আমাদের হরহামেশাই মানুষের সঙ্গে অর্থের লেনদেন করতে হয়। নিজের প্রয়োজনে যেমন ঋণ নিতে হয়, তেমনি কাছের মানুষদের ঋণ দিতেও হয়। আর্থিক লেনদেনের চুক্তিপত্র, দলিল বা ডকুমেন্টস থাকলে কেউ প্রতারণা করার সাহস পাবে না। প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার, অর্থই অনর্থের মূল। এই অর্থের কারণেই বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়।
টাকা ধার দেওয়ার সময় যা করবেন
প্রয়োজনে যদি টাকা ধার দিতেই হয়, তাহলে যতই আপনজন হোক না কেন, তাঁর সঙ্গে আপনি একটি লিখিত চুক্তি করে নিন। ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি চুক্তি করে নিন এবং এই চুক্তিতে কী কারণে কত টাকা ধার দিলেন, তা স্পস্ট করে উল্লেখ করতে হবে। কবে অপর পক্ষ টাকা ফেরত দেবে এবং পুরোটা একসঙ্গে না কিস্তিতে পরিশোধ করবে, তা উল্লেখ করতে হবে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না দেয়, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ থাকবে—বিষয়টা স্ট্যাম্প কাগজে উল্লেখ করা দরকার। মনে রাখতে হবে, চুক্তিপত্রটি যেন আইন অনুযায়ী সম্পাদিত হয়। এ ছাড়া চুক্তিটি নোটারি বা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সত্যায়িত করে নিতে হবে। চুক্তিপত্র সম্পাদনের সময় সাক্ষী হিসেবে রাখুন কয়েকজনকে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়, তাহলেও চুক্তিপত্র করে নিতে হবে। চুক্তিপত্র ছাড়া আইনের অশ্রয় গ্রহণ করা অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে্।
টাকা ধার দেয়ার সময় বিশ্বস্ত সাক্ষী রাখুন
বড় অংকের টাকা ধার দেয়ার সময় সাথে বিশ্বস্ত সাক্ষী রাখুন। কেউ কারো মনের খবর রাখতে পারেন না। হতে পারে যিনি এখন বিপদে পড়ে আপনার কাছে সাহায্য চাইছেন তিনিই পরবর্তীতে আপনার সাহায্যের কথা ভুলে যেতে পারেন। তাই চুক্তিপত্রসহ প্রমাণের জন্য টাকা ধারের সময় বিশ্বস্ত সাক্ষী রাখুন পাশে।
টাকা ধার দেয়ার সময় লিখিত চুক্তি করে নেওয়ার সুবিধা
লেনদেনের লিখিত চুক্তি বা দলিল থাকলে এভাবে কাউকে প্রতারিত হতে হয় না। তাহলে প্রতারিত হলেও আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়। এভাবে টাকা নিয়ে তা আত্দসাৎ করলে বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা ও ৪০৬ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সহজেই। আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করাও সহজ হয়। টাকা ধার নিয়ে বা বাকিতে মাল নিয়ে টাকা পরিশোধ না করা প্রতারণা। আর এই প্রতারণার শাস্তির বিধান রয়েছে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায়। এ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণা করে এবং প্রতারণার কারণে প্রতারিত ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তি দিতে বাধ্য করে তাহলে প্রতারণাকারীকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় প্রকার দণ্ড দেওয়া যেতে পারে।
দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বিশ্বাস ভঙ্গ করে তাহলে তাকে তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা যাবে বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। লেনদেনের দলিল বা ডকুমেন্টস থাকলে কেউ প্রতারণা করার সাহস পাবে না।
-মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)
লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৪