somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজের প্রতি কর্তব্য পালনই মানুষের রক্ষাকবচ

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হে সমাজ, আমি জন্ম হতে তোমারই প্রদত্ত সকল সুবিধা ভোগ করে আসছি এবং মৃত্যু পর্যন্ত তোমারই প্রদত্ত সকল সুবিধা ভোগ করবো। আমি এই সমাজের শিক্ষালয়ে শিক্ষিত হয়েছি, এই সমাজের রাস্তাতেই যাতায়াত করছি, এই সমাজের মাধ্যমেই আমি আমার জীবিকা নির্বাহ করছি

কিন্তু আমি এতটাই স্বার্থপর যে, তোমার কল্যাণ সাধনে এক মুহূর্ত সময় দিতে আমি প্রস্তুত নই। তোমার মঙ্গল সাধনের জন্য আমার যে, কিছু করণীয় আছে এমন চিন্তা ঘুণাক্ষরেও আমার মাথায় আসে না। আমি শুধু আমার ব্যক্তি জীবনের লাভ ক্ষতির হিসেব নিয়েই ব্যস্ত। আমার প্রতিটি কাজের পেছনে স্বার্থই একমাত্র চালিকা শক্তি। আমি সমাজের ক্ষুদ্রতম একক। আমার আর তোমার মধ্যে যদি বন্ধন না থাকে তাহলে কেবল স্বার্থের উপর ভিত্তি করে আমি আর তুমি একক ভাবে কেউই বেশী দিন টিকে থাকতে পারবো না। তাই আমি সামাজিক জীব। আজ আমার পাশের ফ্লাটে কে থাকে তার নামটিও বলতে পারি না। অথচ সে আমার প্রতিবেশী।
আমি যে তোমার সমাজে বাস করে নিজেকে মানুষ মনে করে গর্ববোধ করছি, আমি কি আদৌ মানুষ? আমার এই সমাজটা কি আদৌ মানুষের সমাজ?

আমি তোমার জন্য ভালো কিছু তো করছিই না উল্টো তোমার ক্ষতি সাধন করে নিজে লাভবান হতে চাইছি, আজ আমি তোমার সম্পদ লুট করে ধনী ব্যক্তি হতে চাইছি, তোমার সম্পদে আগুন দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাইছি, নিজের সুখের জন্য তোমাকে বিক্রি করে দিচ্ছি। আমি আজ টাকার নেশায় খাদ্যে বিষ মেশাচ্ছি, ঔষধে ভেজাল দিচ্ছি, ডাক্তার হয়ে রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করছি, পুলিশ হয়ে সাধারণ নিরাপরাদ মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছি, কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে আমি তাকে বাঁচানোর পরিবর্তে তার পকেট থেকে মানিব্যাগ আর মোবাইল চুরি করছি। আমি কি মানুষ? এই সমাজ কি আমার পালক? তাহলে কি ভাবে এই সমাজের বুকে বাস করে করছি অন্যায়, অবিচার, হত্যা, গুম, শোষণ, বঞ্চনা, দমন-পীড়ন, প্রতারণা ইত্যাদি। করছি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ভয়াবহ সব অপরাধ। আমরা যদি এসবের গভীরে তাকাই এবং নির্মোহ চিন্তা করি, দেখতে পাবো এই সকল অন্যায়-অপরাধের মূল কারণ হচ্ছে মানুষের ধর্মহীনতা]

আজ মানুষ নামের এই জীব তার ধর্ম হারিয়ে ফেলেছে। হারিয়ে ফেলেছে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য, সে জানে না তার ধর্ম কি। আগুনের ধর্ম যেমন পোড়ানো। আগুন পোড়ানোর ক্ষমতা হারালে সে তার ধর্ম হারালো। তাহলে মানুষের প্রকৃত ধর্ম আসলে কি? মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা। আজ সেই মানবতা হারিয়ে গেছে। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট লেবাস ধারণ করে সূরা-কালাম, শাস্ত্র মুখস্থ বলতে পারে, নামাজ- রোজা, প্রার্থনা করে সেই ধার্মিক। সেই ব্যক্তি ইসলামে আছে।

আসলে নির্দিষ্ট কোন লেবাস ইসলাম নয় বরং শান্তি পূর্ণ সমাজ গঠনই ইসলাম। আজ যখন সমাজ নামক দেহ থেকে প্রাণ-প্রদীপ নির্বাপিত, সমাজের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, তখন ধর্মের সুধা বলে মানুষকে বিষ খাওয়াতে উদ্যত হয়েছে ধর্মব্যবসায়ী এক শ্রেণির প্রতারক। যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলছে, নিজেদেরকে ইসলামের পক্ষশক্তি বলে পরিচয় দিচ্ছে তারাই সমাজে আতঙ্কে সৃষ্টি করছে। ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ ইসলামকে ভুল বুঝছে। যে ইসলামকে সাদরে গ্রহণ করে মুক্তির দিশা পেতে পারতো, সেই ইসলাম সম্পর্কে দিন দিন তারা বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে।

এর জন্য দায়ী কারা? নিশ্চয়ই যারা ধর্মের পক্ষশক্তি সেজে আছে তারাই। ধর্ম নিরপেক্ষতার বিষক্রিয়ায় আমাদের এই রোগাক্রান্ত সমাজের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ যত অকেজো হয়ে পড়েছে, তার জালা-যন্ত্রণা যত বাড়ছে, ততই তার গলদেশে নতুন নতুন বিষ ঢালা হচ্ছে। বিষ ঢালছে ধর্মনিরপেক্ষবাদী ও ধর্মবাদী উভয় পক্ষই। কিন্তু পার্থক্য হলো- ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা বিষ ঢালছে বিষের বোতল থেকে আর ধর্মবাদীরা বিষ ঢালছে ঔষধের বোতল থেকে। মানুষ ঔষধ মনে করে বিষ খাচ্ছে, প্রতারিত হচ্ছে, জীবন হারাচ্ছে ফলে কেউ সত্যিকার ঔষধ নিয়ে এলেও মানুষ তা খেতে অস্বীকার করছে। এর পরিণতি দাঁড়াচ্ছে আরও ভয়াবহ। অকৃতজ্ঞ সন্তান যেমন মায়ের প্রতি অনাচার, অবিচারে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হয় না, আজকের মানুষগুলোর ঠিক সেই অবস্থা।

সে তার সুখের জন্য, এতটুকু স্বাচ্ছন্দের জন্য, একে অপরের উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য এমন সব কর্মকা- করে যাচ্ছে যা এই মাতাসমতুল্য সমাজকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের সমাজ আজ এক রুগ্ন বৃদ্ধার ন্যায় তার মৃত্যুর প্রহর গুণছে। আমরা মুষ্টিমেয় কিছু আত্মাহীন মানুষের অন্ধ অনুকরণ করে আমাদের শেষ রক্ষা করতে পারবো না। সুতরাং এই সমাজকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা আমাদের করতে হবে। কিছু মানুষের এই অসীম স্বেচ্ছাচারিতাকে রুখে দেয়ার জন্য আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষকে ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে, মানবতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আজ সমাজের মানুষের চারিত্রিক অবনতি ও অবক্ষয় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পুলিশ পাহারা দিয়েও সমাজের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। উপরন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধেই ভয়াবহ রকমের সব অপরাধের অভিযোগ উঠছে একের পর এক। আমাদের বুঝতে হবে মানুষ শুধু দেহসর্বস্ব প্রাণী নয়, তার একটা আত্মাও আছে। তাই মানুষকে যদি আত্মিক শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করা হয়, তাদেরকে যদি নৈতিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তবেই সে নিজে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে অপরাধ সংগঠন থেকে বিরত থাকবে। আজ সমাজের প্রতিটি মানুষকে ধর্মের সেই প্রকৃত শিক্ষা দিতে হবে। তবেই সে সমাজে মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×