আমরা বাংলাদেশিরা যেন এক ধরনের জীবন্ত প্যারাডক্স—একদিকে হাইব্রিড প্রজাতি, অন্যদিকে চরম বিভ্রান্ত!
আমাদের আচরণ, চিন্তা, এবং অনুভূতি সবকিছুতেই মিশে আছে একধরনের কন্ট্রাডিকশন।
১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান আলাদা হলো।
কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান, আজকের বাংলাদেশ, তখন ছিল একেবারে মিশ্র সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল। এখানকার ৯০% মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের উত্তরাধিকার, আর মুসলমানদের বড় অংশই মাছভোজী উপজাতি থেকে ধর্মান্তরিত ।
আমাদের ডিএনএ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, আমরা এখানকার কয়েক হাজার বছর আগের কার অধিবাসী।
আমাদের পূর্বপুরুষরা হয়, বাঙাল, নয় নি ন্ম বর্নের হিন্দু।
তাই আমাদের সংস্কৃতিতে হিন্দু ও উপজাতি ঐতিহ্যের মিশ্রণ এখনও স্পষ্ট।
ঢোলের শব্দে আমাদের নাচতে ইচ্ছে করে, আর ঝ গ ড়া - মা রা মা রি তে বিনোদন পাই!
একজন পরিবেশ প্রকৌশলের ছাত্র হিসেবে এ ব্যাপারে আমার বৃহৎ পড়াশোনা করা হয়েছে যে,
আমাদের মানসিকতা, চরিত্র এবং আচার-আচরণ গঠনে, আমাদের দেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভূমিকাসেটা তো লিমিট ছাড়িয়ে গেছে! ঝড়, বন্যা, নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস আমাদের মানসিকভাবে এক বৈরি জাতিতে পরিণত করেছে। এই বৈরিতার প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্র, সমাজ, এবং সংস্কৃতির উপর।
আমাদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা, হিংসা, এবং অন্যকে কষ্ট দিয়ে সুখ খোঁজার প্রবৃত্তি যেন বংশগত।
এটা কারোই দোষ না, দোষ আমাদের জিওগ্রাফির।
আর সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো?
ওগুলো শুনলে আপনি কনফিউজড হয়ে যাবেন আর বিনোদন পাবেন। যেমনঃ
১. আমরা মুসলমান, তাই আমেরিকা-ইউরোপ আমাদের চরম শত্রু। ই স লা মো ফো বি য়া, সারা বিশ্বে মুসলমানদের উপরে অ ত্যা চা রে র ইউরোপ আমেরিকার জুড়ি নাই। তবে ঘটনা হলো কিন্তু আমাদের ৯৯.৯৯% মানুষ ইউরোপ-আমেরিকার ভিসা পেতে যা কিছু করা লাগে, করতে প্রস্তুত।
২. ভারত রাষ্ট্র আমাদের প্রকাশ্য শ ত্রু । আমরাও ভারত বি দ্বে ষী, কিন্তু ভারতীয় সিনেমা, গান, পণ্য, চিকিৎসা—সবকিছুর জন্য ভারতের দরজায় ভিড় করি। ভারতীয় ভিসার জন্য তো আন্দোলন পর্যন্ত করি! ভারত যেতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করি। হাউ কিউট!
৩. ভারতীয় আ গ্রা স নে র তীব্র বিরোধী আমি তবে, এটাও তো ঠিক, ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য করেছে, অস্ত্র দিয়েছে, শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। এই কথাটা কি আমরা বাংলাদেশীরা সবাই স্বীকার করি?
৪. ইরান শিয়া, আমরা সুন্নি। আকিদাগত পার্থক্য এমন যে, আরব দেশগুলোতে এ নিয়ে হাজার বছর ধরে রক্ত ঝরেছে। কিন্তু যখন ইরানের সাথে কোনো অমুসলিম দেশের ঝা মে লা হয়, আমরা দৌড়ে ইরানের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাই। ইহুদি ম র লে আলহামদুলিল্লাহ পড়ি,
যদিও মনে মনে বিশ্বাস করি, শি য়া রা নাকি জা হা ন্না মী!
আমরা আসলে কি চাই!
৫. ই স রা য়ে ল খা রা প দেশ, এটা মোটামুটি সবাই একবাক্যে মেনে নেয়। কিন্তু ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতায় ইসরায়েলের ভূমিকা ছিল। পিছন থেকে কলকাঠি নেড়ে তারাই বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে সাহায্য করেছিল। এটা শুনলে অবাক হলেও এটাই বাস্তব।
৬. সিরিয়ায় আসাদের পতন হলো। গণমানুষের বিজয়! আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু সেই পতনের পেছনে কারা ছিল? ইসরায়েল! কাদের বিরুদ্ধে? ইরানের বিরুদ্ধে! আমিও খুশি, আপনিও খুশি, আমরা সবাই খুশি,
কিন্তু খুশি হওয়ার কারণ বুঝি না।
ওয়েট আমরা না ই স রা য়ে ল বিরোধী?
সত্যি বলতে, আমরা কি খুশি হবো, না দুঃখ পাবো—এই কনফিউশন থেকে বের হওয়া সম্ভব না।
আমাদের জীবনে এমন সব প্যারাডক্স লুকিয়ে আছে যে, তা নিয়ে গবেষণা করলে এক নতুন মানবজাতি আবিষ্কার হতে পারে।
এইসব নিয়ে বিরাট আকারে আমাদের গবেষণা প্রয়োজন,
বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে সার্টিফিকেট প্রদান কেন্দ্র না বানিয়ে গবেষণার তীর্থে রুপান্তরিত করলে,
যথাযথ শিক্ষা প্রদানের কেন্দ্র করলে এই কনফিউশান দুর হতে পারে।
তবে এটাই ঠিক,
বাংলাদেশের মানুষ—
জীবন্ত প্যারাডক্সের এক অনন্য উদাহরণ! ইনকিলাব জিন্দাবাদ। ✊
-মুহাম্মদ তমাল,
ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানী।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:০১