somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরবানি কোন অর্থে কোরছি আমরা?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরবানি ঈদ এলে চারিদিকে কোরবানির পশু ক্রয়ের জন্য আলাপ-আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা চোলতে থাকে। দিনের মাওলানা-মৌলভীরা মসজিদে, খোৎবায়, মিলাদ-মাহফিলে কোরবানি দেওয়ার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন এবং দেয়ালে দেয়ালে কোরবানির চামরা মসজিদ-মাদ্রাসা-এতিমখানায় দান করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে এমন পোস্টারও সেটে দেয়। কিন্তু কি অর্থে এ কোরবানি এবং প্রদত্ত কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হোচ্ছে কিনা বা সে কোরবানি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে, নৈকট্য লাভে কতটুকু সহায়ক হবে সে বিষয়ে কোন আলোচনা নেই। অনেকটা রেওয়াজের মতই সকলে কোরবানি করে যাচ্ছে। শুধু রেওয়াজ বলব না এর সাথে রয়েছে সামাজিক মর্যাদা, পারিবারিক সম্মান, টাকার গরম আরো অনেক কিছু। মোটকথা বর্তমানে কোরবানির ঈদকে সার্বিক দিক দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট করেই বলা যায় এ কোরবানি অন্তত আল্লাহর কুরবিয়াত হাসিলের উদ্দেশ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হোচ্ছে না।

আমাদের সমাজে কোরবানি উপলক্ষে কেউ কেউ অনেকদিন ধোরে টাকা গোছান, অনেকে সত্যিকার অর্থেই আল্লাহর কুরবিয়াত হাসিলের জন্য অনেক কষ্ট করে কোরবানির অর্থ সঞ্চয় করেন। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোরবানি দেয়ার জন্য অনৈতিক পথে টাকা সংগ্রহ করা হয়। কেউ কোরবানি দেয়ার জন্য বেশি করে ঘুষ খান, কেউ বেশি করে সুদ খান, কেউ ব্যাংকে জমানো সুদের টাকার হিসেব কষেন, কেউ ব্যবসায়ী পণ্যে ভেজাল করে অর্জিত মুনাফা দিয়ে কোরবানি দিতে চান, কেউ শ্রমিকের বেতন না দিয়ে কোরবানি দেন, আবার কেউ চুরি ছিনতাই করেও কোরবানি দেন। এছাড়া দেখা যায় কোরবানি না দিলে সমাজে মুখ দেখানো যাবে না, কেউ নতুনভাবে বৈধ-অবৈধ উপায়ে টাকার মালিক হয়েছেন- আমার অনেক টাকা আছে তা প্রকাশ করার জন্য একটির বদলে দুটি গর্ব ‘মেরে’ দেন। কেউ বা আবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোরবানি দিয়ে থাকেন যাতে পরিচিতির মাধ্যমে নমিনেশন পাওয়া সহজ হয়। কেউবা পারিবারিক প্রথা হিসাবে কোরবানি দিয়ে থাকেন। আবার অনেকে গোশতের কথা চিন্তা করেও কোরবানি দিয়ে থাকেন। আর নিতান্তই অল্প কিছু লোক প্রকৃতভাবে আল্লাহকে ভালবেসে কোরবানি দিয়ে থাকেন। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কোরবানি দিচ্ছেন তাদের কোরবানি কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা হয়তো আর বিশেষভাবে বলার দরকার পড়ে না। কিন্তু যারা প্রকৃত অর্থে আল্লাহকে ভালবেসে কোরবানি দিয়ে যাচ্ছেন তাদেরটা? সকলে হয়তো একবাক্যে বোলবেন তাদেরটা আল্লাহ কবুল করবেন। কিন্তু কোর’আনের নিরিখে বিচার করলে দেখা যায় বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আল্লাহর কাছে তাদের কোরবানিও অর্থহীন অবস্থায় পর্যবসিত হোয়েছে। কারণ- ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে আল্লাহর হুকুম বাদ দিয়ে মানুষের তৈরি করা হুকুম বিধান মেনে নিয়ে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করে কী লাভ? পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন- যারা কিতাবের কিছু অংশ মানে আর কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান করে (বাদ দেয়) তারা মোশরেক (বাকারা-৮৫)। যারা সমাজে আল্লাহর হুকুম দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না তারা কাফের, ফাসেক, যালেম (সুরা মায়েদা- ৪৪, ৪৫, ৪৭)। এখন নিঃসন্দেহে বলা যায়, ব্যক্তিগতভাবে মোশরেক আর জাতিগতভাবে কুফরীতে নিমজ্জিত থেকে পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশা করা অর্থহীন এ কথাগুলো আজ ধর্মের ধারক-বাহক মোল্লা শ্রেণি নিজেদের ধর্ম ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য গোপন করে চোলেছে। আপনার কোরবানি হোক আর না হোক, আপনার কোরবানির পশুর চামড়া তো আর হাতছাড়া করা যায় না! আর শেষ পর্যন্ত চামড়া দেন আর না দেন- আল্লাহর নাম নিয়ে আপনার পশুটির গলায় ছুরি চালিয়ে দিলে কিছু পয়সা আর গোশত দিতে তো আর না করবেন না। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বলেন- যারা কোর’আনের আয়াতের বিনিময় নেয় এবং আয়াত গোপন করে তারা আগুন ছাড়া আর কিছু খায় না। তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। (তাদেরকে অপবিত্র অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে)। সুতরাং এখন সময় এসেছে আল্লাহর কুরবিয়াত হাসিলের জন্য, নৈকট্য লাভের জন্য শেরেক ও কুফরমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এখন শুধু পশু কোরবানি নয়- নিজের জীবন ও সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় সমর্পণ করেই প্রকৃতভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×