somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সুন্দর সমুদ্রসৈকতের স্বপ্ন...

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমবার সমুদ্র দেখার অনুভুতির তুলনা করা যায় না আর কোন কিছুর সাথেই। সাগর দেখার সেই প্রথম অনুভুতি-ই আমাদের সারা জীবনের সব সুন্দর কল্পনায় বারবার ফিরিয়ে আনে ধূসর-বাদামী সৈকতে নীল জলরাশির আছড়ে ফেটে পরার দৃশ্যটিকে। কিন্তুু কল্পনার সেই বালুকাবেলার সাথে বাস্তবকে মেলাতে গিয়ে আমার মত অনেককেই আজ হোঁচট খেতে হবে নিঃসন্দেহে।


প্রিয় কল্পনার নৈসর্গিক সেই সাগরসৈকত আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না নোংরা আর আবর্জনার ভীড়ে। প্রকৃতির অসাধারন সৃষ্টি আমাদের এই সাগর সৈকতগুলো আজ সভ্যতার বিবিধ জঞ্জাল বুকে নিয়ে অস্তিত্ব রক্ষার অসম যুদ্ধে ব্যাস্ত। যে সাগর আমাদের বিনোদনের উৎস, যে সাগর আমাদের উপকূলের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা, যে সাগর আমাদের ঁেবচে থাকার অবলম্বন-সেই সাগর আজ হারাতে বসেছে তার সেই অপার সৌন্দর্য।


শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু অবসর পেতেই শহুরে আমরা ছুটে যাই প্রকৃতির কাছে। আর আমাদের মত মানুষের কাছে সাগর অবসরের একটি আকর্ষনীয় গন্তব্য। আমরা সি-বিচে আসি সমুদ্রের বিশালতার মাঝে হারিয়ে আবসর সময় পেরোতে। আর সেই অবসরকে আরও উপভোগ্য করতে আমাদের হাত ধরে সৈকতে আসে চিপস্ এর প্যাকেট, পানীয়র বোতল, সিগারেট সহ আরও নানা পণ্য। অতঃপর আমরা আবারও শহরে ফিরে আসি ।কিন্তুু পেছনে ফেলে আসা সি-বিচে রয়ে যায় চিপস্ এর খালি প্যাকেট, পানীয়র শুন্য বোতল আর ক্যান, সিগারেটের শেষাংশ, চকলেটের খালি প্যাকেট । ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়ে এধরনের অপচনশীল ক্ষতিকর জিনিস উপক্থলীয় পরিবেশকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে।


ঘোরাঘুরিতে আমাদের কজনের কোন কান্তি নেই। আমাদের পরিচয় দিতে আমরা প্রথমেই এই কথা বলি। এই ঘোরাঘুরি নিয়েই আমাদের মত বাউন্ডুলেদের একটি উন্মুক্ত সংগঠন "কিউক্রাডং"গড়ে তুলেছি আমরা। এর সদস্য আমরা কখনো বেয়ে উঠি পাহাড়ী পথ, কখনো ছুটি জঙ্গলে, আবার কখনো ভাসি অথৈ জলে। ছুটির সন্ধান পেলেই আমরা হারাই প্রকৃতির মাঝে। আর এই ছুটে বেড়ানোই আমাদের আনন্দ, আমাদের তৃপ্তি।


অন্য অনেকের মতই আমাদের চোখও ধরা পরেছে কক্সবাজার সহ অন্যাণ্য সৈকতের করুণ দশা। কিন্তুু আমরা আমাদের সৈকতরেখার এই ক্রমশ আস্তাকুঁড়ে পরিনত হওয়াকে মেনে নিতে পারি নাই যখন অন্য দশজন হয়তো ভাবছেন যে, এই ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী-ই বা থাকতে পারে? আর মেনে নিতে না পারায় আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের সীমিত সামর্থের প্রয়োগ ঘটিয়ে সাগরকে নগণ্য কিছু ফিরিয়ে দিতে।


ওশান কনজারভেনসি একটি আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যা 1986 সাল থেকে পৃথিবীর তাবৎ উপকূলীয় এলাকার মানবসৃষ্ট দূষন রোধ এবং এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। এর একটি অন্যতম কর্মসূচী হল ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল কিনআপ ডে ।প্রতিবছর 16 সেপ্টেম্বর দিনটি এই ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল কিনআপ ডে হিসাবে পালিত হয়ে আসছে বিশ্বব্যাপি।এটি বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্চাসেবী কার্যক্রম। এদিন অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সারা পৃথিবীর সৈকতরেখার মানবসৃষ্ট আবর্জনা অপসারন করে থাকে।কিন্তুু পৃথিবীর দীর্ঘতম সাগরসৈকতের অধিকারী হওয়া স্বত্বেও বাংলাদেশে দিনটি উপেক্ষিতই রয়ে গিয়েছে।


এবছর "কিউক্রাডং" বাংলাদেশে দিনটি সর্বাত্বক ভাবে পালনের উদ্দোগ নেয়। ফলস্রুতিতে 16 সেপ্টেম্বর আমরা ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনে এবং মহাখালিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠান করি। একই সাথে 22 সেপ্টেম্বর কক্সবাজার লাবনী পয়েন্টের সৈকত পরিষ্কার করার কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়। আমাদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে ধানমন্ডি বয়েজ -এক্স স্কাউটস, এন.এস.ইউ, এ.আই.ইউ.বি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,দৈনিক প্রথম আলো-বন্ধুসভা সহ আরও অনেকে।


21 সেপ্টেম্বর রাতে আমাদের কঙ্বাজার যাত্রা শুরু হয় বিরূপ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে। নিম্নচাপের প্রভাবে সারা দেশেই তখন চলছে প্রবল বৃষ্টি। কঙ্বাজার উপক্থলে 5 নম্বর বিপদ সংকেত। নৌযান ডুবির খবরে কক্সবাজার তখন এক ভীতিকর গন্তব্য।


এত বাধার পরও আমাদের 25 জনের দল 22 তারিখ সকালে প্রচন্ড বৃষ্টি মাথায় করে কক্সবাজার পৌছে। এরপর রেস্টহাউসে বসে বৃষ্টি থামার অপো । বেলা 11 টার দিকে বৃষ্টি থামলে আমাদের সাথে যোগ দেয় স্থানীয় কিছু মানুষ আর একটি স্কুলের জনা ত্রিশেক ছাত্র। আমরা র্যালী করে লাবনী পয়েন্টের সৈকতে আসি। সেখানে কক্সবাজারের এডিসি সাহেব আমাদের কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন।


আমরা 4-5 জনের দলে ভাগ হয়ে কাজ আরম্ভ করি। মাটিতে মিশে না -এ ধরনের অসংখ্য বর্জ আমরা সংগ্রহ করি যার মধ্যে বেশীর ভাগ ছিল বিভিন্ন খাদ্যের মোড়ক এবং সিগারেটের শেষাংশ। আবর্জনা সংগ্রহের পাশাপাশি আমরা বিচে উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষকে এই দূষণ সম্পর্কে সচেতন করতে দূষণের কারন বুঝিয়ে বলি ও পরিবেশবান্ধব লিফলেট বিতরণ করি। 5 ঘন্টার কাজের পর আমরা প্রায় 50 কেজি বর্জ অপসারন করি এবং এই সংগৃহিত বর্জ নির্ধারিত স্থানে ফেলি। অতঃপর এডিসি সাহেবের ঘোষণার মাধ্যমে আমাদের কাজটি শেষ হয়। আমরা যখন ফিরছিলাম রেস্টহাউসের দিকে, সৈকতের ঐ অংশটি তখন সকলের চোখেই আলাদা হয়ে ধরা পরছিল।


অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে আমাদের এ ুক্ষদ্র প্রচেষ্টা বিপুল দূষণ প্রক্রিয়ার উপর কি প্রভাব ফেলতে পারে? উত্তরে বলতে হয় যদি হাতে গোনা কিছু মানুষও সৈকতে অপচনশীল কিছু ফেলার আগে একবারের জন্য হলেও আমাদের এই প্রচেষ্টার কথা মনে করে তা ফেলতে দ্বিধান্বিত হন, তাতেই আমাদের স্বার্থকতা। একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। কক্সবাজার থেকে ফেরার দিন দোকানে এক বৃদ্ধ আমার হাতে এক প্যাকেট চানাচুর গুঁজে দিয়ে কথা দিয়েছিলেন সৈকতের দূষণে তার অংশ না নেয়ার । আর এরকম আরও অনেক ভাল লাগার স্মৃতিই আমাদের সাহস জুগিয়েছে আগামী বছর অরও বড় করে এই ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল কিনআপ ডে উদযাপনের । আমার-আপনার একটু সচেতন মানসিকতাই পারে সুন্দর আর অসুন্দরের মাঝে পার্থক্য গড়ে দিতে। তাই, আগামী বছর আমাদের সাথে যোগ দিয়ে উপক্থলের দূষণের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার জন্য সবার আমন্ত্রন রইলো ।


সাদ বিন হোসেন (তন্ময়)
Coastal Cleanup - Bangladesh
সম্পর্কিত তথ্যের জন্য:
http://www.kewkradong.com
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৬ বিকাল ৫:২১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×