somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুদকে অভিযোগ করার নিয়ম ও কোন কোন বিষয়ে অভিযোগ করতে পারবেন এবং যেভাবে অভিযোগ আমলে নেয় দুদক।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হটলাইন, ডাকযোগে, ই-মেইলে এবং দুদকের বিভিন্ন কার্যালয়ে থাকা বাক্সে অভিযোগ করেন সাধারণ মানুষ। এসব উৎস থেকে পাওয়া প্রতিটি অভিযোগেরই প্রাপ্তি স্বীকার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু নিজেদের তফসিলভুক্ত না হলে কোনও অভিযোগ নথিভুক্ত করে না তারা। সম্প্রতি চালু হওয়া ১০৬ নম্বরে (টোল ফ্রি কল) ফোন করে দুর্নীতি, অনিয়মের যেকোনো তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনে জানাতে পারবেন। অথবা এসব বিষয়ে ডাকযোগে দুদকের ঠিকানায় পাঠাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হবে।

যে সকল বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা যায়


তফসিল বহির্ভূত অপরাধ বিষয়ে ঢালাও অভিযোগ আসার কারণে কমিশনকেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তাই দুদকে অভিযোগ করার সময় কোন কোন অপরাধ তফসিলভুক্ত সেগুলো জেনে অভিযোগ জমা দেয়া উচিত।
দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে রয়েছে:

১. সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বা উপঢৌকন নেওয়া।

২. বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক যদি বেআইনিভাবে নিজ নামে কিংবা বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।

৩. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, সরকারি কর্মচারী এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মচারি যদি সরকারি অর্থ বা সম্পত্তি আত্মসাৎ কিংবা ক্ষতি সাধন করেন।

৪. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি অনুমতি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করেন।

৫. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি কোনো অপরাধীকে শাস্তি থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন।

৬. দুর্নীতি ও ঘুষ থেকে উদ্ভূত অর্থ পাচারসংক্রান্ত অপরাধ।

৭. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, সরকারি কর্মচারী এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর প্রতারণা জাল-জালিয়াতি ইত্যাদি কাজ।

এ ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ দাবি করলে ঘুষ দেওয়ার আগেই তথ্যটি দুদকের প্রধান কার্যালয় অথবা নিকটস্থ দুদক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণকারীকে ফাঁদ পেতে হাতেনাতে ধরার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

অভিযোগে যা উল্লেখ থাকতে হবে:


কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে হলে তাঁর নাম, পদবি-পেশা ও পূর্ণ ঠিকানা দিতে হবে। একইসঙ্গে স্থাবর সম্পদের (বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি ইত্যাদি) অবস্থান, পরিমাণ, আনুমানিক দামসহ ওই সব সম্পদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিতে হবে। এছাড়া ব্যাংক হিসাব, শেয়ার, এফডিআর, সঞ্চয়পত্রের সুনির্দিষ্ট তথ্য, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও ধরন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, ধরন ও সুনির্দিষ্ট ঠিকানা এবং বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন-সংক্রান্ত বিবরণ দিতে হবে।

সরকারি কর্মচারী বা ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আত্মসাৎকৃত অর্থ-সম্পদের পরিমাণ ও সময়কাল, কোন দায়িত্ব থেকে, কখন, কীভাবে আত্মসাৎ করেছেন, ওই আত্মসাতের সঙ্গে আর কারা জড়িত থেকে সহযোগিতা করেছেন- তার বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহারসংক্রান্ত ও অন্যান্য অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি কখন, কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাভবান হয়েছে বা অন্যকে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন বা রাষ্ট্রীয় অর্থসম্পদের ক্ষতি করেছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়েরের ছক:

১. অভিযোগের বিবরণ ও সময় কালঃ
২. অভিযোগের সমর্থনে তথ্য-উপাত্ত এর বিবরণঃ
৩. অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম, পদবী ও ঠিকানাঃ
৪. অভিযোগকারী (যদি থাকে) নাম ঠিকানা ওটেলিফোন নম্বরসহ অভিযোগ দাখিল করতে পারবে।

লিখিত অভিযোগ জানাতে:
১। 'চেয়ারম্যান/কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ১ সেগুন বাগিচা, ঢাকা' বরাবর।
২। 'বিভাগীয় পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিভাগীয় কার্যালয়, ঢাকা/চট্টগ্রাম/রাজশাহী/খুলনা/সিলেট' বরাবর।
৩।'উপপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় (অপরাধটি যে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের অধীন সংঘটিত)' বরাবর।
৪। ই-মেইল: [email protected]

যেভাবে অভিযোগ আমলে নেয় দুদক
দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা-২০০৭ অনুযায়ী কমিশনে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের ও যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ বিধি অনুসরণ করে কমিশনে অভিযোগ গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য ‘অভিযোগ যাচাই-বাছাই সেল’ রয়েছে। কমিশনে সাধারণত ডাকযোগে, ই-মেইলে, হটলাইনে এবং জেলা ও বিভাগীয় অফিসগুলোতে থাকা অভিযোগ বাক্সে অভিযোগগুলো আসে। নাম-ঠিকানা থাকলে প্রত্যেকটি অভিযোগের প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়। পরে তারিখ ও ক্রমিক নম্বর দিয়ে অভিযোগগুলো দুদকের প্রধান কার্যালয়ের যাচাই-বাছাই সেলে পাঠানো হয়। এই সেল বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও উৎস থেকে কমিশনে আসা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে থাকে। গত বছর (২০১৭ সালে) কমিশন অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গ্রেডিং পদ্ধতিও চালু করে। যাতে অভিযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে কমিশনের কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারী প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ না পায়।

কমিশনের ‘অভিপ্রায়ে’ কমিটি নিজেরাই ১০ বৈশিষ্ট্যের একটি ‘মানদণ্ড’ তৈরি করে নিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ বাছাইয়ের সময় এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়। (১) অভিযোগটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ কিনা। (২) কাকে সম্বোধন করে অভিযোগটি পাঠানো হয়েছে। (৩) অভিযোগকারীর পরিচয়, নাম-ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর যথার্থ কিনা। (৪) প্রাপ্ত অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠ কিনা। (৫) পক্ষ-বিপক্ষ কর্তৃক (শত্র“তাবশত) অযথা হয়রানির উদ্দেশেই অভিযোগটি দেয়া হয়েছে কিনা। (৬) অভিযুক্ত ব্যক্তির দফতর, তার দাফতরিক পদমর্যাদা, বর্ণিত অপরাধ করার ক্ষমতা ও সুযোগ আছে কিনা ইত্যাদি। (৭) অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময়কাল। (৮) অভিযোগের দরখাস্তে বর্ণিত অপরাধের ব্যক্তি ও অর্থ-সঙ্গতির পরিমাণ। (৯) অপরাধ সংঘটিত হওয়ার স্থান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কর্তৃক অভিযোগের অনুসন্ধান/তদন্ত করা হতে পারে। (১০) প্রাপ্ত অভিযোগটি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ ও দুর্নীতি দমন বিধিমালা-২০০৭ মোতাবেক কার্য সম্পাদন শেষে কোর্টে অপরাধ প্রমাণ করা যাবে কিনা, প্রমাণে কি পরিমাণ অর্থ, শ্রম, মেধা, সময় এবং উপকরণ প্রয়োজন হবে- তা বিবেচনা করে বাছাই কমিটি। প্রতি কার্যদিবসে বাছাই কমিটির বৈঠক বসে।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (সজেকা) ২২টি অভিযোগ বাক্স রয়েছে। বিভাগীয় কার্যালয়ে রয়েছে ৬টি। এছাড়া জেলা পরিষদগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে ৬৪টি অভিযোগ বাক্স। বাক্সগুলোর চাবি থাকে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) তত্ত্বাবধানে। এসব বাক্স মাসে একবার খোলা হয়।

[email protected]
facebook.com/mohammad.toriqueullah
01733 594 270

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×