার মান ভাঙ্গাও নাই, এই জন্য।”
-- “আচ্ছা ঠিক আছে, কথা বলবো না, শুধু তাকিয়ে থাকবো।”
-- “হয়েছে, এত ঢং করা লাগবে না, এখন আমাকে ঘুমোতে দাও তো...।”
আবারও কৌশিক কে কাছে টেনে তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমোতে লাগলো মেয়েটি, কৌশিকের সুমি!
পূব আকাশে তখন একরাশ নতুন স্বপ্নের আবীর নিয়ে হাজির হচ্ছে ভোরের সূর্য!

courtesy : https://www.facebook.com/tawfirhasan

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×