somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পড়াশুনা। শিশুদের দুঃস্বপ্ন

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুল, পড়াশোনা, পরীক্ষা, স্যারের বাসায় দৌড়াদৌড়ি, হোমওয়ার্ক সবই একটা ছেলের জন্য দুঃস্বপ্ন বলা যায় বর্তমান কালে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যেই সময় দুষ্টামি করবে, ছুটাছুটি করবে সেই সময়টাতে তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় একগাদা জ্ঞানমুলক বই। শিশুর সঠিক বিকাশ আর ভিত্তি শক্তভাবে গড়ে তুলতে নাকি এগুলো অনেক দরকারী। সত্যিই কি তাই?

একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরির সুবাদে অনেককিছুই চোথে পড়েছে আমার। কিন্ডারগার্টেনে প্লে এবং নার্সারী ক্লাসগুলো মূলত শিশুদের শিক্ষার সাথে পরিচিত করানোর একটা স্টেজ হলেও সেখানে মুখস্ত করানো হচ্ছে সাত মহাদেশের নাম বা টেলিভিশন বা কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেছে তাদের নামসহ এরকম কঠিন কিছু তথ্য। শিশুরাও হয়ত মুখস্ত করছে কয়েকদিনের জন্য। পরীক্ষার পরে আবার ভূলে যাচ্ছে সব। শিশুর সঠিক বিকাশে এই কয়েকদিনের মুখস্তের প্রয়োজন অাছে তা আমি বিশ্বাস করিনা। বর্তমানে স্কুলগুলো কে কার চেয়ে বেশি ভার চাপিয়ে দিতে পারে তার প্রতিযোহিতায় নেমেছে। অভিভাবকরাও সেই অনুসারে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা চিন্তা করতে পারে না বলে তাদের চিন্তার মহান দায়িত্বটাও অভিভাবকরা তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তারা একবারও ভাবছে না যে, তাদের চিন্তার সাথে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের চিন্তার অনেক পার্থক্য থাকতে পারে। একজন অভিবাবককে জিজ্ঞাসা করে দেথুন আপনার ছেলে বা মেয়ে কোথায় পড়ে? নিশ্চয়ই উনি গর্বভরা কন্ঠে স্কুলের নামটা বলবেন। বলাটাই স্বাভাবিক। কারন এত টাকা আর শ্রম খরচ করে ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত গড়ছেন আর তা বলবেন না এটা কিভাবে হয়?

গ্রামে আমাদের মুরুব্বি বা অভিবাবক যারা অাছেন তারা বলেন আমরা যখন তোদের মত ছিলাম তখন মুরুব্বিদের দিকে চোখ তুলে তাকাতাম না। আমি সেই রকম কিছু বলছি না। বলাটা বোকামি হবে। সময়ের সাখে সাথে সবকিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। এত পরিবর্তনের মাঝে আগের সেই আচরন আশা করা যায় না। আমরা হয়ত প্লে, নার্সারীতে পড়িনি, পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনি পরীক্ষা দেই নি, ছোট থেকেই আমাদের সাধারন জ্ঞান পড়ানো হয় নি তবুও আমরা বলতে পারি পড়াশুনাকে আমরা একটা ভার বা বোঝা হিসেবে ভাবি না। এটা আমাদের কাছে অানন্দদায়ক কিছু না হলেও দুঃস্বপ্নের মত না। আমাদেরকে সারাদিন পড়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় নি। আমরা ফাকি দিয়েছি, স্কুল পালিয়েছি, দুষ্টামি করেছি, সারাদিন খেলাধুলা করেছি। কিন্তু পড়ার সময় ঠিকই পড়তে বসেছি আনন্দের সাথেই।

কয়েকদিন আগের একটা ঘটনা বলি। রাত ৮টা কি সাড়ে ৮টা বাজে। ধানমন্ডি লেকের পাশের রাস্তা দিয়ে হাটছি। রাস্তায় অল্প আলো, শহরের ভাষায় ঘুটঘুটে অণ্ধকার বলা যায়। কথা বলতে বলতে হাটছি আমরা দুজন। কথার ফাকে হঠাৎ খেয়াল করলাম রাস্তার পাশের ফুটপাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে গভীর মনযোগ দিয়ে পড়াশুনা করছে ছোট ছোট দুইটা ছেলেমেয়ে। আলোটা দূর থেকেই অনেকের চোখে পড়ে, কিন্তু আলোর পাশের অসাধারণ ঘটনাটা চোখে পড়ে না অনেকের।একটু সামনে এগিয়ে গিয়েছিলাম, আবারও পিছনে ফিরে যেতে চাচ্ছিলাম একটা ছবি তুলার জন্য। তারপরই ভাবলাম ফেসবুকে একটা পোষ্ট দেয়ার জন্য শুধু শুধু তাদের মনোযোগ নষ্ট করার কেন প্রশ্ন হয় না। তাই ফিরেই আসলাম তাদেরকে পেছনে ফেলে।

ইদানিং অনেক বাবা–মায়ের অভিযোগ তাদের ছেলেমেয়েরা পড়তে চায় না। অভিযোগটা সত্য কিনা আমি জানিনা। আমার পরিচিত কয়েকজনের ছেলেমেয়েকে দেখলাম সারাদিন পড়ায় বসিয়ে রাখে। তারপরও জিজ্ঞাসা করলে বলে আমার ছেলে বা মেয়ে পড়তে চায় না। বর্তমানে ছেলেমেদেরকে অভিবাবকদের ডিসপ্লে বলা যায়। সাধারনভাবেই ধরে নেওয়া হয় ছেলেমেয়ে পড়াশুনায় ভাল হলে অভিবাবক ভাল বা সচেতন। আর তাই অভিবাবকদের ভাল হওয়ার জন্য ছেলেমেয়েদের বাধ্যতামূক ভাল হতে হয়। তবুও এমন অভিযোগের দিনে ফুটপাতে থাকা দুটো ছেলেমেয়ের পড়াশুনার ইচ্ছাশক্তি সত্যিই মুগ্ধ করার মত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×