অমাবস্যার রাত, অনেকটা উদাস হয়েই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসান কিছু একটা ভাবছিল হাসান। মুঠোফোনের আলো হঠাৎ করেই জ্বলে উঠলো।
জয়িতার ফোন।
-আচ্ছা, তুমি কি বলো তো?
-এতক্ষণ কোথায় ছিলে? খোঁজ নাই কেন তোমার?
-না মানে, কিছু না। এমনেই।
-কিছুতো বটেই, বলো এখন। আর জানোই তুমি বেশী সাধা-সাধি আমার একদম অপছন্দ।
-না মানে আসলে হয়েছে কী………
-উহ, এত introduction দিতে হবেনা, কি হয়েছে সেটা বলো।
-আচ্ছা আচ্ছা, বলছি। আসলে কাল ভাবছিলাম যে কাল তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হবে, কি পরবো, কি বলবো এসব হাবিজাবি।
-হুম, এটা একটা ভাবার জিনিস হলো, ধুর বোকা।
-না, আসলে একটু excited লাগছে পুরো বিষয়টা।তুমি আমাকে প্রথম দেখবে, আমি-তো খুব-ই সাধারণ একটা ছেলে। আজকাল-কার smart handsome ছেলেদের মতো একদম-ই নয়।
-হুম, সত্যি কথা বলতে, আমিও একই কথা ভাবছিলাম।
-আচ্ছা বাদ দাও-তো কালকের টা কাল দেখা যাবে, আজ এসব ভেবে কাজ নেই।
-ঠিক আছে, কিন্তু আমাকে কিভাবে চিনবে?
-ঠিক চিনে নেবো দেখ। আর ফোনতো আছে-ই।
-রাত কত হলো, দেখেছো? ঘুমাতে হবেনা?
-কিন্তু ঘুমতো আসছেনা।আচ্ছা একটা কথা, কাল কিন্তু একদম দেরী করবেনা, আমি বেশীক্ষণ দেরী করতে পারবোনা। মা-কে বলে বের হবো যে অহনার বাসায় যাব, তোমার সাথে একটু দেখা করেই আমার অহনার বাসায় যেতে হবে, বুঝেছো?
-আচ্ছা, ঠিক আছে, ক’টায়?
-হুম, সেটা তো এখন বলতে পারছিনা, কাল বলবো কিন্তু কাল সকালেই, ইনশাল্লাহ দেখা হবে।
-আচ্ছা, তাহলে এখন ঘুমাও।
-ঠিক আছে, ফোন রাখছি।
-জয়িতা! একটা কথা বলি?
-এই না আমাকে ঘুমাতে বলছিলে, আর এখন তুমি-ই শুরু করলে?
-আচ্ছা থাক আজ-না।
-আই, বলো বলছি…
-জয়িতা, আমি তোমাকে ভালবাসি।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জয়িতা বলে,
-হাসান, আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি।
-বেশ রাত হলো, কাল দেখা হবে, আল্লাহ যদি রহমত করেন।
-আচ্ছা, ঠিক আছে, আল্লাহ হাফেজ।
-আল্লাহ হাফেজ।
তারা ভরা অমাবস্যার রাতে স্বপ্নে বিভোর দুই সহযাত্রী আনমনে কল্পনার জাল বুনে, অপেক্ষায় প্রহর গুনে।
***************************************************
সকাল পৌণে পাঁচটাতেই জয়িতার ঘুম ভাঙ্গলো।
আজ সকালটা একেবারেই আলাদা, অদ্ভুত ভাল লাগা কাজ করছে তার ভিতরে। আজ হাসানের সাথে প্রথম দেখা হবে তার। ফেইসবুকে হাসানের ছবিও দেখেছে ও কিন্তু, স্বপ্নেই হাসানের সাথে তার দেখা হয়েছে অনেক-বার আজ স্বপ্নটা সত্যি হবে, ভাবতেই অবাক লাগছে। টিয়া রঙের সালোয়ার কামিজের সাথে লাল কাঁচের চুড়ি, একেবারেই সাদামাটা সাজে সেজেছে জয়িতা।
দশ’টা বাজতেই মা-কে বলে বের হল জয়িতা। জয়িতার খুব ভয় আর excitement লাগছে।
-আচ্ছা, আজ হাসান আসবে-তো? বসুন্ধ্ররা সিটিতে এগার-টায় হাসান আসবে, এখন ও ত্রিশ মিনিট বাকি, কিছু একটা কিনতে ইচ্ছে করছে ওর জন্য, কিন্তু… না থাক পরের বার না হয়…
এসব ভাবতে ভাবতেই জয়িতা Lucious Pizza-র সামনে চেয়ারে বসে। আর মাত্র ৫মিনিট বাকী। জয়িতার মনে আজব সব ভাবনা আসে। কি বলতে, কি ভাবে বলবে, কথা গুলো গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।যে মানুষটিকে সে স্বপ্নে দেখেছে, সে মানুষটি বাস্তবে কেমন হবে? আচ্ছা, মানুষটি রিয়েলতো? কোন চক্র… না না… এটা হতে পারেনা, হাসানকে সে অনেক ভালবাসে, তাদের ভালবাসা শাশ্বত সত্য, কিন্তু……
ক্রিন, ক্রিন……… হাসানের ফোন………
-জয়িতা
-হাসান, কথায় তুমি? আমি আট-তলা, food court-এ…
-পৌছে গিয়েছ? জয়িতা, রাগ করবেনা, একটা কথা বলি?
-বলো
-আজ সকালে আমি রেডি হয়ে বের হচ্ছি, হঠাৎ-ই একটা কাজে আমার খুলনা যেতে হচ্ছে, রাগ করোনা সোনা, আমি কি করে তোমাকে sorry বলবো বুঝতে পারছিনা।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে জয়িতা।
-আচ্ছা, Its Ok.
চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে। আজ ও কাজল দিয়েছিল, কাজলের সাথে পানি মিশে ফর্সা গালে দোরা কাটা দাগ হয়ে যায়। বুক-টা কষ্ট, দুঃখ, ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছে ওর। কিছুক্ষণ বসে wash room-এ যায়। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই কান্না পাচ্ছে ওর। চোখ-টা মুছে কাজল দিয়ে বের হয়েই সোজা লিফটের সামনে দাঁড়ায় লাইনে। হঠাৎ করেই একটা ডাক শুনতে পায়।
-জয়িতা
আচমকা পিছে তাকিয়ে দেখে হাসান, স্বপ্নে দেখেছিল যে মানুষটাকে।
-জয়িতা, আমি দুঃখিত। আসলে, তোমার আধ ঘন্টা আগেই আমি এসেছি। তোমার পাশের টেবিলেই বসে ছিলাম, হঠাৎ শয়তানী বুদ্ধি কাজ করলো, ভাবলাম একটু ক্ষেপিয়ে দেই তোমাকে, কিন্তু এভাবে তুমি কাঁদবে বুঝিনি।
-কিছুই বুঝতে হবেনা তোমাকে, ভালোই-তো আমার সাথে মশকরা? আচ্ছা, ঠিক-ই আছে, আমি এখন যাব।
-জয়িতা, মানে আসলে, মানে…
-হয়েছে, এখন আপনি বসেন, নাস্তা করেন, আমি যাই, দেরী হয়ে যাচ্ছে।
লিফটে উঠেই জয়িতা মনে মনে ভাবে,
-ইস, হাসান যদি আর একটু রিকুস্ট করতো, হাতটা ধরতো…
নিচে পৌছোতেই দেখে হাসান একতোড়া গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দেখে, মন-টা খুশীতে ভরে যায়, কিন্তু কিছু না বলেই গেইটের দিকে যেতেই হঠাৎ পিছন থেকে এসে হাত-টা ধরে ফেলে হাসান। ফুল গুলো জয়িতার হাতে দিয়েই বলে,
-জয়িতা, আমি তোমাকে অনেক অনেক অনেক ভালবাসি।
জয়িতার হঠাৎ সব-ই ভুলে যায়। মুখে হাত দিয়ে হেসে উঠলো। চারিদিক যেন আলোকিত হয়ে উঠলো।
***************************************************
“ভালবাসা” অনুভূতি-টা একটু বেশী-ই রহস্যময়। অভিমান, ভালবাসার-ই একটা রূপ, বেশী বেশী অভিমান, বেশী বেশী ভালবাসা।
ভাল থাকবেন সবাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




