somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুহাম্মদ তমাল
আমি তমাল। তমাল মানে তমাল বৃক্ষ! আমি বৃক্ষের মতোই সরল, সহজ এবং মোহনিয়। পেশায় একজন পুরঃ কৌশল প্রকৌশলী। কাজ করেছি দেশের স্বনামধন্য কোন এক দপ্তরে। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানীতে অবস্থান করছি। আমি ভালবাসি মানুষ,দেশ এবং পরিবেশ। ধন্যবাদ।

কৃতজ্ঞতার মূল্য: জার্মানদের কাছ থেকে শেখার যা আমাদের দরকার

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জার্মানিতে এসে যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে, তা হলো জার্মানদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস। ছোট থেকে বড়, বাস চালক থেকে দোকানদার, সবাই সব ক্ষেত্রে ধন্যবাদ জানায়, যেকোনো ছোটখাটো বিষয়েও। জার্মান বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের প্রথমে যে কয়টা শব্দ শেখায়, তারমধ্যে, "Danke" (ধন্যবাদ) শব্দটা থাকে। কি দারুন তাইনা?

এটি তাদের সংস্কৃতির একটি অংশ, প্রথম প্রথম একটু অদ্ভুত লাগলেও, এখন আমি খুবই পছন্দ করি। এই ডিপ্রেশনের দেশে, একটা ধন্যবাদ, একটু এপ্রিসিয়েশন হতে পারে, অনেকটা পথ চলার ইন্সপ্রেশন।
অন্যদিকে, আমাদের দেশে আমরা অনেকেই ধন্যবাদ জানাতে একরকম সংকোচ বোধ করি, অথবা ধন্যবাদ জানতেই জানি না, কেউ কিছু করলে আমরা ধন্যবাদ জানাই না, বরং এমন ভাব দেখাই যেন এটি আমাদের পাওনাই ছিল। কিন্তু যদি সেটিই আপনার পাওনা হয়, তাহলে একটু বিনয়ী হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে কী ক্ষতি হয়? আপনার কিছুই যায় আসে না, কিন্তু যাকে আপনি ধন্যবাদ জানাবেন, তাকে এটি অনুপ্রেরণা দেবে।
অনেক বছর আগের কথা, আমাদের মেসের এক ছোট ভাই ছিলো, সে উঠতে বসতে সবাইকে থ্যাংকস বলতো, রিকশাওয়ালা, মাছ বিক্রেতা, কাজের বুয়া থেকে সবাইকে। আমরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতাম!
হাউ স্টুপিড ছিলাম আমরা!

এবার আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

আমরা যারা জার্মানিতে থাকি পড়াশোনা করি, আমাদেরকে অনেকেই, পড়াশোনা সংক্রান্ত তথ্য জানতে অনেকেই মেসেজ করে থাকেন, এবং এটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, আমি যখন বাংলাদেশে ছিলাম, আমিও নিজেও এমনটা করেছি। তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করি সবাইকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করার। কিন্তু অনেকেই এমন আচরণ করে যেন আমি তাদের ভাই, বন্ধু বা আত্মীয়, অথবা যেন তারা আমাকে টাকা দিয়ে বুকিং করে রেখেছেন। এমনও হয়েছে যে, তারা তথ্য পেয়ে গেছে, কিন্তু শেষে একটি "ধন্যবাদ" বলারও প্রয়োজন বোধ করেনি। দেরি করে রিপ্লে দেয়ায় গালিগালাজের কথা তো বলাই বাহুল্য।

আরো কিছু ঘটনা বলি,

ঘটনাঃ ১
বাংলাদেশ থেকে এনরোলমেন্ট ফি দেওয়া একটু ঝামেলা, তাই আমাকে অনেকেই এনরোলমেন্ট ফি পরিশোধের জন্য মেসেজ করে। আমি কমপক্ষে ২০ জনের এনরোলমেন্ট ফি পরিশোধ করেছি, তো একবার একজনের খুব জরুরি প্রয়োজন ছিল, সে কোনোভাবেই ফি দিতে পারছিলেন না। সে আমাকে বলল, "ভাই, ব্যবস্থা করে দিন।" আমি অন্য কারো কাছ থেকে ইউরো নিয়ে তার ফি পে করে দিলাম। সে বাংলাদেশের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েও দিল। কিন্তু "হ্যাঁ", "না", বা কোনো ধরনের ধন্যবাদ জানাল না। শুধু টাকা পাঠানোর রিসিটটি পাঠিয়ে চুপ করে রইল। আমি তাকে বললাম, "এনরোলমেন্ট কনফার্ম হলে জানাবেন, কারন অনেক সময় ঝামেলা হয়", সে জানায়নি। পরে আমি তাকে মেসেজ করলাম, "ভাই, আপনার এনরোলমেন্ট হয়েছে কি?" সে জবাব দিল, "ভাই, টাকা তো পাঠিয়ে দিয়েছি, পেয়েছেন না?" আমি বললাম, "পেয়েছি, ধন্যবাদ।"

এরপর সে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে, আমার শহরে থাকে, কয়েকবার সামনাসামনি দেখা হয়েছে, কিন্তু সে কথাও বলে নি। হাউ নাইস!

ঘটনাঃ ২
ফেইসবুকে পরিচিত এক ভাই, তিনি আবেদন থেকে শুরু করে সবধরনের হেল্প করেছি, সে ভিসা পেলো, আলহামদুলিল্লাহ। ভিসা পেয়ে আমাকে একটা ম্যাসেজ দেয়ার প্রয়োজন বোধ করে নাই, না জানতেই পারে,
কোন সমস্যা নাই।
এবার তার প্রয়োজনে ভিসা পাওয়ার মাস খানেক পর হটাৎ মেসেজ দিলো, টিকেট কেটেছেন, ফ্রাঙ্কফুর্টে আসবেন। তার কেউ পিকআপ করার জন্য কেউকে পাচ্ছিলেন না, তাই সে আমাকে অনুরোধ করল,কোন ভাবে তাকে রিসিভ করে ট্রেনে তুলো দিতে পারবো কি না।
একে তো তার উপরে আমি বিরক্ত, তারপর আমার ক্লাস ছিল ঐ দিন, তারপরও, কিন্তু ভাবলাম যাগগে ব্যাপার না, প্রথমবার আসতেছে, কেউকে পাচ্ছে না, যাই, এক ক্লাস মিস করলে কিছু হবে না।
তো ঐদিন সে ২টায় পৌঁছানোর কথা ছিল। আমি দেড়টায় এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম।
আগেই তাকে বলেছিলাম, অনেক সময় ফ্লাইট দেরি হয়, ইমিগ্রেশনে বা ট্রানজিটে সমস্যা হতে পারে।
তাই সে যেন আমাকে মেসেজ করে জানায়।
কিন্তু ২টার পর থেকে আমি তাকে অনেক বার কল করছি, ম্যাসেজ দিয়েছি, ফ্লাইট ট্র্যাকারে দেখছি বিমান সময়মতো ল্যান্ড করেছে। ৩:৩০ বাজে, তার কোনো খবর নেই। আমার টেনশন, নতুন মানুষ, ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্ট অনেক বড় হারিয়ে গেলো নাকি! ব্যাপক মানষিক প্যারা। বসে আছি, তার কোন খোঁজখবর নাই, অবশেষে সে
৫ঃ০০ টার দিকে সে কল করে বলল, "ভাই, আমি এয়ারপোর্টের রেলওয়ে স্টেশনে আছি, আপনি কি আসছেন?" আমি বললাম, "হ্যাঁ, আমি তো সময়মতো এসেছি। আপনাকে বলেছিলাম, আমি থাকব।" সে বলল, "৫ঃ২০ এ আমার ট্রেন, আসেন দেখা করি।" আমি গিয়ে দেখি আরো দুজন বাংলাদেশি ভাই সেখানে আছে, যারা ফ্রাঙ্কফুর্টে থাকে। ঘটনা হলো, সে আরো দুজনকে বলে রেখেছিল। অর্থাৎ, আমি সহ মোট তিনজন তার জন্য গিয়েছিলাম। বললাম, "এতবার ফোন দিচ্ছি, অন্তত একটা মেসেজ তো দিতে পারতেন।" সে বলল, "ইমিগ্রেশনে অনেক ভিড় ছিল।" আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে এলাম। তার চোখে-মুখে কোনো অনুতাপ বা কৃতজ্ঞতা দেখিনি, বরং বিরক্তি দেখেছি। নিজে নিজেকে "চ" বর্গিয় গালি দিতে দিতে বাসায় এলাম।

এমন আরো অনেক ঘটনা বলা যাবে।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমরা কেন এমন আচরণ করি? কেন আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এত ইতস্তত বোধ করি? কেউকে একটি ধন্যবাদ দিলে কী হয়? এমনকি আমরা আমাদের মাকেও কখনো বলি না, "মা, ধন্যবাদ আমাকে এই পৃথিবীতে এনে, ধন্যবাদ আপনার অমূল্য ভালোবাসা, মমতা ও দায়িত্ববোধের জন্য।"

আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ,
কেউ আপনার জন্য কিছু করলে তাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে শিখুন। এতে কোনো ক্ষতি নেই, ব
রং এটি তাকে আরো ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে। যদিও সবচেয়ে বড় সত্য কেউ যদি কারো জন্য কিছু করে, তার প্রতিদান দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র আমাদের প্রতিপালকই রাখেন, যাকে সাদায়ে জারিয়া বলা হয়। আমার মনেহয় অন্ততপক্ষে কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানতে হয়, এটা জানতেও আপনার জার্মানি আসা উচিত।
ডাংকে শুন, জার্মানি। ধন্যবাদ।

-মুহাম্মদ তমাল
ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানী
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭
১৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×