somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রত্যক্ষদর্শির চোখে সেই নৃশংস জিঞ্জিরা হত্যাকান্ডের ২রা এপ্রিল ১৯৭১

০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের মুক্তিসংগ্রামের কাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সারা দেশে। তার অনেকগুলি আমাদের জানা থাকলেও, অনেক ঘটনা অজানা রয়েছে। সেই অজানা থেকে দুটি কাহিনী আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবার এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের সাথে আবারও পরিচয় করিয়ে দেবার লক্ষ্যে আজ দ্বিতীয় কাহিনীটি পোস্ট করলাম।

প্রথম পোস্ট দেখুন এখানে

Click This Link

(পুর্ব প্রকাশের পর)

২৫ শে মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর সেই নারকীয় হত্যযজ্ঞের পর, আমাদের ওখানেও ( জিঞ্জিরায়) আতংকের একটা হীম হাওয়া বয়ে গিয়েছিল। ঢাকায় কারফিউ একটু শিথিল হলে, কোন মতে নৌকা পাড়ি দিয়ে এপার আসলাম। এর পর প্রাণ হাতে নিয়ে, অনেক গলি ঘুপচি পার হয়ে কোনমতে, বংশালে আমার বোন ও ভগ্নিপতির বাসায় এসে উপস্থিত হলাম। আসার সময় মনে হলো সারা ঢাকা শহর যেন একটা নিঃশব্দ মৃত্যুপুরি। কোথাও কোন জনপ্রানীর চিহ্ন পর্যন্ত নেই। মাঝে মাঝে শুধু করুণ সুরে পাড়ার কুকুরগুলি ডেকে যাচ্ছে। জনবহুল এই পুরানো ঢাকায় এ দৃশ্য দেখবো কল্পনাও করিনি। বোন আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো। আমিও জল ধরে রাখতে পারিনি। মহা বিপদ পাড়ি দিয়ে যখন এসেছি, তখন আমার বোনের শশুরবাড়ির লোকেরা কোনমতেই আর ফিরে যেতে রাজি হননি। এদিকে বাড়িতে যে মা উৎকন্ঠায় থাকবে। কি করবো কিছুই মাথায় ঢুকছিল না।

শেষ পর্যন্ত আমার দুলাভাই ঠিক করলেন, প্রতিবেশির টেলিফোন থেকে তিনি আমার দুর সম্পর্কের নানাকে ফোন করে জানিয়ে দেবেন যে আমি এবং বড় বোন নিরাপদে আছে। পরে সুযোগ বুঝে সবাই নদীর ওপার জিঞ্জিরায় চলে যাওয়া যাবে। যেহেতু ওই নানার বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে মাইল দুয়েক দুরে, তাই এই খবরটা দিতে পেরে, বোন আর আমি নিশ্চিন্ত হলাম।

চরম আতংক আর উৎকন্ঠা নিয়ে আধার নামলো। ঘরের হারিকেনের আলোয়, সে আতংক আরো ভয়াবহ হয়ে উঠলো। সন্ধার পর থেকেই মাঝেমাঝে গুলির শব্দ শুনতে পারছিলাম। সাথে ভারি ট্রাকের আনাগোনার শব্দ। বড় ঘরে আমার বোনের শশুড়বাড়ির সবাই ফিস ফিস করে ভবিষ্যত করনীয় নিয়ে আলোচনায় বসলো। খাওয়া দাওয়ার কথা তখন শিকেয় উঠেছে। সবার চোখে আর কন্ঠে মৃত্যুভয়। শেষ মেষ সিদ্ধান্ত হলো আমি আমার বোন ও বোন জামাই, জিঞ্জিরায় চলে যাবো। আর মাওয়াই মা তার বড় ছেলে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে বংশালেই থেকে যাবেন। এর পর যা হবে দেখা যাবে।

রাতে কারুরই ঘুম এলো না। কি করে আসবে? কোন সময় মিলিটারি এসে সবাইকে মেরে রেখে যাবে তার কোন ঠিক ছিল না। সে রকম ভোর যেন আর জীবনে না আসে। আধো ঘুমের মধ্যে দেখলাম ভোর হয়েছে ঠিকই, কিন্ত জীবনের সেই আলো কই? এর মধ্যে আবার প্রতিবেশির কাছ থেকে বোন জামাই খবর এনেছেন যে, খোদ সদরঘাটেই মিলিটারিদের একটা ঘাটি করা হয়েছে। ওখানে বেশ কয়েকটি গানবোটও টহল দিচ্ছে। তবে? বাড়ি যাব কি করে?

পরামর্শ করে ঠিক করা হলো যে বংশাল থেকে গলি ঘুপচি দিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশে যে গুদারাঘাট রয়েছে, সেখান থেকে খেয়া নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে যাবো। খুব সাবধানে খুব সন্তপর্নে যাত্রা করলাম। চোখে ভয় আর অনিশ্চয়তা। এক এক টি গলিতে ঢুকতেই মনে হচ্ছিল
যেন সামনে মৃত্যুদুত অপেক্ষা করছে। এ যাত্রায় অবশ্য আমরা একলা ছিলাম না। বিত্তবান থেকে হত দরিদ্র, অনেককেই দেখেছি সহায় সম্বল নিয়ে প্রান হাতে করে পালাচ্ছে। তবে কারু মুখে রা নেই। সবাই যেন ভাষা হারা এক এক জন মানুষ।

ভাগ্য ভালো বলতে হয়। কোন রকম অঘটন ছাড়াই গুদারা ঘাটে তো পৌছালাম। কিন্তু নৌকা কই? মাঝিরা যার যার জীবন নিয়ে পালিয়েছে। এদিকে আবার কার্ফিউ পড়লে এই নদীর ধারেই মেরে রেখে যাবে আজ্রাইলের দল। ওরা তো খুব বেশি দুরে নেই। বেশ খানিক্ষন পর ওপারে একটা নৌকার দেখা মিললো। পাঠকবৃন্দ, আজকের মত সেদিন বুড়িগঙ্গা এতটা শীর্ণকায় ছিল না, যে হাক দিলেই ওপারে শোনা যাবে। এদিকে কোন শব্দও করা যাবে না। শেষে কয়েকজন তাদের পড়নের কাপড় গুলো পতাকার মত করে উড়িয়ে দিয়ে দৃস্টি আকর্ষন করা হলো। আমাদের প্রতি মায়ার কারণেই বোধ করি, সে নৌকার মাঝি, নিজের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে এপারে আসলেন। আমাদের ভাগ্য ভালো ছিল, তাই ঠাই মিললো। ওপার পৌছানো পর্যন্ত ভয় আর উৎকন্ঠা কাটেনি। নদীতে ভাসমান কিছু মৃতদেহ দেখে নিজেকে ওই অবস্থায় কল্পণা করে বার বার শিউরে উঠছিলাম।

(চলবে)
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×