somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ডিজিটাল গল্প (সম্পুর্ণ)

২৭ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(এই গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক। তবে এই গল্পের উপর ভিত্তি করে পাঠকদের কল্পণা ডালপালা গজালে সে স্বাধীনতা পাঠকদের অধিকার বলে গণ্য হোক।)

"আম্মা আআআআআ "

মেয়ের কান্নার আওয়াজে হাসনা বানুর মেজাজ আরো তিরিক্ষি হয়ে গেলো। এমনিতেই চারিপাশে লোকজনের গালি বন্যায় তার ভেসে যাবার কারণে তার নিজেরই ১৩টা বাজে। এই সময় এই মিচকা শয়তান মেয়েটা কারণে অকারণে বিরক্ত করে মারে।ভেবেছিলেন ষন্ডা গুন্ডা রাজাকার যাই হোক, মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে বাচা গেলো। কিন্তু কিসের কি? ওর শশুড়বাড়ির খাই দিন দিন বেড়েই চলেছে।

"পুতলি আম্মাজানা,কান্দো কেলা? কোন হালায় কি কইচে? মসুর মিয়া কিচু কইচে?"

মায়ের গলা শুনে পুতলি বেগমের কান্নাভেজা গলা পুরা১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলো, "এহহ ঐ হালায় আমারে কি কইবো? আমার মায়ের যে পাওয়ার গুস্টি সুদ্ধা ভিতরে হান্দায়া দিমু না?"

"তো আম্মাজান কান্দোস কেলা কবি তো?"

"কান্দুম না তো কি করুম? যায়গায় যায়গায় তুমি ভাইজান রে সমানে বেইল দিবার লাগচো। মাগার আমার কুনু নামই নাইক্কা? মাইনষে কয় আমি তুমার এউগাই মাইয়া। মাগার আমার নাম নাই সম্মান ভি নাই। মসুরমিয়া ভি হাসবার লাগে টিভির মদে ভাইজানের খোমা দেইখা, আর খোটা দেয়।"

"কথা তো হাচাই কইচস বেটি।মাগার তুই যেই রহম বছর বছর বিয়াইতে থাকোচ তোরে কুনুহানে নিয়াযে যামু ওই টাইমই তো পাই না।"

"আম্মাজান, আমি এতকিছু হুনবার চাই না।যেমনেই হউক, আমারে তুমার বেইল দিবারই হইবো। নাইলে...বলেই পুতলি বেগম আবার কান্না শুরু করে দিল।

"আবে কান্দিচনা কাউয়া হাকনি।দেহি কি করবার পারি।" বলেই হাসনা বানু ফোন রেখে দিলেন।

এর পর ডাক দিলেন, "আবে কালাম, ওই রিফিউজির পুতরে ফুন কইরা ক কাইল বেহাইনে আমার লগে জানি দেখা করে।

সকালের চা খাওয়া শেষ করেছেন কি করেননি, অমনি ইমাম সৈয়দ এসে হাজির।

" আমাকে ডেকেছিলেন বুবু থুড়ি বঙ্গ দিদিমনি?

ওইপার থেকে আগত রিফিউজিগুলি নম নম ভালোই জানে। শুদ্ধু শুদ্ধু মিস্টি মিস্টি কথা বললেও চিকন বুদ্ধিতে জুড়ি মেলা ভার।

"না ডাক্লে তুমি না হুইচাই আয়া পড়বা কেলা? বয় আইতাছে।"

কথাটা শুনে একটু লজ্জায় পড়লেন ইমাম সাহেব।শাসনের যা অবস্থা, বিদ্যুৎ নাইও পানি নাই। এখন পানি ছাড়া শৌচ কর্ম করাটাও মুশকিল। এই অবস্থায় পরিশুদ্ধ হওয়া সম্ভব? এই কথা বুবুকে বোঝাবে কে?

"জ্বি তা তো ঠিকই। তা বলুন দিদি কি খেদমত করতে পারি।"

"কাইল রাইতে পুতলি বেগম ফুন করছিল।"

গদগদ হাসি দিয়ে ইমাম সাহেব বললেন, "বলেন কি বলেন কি? তা মামনি শরীর ভালো? জামাই বাবাজি কেমন আছে? আর বাচ্চা।আহ কি সুন্দর বাচ্চাগুলি। বিল্কুল আপনার মতই"

আরো কিছু বলতে চাইছিল ইমাম মিয়া, বাগড়া দিলেন হাসনা বানু

"আবে ওই রিফুইজির পুত। তোরে কি ডাকছি সুশিল বৈঠকখানায় বক্তৃতা মাড়ানের লাইগা? কামের কথা হুন আগে।"

সবকিছু শুনে ইমাম মিয়া একগাল হাসি দিয়ে শুধু বললেন, দিদিমনি চিন্তা নেই। এমন পথ বাতলে দেবো, যার কথা কেউ কোনদিন শোনেনি।একেবারে খাটি ডিজিটালিয় সুশিল পন্থা।"

"যাউজ্ঞা নিসচিন্তি করলা। হুন, যাওনের আগে ওইযে ট্যাকা চাইছিলা না? কালামের থন চাইয়া লইয়া যাইয়ো। আর বেস্তি দেরি কইরো না। ঠিক আছে?
----------------------------------------------------------------------
ইমাম মিয়ার বৈঠকখানা। বঙ্গদিদির হুকুম তামিলে কে আসেনি? তাবৎ বুদ্ধিজীবি থেকে শুরু করে বিশ্ববদ্যালয়ের ভিসি আমলা নাটুকে নাচুনী গাইয়ে সবাই হাজির। উদ্দেশ্য একটাই। হুকুম তামিলের পন্থা।

"তা আমিই বলছিলাম কি, বোনঝিকে আমার চ্যানেল দিয়ে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সুন্দির করে দিলে কেমন হয়?"

পত্রিকার এক ভুতপুর্ব সম্পাদক (মনে মনে) " হ ... এই জিনিস সুন্দরি হইলে চিড়িয়াখানার হাতিরেও সুন্দরি ডিক্লেয়ার করতে হইবো। তাছাড়া এই সব হাই প্রোফাইল জিনিস হাত লাগানো যাইবো? আর যে জিনিসে আমার হাত পড়বো না, সুন্দরি তো দুরের কথা ওই হালার ঝিরে তো অফিসে পর্যন্ত ঢুকতে দেওন যাইবো না।"

মুখে বললেন, "না না তা কি করে হয়? উনারা দেশের বাপ মা থুক্কু মানে মা মেয়ে... উনাদেরকে এসবে আনার দরকার নেই।"

"ইয়ে এক কাজ করলে হয় না? ধরুণ শ্রেষ্ঠ গায়িকা বা নৃত্যশিল্পি টিল্পি হিসাবে দেশের রাস্ট্রদুত ..." জনৈক নাটকে নাচিয়ে গাইয়ের কথা শেষ না হতেই আমলা থামিয়ে দিলেন।
"আরে রাখেন তো।। কথায় কথায় নাচ গান নাটক... আরে এই সব করে উলটা জাত যাবার অপেক্ষা। আপনার সবাই মিলে মিডিয়া আর সংস্কৃতিক জগতটাকে তো একেবারে বেন্দাবন বানিয়ে রেখেছেন।"

এত সব চেচামেচি আর তর্কে আসল প্রসঙ্গই হারিয়ে যাবার দশা। চায়ের কাপে ঝড় কথাটা যে সত্যি ইমাম মিয়া ভালো টের পেলেন। কাজে কামে নেই, খালি লেকচার। এদের কারনে তার নিজের মাথাও কাজ করছে না। শেষ ঠিক হলো পাতিল সাহেবকেই ধরা হোক। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পাতিল সাহেবকে ধরা হলো।

" কি খোবর ইমাম সাব। তবিয়ত খুশ আছে তো?"

"আর তবিয়ত। আপনাদের কথামত দিদির খেদমত করতে গিয়ে আমার তো রাম নাম সত্য হবার দশা।"

খ্যাক খ্যাক করে হেসে দিলেন পাতিল সাহেব।

"কি বোলছেন ইমাম সাব। সামাস্যা বেশ গম্ভির মালুম হচ্ছে। খুলে বলুন দেখি।"

সব কথা শুনে পাতিল সাহেব বললেন "হুম। কয়েকদিন বাদ ফুন করবেন। হাল করে দিবো।"

পাতিলের কথা শুনে ইমামের মন থেকে বোঝা নেমে গেলো। শালা একটা খবিশ। যতবারই কোন্ন উপকার করে, উসুল করে তার ১৪ গুণ বেশি। এইবার কি উসুল করবে কে জানে? তবুও দিদির সমস্যার কুলকিনারা হলে নিজের তো ক্ষতি নেই। পয়সা খালি পাবলিকের গাটে থেকে যাবে। তা যাক। ওরা বাংলাদেশি। ওরা মরুক বাচুক আমার কি? এই রকম সাতপাচ চিন্তা করে কয়েকদিন কতে গেলো। অবশেষ পাতিলের কাঙ্খিত ফোন এলো।

"কিছু খরচ পাতি হোবে ইমাম সাব।"

খরচ পাতি যে হবে এটা ইমামের চেয়ে ভালো আর কে জানে?

নম নম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

"তা কত ?"

"বেশি তো না, একেবারে পানির মত সস্তা।"

অংকটা শুনে ইমাম মিয়া কলজে শুকিয়ে গেলো। এতো দেখি রাজ রাজাদের মত খরচের কথা। তাও সাহস করে বুবুর কানে কথাটা তলতেই হলো।

"আবে ওই রিফিউজির পুত? আমার মাইয়ার বেইল এর চেয়ে ট্যাকা বেস্তি হইলো? ট্যাকা কি তোর বাপে দিবো না আমার বাপে দিবো? লাগুক ট্যাকা। যা ব্যাবস্থা কর।"

কোটি টাকায় লকেট বানানো হলো। আরো কয়েক কোটি টাকায় বিদেশি মেহমানদের থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা হলো। দেশি বিদেশি মিডিয়ার রুই কাতলা থেকে চুনোপুটি সবাই চর্ব লেহ্য পানীয় উপভোগ করলেন। পাতিল সাহেবের বসের মৃত শাশুড়িকে বিশেষ সম্মাননা দেবার জন্যই এত দক্ষ যজ্ঞ।

ভাবছেন তাতে ভাগ্নি কি করে বেইল পেলেন। খুব সোজা। শিশুদের জন্য লোক দেখানো মায়াকান্নার একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে, সেখানে ভাগ্নিকে শিখন্ডি মহান বানিয়ে প্রচার করা হলো। পাতিল সাহেবের বসও বেশ গদ্গদ স্বরে ভাগ্নিকে পাম পট্টি দিলেন। ব্যাস ! সব দেশি বিদেশি শেয়াল তখন মারহাবা মারহাবা করে চারিদিক মাতিয়ে তুললেন। ভাগ্নি বেইল পেলেন।

ভবিষ্যতের একটি দৃশ্যপট...।

বুবুজানের কাছে আরেকটি ফোন কল এলো।
"আপা... ও আপা... গো... আব্বা আম্মা মইরা যাওনের পর থেইক্কা তুমিই তো বাপ মা মনে কইরা আমারে পালছো, বড় করছো... । ভাগ্নির বেইল হইলো, মাগার আমার কি হইবো?"

বুবুজানের রাগে গা জ্বলছিল। এমনিতেই কখন কি হয় কে জানে? এর পর ছোট বোনটাও আবারও খাই খাই শুরু করেছে। মনের অজান্তেই শুয়রের বাচ্চাই গালিটা চলে আসলো। এর পর? না থাক।। কল্পণা করে নিন। স্বাধীনতা তো দেয়াই আছে।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×