somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ বেলা শেষে (শেষ পর্ব)

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আটঃ
কোন এক শুভক্ষনে ওদের বিয়ে হয়ে গেলো। ফাহিম তানিয়াকে নিয়ে ময়মনসিংহ উঠেছে। তানিয়া একটা ডায়াগনষ্টিক ক্লিনিকে কাজ নিয়েছে বায়োকেমিষ্ট হিসেবে। বেতন মন্দ না। ওদের ২জনের দিন ভালই কাটছিল। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হচ্ছিল তানিয়ার। কিন্তু ফাহিমের সহযোগিতায় সব মানিয়ে নিতে পারছে। প্রথম কিছুদিন শ্বশুর বাড়ির লোকজন ছিল। তার শ্বাশুরী মা আর শ্বশুরও ছিলেন প্রায় এক মাসের মতো। কিন্তু তারা বেশিদিন আর থাকতে চাইলেন না। বাড়িতে চলে গেলেন। গ্রামের মানুষ গ্রাম ছাড়া থাকতে পারেন না। তানিয়ার তার শ্বাশুরী মা’কে খুব পছন্দ হয়েছে। তিনি ফিরে যাবার আগে রান্না ঘরের সবকিছু খুব সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়ে গেছেন। এভাবে চলছিল ভালই।



এদিকে ফাহিম তার চাকুরী ভালই জমিয়ে নিয়েছে। ওকে দেখলে মনে হয় এই চাকুরীটা করার জন্যই ওর জন্ম হয়েছে। মন দিয়ে চাকুরী করে। দুই দিন পর পর বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে যায়। স্কুলের কার্যক্রম দেখে। স্কুলে সহশিক্ষা কার্যক্রম দেখে। বিতর্ক ক্লাব তৈরী করে দেয়। ক্ষুদে তার্কিকদের বিতির্ক দেখে, মুগ্ধ হয়। স্কুলে স্কুলে ওর নাম ছড়িয়ে পড়ে। শহরের যে কোন স্কুলে যে কোন অনুষ্ঠান হলেই ওর ডাক পড়ে, ফাহিম চলেও যায়। তানিয়াকে ঠিকঠাক সময় দিতে পারে না মাঝে মাঝেই। তবে ফাহিম সাধারনতঃ সপ্তাহান্তে অফিসিয়াল কোন কাজ করে না। ঘরেই সময় কাটায় অথবা কোথাও দুজনে ঘুরতে যায়।

ক’দিন আগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ওকে ডেকেছিল। তানিয়া যেতে দিয়ে চায়নি বলেছে ওকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে যাবার কথা। ফাহিম তানিয়াকে বোঝাতে পারেনি। একটু যেন রাগ করেছে। ফাহিম অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে তানিয়াকে একটু ভার ভার দেখে। ওর ভাল লাগে না। নানাভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে মন ভাল করার চেষ্টা করেছে ফাহিম।

সেদিন আনন্দমোহন কলেজের একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রন পত্র নিয়ে চার জন ছেলে-মেয়ে এসেছিল। ২টা মেয়েই দেখতে খুব সুন্দর ছিল। সেদিন ছিল ছুটির দিন । ফাহিম ঘরেই ছিল। ওদেরকে ভিতরে এনে বসিয়েছে। সরকারী বাড়িতে থাকছে তাই ঘর অনেক বড়। তানিয়া সাজিয়েছেও ভাল। মেয়েগুলো খুব প্রশংসা করছিল। ভেতর থেকে তানিয়াও শুনছিল। কেন জানি ওর ভাল লাগছিল না শুনতে। ওরা চলে যাবার পর তানিয়া ফাহিমকে বলেছে-তুমি ওদের অনুষ্ঠানে যাবে না। সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না তাই না। ফাহিম আকাশ থেকে পড়ল যেন।
এই তানি তুমি একি কথা বলছ!! এই এই তোমার কি হয়েছে।
আমার কিছুই হয়নি। কথাটা হয়তঃ দুষ্টামু করে বলেছি কিন্তু তুমি ওদের অনুষ্ঠানে যাবে না। সব অনুষ্ঠানে যেতে হয় না। তোমার একটা ওজন আছে না। আর আজকাল আমি চাকুরী করি-আমাদের নিজেদের বলেতো খুব একটা সময় পাওয়া যায় না। যখনই সুযোগ হয় তুমি কোথাও না কোথাও চলে যাও। আমি একা থাকি বাড়িতে। আমার কি ভাল লাগে!
দেখো তুমি এমন করে বল না। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি তোমাকে সময় দিতে। অনুষ্ঠানেতো সব সময় নিয়েই যেতে চাই। কিন্তু তোমার কাজের ফাঁকে সময় বের করতে পার না তাই অনেক ক্ষেত্রেই যাওয়া হয় না। এ নিয়ে এতো মন খারাপ করার কি আছে রে বাবা!!
তানিয়া কি চোখের কোনে পানি লুকাচ্ছে!! ফাহিম তাকিয়ে অবাক হল। ঠিক করল এই অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে তানিয়া কাঁদবে এটা হতে পারে না। সে ঠিক করল যাবে না। কিন্তু রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছে তানিয়া কি তবে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে! তার সামাজিক জীবন কি তবে ভাল লাগছে না তানিয়ার? নাকি ভয় পাচ্ছে। কিন্তু কাকে ভয়-কিসের ভয়! অন্য কোন মেয়ের প্রেমে পড়ার ভয়? এরকম মেয়েতো তানিয়া নয়। এভাবে সে ভাবতেই পারে না। ফাহিমের সে রাতে ঠিকমতো ঘুম হলো না। ফাহিম খেয়াল করেছে তানিয়াও ঘুমায়নি। কিন্তু তারা কিছুই বলছিল না।

এভাবে আরো কিছুকাল গেলো। ফাহিম সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছে যেটা তার স্বভাবের সাথে ঠিক যায় না। ক’দিন আগে সরকারী মুমিনুন্নেসা কলেজের একটা অনুষ্ঠানে বিচারকের আমন্ত্রন পেয়ে যায়নি। আয়োজকেরা খুব অবাক হয়েছে। যে স্যার সব কিছুতে নিজেকে এগিয়ে রাখেন সেই স্যার কিনা না করছেন!! অনেকেই মেনে নিতে পারে না। ফাহিমের কথা বলা অনেক কমেছে। এখন ফাহিম বাসায় অনেক অনেক বেশী বেশী সময় দেয়। তানিয়া অনেক খুশী। ফাহিম কি নিজেকে হারিয়ে ফেলছে তবে!! সে জানে কিন্তু জানলেও কিছু করতে চাইছে না। তানিয়াকে ভালবেসে বিয়ে করেছে তাকে কষ্ট দিতে চাইছে না ফাহিম। জীবনে অনেক সামাজিক কাজ করা হয়েছে-আর কত!! এখন পারিবারিক জীবন সুন্দর আর সুখের হলেই হয়।

শেষঃ
পাঁচ বছর পরের কথা। ফাহিম আর তানিয়ার তিন বছরের মেয়েটা গুটি গুটি পায়ে এঘর সেঘর হেঁটে বেড়ায়। দেখতে যে কারো ভাল লাগে। ওরা মেয়েটার নাম রেখেছে ‘মেঘবতী’। মেয়েটার চোখে-মুখে অনেক মায়া। ফাহিমের দিনকাল ভালই কাটছে মেঘবতীকে নিয়ে।

ক’দিন আগে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র-শিক্ষকেরা আসবেন। বাকৃবি থেকে ফাহিমকে ডেকেছিল আয়োজক হিসেবে থাকার জন্য। ফাহিম ব্যস্ততার কথা বলে এড়িয়ে গেছে। তানিয়া শুনে বলেছিল-তুমি থাকবে না কেনো? এরকম একটা বড় অনুষ্ঠানে তুমি না করছ কেন? ফাহিম প্রতিউত্তর দেয়নি। উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। ফাহিম এতোদিন এই কাজগুলোর সাথে থাকলে আরো অনেক বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারত। ফাহিমের পরিবেশ আন্দোলনও থেমে গেছে।

যাক যথাসময়ে বাকৃবি’র অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। অনেক মানুষ এসেছে এখানে। বাকৃবি ক্যাম্পাসটা সাজিয়েছে অনেক সুন্দর করে। ফাহিম যাচ্ছে না। শুক্রবারে বিকেলে তানিয়া খুব করে ধরেছে তাদেরকে নিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে যেতে। ফাহিম না করতে চেয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে না করতে পারল না। কিন্তু ফাহিম খুব ভাল করেই জানে ওখানে অনেক পরিচিত জনের সাথে দেখা হবে, ব্যাপারটা খুব সুখকর হবে না। যাক এসব ভেবে লাভ নেই। মেঘবতীকে নিয়ে ওরা বের হলো। রিক্সা করে যাচ্ছে। ছুটির দিনে এভাবে যেতে ভালই লাগছে। অনেকদিন রিক্সা করে ঘুরে বেড়ানো হয় না। ওরা ‘বিজয় ৭১’ এর কাছে গিয়ে নামল। হেঁটে হেঁটে মেয়েকে ক্যাম্পাস দেখাবে। তারপর বিকেল হলে দেশাত্ববোধক গানের প্রতিযোগিতা দেখবে। ওরা হাঁটছে সুন্দর ক্যাম্পাস ধরে।
হঠাত ‘ফাহিম ভাই ভাই -ফাহিম ভাই’ শব্দে তানিয়া আর ফাহিম একসাথে পিছনে ফিরে তাকাল। তানিয়াদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ছোট ভাই রফিক আর সুজন ডাকছে।
আরে তোমাদের ২জনকে অবশেষে পেয়েছি!! ইশ কত চেষ্টা করেও তোমাদের নাম্বার যোগাড় করতে পারিনি। কেমন আছো তোমরা।
তোরা!! কবে আসলি? কতদিন পর দেখা-ফাহিম বলে।
ফাহিম ভাই-তুমি আমাদের একদম ভুলে গেছো। আমাদেরকে একদম মনে নেই তোমার। তানিয়া আপু তুমিও আমাদের ভুলে রইলে!!
আরে নারে ভাই তোদের ভুলিনি। কিন্তু জীবনতো এমনি ভুলে থাকতে হয়-তানিয়া বলে।
ওরা মেঘবতী্র সাথে কথা বলছে।
খেলতে খেলতে রফিক বল্ল-ফাহিম ভাই, এখানে এতো বড় একটা প্রোগ্রাম হচ্ছে অথচ তোমাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না-এটা কেমন কথা!!
নারে আমার আর হয় না! আমি সময় দিতে পারিনা।
হয় না মানে কি? সময় দিতে পারনা মানে কি? বাংলাদেশের বিতর্ক আন্দোলনেও তোমাকে দেখি না। তোমার যারা শিষ্য ছিল ওরা আজকে কত বড় নেতৃত্ব দিচ্ছে অথচ তোমাকে পাইনা আমরা! ফাহিম ভাই তোমার কি হয়েছে বলোতো। ওরা কেউতো তোমার থেকে বেশী যোগ্য নয়।
রফিক আমি সব ছেড়ে দিয়েছিরে। আমাকে দিয়ে আর হবে না। আমি সংসারী হয়ে গেছি।
বল কি তুমি!! সুজন বলে ওঠে। তোমাকেতো ঠিক সংসারী হিসেবে মানায় না। তোমার দেশের জন্য অনেক দায়িত্ব। আর তুমি পারোও। এই তানিয়া আপু তুমি ফাহিম ভাইকে কিছু বল না!! ভার্সিটিতে থাকতে তুমি কতইনা সাহায্য করতে-এখন এভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে দেখতে তোমার ভাল লাগে?? না না এটা হতে পারে না। ফাহিম ভাই যদি ফাহিম ভাই ওই না হবেন তাহলেতো তাকে একদম মানায় না।
তানিয়া কিছু বলছে না। মাথা নিচু করেছে কি!!
রফিক-সুজন আচ্ছা এসব কথা থাক। এবার বল বাকৃবি ঘুরে দেখা হয়েছে তোদের। এবার আমাদের সাথে কয়েকদিন থেকে যাস। বেলাশেষে ফাহিম প্রসংগ বদল করার চেষ্টা করল। তানিয়ার চেহারায় বিষন্নতার মাখামাখি কারোরই চোখ এড়াল না।

ছোট গল্পঃ বেলা শেষে (১ম পর্ব)

ছোট গল্পঃ বেলা শেষে (২য় পর্ব)

ছোট গল্পঃ বেলা শেষে (৩য় পর্ব)
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×