somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূল জনক একাত্তরের ঘাতক খোন্দকার আব্দুল হামিদ উপাখ্যান- কুলাদা রায়

১৫ ই মে, ২০১০ সকাল ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ছাগুদের বলছি, লেখাটি আগে পড়ুন, তথ্যগত কোনো ভুল থাকলে ধরুন, আলোচনা করুন। গালিগালাজের সাথেসাথেই ব্লক করা হবে]

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ তত্ত্বটি জিয়াউর রহমানকে দিয়েছিলেন খোন্দকার আব্দুল হামিদ নামের এক সাংবাদিক। তিনি বর্তমানে মরহুম। তার ওস্তাদ আবুল মনসুর আহমদ। মনসুর আহমদের পুত্র প্রথম আলোর প্রকাশক মাহফুজ আনাম। বাড়ি ময়মনসিংহ। আর হামিদের বাড়ি জামালপুর।
১৯৭৬ সালে তিনি জিয়াউর রহমানের উপস্থিতিতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বিষয়ে একটি সেমিনারে খোন্দকার আব্দুল হামিদ সেমিনারে বলেন, বাঙালি জাতীয়তা বললে মাল্টি-স্টেট ন্যাশনালিজম-এর কথা এসে পড়ে। কারণ, বাংলাদেশে বাইরেও কয়েক কোটি বাঙালি আছেন। আমরা কি সেসব বাঙালিকে বাংলাদেশের জাতির শামিল করতে পারি? জটিল আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রশ্নে ঝুঁকি না নিয়ে (প্যানবেঙ্গলিজম বা সুপ্রা-ন্যাশনালিজমের ) কথা আমরা কি ভাবতেও পারি? পারি না। আর তাই আমাদের জাতীয়তাকে ‘বাঙালি জাতীয়তা’ বলে অভিহিত করতে পারি না। করলে টেকনিক্যালি ভুল হবে, পলিটিক্যালি তা বিপজ্জনক হতে পারে।…



মূলতঃ খোন্দকার আব্দুল হামিদ দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা থেকেই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ভাবনাটি আমদানী করেন। তিনি সাম্প্রদায়িক বিভেদকে আবার সামনে টেনে নিয়ে আসেন। অথচ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই দ্বিজাতিতত্ত্ব, সাম্প্রদায়িকতা হটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খোন্দকার আব্দুল হামিদের কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কোনো গুরুত্ব পায়নি। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান- দর্শনই প্রধান বলে মনে করেছেন।

জিয়াউর রহমান খোন্দকার আব্দুল হামিদের এই তত্ত্বটি গ্রহণ করেন। এই তত্ত্বটিকে অবলম্বন করে তার উনিশ দফা প্রণয়ন করেন এবং বিএনপি গড়েন। একাত্তরের যুদ্ধপারাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন এবং বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানান। বিএনপি তাই মুসলিমলীগের নতুন বোতলমাত্র—আর জামাতীদের পোষক। এগুলো অই খোন্দকার আব্দুল হামিদ প্রণীত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ থেকেই এসেছে।

একাত্তরের আগে মাঝে মাঝে ইত্তেফাক অফিসে আসতেন খোন্দকার আব্দুল হামিদ। তিনি ইত্তেফাক সম্পাদক মালিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াদের আত্মীয় হলেও তার জীবিতকালে ইত্তেফাকে পাত্তা পান নি। তার মৃত্যুর পরে তার গুণধর পুত্র ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মাধ্যমেই ইত্তেফাকে সুঁই হয়ে ঢোকেন। তখন ইত্তেফাকের মূল ব্যক্তি বাঙালি জাতীয়তাবাদের একনিষ্ঠ মুখপত্র ও বঙ্গবন্ধুর বন্ধু প্রখ্যাত সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের বিরুদ্ধে কান ভারী করা শুরু করেন। মইনুল হোসেন সিরাজুদ্দিন হোসেনকে ইত্তেফাকে অনেকটা ক্ষমতাহীন কর রাখেন।


সূত্র : বাংলাদেশ, বাঙালি ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ--আনিসুজ্জামান, ৩২৮ পৃষ্ঠা

মানিক মিয়ার মৃত্যুর পরে সিরাজুদ্দিন হোসেন 'মঞ্চে-নেপথ্যে ' নামে একটি কলাম লিখতে শুরু করেন ১৯৬৯ সালের ৮ তারিখে, 'অনামী' ছদ্মনামে। কলামটিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিকামী বাঙালিদের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা লেখা হত---পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর মৃত্যুঘণ্টা শোনানো হত। এটা ইত্তেফাককে বাঙালিদের মুখপত্র করে তোলে। শেষ লেখাটি তিনি লেখেন ১৯৭০ সালের ২৭ অক্টোবর।

এই সময় সিরাজুদ্দিন হোসেন দুসপ্তাহের ছুটি নিয়ে তাঁর নিজ বাড়ি মাগুরা যান। এই সুযোগটি কাজে লাগান খোন্দকার আব্দুল হামিদ। তিনি মইনুল হোসেনকে বলেন—সিরাজুদ্দিন হোসেনের অনুপস্থিতিতে কলামটি লিখতে চান। 'অনামী' নামে তা লিখে মইনুল হোসেনকে দেখান। মইনুল ইত্তেফাকে প্রকাশের জন্য তা অনুমোদন করেন।

এই দুসপ্তাহে খোন্দকার আব্দুল হামিদ সিরাজুদ্দিন হোসেনের আদর্শের পরিপন্থী পাকিস্তানপন্থীদের আদলে মঞ্চে-নেপথ্যে কলামটি লেখেন। এই ভাবে অন্যের নামে লেখা সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী।

সিরাজুদ্দিন হোসেন ঢাকায় ফিরে ক্ষুব্ধহন। কয়েকদিন ইত্তেফাক অফিসে যান নি। পরে মানিক মিয়ার স্ত্রী তাকে বলে কয়ে আবার অফিসে ফিরিয়ে আনেন। তবে সিরাজুদ্দিন হোসেন আর মঞ্চে-নেপথ্যে কলামটি লেখেন নি। ওটা পুরোপুরি হাইজ্যাক করে নেন খোন্দকার আব্দুল হামিদ। 'অনামী’ নামের বদলে 'স্পষ্টভাষী' ছদ্মনামে লেখা চালিয়ে যান। ২৬ মার্চ ইত্তেফাক অফিসটি পুড়িয়ে দেয় পাক হানাদার বাহিনী। এ সময় খোন্দকার আব্দুল হামিদ পাক-হানাদার বাহিনীর দালাল হিসাবে কাজ করে যেতে থাকেন। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডে আল বদর আল শামসের অন্যতম নীতি নির্ধারক হন--রাও ফরমান আলীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।

ইত্তেফাকে কর্মরত সাংবাদিক আবু তালিবকে প্রথমে তার ইঙ্গিতে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। সিরাজুদ্দিন হোসেনকে আবু তালিবের অপহরণ বিষয়ে হামিদ ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে তাঁকে বাসায় থাকতে উৎসাহিত করেন। ১৯৭০ সালের ১০ ডিসেম্বর সিরাজুদ্দিন হোসেনকে রাত তিনটায় আল বদররা বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাঁকে আর খুজে পাওয়া যায় নি। সে সময় তার অসহায় স্ত্রী নূরুন্নেছা খোন্দকার আব্দুল হামিদকে অনুরোধ করেন—-সিরাজুদ্দিনকে ছাড়িয়ে আনার জন্য। হামিদ সিরাজুদ্দিনের স্ত্রীর দেওয়া জামা কাপড়ও তাকে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যান। সিরাজুদ্দিন হোসেন আর ফিরে আসেন নি। খেন্দকার আব্দুল হামিদের ইঙ্গিতে তাকে মেরে ফেলা হয়। তার লাশটিও খুঁজে পাওয়া যায় নি। সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের নামের আগে শহীদ শব্দটি যুক্ত হয়।

দেশ স্বাধীনের পরে চারজনের বিরুদ্ধে সিরাজুদ্দিন হোসেন হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে এক নম্বর অভিযুক্ত আসামী হলেন খোন্দকার আব্দুল হামিদ। ধরা পড়ে অন্যতম অপহরণকারী ইসরাইল। পেশায় কসাই ইসরাইল জামাতের কর্মী ছিল। পুলিশ খোন্দকার আব্দুল হামিদকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। কিন্তু মইনুল হোসেন শহীদ সিরাজুদ্দিন হোসেনের স্ত্রীকে বলেন যে, তিনি যদি খোন্দকার আব্দুল হামিদের নাম অভিযুক্তের তালিকা থেকে তুলে না নেন, তাহলে ইত্তেফাক তাকে কোনো অর্থনৈতিক সুবিধাদি দেবে না। আটটি সন্তান নিয়ে কপর্দকশূন্য শহীদ জায়া নূরুন্নেছা বেগম মইনুল হোসেনের কথা মেনে নেন। এই ভাবে একাত্তরের দালাল খুনী খোন্দকার আব্দুল হামিদ বিচার থেকে রেহাই পেয়ে যান। আর ইসরাইলের সাত বৎসর কারাদণ্ড হয়। জিয়াউর রহমান তাকে মুক্তি দেন।

মইনুল হোসেনকে নিয়ে খোন্দকার আব্দুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর খুনি খোন্দকার মোশতাকের দলে ভিড়ে যান। এবং জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে তার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ তত্ত্বটি প্রসব করেন। জিয়া তত্ত্বটি গ্রহণ করে পুরস্কারস্বরুপ পাকিস্তানীদের দালাল ঘাতক খোন্দকার আব্দুল হামিদকে তার মন্ত্রী বানান। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় তিনি প্রথমে যুব উন্নয়ন মন্ত্রী, পরে বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বাস্খ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং শ্রম, জনশক্তি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

(লেখাটা কুলাদা রায় এর অনুমতিক্রমে ব্লগে প্রকাশিত একইসাথে ফেসবুকে আলোচনা দেখতে পারেন- Click This Link)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:২২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×