somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতা দিবস, ২০১২

২৬ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৫শে মার্চ, সন্ধ্যে ছ’টা বেজে ত্রিশ মিনিট…

--বাবা, বাবা…
আনমনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে, শফিক সাহেব।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা…

--বাবা, আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন? কী হয়েছে বাবা, আপনার কী মন খারাপ?
চোখের কোণের পানিটা গড়িয়ে পরে।

-কিছু নারে মা…

--কিছুতো হয়েছেই, বলেন না বাবা…
শফিক সাহেবের ছেলের বউ, নীলা। মাস ছ’য়েক হলো আকাশ-নীলার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই, নীলা সব কিছু সামলে নিয়েছে…আকাশের মা বাবার মেয়ে নেই, কিন্তু আকাশের বিয়ের পর মেয়ের মতন-ই একটা বউ পেয়েছে…আজ বাবাকে অনেক-টা আনমনা, কিছু একটা হয়েছে…

-মা, কিছুনা, মন-টা একটু খারাপ, আজ ২৫শে মার্চ, কালো ভয়াল রাত…আজ কতো মানুষ যে মারা গিয়েছে রে মা…

--বাবা ঘরে চলেন, নাস্তা দিয়েছি, ঘরে বসে শুনবো সব কথা…

-মা, ৭১এর কথা বলতেই আমার চোখে পানি চলে আসে-রে মা…জানিস, আমি মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারিনি…তোর মা তখন pregnant, আমি তোর মাকে রেখে যেতে পারিনিরে…দেশের জন্যে আমি যুদ্ধে যেতে পারিনি…তাই যখন-ই ২৫শে মার্চ আসে আমার সেই ৭১সালের কথা মনে পড়ে…বড় অপরাধী মনে হয়রে নিজেকে…বড় অপরাধী… না রে মা, কিছু খেতে ইচ্ছে করছেনা…তোরা খেয়ে নেয়ে…

--বাবা, এমন ভাবে মন খারাপ করলে হবে? বলেন? তাছাড়া, মা সেবার অসুস্থ ছিলেন, চলেন বাবা…নাস্তা খেতে হবে…

-আচ্ছা আসছি, মা…আকাশ এসেছে?

--না, বাবা, এখনও আসেনি… মা, ওকে একটু বলিস তো কাল একটু সময় বের করতে, কোথাও ঘুরে আসতে ইচ্ছে করছে, মন-টা কেমন যেন অস্থির লাগছে…

-আচ্ছা বাবা, এখন-ই ফোন করে বলছি…



---------------------------------------------------------------------------

২৫শে মার্চ, রাত সাড়ে দশটা…

আকাশ সবে মাত্র অফিস থেকে এসেছে, fresh হয়ে, নামাজ শেষে খেতে বসেছে…

-AIX- Advance Interactive Execution, এটা আসলে একটা hardware dependent OS.

--OS মানে কি?

-আরে বোকা, OS মানে Operating System.

--ও আচ্ছা।বুঝলাম।

-তা কি যেন বলছিলাম, AIX…..
কথাটা আবার শুরু করতেই বাধা দিলো নীলা।

--আমার Computer Engineer সাহেব, হয়েছে, আমাকে আর বুঝাতে হবেনা, অফিস থেকে ফিরেছো রাত করে, আর খাওয়ার টেবিলেই আবার শুরু করলে?

-না, মানে আসলে, হয়েছে কি, অফিসে একটা training চলছে, তাই এসব নিয়ে মাথা ঘুরছে।

--ভালই তো, অফিসেই থাকতে পারো, বাসায় আসার কি দরকার।
নীলার কথায় অভিমানের সুর। আকাশ বুঝতে পারে, বাসার সবার খোজ নিতে পারছেনা সে, কাজের এতো চাপ, তার উপর অনেক responsibility, সব মিলে, আসলে নীলার সাথে কথাই বলতে পারছেনা ক’দিন।

-নীলা…

--জ্বী, বলো, শুনছি…

-তুমি খেয়েছো?

--না, খেতে ইচ্ছে করছেনা…তুমি খেয়ে নাও…

-খাওনি কেন?

-এমনি, ইচ্ছা করছেনা…
খাওয়া থামায় আকাশ, কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।

--কি হলো, খাওয়া থামালে কেন?

-তুমি খাওনি, না খেয়ে বসে আছো, আর আমি কিভাবে খাবো? নাহ খাবোনা আমি, ইচ্ছা করছেনা আমার।

--কি পাগলামো করছো? খেয়ে নাও তো, অফিসে সারাদিন কাজের ভিতর থাকো, তারপর যদি ঠিক মতো না খাওয়া দাওয়া করো, তাহলে কেম্ন করে হবে? খাও, আমার খেতে ইচ্ছা করছেনা, বিকালে মা বাবা-র সাথে বিস্কুট আর চা খেয়েছিলাম, আর খেতে ইচ্ছা করছেনা, খেয়ে নাও তুমি…
নীলার কথা শেষ না হতেই, আকাশ ভাত মাখিয়ে নীলার মুখে দেয়।

--আই, কি করছো….
নীলার চোখের কোণে পানি জমে, লুকাতে চায় নীলা। কিন্তু, আবছা আলোতে তা ঠিক-ই ধরা পড়ে আকাশের চোখে…

--আচ্ছা, আকাশ কাল ২৬শে মার্চ মনে আছে-তো…

-২৬শে মার্চ, কি যেন বলেছিলে? কাল আমদের একটা campaign আছে…অফিস যেতে হবে…

--বাবার কথা বলেছিলাম, ভুলে গিয়েছো?

-হুম, আচ্ছা…
কিছুই বলেনা আকাশ। খুব রাগ হয় নীলার, কোথায় একটু seriously নিবে ব্যাপার-টা আর সে কিনা…
---------------------------------------------------------------------------

রাত এগারোটা বেজে ষোল মিনিট,

--আকাশ, কালকে কখন আসবে? বাবাকে নিয়ে কিছু একটা plan করতে হবে, চলো কাল আমরা সবাই মিলে রায়ের বাজার যাই, বধ্যভূমি…

-দেখা যাক, কাল কাজ শেষ করে নেই তারপর…

--আকাশ, জানো, বাবা আজ…………
ঘুমিয়ে পড়েছে আকাশ, নীলা অনেকটা চুপসে যায়…ভাবতে থাকে, ক’দিনের ভিতর আকাশ কেমন জানি বদলে গিয়েছে…কেমন যেন হয়ে গিয়েছে আকাশ…ভাবতেই অবাক লাগছে…বাবার কথাটাও seriously নিলোনা সে…মন-টা বেশ খারাপ হয়ে যায় নীলার…অজান্তেই চোখের পানিতে মাথার বালিস্-টা ভিজে যায়…
----------------------------------------------------------------------------

২৬শে মার্চ, সকাল আটটা বেজে দশ মিনিট

-নীলা… নাস্তা হয়েছে?

--হয়েছে, চা-য়ের পানিও দিয়েছি চুলোতে, হয়ে গিয়েছে প্রায়…
চা খেয়ে টাই-টা বাধতে বাধতে নীলাকে কিছু একটা বলবে, তখনি মুঠোফোন-টা বেজে ওঠে…আকাশ কথা বলতে বলতেই বের হয়ে যায়।

আকাশ আজ কিছু না বলেই এভাবে বেরিয়ে গেলো?—মনে মনে ভাবে নীলা।

দরজাটা বদ্ধ করতে যাবে তখনি আকাশ নীলার হাত-টা ধরে টান দেয়…

--আই কি করছো, কেও দেখে ফেলবেতো, ছাড়ো-তো…
কিছু বলতে না বলতেই নীলার কপালে চুমু খেলো আকাশ।

-আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি সোনামুনি, কালকের জন্য sorry…আসলে আমি বুঝতে পারিনি, তুমি না খেয়ে থাকবে, আমার ক’দিন ধরে কেমন যেন চাপ যাচ্ছে…আর একটা কথা, আমি ফোন দিলে বাবাকে নিয়ে শহীদ মিনারে চলে আসবে কেমন? I LOVE YOU…

--আচ্ছা ঠিক আছে, যাও, তোমার আবার late হবে…যাও…

-----------------------------------------------------------------------------

২৬শে মার্চ, সকাল এগারোটা বেজে আঠাশ মিনিট,

বাবাকে নিয়ে নীলা শহীদ মিনার পৌছিয়ে গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পায় দূরে একটা ব্যানার দেখতে পায় তারা, BLOOD DONATION CAMPAIGN…গাড়ি দেখেই আকাশ ছুটে আসে্‌…

-বাবা, তুমি এসেছো? বাবা, আমাদের CAMPAIGN এর নাম BLOOD DONATION CAMPAIGN…বাবা, মুক্তিযুদ্ধ দেখার সুজোগ হয়নি আমাদের…ছোট থেকে তোমার কাছে যুদ্ধের কথা শুনেছি, মায়ের জন্য তুমি যুদ্ধে যেতে পারোনি…দেশের জন্য যুদ্ধ করতে পারিনি, রক্ত দিতে পারিনি, তাই, আজ আমার এই CAMPAIGN এর মাঝে আমরা চাই দেশের জন্য কিছু করতে, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে…অফিসে BLOOD DONATION এর কথা আমি-ই প্রস্তাব করেছি বাবা…রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে পারিনি আমরা, কিন্তু রক্ত দিয়ে দেশের জন্যে কিছু করতে চাই, চাই মানুষের প্রাণ বাচাতে…তুমি দু’য়া করো বাবা, দেশের জন্য, দেশ রক্ষার জন্য আমরা যাতে এগিয়ে যেতে পারি…

--কিছুই বলেনা শফিক সাহেব, আকাশের দিকে তাকিয়ে খুব গর্ব হয় তার, দেশ রক্ষার যুদ্ধে নেমেছে তার সন্তান…

নীলা আকাশের দিকে এগিয়ে আসে, বলে, “আমার রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ…”

-----------------------------------------------------------------------------

দেশ রক্ষার যুদ্ধে আসুন আমরা সবাই এক যোগে কাজ করি।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×