সবে মাত্র সাতটা বেজে ত্রিশ মিনিট,
পাগলি মেয়েটা আকাশকে জড়িয়ে এখনও ঘুমচ্ছে।সকালের মিষ্টি আলোতে পূর্ণিমা যেন অপ্সরী লাগছে। আকাশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, হারিয়ে যায় অন্য এক জগৎ এ। ঘড়ির কাটা পৌ্নে আট-টা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, অফিস যাতে হবে দুজনের। আজ রবিবার, রাস্তায় জ্যাম আছে নির্ঘাত। তাই আর দেরি হলে তো আর চলবেনা!
আকাশ পূর্ণিমাকে ডাকে, "ওগো শুনছো, সকাল হয়েছেতো, উঠো লক্ষীটি"
পূর্ণিমা আধঘুম অবস্থাতেই বলে, "আজ অফিস না গেলে হয়না, জান?"
আকাশ আহ্লাদ করে বলে, "দেখ পাগলি মেয়ের কান্ড, এভাবে হলে চলবে বলো, কাজ না করলে খাবে কি, উঠো আমার লক্ষী পাখি।"
পূর্ণিমা আকাশকে আরো জোরে ধরে রাখে।আকাশ পূর্ণিমার মাথায় চুমু খায়, আস্তে করে আদর করতে করতে থাকে। ঘুম ভাঙ্গে পূর্ণিমার।ঠোঁটের কোণে আকাশের হাসিতেই মনটা ভাল হয়ে যায় পূর্ণিমার। নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পরে তারা দুজন দুজনার অফিস এ, শুরু হয় ব্যস্ত সময়।
মাথার উপর সূর্য, বেলা তখন দু'টো বেজে দশ মিনিট।
পূর্ণিমার মুঠোফোন থেকে একটা এস এম এস, "আই, খেয়েছ? একদম লেইট করবেনা বলে দিচ্ছি, আমি মাত্র খেলাম, তুমি কিন্তু খেয়ে আমাকে অবশ্যই জানাবে, আচ্ছা? ভীষণ মিস করছি তোমাকে!” এস এম এস টা পরে আকাশ হেসে উঠে নিজের অজান্তেই।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা, রাত সাড়ে সাতটা,
পূর্ণিমাকে আজ অফিস থেকে উঠিয়ে নিতে হবে আকাশের, পাগলীটা বায়না ধরেছে ice cream খাবে।কিন্তু জ্যাম এ আটকে আছে আকাশ। উফ, আর ভাল লাগছেনা, মেয়েটা সারাদিন কষ্ট করে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আকাশ ভাবছে, বাস থেকে নেমে হাটা শুরু করবে কিনা! খুব অস্থির লাগছে আকাশের।
রাত আট-টা,
অফিসের সামনে একটা ছোট রেস্টুরেন্ট আছে, ওখানেই অপেক্ষা করছে পূর্ণিমা।আকাশকে নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকে পূর্ণিমা, চোখে অনেক মোটা কাচেঁর এর চশমা আকাশের। রাস্তাঘাট পার হতেই একেবারেই অপটু আকাশ।ফাজলামো করে অনেক সময় পূর্ণিমাকে বলে,”আচ্ছা এমন যদি হয়, রাস্তায় একদিক থেকে বাস, আর আমি………” পূর্ণিমার চোখে জল দেখে আকাশ আর কিছু বলেনা, জড়িয়ে ধরে বলে, “আচ্ছা, জান আমি তোমার কথা সব কথা শুনব, মন খারাপ করোনা”। পূর্ণিমার চোখের জল মুছতেই থাকে।
রাত আট-টা বেজে ত্রিশ মিনিট,
আকাশের ফোন বন্ধ!
অস্তির হয়ে সে ফোন করে আকাশের এক কলিগকে, জানতে পারে অনেক আগেই আকাশ বাস থেকে নেমে গিয়েছে। তাহলে? মনে মনে নিজেকেই দুসে, “আজ ice cream না খেলেই ভাল হতো।ধুর।এত রাত হয়ে গিয়েছে, আকাশ কথায় গেল।” ছোট একটা চিরকুট লিখে সে চলে যায় বাসায়।
রাত ন’টা বেজে দশ মিনিট,
পূর্ণিমার মা কাঁদতে কাঁদতে বাসায় আসে, পূর্ণিমা কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা আম্বুলেন্সের আওয়াজ শুনতে পায়, বুকের ভিতর-টা খচ করে উঠে।সাদা কাফনের কাপড়ে পেঁচানো একটা লাশ। হাতে এক তোড়া গোলাপ।পূর্ণিমা কিছু বুঝে উঠার আগেই চোখ পানিতে ভিজে যায়।কিছুই শুনতে পায়না সে, আকাশ পানে চেয়ে থাকে…………………
**************************************************
রাত পৌণে দু’টা,
আকাশের মুঠোফোনে ফোন আসে পূর্ণিমার। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।একটা স্বপ্ন দেখেছে সে। আকাশ চুপ করে থাকে।
একটু পর পূর্ণিমা আকাশকে বলে, “আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা, কোনদিনও না, কখনও না…কথা দাও…”
আকাশ বলে, “কোথাও যাবোনা, কথা দিলাম...”
**************************************************
পূর্ণিমার আলো ছড়িয়ে পড়ে আকাশের বুকে, দু’হাত মেলে আপন করে নেয় আকাশ সন্তর্পণে।
**************************************************
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




