-রুপন্তী
-মা রুপন্তী
-জ্বী, মা।
-এদিক এসো তো।
হ্ন্তদন্ত হয়ে রুপন্তী ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখে মা মটরশুটি বেছে বেছে রাখছে।
-কী হয়েছে মা?
-আমার সাথে একটু মটরশুটি বেছে দেনা! ঠিক আছে মা, তুমি যাও আমি বেছে দিচ্ছি। দেখ, ঠিক হয়ে যাবে।
-আচ্ছা, আমি তাহলে একটু উঠি, রান্নঘরে থালা বাসন ক’টা পড়ে আছে, যাই, ধুয়ে ফেলি।
-মা, তোমার না কোমর ব্যথা? তাহলে? যাও রেস্ট নাও, আমি কাজগুলো সব সেরে ফেলছি।
-যাও মা।
মিসেস মনিরা আবেগ ভরা নয়নে রুপন্তীর দিকে তাকিয়ে থাকেন, কিছু না বলেই চলে যান। রুপন্তীর মুখটা আজ মলিন। মিসেস মনিরা কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে রুপন্তীর মাথায়ে হাত দিয়ে বলেন,
-মা, কী হয়েছে তোমার? আমায় বলবে?
-কই মা? কিছু না তো!
-হুম, কিছুতো একটা হয়েছেই। বলো আমাকে।
-না না, কী হবে, কিছু না মা। আমায় নিয়ে তুমি একদম ভেবো না।
-পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে? কারও সাথে কাটাকাটি……
-উফ মা! কিচ্ছু হয়নি। যাও তো।
মিসেস মনিরার বুঝতে দেরি হলোনা। নির্ঘাত কিছু হয়েছে তা না হলে এভাবে মন খারাপ করে কেন থাকবে রূপন্তী।
কাল রাতে রূপকের সাথে কথাকাটা কাটি হয়েছে রূপন্তীর। রূপকের তার দেখতে ইচ্ছে করছে, ওর গাল দু’টোকে একবার ছুঁতে ইচ্ছে করছে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার। কাল সকাল থেকে ছেলেটা না খাওয়া।রূপন্তী এভাবে না খেয়ে থাকতে অনেক বার মানা করলেও দু’দিন পর পর এম্ন করে রূপক। এতো বড় হয়েছে অথচ ছেলেমানুষি যায়নি এখনও। নাস্তা না খেয়ে ক্লাসে গিয়েছিল, ক্লাস টেস্ট ভাল হয়নি। তাই মন ভালো না ওর। তাই বলে খাওয়া ছেড়ে দিবে? এভাবে এতক্ষণ না খেয়ে………. ভাবতেই চোখে পানি আসে রূপন্তীর।কাল এটা নিয়েই কথা কাটাকাটি হয়েছে রূপকের সাথে। এমনেই বেচারীর মন খারাপ তার উপ্র এভাবে রূপন্তী রাগ করলো। রাগ করে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে রূপন্তী, খুব জানতে ইচ্ছে করছে, রূপক খেয়েছে কি না। কিন্তু রাগটা এখনও যায়নি রুপন্তীর তাই ফোনও করছেনা।মনে মনে ভাবছে,
-ইস, কি জানি কি করছেও।
-আমি রাগতো হতেই পারি, তাই বলেও এম্ন করে চুপ করে আছে কেন?
-ধ্যাত, আর ভাল লাগছেনা। কোথায় গেল?
-প্রতিবার আমিই-তো রাগ করি, এবার না হয় ও রাগ করলো! নাহ, এটা কেন হবে? নাহ, ও তো রাগ করেনা। কিন্তু, সকাল থেকে দুপুর হতে চলল, রূপক-তো ঘ্যাণ ঘ্যাণ করছেনা। হয়েছে কি?
-ফেসবুক-টা নিয়ে নিশ্চয়ই বসে আসে, বুঝেছি। আচ্ছা দেখিতো যাই।
কম্পিউটার চালিয়ে ফেসবুক, ইয়াহু ওপেন করে দেখে লাস্ট স্ট্যাটাস আপডেট গতকাল বিকাল পাঁচটায়।
-তাহলে? কোথায়ও?
-কোন এক্সিডেন্ট?
-না না…তা হতে পারেনা, তাহলে?
-আচ্ছা, ফোনটা দিয়েই দেখি।
-একি? ফোন অফ কেন?
মনের অজান্তেই চোখের জলে রূপন্তীর ফর্শা গালটা ভিয়ে যায়।কিছুই ভাল লাগেনা রূপন্তীর। কোথায়ে হারিয়ে গেল তার রূপক? কাজেও মন বসেনা। মা খাওয়ার জন্য ডাকলে মানা করে দেয়, রাত হয়ে যাচ্চে, রূপকের খোঁজ নাই। কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা সে। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করে ওর। হঠাৎ রাত দশটায় একটা এস এম এস।
-রূপন্তী, আমি সরি! মাফ করে দাও আমাকে, এমন-টা আর হবেনা।
-প্লিজ একবার বারান্দায় এসো।
রূপন্তী দৌড়ে বারান্দায় এসে দেখে, লাল, হলুদ, সাদা গোলাপ হাতে তিনটা গোলাপ হাতে রূপক দাঁড়িয়ে আছে। কোন কিছু না ভেবেই সে নিচে এসে রূপকে জড়িয়ে ধরে।
-আরে আরে, কি করছো? কেউ দেখে ফেলবে। আরে আরে।
হাউ হাউ করে কেঁদে উঠে রূপন্তী।
-কোথায় ছিলে তুমি? ফোন অফ কেন তোমার? আগে বলো।
-আসলে, আমি ভেবেছি যে তোমার জন্য গোলাপ কিনবো কিন্তু, জানো, লাল আর হলুদ গোলাপ পেলেও, সাদা গোলাপ পাওয়া-ই যায়না।
-তাই খুঁজতে খুঁজতে দেরি হয়ে গেল। আর বলোনা…
-থামো। একদম কথা বলবেনা, চুপ।
হাতের গোলাপ গুলো নিয়ে রূপকের গালে একটা চুমু খেয়ে দৌড়ে চলে যায় রূপন্তী।অবাক বিস্ময় তাকিয়ে থাকে রূপন্তীর দিকে। হঠাৎ-ই একটা এসএমএস রূপকের ফোনে,
-আই, রাত হয়েছে কিন্তু, রাস্তা ঘাট খুব সাবধান! রাত আটটার পর ট্রাক চলে জানোতো? একদম তাড়াহুড়ো করবেনা। আর একটা কথা, এত কষ্ট করে ফুল কেনার দরকার পড়লো?
রূপক মাঝ পথে আস্তেই, আর একটা এস এম এস,
-ফুল গুলো অনেক সুন্দর, অনেক বেশী সুন্দর।
রূপক কিছুই বলেনা। বাসায়ে পৌছে রূপন্তীকে জানায়,
-পৌছেছি।
রূপন্তীর একটা রিপ্লাই আসে,
-“আমি তোমাকে ভালবাসি।”
অবাক হয়ে যায় রূপক। প্রথম বার “ভালবাসি” শব্দটা শুনলে অবাক হওয়ার-ই কথা।
***************************************************
টুকরো কিছু অনুভূতি, অব্যক্ত কিছু কথা ... সবমিলেই “ভালবাসা”। নিজে ভালবাসুন অপরকে ভালবাসতে দিন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




