পর্ব ২
অন্য জগত
লেখকঃ তোফায়েল অাহমেদ
সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটা সামনের লোকটার দিকে তাক করে ট্রিগার চাপতে যাবে এমন সময় ঘাড়ে ঠান্ডা কিছু একটার স্পর্শ পেল শরীফ। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে দেখার কোন প্রয়োজন নেই, সে ঠিকই বুঝে নিল কি এটা। তার হাতে থাকা পিস্তলের একটা কপি। ভয়ের একটা শীতল স্রোত শিরদাড়া বেয়ে উপরে উঠে গেল তার। কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগছে মাথার ভেতরটা। চিন্তাভাবনাগুলো সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তবে কি এখনই মৃত্যু হবে তার।কুখ্যাত সন্ত্রাসী শরীফ কি এভাবেই মরে পড়ে থাকবে এখানে। তার মৃত্যুর খবর হয়ত কেউ জানবে না। এদিকে কেউ আসে না বললেই চলে। হয়ত একদিন, দুইদিন বা কয়েক সপ্তাহ অথবা কয়েক মাস পড়ে থাকবে তার লাশ এখানে। একসময় মাংসগুলো পচে যাবে, শুধু হাড়গুলো পড়ে থাকবে তার স্বাক্ষী হিসেবে। তারপর একদিন হয়ত হাড়গুলোও বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে চলে যাবে নদীতে। না হয়ত তা হবেনা। সকাল বেলাই হয়ত জেনে যাবে সবাই। তার হত্যাকারীই জানিয়ে দেবে সবাইকে। শরীফের মত কাউকে মারা কি চাট্টিখানি কথা। সব পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচার করা হবে এই খবর। কেউ কেউ খুব খুশি হবে তার মৃত্যুর কথা শুনে। আবার কেউবা দুঃখ.........। না তার মৃত্যুতে দুঃখ পাবে এমন কেউ পৃথিবীতে নেই। সবাই আনন্দ করবে। সাধারন জনগন থেকে শুরু করে সবাই। তার মৃত্যুর আনন্দ।
শরীফ তার বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলো এক করার চেষ্টা করছে। আর অপেক্ষা করছে প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসা একটা বুলেটের জন্য। বুলেটটা সরাসরি আঘাত করবে তার ঘাড়ে না না মাথায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই মৃত্যু হবে তার। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজটি করছে সে-অপেক্ষা। তাও আবার মৃত্যুর জন্য।মৃত্যুটা তেমন কঠিন কিছু মনে হচ্ছে না এখন। তার জীবনের সমস্ত পাপ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ভেবে একটু আনন্দও পাচ্ছে সে। কুখ্যাত সন্ত্রাসী শরীফ বলে কেউ থাকবে না আর।
'হাতের অস্ত্রটা নিচে রেখে দেন ওস্তাদ। '
ছেলেমানুষী একটা কন্ঠ ভেসে এল পেছন থেকে। শরীফের মনে হচ্ছে কতকাল পর সে একজন মানুষের কন্ঠস্বর শুনতে পেল। ছেলেটির কন্ঠটা কেমন যেন ভয়ার্ত। এ লাইনে নতুন তা বুঝা যাচ্ছে। হঠাৎ করে প্রচন্ড রাগ হল তার। তার মত একজন লোককে মারার জন্য আনাড়ি একজনকে পাঠানো হল এ জন্যই রাগ হচ্ছে। রাগের জন্যই মাথাটা একটু পরিষ্কার লাগছে। মাথার এলোমেলো চিন্তাগুলো একটু গুছিয়ে নিল সে। ধীরে ধীরে হাতের এমজি 42 টা মাটিতে নামিয়ে রাখল। তার ফাকে পকেটের কেভি 39 টার অস্তিত্বটা একবার অনুভব করে নিল। একবার ভাবল প্রচন্ড গতিতে ঘুরে একটা বুলেট ছুড়ে দেবে পেছনের ছেলেটার দিকে। অন্ধকারেও অব্যার্থ অাঘাত হানার ব্যাপারে খুবই দক্ষ সে। কিন্তু তার পরই বাতিল করে দিল চিন্তাটা। আরো কিছু সময় দরকার তার। চিন্তাগুলো আরো গুছিয়ে নিতে হবে। এখনও যেহেতু গুলি করে নি তার মানে আরো কিছুক্ষন সময় পেয়েও যেতে পারে সে। সামনের দাড়িয়ে থাকা তার শিকারটা কি করছে তা একবার দেখার ইচ্ছা হল। কিন্তু সাহস হল না। দীর্ঘ নিরবতার পর পেছন থেকে আর একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলঃ
'পকেটেরটা বের করে আমার হাতে দিন। '
কন্ঠস্বরটা শুনে দ্বিতীয়বারের মত চমকে উঠল সে। কারন এটি একটি নারীকন্ঠ। ইদানিং নাকি মেয়েরাও যোগ দিচ্ছে এই লাইনে। এমন একটা খবর শুনেছিল অনেকদিন আগেই। তখন সে এটাকে তেমন গুরুত্বও দেয়নি বা বিশ্বাসও করেনি। কিন্তু এখন বিশ্বাস ও গুরুত্ব দুইটাই অনুভব করছে। নিজের উপর রাগটা দ্বিগুন হয়ে গেল হঠাৎই। ছেলেটি যে একা নয় তা এতক্ষন বুঝতে পারেনি সে। কিন্তু অনেক্ষন আগেই বুঝা উচিৎ ছিল তার। একবার এরকম দল সম্পর্কে কি কি জানা আছে তা ভাবার চেষ্টা করল। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ করল সে কিছুই জানে না। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে সে। পকেট থেকে তার প্রিয় কেভি 39 টা বের করে পেছনের দিকে বাড়িয়ে ধরল সে। বাড়িয়ে দেওয়া হাতটাতে হঠাৎই উষ্ণ একটা ছোয়া অনুভব করল এক মুহূর্তের জন্য। এক মুহূর্তের ছোয়ায় সে যেন ভূলে গেল সবকিছু। ঘোরটা বেড়ে গেল আরো অনেকটুকু। তার পরের ঘটনাগুলো ঘটে গেল খুব দ্রুত। সে যেন একজন নিরব দর্শক। কিছুই করার নেই তার।
( চলবে)