somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান এর সাক্ষাৎকার’

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা জনপ্রিয় লেখক রকিব হাসান। তাঁকে নিয়ে পাঠক পাঠিকাদের মনে অনেক প্রশ্ন। তাদের কৌতূহল নিবারণের জন্যই এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হলো রহস্য পত্রিকায়। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন, তৌফির হাসান উর রাকিব।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- তিন গোয়েন্দা! এই নামটি কত শত কিশোরের কৈশোরকে রঙিন করেছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। আপনার লেখনীতে ভর করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি ছেলে অথবা একটি মেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে, খেলছে বুদ্ধির খেলা, করছে অ্যাডভেঞ্চার! ভাবতে কেমন লাগে আপনার, স্যর?
* রকিব হাসান --- রীতিমত রোমাঞ্চিত হই।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- কিশোর, মুসা, রবিন! তিন গোয়েন্দার জন্য এই নামগুলো বেছে নেবার পিছনে কি বিশেষ কোন কারণ ছিল? নাকি অবচেতনভাবেই বেছে নিয়েছিলেন এই নামগুলো?
* রকিব হাসান --- না, বিশেষ কোনও কারণ ছিল না। অবচেতনভাবেও বেছে নিইনি। তবে নামগুলো যাতে সহজ হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়েছে।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- শুরুর দিকে কখনও ভাবতে পেরেছিলেন, তিন গোয়েন্দা এতটা জনপ্রিয় হবে এবং এরাই একদিন আপনাকে অমর করে রাখবে?
* রকিব হাসান --- যে সব বিদেশি বই পড়ে তিন গোয়েন্দা লেখার পরিকল্পনা করেছিলাম, সেগুলোর ছায়া অবলম্বন করে লিখলে অবশ্যই সিরিজটা জনপ্রিয় হবে, এটা জানতাম, তবে আমাকে অমর করে রাখবে, এ কথা কখনও ভাবিনি। এখনও ভাবি না। আমার মনে হয়, অমরত্ব পাওয়ার জন্য শুধু তিন গোয়েন্দা লেখাই যথেষ্ট নয়, আরও বড় কিছু দরকার।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- তিন গোয়েন্দার পথ-পরিক্রমায়, সিরিজটা চালিয়ে নেয়ার স্বার্থে আপনার পাশাপাশি তিন গোয়েন্দায় যুক্ত হয়েছেন সুলেখক শামসুদ্দীন নওয়াব। এখন তো দু’জনে মিলেই এগিয়ে নিচ্ছেন তিন গোয়েন্দাকে। বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখেন, স্যর?
* রকিব হাসান --- আমি কিছুদিনের জন্য তিন গোয়েন্দা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিন গোয়েন্দার হাল ধরেন সুলেখক জনাব শামসুদ্দীন নওয়াব। এখনও তিনি দু’হাতে লিখে যাচ্ছেন। প্রায় প্রতি মাসেই একটা করে ভলিউম বের করছেন। সিরিজটাকে জ্যন্ত রাখার স্বার্থে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ফাঁকে ফাঁকে আমার ভলিউমও বেরোয়।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- তিন গোয়েন্দাতে আপনার লেখায় বর্তমানে গোয়েন্দা কাহিনির পাশাপাশি উঠে আসছে নানা ভৌতিক কাহিনি এবং সায়েন্স ফিকশন। সেগুলো বেশ পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছে। কিন্তু যারা তিন গোয়েন্দার কার্যক্রম শুধুমাত্র গোয়েন্দাগিরিতেই সীমাবদ্ধ দেখতে চায়, তাদের অনেকের ধারণা এগুলো হয়তো আপনার নিজের লেখা নয়! আপনার নামে হয়তো অন্য কেউ লিখছে। এ বিষয়টায় যদি খানিকটা আলোকপাত করতেন......
* রকিব হাসান --- পাঠকের প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য তিন গোয়েন্দা এবং তিন বন্ধু সিরিজে কিছু ভৌতিক কাহিনি এবং সায়েন্স ফিকশন আমি লিখেছি। তিন গোয়েন্দার ভলিউমে প্রকাশিত সব ভৌতিক ও সায়েন্স ফিকশনই আমার লেখা নয়, কিছু লিখেছেন জনাব শামসুদ্দীন নওয়াব। তবে যে বইগুলো আমার নামে বেরিয়েছে, সেগুলো অবশ্যই আমার লেখা, অন্য কারও নয়। এ ব্যাপারে পাঠকের ভুল বোঝার কোনও অবকাশ নেই।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- রহস্য পত্রিকাকে বলা হয় নবীন লেখকদের জন্য সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। কত শত লেখক যে এই পত্রিকা তৈরি করেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। রহস্য পত্রিকার জনপ্রিয় লেখকরা সহজেই দেশের সাহিত্য অঙ্গনে নিজ নিজ অবস্থান গড়ে নিতে সক্ষম হন। একসময় আপনি যাদের লেখা সম্পাদনা করতেন, তাঁদের অনেকেই আজ নিজ নিজ অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখেন, স্যর?
* রকিব হাসান --- নবীন লেখকদের জন্য রহস্য পত্রিকা একটা বিরাট প্ল্যাটফর্ম, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যাঁদের লেখা সম্পাদনা করেছি, যারা আজ নিজ নিজ অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত, জীবনের চলার পথে মাঝে-সাঝে তাঁদের কারও সাথে দেখা হয়ে যায়। আমাকে দেখে তাঁরা এতটাই উচ্ছ্বসিত হয়ে রহস্য পত্রিকার লেখার কথা স্মরণ করেন, তাঁদের সেই আবেগ আমার মাঝেও সংক্রামিত হয়।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- আপনি সেবা প্রকাশনীর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আপনি সহ গোটা সেবা প্রকাশনী, এদেশের অসংখ্য মানুষকে বই পড়ুয়া বানিয়েছে। অবসর সময়টাতে মানুষকে নানা পাপ পঙ্কিলতা থেকে সরিয়ে বইয়ের পাতায় আচ্ছন্ন রেখেছে। স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, কল্পনার সীমানাটাকে করেছে আরও বিস্তৃত। নীতিবোধ জাগ্রত করেছে, শাণিত করেছে বুদ্ধিমত্তা, গড়ে তুলেছে মূল্যবোধ। কিন্তু আপনি কি মনে করেন, আপনি এবং সেবা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কালজয়ী লেখকরা এর যোগ্য প্রতিদান পেয়েছেন? তথাকথিত সাহিত্য সংগঠনগুলো আপনাদের অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন করেছে?
* রকিব হাসান --- সেবার অন্য লেখকদের কথা জানি না, আমার কথা বলতে পারি। পাঠকরা আমার বই কেনে, পড়ে, প্রশংসা করে। একজন লেখকের জন্য এর বেশি চাওয়ার আর কী থাকতে পারে? সাহিত্য সংগঠনগুলোর মূল্যায়নের কোনও নমুনা এ মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি না। তবে আমরা যদি সত্যিই ভাল কাজ করে থাকি, পাঠকের কোনও উপকারে এসে থাকি, তা হলে একদিন মূল্যায়ন না করে পারবে না।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ, এসব ব্যবহার করেন, স্যর?
* রকিব হাসান --- না।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- অনলাইনে, ‘যে কারণে রকিব হাসান স্যর আর সেবায় তিন গোয়েন্দা লেখেন না......’ এই শিরোনামে মুনিয়া নামের একটি মেয়ের সাথে আপনার একটি সাক্ষাৎকার বেশ প্রচলিত আছে। যেখানে দেখা যায়, আপনি সেবা পরিবার, তথা কাজী আনোয়ার হোসেন স্যর এবং তাঁর দুই ছেলের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এবং সেবাকে বিশ্বাসঘাতক বলেছেন! ওই কথোপকথনের সত্যতা কতটুকু, স্যর? আদতে কাজী আনোয়ার হোসেন স্যর এবং তাঁর দুই ছেলে, কাজী শাহনূর হোসেন ও কাজী মায়মুর হোসেনের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?
* রকিব হাসান --- ফেসবুকের তথাকথিত সাক্ষাৎকারটা – তুমি যেটা আমাকে পাঠিয়েছ, সেটার কথা জিজ্ঞেস করছ তো? ওটা একটা বানানো গল্প। পড়ে মনে হয়, মুনিয়া আমার বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎকারটা নিয়ে এসেছেন। সেটা অসম্ভব। কারণ, মুনিয়া নামের কাউকে আমি চিনি না। এই নামে কেউ কখনও আমার বাসায়ও যায়নি। আর সাক্ষাৎকারই যেহেতু দিইনি, কাজী পরিবারের প্রতি অসন্তোষ জানালাম কীভাবে? ‘বিশ্বাসঘাতক’ শব্দটাও লেখিকার মনগড়া। তবে, কাজী পরিবারের সবাই – জনাব কাজী আনোয়ার হোসেন, কাজী শাহনূর হোসেন, কাজী মায়মুর হোসেন, সবার সঙ্গেই আমার সম্পর্ক ভাল।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- নতুন লেখকদের জন্য কোন পরামর্শ?
* রকিব হাসান --- লেখা খুব কঠিন কাজ। শুধু মেধা থাকলেই কলম কিংবা কম্পিউটার নিয়ে বসে পড়লাম, আর ফাটাফাটি একটা কিছু লিখে ফেললাম, তা হয় না। লেখার ক্ষেত্রে পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই, তার সঙ্গে যোগ করতে হবে বিশ্বস্ততা, আন্তরিকতা, অধ্যবসায়।

# তৌফির হাসান উর রাকিব --- দোয়া করবেন, স্যর, আমি যেন আমার সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের হাতে তিন গোয়েন্দার বই তুলে দিতে পারি। এবং তার মধ্যে যেন আপনার লেখা আনকোরা নতুন বই থাকে.........
* রকিব হাসান --- আনকোরা নতুন বই! হাহ হাহ ! আমার যা বয়েস এখন, তাতে বেশি আশা হয়ে গেল না? তবে তিন গোয়েন্দার এখনকার ভলিউমগুলো তোমার নাতি-নাতনিদের হাতেও পৌঁছাবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

( রহস্য পত্রিকা, সেপ্টেম্বর ২০১৪ সংখ্যা)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×