-থামুন, ১০০ হাত দূরে থাকুন, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র………
সিয়ামের দিকে খুব বিরক্ত হয়ে তাকায় নীলা।
মুচকি হেসে সিয়াম বলে,
-কী হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?-তুমি কী গ্রাম থেকে এসেছো? নাকি বাচ্চাদের মত নতুন পড়তে শিখেছো? এভাবে কি সব আবোল তাবোল পড়ছো?
-না মানে, আসলে…
-Explanation চাইনা আমি, বিষয়-টা যে আমি পছন্দ করিনা, সেটা তোমার জানা, তাও তুমি প্রতিদিন, এভাবে আমাকে জ্বালাও, আমি আর কিছু বলবো না, কাল থেকে তুমি অন্য বাসে যাবে আর আমি অন্য বাসে যাবো। সকালে উঠে কথায় একটু রোমান্টিক কথা বলবে, তা না করে তুমি……
-আমার লক্ষী জানের টুকরা দেখে নিও তুমি, আর হবেনা এমন-টা, আসলে আমি বুঝিনি-তো…
-তোমার বুঝতে হবেনা, কাল থেকে ইচ্ছে মত যা ইচ্ছে করো, আমি আর একসাথে যাবো না, আর তুমি-তো ভাল করে-ই জানো, আমি যা বলেছি তো বলেছি…
-এভাবে রাগ করোনা, সোনা, একটা ছোট্ট একটা silly বিষয় নিয়ে, এভাবে রাগ করোনা
হাত-টা ধরতে গেলে হাত-টা সরিয়ে নেয় নীলা।
-ছুবেনা আমাকে, বলে দিচ্ছি, ভাল হবেনা। আজ কত সুন্দ্র একটা weather, mood-টাও ছিল ভাল, ভেবে ছিলাম আমি তোমার সাথে সকালে একটু আগে বের হয়ে নাস্তা করবো, star-এর নান আর ঝাল ফ্রাই, আর আজ-ই তুমি, ধ্যাৎ, মেজাজ-টাই খারাপ করে দিলে।
কাঁচু মাঁচু করে সিয়াম নীলা-কে বুঝাতে থাকে।
-আজ অনেক সময় আছে, চল, আজ নাস্তা খাবো, যা হবার হয়েছে…
-না, silly matter-তো থাক, তুমি অফিসে যাও, আমি versity-তে যাই, আমার আর mood নেই।
জানালার দিকে মুখ-টা ঘুরিয়ে বসে থাকে নীলা।চোখের কাজল দেয়া-টা সিয়ামের খুব পছন্দের। একটু গাঢ় করে কাজল দেয় নীলা, বেশ মানায় ওকে, আজ-ও সিয়ামের জন্য কাজল দিয়েছে। সিয়াম নীলার দিকে তাকিয়ে থাকে, নীলার ফর্সা গাল রাগে লাল হয়ে গিয়েছে, চোখ-টা ছল ছল করছে। কি করবে বুঝতে পায়-না পকেটে হাত দিয়ে কিছু একটা বের করবে তখনি বাসের ভিতর কিছু একটা নিয়ে চেঁচামেঁচি শুনতে পায় তারা।
দেশের সনাম ধন্য একটা কলেজের কিছু ছাত্র আর বাস কন্ট্রাক্টর এর মাঝে কিছু বাক-বিতন্ডা চলছে। সবকিছু ভুলে নীলা সিয়ামের হাত-টা ধরে।
কিছুক্ষণ পর-ই বাস থেকে নামার সময় কয়েকজন ছাত্র(তথাকথিত) বাস কন্ট্রাক্টরের উপর চড়াও হয়, তাকে বেধড়ক মারধোর করে, ড্রাইভার তাদের বাধা দিতে গেলে, তাকেও লাঠি-সেটা নিয়ে মারা হয়। এক পর্যায়ে, বাসের মাঝে এক বয়স্ক মহিলা বেশ কিছু কঠিন শব্দ উচ্চারণ করে বাস ড্রাইভার এবং কন্ট্রাক্টরের উদ্দেশ্যে।
সব কিছু দেখে নীলা ভয় এক রকম জড়িয়ে ধরে সিয়াম-কে। সিয়াম বার বার নীলার দিকে তাকায় আর মাথায় হাত দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ, এমন কিছু ঘটলো, যা তারা কোনও দিন-ও ভাবেনি। বাস ড্রাইভার বেপরোয়া ভাবে বাস চালানো শুরু করে দিয়েছে। সাপের মত রাস্তার এদিক থেকে ওদিক বাস চলছে প্রায় ৮০কিমি বেগে। বাসের ভিতর এক মহিলা কান্না-ই জুড়ে দিয়েছে।
বাস ওয়ালার হুমকি,
-আজ আমি বাস এক্সিডেন্ট করবো, নিজে লাফিয়ে পড়বো, সবাইকে মেরে ফেলবো, জ্বালিয়ে দিবো সবকিছু।
সব কিছু দুঃস্বপ্নের মত লাগছে, নীলা আর সিয়ামের। কি হতে চলেছে তাদের জীবনের সামনের ১৫ মিনিটে?কিছু-ই মাথায় আসছেনা তাদের। সিয়াম বাসের সামনের কিছু দূর এগিয়ে যায়, সিয়ামের পিছনে একটা লোক, তারপর নীলা। বার বার সিয়াম নীলা-র দিকে তাকাচ্ছে।কিছু দূরে বাস যেয়ে থামতেই কিছু যাত্রী নেমে গেলো। সিয়ামের সামনেই দরজা, ইচ্ছে হলেই, দু’পা বাড়িয়ে বের হতে পারে, কিন্তু, সে নীলা-র হাত ধরে রেখেছে, নীলা-কে ছেড়ে সে কোথাও যাবেনা, কোনোদিন-ও না।
হঠাৎ করেই বাস-টা চলতে শুরু করে। নীলার এবার সিয়ামের পিছনে, সিয়াম-কে জড়িয়ে ধরে আছে। বাস এবার মহাখালী ফ্লাইওভারের উপরে, ৭৫কিমি বেগে চলছে, ড্রাইভার মহাশয় এবার ফ্লাইওভারের উপর থেকে বাস-টা ফেলে দিবেন বলে হুঙ্কার দেন। ফ্লাইওভারের মাঝ পথ আসতে-ই সব কিছু গিয়ার, স্ট্যারিং সব কিছু ছেড়ে ড্রাইভার জানালা দিয়ে এবার বের লাফিয়ে পড়বেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কন্ট্রাক্টর-ও দরজার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে লাফিয়ে পড়ার। সব কিছু যেন বাংলা ছিঃনেমা টাইপ। কিন্তু, এবার বাস্তব জীবনে ঘটছে সব কিছু, এখানে কোন Super Hero নেই যে সবাই-কে বাঁচাবেন।
৫মিনিটেই ফ্লাইওভার পার হওয়ার পর কাকলীর দিকে ছুটতে থাকে বাস-টি। কিছু দূর সামনে যেতে-ই জ্যামে পড়ে আর তার মাঝেই নীলা আর সিয়াম নেমে পড়ে বাস থেকে।
বাস থেকে নেমে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে নীলা, এতটুকু শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছে সে, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। সিয়াম সবার মাঝেই জড়িয়ে ধরে নীলা-কে। রাস্তা পার করে মাথায় একটা চুমু খায়।
-কিচ্ছু, হয়নি, পাগলী, কিচ্ছু, হয়নি, দেখো তুমি, এই আমি তোমার পাশে-ই আছি।
নীলা কিছু বলেনা, শুধু চোখ থেকে পানি পড়ে-ই যাচ্ছে তার। নীলার হাত ধরে সিয়াম তাকে নিয়ে যায় সামনের একটা পার্কে।নীলা কিছুই বলছেনা, কান্নাও থামছেনা ওর। সিয়াম আবার শুরু করেছে,
-I-E-L-T-S
-এটার মানে কি বলতে পারো?
-হুম, আজ কাল সবখানেই এই লেখা-টা চোখে পড়ে। সাথে দেখি একটা ফোন নম্বর-ও দেয়া আছে
কান্নার মাঝেই, বিরক্ত হয়ে তাকায় নীলা, সিয়াম হঠাৎ করেই মুচকি হেসে, পকেট থেকে দুমড়ে যাওয়া KIT KAT –এর একটা প্যাকেট বের করে
নীলা-র দিকে এগিয়ে দেয়।
-নীলা, sorry, একটু নরম হয়ে গিয়েছে, আসলে আমি এটা কাল কিনেছিলাম, ফ্রিজে রেখেছি রাতে। আমি জানি তুমি ঠান্ডা KIT KAT খুব পছন্দ করো, তাই সকালে বের করে নিয়ে এসেছিলাম, অনেক-টা ইচ্ছে করেই তোমাকে চটিয়ে ছিলাম। ভেবে ছিলাম, তুমি রাগ হলে-ই তোমাকে এটা দিবো, কিন্তু…
-থাক, ন্যাকামো করতে হবেনা। বুঝেছি, খুব ভাল লাগে, আমাকে রাগাতে না?
সিয়াম কিছু বলেনা, একটু হাসে।
-আচ্ছা, সিয়াম তোমাকে, একটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে আমার, তোমাকে আজ আমি বাস থেকে নামতে বলেছিলাম, বাস-টা কিছু সময়ের জন্য থেমেছিল যখন? কেন নামো-নি?
-এটা কী বললে তুমি? তুমি বাসে থাকতে আমি একা নেমে যাবো?
-আজব-তো তুমি নেমে গেলে কি ক্ষতি হতো? আমি বাসে থাকতাম কি আর হতো, দেখেছো-তো কিছু-ই হয়নি।
সিয়াম এবার কেঁদে ফেলে, জড়িয়ে ধরে নীলা-কে,
-নীলা আমি তোমাকে ছাড়া বাচঁবোনা, আমি তোমাকে অনেক অনেক অনেক বেশী ভালবাসি। নিজের থেকেও বেশী ভালবাসি আমি, আজ যদি তোমার কিছু হতো আমি জানিনা আমি কি করতাম। আমি পাগলের মত তোমাকে ভালবাসি, আজীবন বাসবো। কথা দিলাম আমি।
-কেউ দেখে ফেলবে তো, ছাড়ো-তো, কি ছেলে-মানুষি করছো, চলো, Star-এ যাই অনেক দিন হলো, নান আর ঝাল ফ্রাই খাওয়া হয়না। দেরী হয়ে যাচ্ছে, তোমার আবার অফিস আছে না? আমার-ও তো ক্লাস আছে। চলো-তো।
সিয়াম কিছু একটা বলতে গেলে নীলা বাধা দেয়,
-আচ্ছা আচ্ছা, বুঝেছি, আর আহ্বলাদ করতে হবেনা, আর শুনো, কাল থেকে আমার জন্য প্রতিদিন KIT KAT নিয়ে আসবে, আর এক সাথেই আমরা বাসে আসবো কেমন?
সিয়ামের হাত ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকে নীলা, সারা-টা জীবন এভাবে বসে থাকতে ইচ্ছে হয় তার। কিন্তু এভাবে বসে থাকলে-তো চলবেনা, দেরী হয়ে যাবে দু’জনের…
আলতো ভাবে সিয়ামের গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে বলে,
-আজ অফিস যেওনা, আমার ইচ্ছে হচ্ছেনা ক্লাসে যেতে, চল রিক্সাতে কোথাও ঘুরে আসি। যাবে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




